সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“যিহোবা জানেন, কে কে তাঁহার”

“যিহোবা জানেন, কে কে তাঁহার”

“যদি কেহ ঈশ্বরকে প্রেম করে, সেই তাঁহার জানা লোক।” —১ করি. ৮:৩.

১. বাইবেলের একটা বিবরণ সম্বন্ধে বলুন, যেখানে সেই কপট চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে, যা ঈশ্বরের কোনো কোনো দাসকে প্রভাবিত করেছিল। (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

এক সকালে, মহাযাজক হারোণ অঙ্গারধানীতে প্রজ্বলিত ধূপ নিয়ে যিহোবার আবাসের দ্বারে দাঁড়িয়ে আছেন। কাছাকাছি জায়গায় কোরহও ২৫০ জন পুরুষকে নিয়ে যিহোবার উদ্দেশ্যে ধূপ উৎসর্গ করছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে নিজ নিজ অঙ্গারধানী রয়েছে। (গণনা. ১৬:১৬-১৮) প্রথম দর্শনে, এই সমস্ত পুরুষকেই যিহোবার অনুগত উপাসক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, হারোণের বিপরীতে অন্যেরা হচ্ছে উদ্ধত বিদ্রোহী, যারা যাজকপদ দখল করার প্রচেষ্টা করছে। (গণনা. ১৬:১-১১) তারা এইরকম চিন্তাভাবনা দ্বারা ভ্রান্ত হয়েছে যে, ঈশ্বর তাদের উপাসনা গ্রহণ করবেন। কিন্তু, তাদের এই প্রত্যাশা আসলে যিহোবার জন্য মর্যাদাহানিকর ছিল, যিনি হৃদয় পড়তে পারেন এবং তাদের কপটতা দেখতে পারেন।—যির. ১৭:১০.

২. মোশি আগে থেকে কী বলেছিলেন আর তার সেই কথা কি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল?

উপযুক্তভাবেই, এই ঘটনার এক দিন আগে মোশি বলেছিলেন: “কে সদাপ্রভুর লোক, . . . তাহা সদাপ্রভু প্রাতঃকালে জানাইবেন।” (গণনা. ১৬:৫) নিশ্চিতভাবেই, যিহোবা সেই সময়ে সত্য উপাসক ও মিথ্যা উপাসকদের মধ্যে পার্থক্য দেখিয়েছিলেন, যখন “সদাপ্রভু হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া যাহারা ধূপ নিবেদন করিয়াছিল, সেই [কোরহ এবং] দুই শত পঞ্চাশ জন লোককে গ্রাস করিল।” (গণনা. ১৬:৩৫; ২৬:১০) একই সময়ে, যিহোবা হারোণের জীবন রক্ষা করেছিলেন, যা ইঙ্গিত দিয়েছিল, হারোণই সত্যিকার অর্থে ঈশ্বরের অনুমোদিত যাজক এবং সত্য উপাসক।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৮:৩.

৩. (ক) পৌলের দিনে কোন পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল? (খ) শত শত বছর আগে যিহোবা বিদ্রোহ দমনের কোন নজিরস্থাপন করেছিলেন?

 এই ঘটনার প্রায় ১,৫০০ বছর পর, প্রেরিত পৌলের দিনে একইরকম একটা পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। কিছু নামধারী খ্রিস্টান বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা গ্রহণ করে নিয়েছিল; কিন্তু তা সত্ত্বেও, তারা মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা অব্যাহত রেখেছিল। সাধারণ ব্যক্তিদের চোখে, এই ধর্মভ্রষ্টরা হয়তো মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্য থেকে আলাদা ছিল না। তবে, তাদের ধর্মভ্রষ্টতা বিশ্বস্ত খ্রিস্টানদের জন্য হুমকি স্বরূপ ছিল। মেষের বেশে থাকা এই কেন্দুয়ারা ‘কাহারও কাহারও বিশ্বাস উল্টাইয়া ফেলিতে’ শুরু করেছিল। (২ তীম. ২:১৬-১৮) কিন্তু, যিহোবা কোনো সাধারণ ব্যক্তি নন আর ঈশ্বর যেভাবে শত শত বছর আগে কোরহ ও তার সমর্থকদের বিদ্রোহ দমন করেছিলেন, সেই ঘটনা থেকে পৌল নিশ্চয়ই তা জানতেন। এই বিষয়ে আসুন আমরা শাস্ত্র থেকে এক আগ্রহজনক বাক্যাংশ আলোচনা করি এবং সেখান থেকে আমরা কোন ব্যাবহারিক শিক্ষা লাভ করতে পারি, তা দেখি।

“আমি সদাপ্রভু, আমার পরিবর্ত্তন নাই”

৪. পৌলের কোন দৃঢ়বিশ্বাস ছিল আর তীমথিয়ের কাছে কীভাবে তিনি সেই দৃঢ়বিশ্বাস প্রকাশ করেছিলেন?

