সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গুরুতরভাবে অসুস্থ ব্যক্তি দের সান্ত্বনা দেওয়া

গুরুতরভাবে অসুস্থ ব্যক্তি দের সান্ত্বনা দেওয়া

গুরুতরভাবে অসুস্থ ব্যক্তি দের সান্ত্বনা দেওয়া

“আমি প্রথম যখন শুনেছিলাম যে, আমার মায়ের অবস্থা গুরুতর, তখন আমি তা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমি একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম, এটা মেনে নিতে পারছিলাম না যে, আমার প্রিয় মায়ের বাঁচার কোনো আশাই নেই।”—গ্রেস, কানাডা।

 যখন কোনো প্রিয়জনের একটা গুরুতর রোগ ধরা পড়ে, তখন পরিবার ও বন্ধুবান্ধব উভয়েই একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়ে ও কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে, তা না-ও জানতে পারে। কেউ কেউ হয়তো চিন্তা করে যে, তারা রোগীকে তার অবস্থা সম্বন্ধে পুরোপুরি সত্যি কথাটা জানাবে কি না। অন্যেরা সন্দেহ করে যে, রোগের প্রভাবের কারণে তাদের চোখের সামনে তাদের প্রিয়জনকে কষ্ট পেতে দেখা ও সম্ভবত এর ফলে মর্যাদা হারিয়ে ফেলতে দেখাকে তারা সহ্য করতে পারবে কি না। অনেকেই এই ভেবে দুশ্চিন্তা করে যে, রোগীর অন্তিম মুহূর্তগুলোতে কী বলতে হবে অথবা করতে হবে, তা তারা জানে না।

এই ধরনের দুঃসংবাদের প্রতি আপনি হয়তো যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকেন, সেই সম্বন্ধে আপনাকে কী জানতে হবে? আর কীভাবে আপনি “বন্ধু [“সত্যিকারের একজন বন্ধু, NW]” হতে এবং এই দুর্দশা বা বিপদের সময়ে সান্ত্বনা ও সমর্থন জোগাতে পারেন?—হিতোপদেশ ১৭:১৭.

এক স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া

যখন কোনো প্রিয়জন গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন ভেঙে পড়াটাই স্বাভাবিক। যদিও ডাক্তাররা প্রতিদিন লোকেদের মারা যেতে দেখে ও রোগীদের সঙ্গে মৃত্যু সম্বন্ধে কথা বলে থাকে, তবুও গুরুতরভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের শারীরিক ও আবেগগত প্রয়োজনগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সময়ে তারাও প্রায়ই দুশ্চিন্তা করে ও অসহায় বোধ করে।

আপনিও যখন কোনো প্রিয়জনকে কষ্ট পেতে দেখেন, তখন হয়তো আপনারও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে মনে হতে পারে। হোসা যিনি ব্রাজিলে বাস করেন এবং যার বোন গুরুতরভাবে অসুস্থ ছিলেন, তিনি বলেন, “আপনি অত্যন্ত ভালবাসেন এমন কাউকে চোখের সামনে ক্রমাগত কষ্ট পেতে দেখা খুবই ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা।” বিশ্বস্ত ব্যক্তি মোশি তার বোনকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হতে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন: “হে ঈশ্বর, বিনয় করি, ইহাকে সুস্থ কর।”—গণনাপুস্তক ১২:১২, ১৩.