পৌল নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা কপটতাপূর্ণ উপাসনা শনাক্ত করতে পারেন আর সেইসঙ্গে তার এই ব্যাপারেও দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে, যিহোবা তাঁর প্রতি বাধ্য ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেন। অনুপ্রাণিত হয়ে তীমথিয়ের উদ্দেশে চিঠি লেখার সময়, পৌল তার কথার মধ্যে সেই দৃঢ়বিশ্বাস প্রকাশ করেছেন। ধর্মভ্রষ্টরা ইতিমধ্যে মণ্ডলীর মধ্যে কয়েক জনকে যে-ক্ষতি করেছে, সেই বিষয়ে উল্লেখ করার পর, পৌল লিখেছিলেন: “তথাপি ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূল স্থির রহিয়াছে, তাহার উপরে এই কথা মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছে, ‘প্রভু [“যিহোবা,” NW] জানেন, কে কে তাঁহার’; এবং ‘যে কেহ প্রভুর নাম করে [“যিহোবার নামে ডাকে,” NW], সে অধার্ম্মিকতা হইতে দূরে থাকুক।’”—২ তীম. ২:১৮, ১৯.

৫, ৬. পৌলের ব্যবহৃত “ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূল” বাক্যাংশটা কেন আগ্রহজনক এবং এই অভিব্যক্তি সম্ভবত কীভাবে তীমথিয়কে প্রভাবিত করেছিল?

এই শাস্ত্রপদে পৌল যে-শব্দ বাছাই করেছিলেন, সেটা কেন আগ্রহজনক? “ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূল” শব্দগুলো বাইবেলে কেবল এই এক বারই পাওয়া যায়। বাইবেলে বিভিন্ন বিষয়কে বোঝানোর জন্য রূপক শব্দ হিসেবে “ভিত্তিমূল” শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজধানী হিসেবে আক্ষরিকভাবে যিরূশালেমকে বোঝানোর জন্য এই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (গীত. ৮৭:১, ২) যিহোবার উদ্দেশ্যের মধ্যে যিশু যে-ভূমিকা পালন করেন, সেটাকেও এক ভিত্তিমূলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। (১ করি. ৩:১১; যিশা. ২৮:১৬) পৌল যখন “ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূল” বাক্যাংশ লিখেছিলেন, তখন তার মনে কী ছিল?

পৌল “ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূল” বাক্যাংশ সেই একই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে তিনি কোরহ ও তার সমর্থকদের সম্বন্ধে মোশির কথা উদ্ধৃত করেছেন। সেই কথাগুলো গণনাপুস্তক ১৬:৫ পদে লিপিবদ্ধ রয়েছে। স্পষ্টতই, পৌল তীমথিয়কে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টায় মোশির দিনের ঘটনাগুলো উল্লেখ করেছিলেন এবং বিদ্রোহাত্মক কাজগুলো শনাক্ত ও সেগুলোর প্রতিকার করার ব্যাপারে যিহোবার যে ক্ষমতা রয়েছে, তা তীমথিয়কে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে মণ্ডলীর মধ্যে থাকা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কারণে যিহোবার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে যাচ্ছিল না, যেমনটা শত শত বছর আগে কোরহের কারণেও তা ব্যর্থ হয়নি। “ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূল” বলতে কী বোঝায়, তা পৌল বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেননি। তা সত্ত্বেও, তার ব্যবহৃত সেই বাক্যাংশ নিশ্চিতভাবেই তীমথিয়ের মধ্যে যিহোবার উপায়ের প্রতি নির্ভরতা ও আস্থা রাখার জন্য পুনরায় আশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিল।

৭. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা ধার্মিকতা ও বিশ্বস্ততা সহকারে কাজ করবেন?

যিহোবার উচ্চ নীতিগুলো অপরিবর্তনীয়। গীতসংহিতা ৩৩:১১ পদ বলে, “সদাপ্রভুর মন্ত্রণা চিরকাল স্থির থাকে, তাঁহার চিত্তের সঙ্কল্প পুরুষানুক্রমে স্থায়ী।” অন্যান্য শাস্ত্রপদ যিহোবার অনন্তকালীন শাসনপদ, দয়া, ধার্মিকতা এবং সত্যতা বা বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে বলে। (যাত্রা. ১৫:১৮; গীত. ১০৬:১; ১১২:৯; ১১৭:২) মালাখি ৩:৬ বলে: “আমি সদাপ্রভু, আমার পরিবর্ত্তন নাই।” একইভাবে, যাকোব ১:১৭ বলে, যিহোবার মধ্যে কোনো “অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না।”