আমাদের অসুস্থ প্রিয়জনের করুণ অবস্থা দেখে আমরা দুঃখ পাই কারণ আমরা আমাদের স্নেহবান বা সমবেদনাময় ঈশ্বর যিহোবার প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট হয়েছি। (আদিপুস্তক ১:২৭; যিশাইয় ৬৩:৯) মানুষের দুঃখকষ্ট সম্বন্ধে যিহোবা কেমন বোধ করেন? যিশুর প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করুন। তিনি তাঁর পিতার ব্যক্তিত্বকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন। (যোহন ১৪:৯) যিশু যখন দেখেছিলেন যে, লোকেরা রোগব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত, তখন তিনি তাদের প্রতি ‘করুণাবিষ্ট হইয়াছিলেন।’ (মথি ২০:২৯-৩৪; মার্ক ১:৪০, ৪১) এই পত্রিকার আগের প্রবন্ধে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, যখন যিশুর বন্ধু লাসার মারা গিয়েছিলেন এবং পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের ওপর মৃত্যু যে-প্রভাব ফেলে থাকে, তা যিশু দেখেছিলেন, তখন তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন এবং ‘কাঁদিয়াছিলেন।’ (যোহন ১১:৩২-৩৫) বস্তুতপক্ষে, বাইবেল মৃত্যুকে এক শত্রু হিসেবে বর্ণনা করে আর প্রতিজ্ঞা করে যে, শীঘ্রই অসুস্থতা ও মৃত্যু আর থাকবে না।—১ করিন্থীয় ১৫:২৬; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

এটা ঠিক যে, কোনো প্রিয়জন গুরুতরভাবে অসুস্থ, এই তিক্ত সংবাদের জন্য আপনি হয়তো কাউকে—যেকোনো ব্যক্তিকে—দোষ দিতে চাইতে পারেন। কিন্তু ডা. মার্টা অরটিস, যিনি গুরুতরভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ের ওপর একটি থিসিস প্রস্তুত করেছিলেন, তিনি এই পরামর্শ দেন: “রোগীর অবস্থার জন্য অন্যদেরকে—চিকিৎসক দলকে, নার্সদের অথবা নিজেকে—দোষারোপ করা এড়িয়ে চলুন। তা সম্পর্ককে কেবল আরও খারাপ করবে ও যা মুখ্য চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত অর্থাৎ গুরুতরভাবে অসুস্থ রোগীদের প্রয়োজনগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে আনবে।” আপনার কোনো প্রিয়জনকে তার অসুস্থতার ও সম্ভবত মৃত্যুর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করার জন্য আপনি কোন ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন?

ব্যক্তিকে দেখুন, অসুস্থতাকে নয়

প্রথম পদক্ষেপ হল, অসুস্থতাজনিত দুর্বলতা অথবা সৌন্দর্য হানিকর প্রভাবগুলোকে ছাড়িয়ে ব্যক্তিকে দেখা। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? সারা নামে একজন নার্স বলেন: “রোগীর যখন পূর্ণ শক্তি ছিল, রোগীর সেই সময়কার ছবিগুলো দেখার জন্য আমি সময় করে নিই। তিনি যখন তার স্মৃতিচারণ করেন, তখন আমি মন দিয়ে তার কথাগুলো শুনি। এটা আমাকে কেবলমাত্র রোগীর বর্তমান অবস্থার ওপরই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে নয় বরং ব্যক্তি বিশেষের জীবন ও ইতিহাস স্মরণ করতে সাহায্য করে।”

অ্যান-ক্যাথরিন, যিনি নিজেও একজন নার্স, তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, কীভাবে তিনি রোগীর শারীরিক লক্ষণগুলোকে ছাড়িয়ে আরও বেশি কিছু দেখেন। “আমি রোগীর চোখের দিকে তাকাই,” তিনি বলেন, “আর আমি রোগীর অবস্থাকে উন্নত করার জন্য আমার যথাসাধ্য করার দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি।” মুমূর্ষু ব্যক্তির চাহিদাগুলো—জীবনের অন্তিমকালে আশা, সান্ত্বনা ও ভালবাসা নিয়ে আসার জন্য এক নির্দেশনা (ইংরেজি) বইটি বলে: “অসুস্থতা অথবা দুর্ঘটনার দরুন কোনো প্রিয়জনের বিভৎস চেহারা দেখে ভীষণভাবে অস্বস্তি বোধ করা স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিগুলোতে যে-বিষয়টা করা সবচেয়ে ভাল তা হল, সেই প্রিয়জনের চোখের দিকে তাকানো ও সেই স্থির বাদামি সবুজ কিংবা নীল চোখ দুটো দেখা।”