 যিহোবার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তোলে এমন এক ‘মুদ্রাঙ্কন’

৮, ৯. পৌলের দৃষ্টান্তে তুলে ধরা ‘মুদ্রাঙ্কন’ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

পৌল ২ তীমথিয় ২:১৯ পদে যে-চিত্র তুলে ধরেছেন, সেটা এমন এক ভিত্তিমূলের বর্ণনা দেয়, যেটার ওপর একটা বার্তা রয়েছে, যেন খোদাই করা কোনো মুদ্রাঙ্কন রয়েছে। প্রাচীন কালে, একটা দালানের ভিত্তিমূলে বা ভিত্তিপ্রস্তরে খোদাই করে কিছু লিখে রাখা—হতে পারে সেই দালান কে নির্মাণ করেছেন অথবা সেই দালানের মালিক কে, সেটা লিখে রাখা—স্বাভাবিক বিষয় ছিল। বাইবেল লেখকদের মধ্যে পৌলই সর্বপ্রথম এই দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছেন। * ‘ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূলের’ ওপর দুটো ঘোষণা মুদ্রাঙ্কন করা হয়েছে। প্রথমটা হল “যিহোবা জানেন, কে কে তাঁহার” এবং দ্বিতীয়টা হল “যে কেহ যিহোবার নামে ডাকে, সে অধার্ম্মিকতা হইতে দূরে থাকুক।” এটা আমাদেরকে সেই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়, যা গণনাপুস্তক ১৬:৫ পদে লেখা আছে। —পড়ুন।

পৌলের বর্ণনায় তুলে ধরা ‘মুদ্রাঙ্কন’ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যারা যিহোবার লোক, তাদের জন্য যিহোবার বিভিন্ন মূল্যবোধ ও নীতিকে সংক্ষেপে এই দুটো মৌলিক সত্যের দ্বারা তুলে ধরা যেতে পারে: (১) যিহোবা তাঁর প্রতি অনুগত লোকেদের ভালোবাসেন এবং (২) যিহোবা অধার্মিকতা ঘৃণা করেন। এই শিক্ষা কীভাবে মণ্ডলীর মধ্যে বিদ্যমান ধর্মভ্রষ্টতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

১০. কীভাবে পৌলের দিনের ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কাজ, বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাজের ওপর প্রভাব ফেলেছিল?

১০ তীমথিয় ও অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তি সম্ভবত তাদের মধ্যে বিদ্যমান ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কাজের কারণে উদ্‌বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। কিছু খ্রিস্টান হয়তো এমন প্রশ্ন তুলেছিল যে, এই ধরনের ব্যক্তিদের কেন মণ্ডলীর মধ্যে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা হয়তো ভেবেছে, যিহোবার চোখে তাদের দৃঢ় আনুগত্য এবং ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কপটতাপূর্ণ উপাসনার মধ্যে আসলেই কোনো পার্থক্য আছে কি না।—প্রেরিত ২০:২৯, ৩০.

তীমথিয় ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কাজের দ্বারা প্রভাবিত হননি(১০-১২ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১১, ১২. কীভাবে পৌলের চিঠি নিঃসন্দেহে তীমথিয়ের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল?

১১ পৌলের চিঠির মধ্যে তীমথিয়কে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, যখন হারোণকে সমর্থন করা হয় এবং কোরহ ও তার সঙ্গীদের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের প্রত্যাখ্যান ও ধবংস করা হয়, তখন কী ঘটেছে। নিঃসন্দেহে সেই বিষয়টা তীমথিয়ের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল। আসলে পৌল বলতে চাচ্ছিলেন, যদিও তাদের মধ্যে মিথ্যা খ্রিস্টানরা রয়েছে, কিন্তু যিহোবা সেই ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেন, যারা প্রকৃতপক্ষেই তাঁর লোক, যেমনটা তিনি মোশির দিনে করেছিলেন।

১২ যিহোবার কখনো পরিবর্তন হয় না; তিনি নির্ভরযোগ্য। তিনি অধার্মিকতা ঘৃণা করেন এবং উপযুক্ত সময়ে অননুতপ্ত অপরাধীদের বিচার করেন। ‘যিহোবার নামে ডাকেন’ এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে, তীমথিয়কেও  মিথ্যা খ্রিস্টানদের অধার্মিক প্রভাব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে নিজের দায়িত্ব সম্বন্ধে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। *

অকৃত্রিম উপাসনা কখনো নিষ্ফল হয় না

১৩. আমরা কোন আস্থা রাখতে পারি?