এটা ঠিক যে, এই ধরনের এক মনোভাবের জন্য আত্মসংযম ও দৃঢ়সংকল্পের প্রয়োজন। জর্জ নামে একজন খ্রিস্টান অধ্যক্ষ, যিনি গুরুতরভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়মিতভাবে দেখতে যান, তিনি বিষয়টাকে এভাবে বলেন, “আমাদের সঙ্গীদের প্রতি আমাদের গভীর ভালবাসা থাকতে হবে, যাতে তাদের অসুস্থতার কারণে আমরা অস্বস্তি বোধ করলেও আমরা যেন তাদেরকে সাহায্য করতে ইতস্তত বোধ না করি।” আপনি যদি অসুস্থতার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত না করে ব্যক্তির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন, তাহলে আপনি নিজের ও আপনার প্রিয়জন উভয়েরই উপকার করবেন। ইভন, যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত বাচ্চাদের যত্ন নিয়েছেন, তিনি বলেন, “আপনি রোগীদেরকে তাদের মর্যাদা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারেন, তা উপলব্ধি করা আপনাকে তাদের শারীরিক ক্ষতিকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।”

শোনার জন্য প্রস্তুত থাকুন

লোকেরা হয়তো মুমূর্ষু কারোর সঙ্গে দেখা করতে অনিচ্ছুক হতে পারে, এমনকি যদিও তারা সেই ব্যক্তিকে খুবই ভালবাসে। কেন? কারণ তারা এইরকম দুশ্চিন্তা করে থাকে যে, কী বলতে হবে তা তারা জানে না। কিন্তু অ্যান-ক্যাথরিন, যিনি সম্প্রতি গুরুতরভাবে অসুস্থ এক বান্ধবীর যত্ন নিয়েছেন, তিনি উল্লেখ করেন যে, নীরব থাকারও মূল্য রয়েছে। তিনি বলেন: “কেবল আমাদের কথার দ্বারা নয় কিন্তু আমাদের মনোভাব থেকেও সান্ত্বনা লাভ করা যায়। একটা চেয়ার টেনে কাছে গিয়ে বসা, আমাদের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, তারা যখন তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে তখন আমাদের চোখের জলকে আটকে রাখতে না পারা দেখায় যে, আমরা তাদের জন্য চিন্তা করি।”

আপনার প্রিয়জনের সম্ভবত অকপট ও খোলাখুলিভাবে ভাববিনিময় করার জন্য তার অনুভূতি প্রকাশ করার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, অসুস্থ ব্যক্তি প্রায়ই এই বিষয়ে অবগত থাকেন যে, প্রিয়জনেরা উদ্বিগ্ন আর তাই তিনি গুরুতর ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা এড়িয়ে চলেন। এ ছাড়া, শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরাও হয়তো সেই বিষয়গুলো আলোচনা করা এড়িয়ে চলে, যেগুলো রোগীর জন্য চিন্তার বিষয়, এমনকি তার স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্য তার কাছে গোপন রাখে। এভাবে ব্যক্তির অসুস্থতা সম্বন্ধীয় তথ্য গোপন রাখার ফল কী হয়? একজন মহিলা ডাক্তার, যিনি গুরুতরভাবে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করেন, তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, রোগীর কাছে সত্য লুকানো, “রোগীকে অসুস্থতার মুখোমুখি হওয়ার ও এই বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে আর এটা শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সেই শক্তি কেড়ে নেয়,” যা রোগীকে তার অসুস্থতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করার জন্য তাদের প্রয়োজন। তাই তিনি যদি চান, তাহলে অসুস্থ ব্যক্তিকে তার অবস্থা সম্বন্ধে অথবা তার সম্ভাব্য মৃত্যু সম্বন্ধে খোলাখুলিভাবে কথা বলার জন্য সুযোগ দেওয়া উচিত।

মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে অতীতে ঈশ্বরের দাসেরা যিহোবা ঈশ্বরের কাছে তাদের ভয়ের বিষয় নিয়ে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেনি। উদাহরণস্বরূপ, বাঁচার কোনো আশাই নেই একথা জেনে, ৩৯ বছর বয়স্ক রাজা হিষ্কিয় তার নিদারুণ যন্ত্রণাকে প্রকাশ করেছিলেন। (যিশাইয় ৩৮:৯-১২, ১৮-২০) একইভাবে, গুরুতরভাবে অসুস্থ লোকেরা শীঘ্রই মারা যাবে ভেবে যে-কষ্ট পায়, তা তাদেরকে প্রকাশ করতে দিতে হবে। সম্ভবত তারা হতাশ বোধ করতে পারে কারণ ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলো, যেমন ভ্রমণ করা, সন্তান-সন্ততি থাকা, নাতি-নাতিনিদের বড় হয়ে উঠতে দেখা অথবা আরও পূর্ণরূপে ঈশ্বরকে সেবা করা এখন তাদের নাগালের বাইরে। তারা হয়তো এই ভেবে ভয় পায় যে, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে এড়িয়ে চলবে, কারণ তারা জানে না যে, কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। (ইয়োব ১৯:১৬-১৮) এ ছাড়া, কষ্ট পাওয়ার ভয়, শারীরিক প্রক্রিয়াগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ভয় অথবা একাকী মারা যাওয়ার ভয় হয়তো তাদের মনকে ভারগ্রস্ত করতে পারে।

অ্যান-ক্যাথরিন বলেন: “আপনার সঙ্গীকে তার মনের কথা প্রকাশ করতে দেওয়া, তাকে বাধা না দেওয়া বা তার বিচার না করা অথবা তার ভয়কে লাঘব করানো আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রকৃতপক্ষে কীরকম অনুভব করছেন, তা জানার এবং তার ইচ্ছা, ভয় ও প্রত্যাশাগুলোকে বোঝার এটাই হল সবচেয়ে উত্তম উপায়।”

মৌলিক চাহিদাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন

আপনার সঙ্গীর করুণ অবস্থা, সম্ভবত যন্ত্রণাদায়ক থেরাপি নেওয়ার এবং এই ধরনের চিকিৎসাগুলোর পরবর্তী প্রভাবগুলোর কারণে আরও খারাপ হয় ও তা আপনাকে এতটাই কষ্ট দিতে পারে যে, আপনি হয়তো রোগীর একটা মৌলিক চাহিদার কথা ভুলে যেতে পারেন। সেই চাহিদাটা হল, তার নিজের বেছে নেওয়ার ক্ষমতা।

কিছু কিছু সংস্কৃতিতে, একটা পরিবার হয়তো অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা সম্বন্ধে সত্য গোপন করার দ্বারা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, এমনকি তারা হয়তো চিকিৎসাপদ্ধতি বাছাই করার ক্ষেত্রেও তাকে বিরত করতে পারে। অন্যান্য সংস্কৃতিতে, হয়তো ভিন্ন এক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, জেরি নামে একজন পুরুষ নার্স বলেন: “রোগীকে দেখতে আসা ব্যক্তিদের প্রায়ই অসুস্থ ব্যক্তির বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে তার বিষয়ে কথা বলার প্রবণতা থাকে, এমন যেন রোগী সেখানে উপস্থিত নেই।” উভয় ক্ষেত্রেই, এই ধরনের আচরণ রোগীর মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে।

আশা হল আরেকটা মৌলিক চাহিদা। যে-দেশগুলোতে গুণগত মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিসাধ্য, সেখানে প্রায়ই এক কার্যকারী চিকিৎসা খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে আশা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সম্পর্কযুক্ত। মিশেল, যিনি তার মাকে তিনবার ক্যান্সার মোকাবিলায় সাহায্য করেছেন, তিনি ব্যাখ্যা করেন: “মা যদি অন্য চিকিৎসার চেষ্টা করেন অথবা অন্য কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলতে চান, তাহলে আমি তার গবেষণার কাজে তাকে সাহায্য করি। আমি বুঝতে পেরেছি যে, মনে মনে আমাকে বাস্তববাদী হতে হবে কিন্তু একই সময়ে কথাবার্তার ক্ষেত্রে আমাকে ইতিবাচক হতে হবে।”

যদি সুস্থ হওয়ার কোনো আশাই না থাকে, তাহলে কী? মনে রাখবেন যে, গুরুতরভাবে অসুস্থ রোগীর সঙ্গে মৃত্যু সম্বন্ধে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করতে হবে। জর্জ, যে-খ্রিস্টান অধ্যক্ষের কথা আগে উদ্ধৃত করা হয়েছে, তিনি বলেন: “আসন্ন মৃত্যু সম্বন্ধে তথ্য গোপন না করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি করতে ও তার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে সুযোগ দেয়।” এই ধরনের প্রস্তুতি একজন রোগীকে পূর্ণতার অনুভূতি প্রদান করতে পারে এবং তার সেই চিন্তাকে দূর করতে পারে যে, তিনি হয়তো অন্যদের কাছে বোঝাস্বরূপ হতে পারেন।

অবশ্য, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা কঠিন বলে মনে করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু, এই ধরনের খোলাখুলি কথাবার্তা আপনার গভীরতম অনুভূতিকে আন্তরিকভাবে প্রকাশ করার এক অদ্বিতীয় সুযোগ প্রদান করে। মুমূর্ষু ব্যক্তি হয়তো পূর্বের মতবিরোধের মীমাংসা করতে, দুঃখ প্রকাশ করতে অথবা ক্ষমা চাইতে পারেন। এই কথাবার্তা হয়তো মুমূর্ষু ব্যক্তির সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে আগের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠ করতে পারে।

অন্তিম দিনগুলোতে সান্ত্বনা প্রদান করা

জীবনের শেষের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এমন একজন ব্যক্তিকে আপনি কীভাবে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারেন? ডা. অরটিস, যার কথা আগেই উদ্ধৃত করা হয়েছে, তিনি বলেন: “রোগীকে তার শেষ ইচ্ছেগুলোর কথা বলতে দিন। মন দিয়ে শুনুন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে রোগী যা চান তা করার চেষ্টা করুন। রোগীর ইচ্ছে পূরণ করা সম্ভব না হলে অকপটে তা বলুন।”

আগের চেয়ে এখন সেই মুমূর্ষু ব্যক্তি হয়তো, সেই ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারেন, যারা তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জর্জ বলেন, “তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য রোগীকে সাহায্য করুন, এমনকি রোগীর শক্তি না থাকায় কথোপকথন যদি সংক্ষিপ্তও হয় তবুও।” এমনকি যদি কেবল ফোনের মাধ্যমেও হয়, এই যোগাযোগ উৎসাহ বিনিময় করার ও একসঙ্গে প্রার্থনা করার সুযোগ করে দেয়। ক্রিস্টিনা নামে কানাডার একজন ভদ্রমহিলা, যিনি একের পর এক তিনজন প্রিয়জনকে হারিয়েছিলেন, তিনি স্মরণ করে বলেন, “যতই তারা তাদের জীবনের শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ততই তারা তাদের খ্রিস্টান সঙ্গীসাথিদের প্রার্থনার ওপর নির্ভর করত।”

আপনার প্রিয়জনের সামনে কাঁদতে কি আপনার ভয় পাওয়া উচিত? না। আপনি যদি কাঁদেন, তাহলে বস্তুতপক্ষে আপনি আপনার মুমূর্ষু সঙ্গীকে একজন সান্ত্বনাকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন। মুমূর্ষু ব্যক্তির চাহিদাগুলো নামক বইটি বলে: “মুমূর্ষু ব্যক্তির দ্বারা সান্ত্বনা লাভ করা এতই মর্মস্পর্শী এক অভিজ্ঞতা, যা তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।” যিনি অনেক বেশি যত্ন লাভ করার পাত্র হয়েছেন, তিনি যখন অন্যদের সান্ত্বনা দেন, তখন তিনি একজন যত্নবান বন্ধু, বাবা অথবা মা হিসেবে তার পরিচয়কে পুনরায় আবিষ্কার করতে সমর্থ হন।

এটা ঠিক যে, বিভিন্ন পরিস্থিতি হয়তো আপনাকে আপনার প্রিয়জনের জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোতে তার সান্নিধ্যে যাওয়া থেকে বিরত করতে পারে। কিন্তু, যদি আপনি আপনার বন্ধুর সঙ্গে কোনো হাসপাতালে অথবা বাড়িতে সময় কাটাতে সমর্থ হন, তাহলে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার হাত ধরে রাখার চেষ্টা করুন। এই অন্তিম মুহূর্তগুলো মাঝে মাঝে সেই অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ প্রদান করে, যা হয়তো আপনি আগে তেমন একটা প্রকাশ করেননি। এমনকি অন্তিম মুহূর্তগুলোতে তিনি যদি কিছু বলতেও না পারেন, তবুও আপনি তাকে বিদায় বলা ও তার প্রতি আপনার ভালবাসা প্রকাশ করা এবং পুনরুত্থানে আপনি যে তাকে আবারও দেখার আশা করেন, সেই বিষয়ে বলার সুযোগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।—ইয়োব ১৪:১৪, ১৫; প্রেরিত ২৪:১৫.

আপনি যদি এই অন্তিম মুহূর্তগুলোর সদ্ব্যবহার করেন, তাহলে সম্ভবত আপনি পরে আপশোস করা এড়াতে পারবেন। বস্তুতপক্ষে, প্রগাঢ় আবেগের এই মুহূর্তগুলো ভবিষ্যতে সেই সান্ত্বনার এক উৎস হতে পারে, যা নিয়ে আপনি গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন। আপনি নিজেকে “দুর্দশার” সময়ে সত্যিকারের একজন বন্ধু হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন।—হিতোপদেশ ১৭:১৭. (w০৮ ৫/১)

[২৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

অসুস্থতার ওপর নয় বরং ব্যক্তির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা আপনাকে ও আপনার প্রিয়জন উভয়কেই উপকৃত করে

[২৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

একজন রোগীর মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখানোর এক উপায়

অনেক দেশে, গুরুতরভাবে অসুস্থ একজন রোগীর শান্তিতে ও মার্যাদার সঙ্গে মৃত্যুবরণ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করা হয়। অগ্রিম লিখিত এক নির্দেশপত্র এই অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর এক সাহায্যকারী হাতিয়ার আর রোগীদেরকে ঘরে অথবা কোনো সেবাসদনে মৃত্যুবরণ করার সুযোগ করে দেয়।

এক অগ্রিম নির্দেশপত্র নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সম্পাদন করবে:

• ডাক্তার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ভাববিনিময় বৃদ্ধি করবে

• পরিবারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেবে

• অবাঞ্ছিত, অব্যবহার্য, যন্ত্রণাদায়ক, ব্যয়বহুল চিকিৎসার সম্ভাবনাকে হ্রাস করবে

এক কার্যকারী অগ্রিম নির্দেশপত্রে অন্ততপক্ষে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো থাকে:

• সেই ব্যক্তির নাম, যিনি আপনার হয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন

• আপনার অবস্থার যদি কোনোরকম উন্নতি না হয়, তাহলে আপনি যে-চিকিৎসা গ্রহণ অথবা প্রত্যাখ্যান করবেন

• যদি সম্ভব হয়, তাহলে সেই ডাক্তারের নাম, যিনি আপনার বিভিন্ন বাছাইয়ের বিষয়ে সম্বন্ধে অবগত আছেন