১৩ পৌলের অনুপ্রাণিত বাক্য থেকে আমরাও আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করতে পারি। সবচেয়ে প্রথমে, এটা জানা আশ্বাসদায়ক যে, যিহোবা তাঁর প্রতি আমাদের আনুগত্য সম্বন্ধে ভালোভাবে অবগত আছেন। এই আনুগত্য দেখে তিনি নিষ্ক্রিয় থাকেন না। বরং, যিহোবা তাঁর লোকেদের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ দেখান। বাইবেল বলে: “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশা. ১৬:৯) তাই, আমরা নিশ্চিতভাবেই এই আস্থা রাখতে পারি, আমরা ‘শুচি হৃদয় হইতে’ যিহোবার জন্য যা-কিছুই করি না কেন, তা কখনো নিষ্ফল হয় না।—১ তীম. ১:৫; ১ করি. ১৫:৫৮.

১৪. কোন ধরনের উপাসনাকে যিহোবা প্রশ্রয় দেন না?

১৪ এ ছাড়া, এটা জানাও গুরুত্বপূর্ণ যে, যিহোবা কপটতাপূর্ণ উপাসনাকে প্রশ্রয় দেন না। তাঁর চোখ যখন “পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে,” তখন কার হৃদয় ‘তাঁহার প্রতি একাগ্র,’ সেটা তিনি শনাক্ত করতে পারেন। হিতোপদেশ ৩:৩২ পদ বলে, যারা “খল” অর্থাৎ যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নকল বাধ্যতা দেখানোর মুখোশ পরে থাকে অথচ গোপনে পাপ করে চলে, তারা “সদাপ্রভুর ঘৃণার পাত্র।” যদিও একজন প্রতারক হয়তো সুকৌশলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে কিন্তু যিহোবার সর্বময় ক্ষমতা ও ধার্মিকতা এই নিশ্চয়তা দেয়, “যে আপন অধর্ম্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য্য হইবে না।”—হিতো. ২৮:১৩; পড়ুন, ১ তীমথিয় ৫:২৪; ইব্রীয় ৪:১৩.

১৫. আমাদের কী এড়িয়ে চলা উচিত এবং কেন?

১৫ যিহোবার লোকেদের মধ্যে অধিকাংশই তাদের ভক্তির ব্যাপারে আন্তরিক। মণ্ডলীর মধ্যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণাপূর্ণ উপায়ে উপাসনা করবে, এমনটা সাধারণত দেখা যায় না। তা সত্ত্বেও, মোশির দিনে এবং প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে যদি এমনটা ঘটে থাকে, তাহলে আমাদের দিনেও তা ঘটতে পারে। (২ তীম. ৩:১, ৫) কিন্তু, যিহোবার প্রতি আমাদের সহবিশ্বাসীদের আনুগত্যকে কি আমাদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা উচিত? অবশ্যই না! আমাদের ভাই ও বোনদের সম্বন্ধে কোনো ভিত্তিহীন সন্দেহ পুষে রাখা ভুল হবে। (পড়ুন, রোমীয় ১৪:১০-১২; ১ করিন্থীয় ১৩:৭.) আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, মণ্ডলীর অন্যদের নীতিনিষ্ঠার প্রতি আস্থা না দেখানোর প্রবণতা থাকলে, ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

১৬. (ক) কপটতা যাতে আমাদের হৃদয়ে শিকড় গড়ে তুলতে না পারে, সেজন্য আমরা প্রত্যেকে কী করতে পারি? (খ) ‘পরীক্ষা করুন, প্রমাণ করুন’ শিরোনামের বাক্স থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি?

১৬ প্রত্যেক খ্রিস্টানের ‘নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করা’ উচিত। (গালা. ৬:৪) যেহেতু আমাদের মধ্যে পাপপূর্ণ প্রবণতা রয়েছে, তাই আমরা যেকোনো সময়েই নিজেদের অজান্তে এমন বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে নিতে পারি, যা আন্তরিকতার অভাবকে প্রকাশ করে। (ইব্রীয় ৩:১২, ১৩) তাই, সময়ে সময়ে আমরা হয়তো যিহোবাকে সেবা করার পিছনে আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে পরীক্ষা করতে পারি। আমরা হয়তো নিজেদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি যিহোবাকে ভালোবেসে এবং তাঁর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে তাঁর উপাসনা করি? না কি আমি পরমদেশে যে-উত্তম জীবন উপভোগ করার আশা করি, সেটার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিই?’ (প্রকা. ৪:১১) আমরা যদি নিজেদের কাজ পরীক্ষা করি এবং আমাদের হৃদয় থেকে কপটতার যেকোনো চিহ্ন মুছে ফেলি, তাহলে নিশ্চিতভাবে আমরা সকলেই উপকৃত হব।

অনুগত থাকার ফলে সুখ লাভ করা যায়

১৭, ১৮. যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনার ব্যাপারে কেন আমাদের অকৃত্রিম ও আন্তরিক হতে হবে?

১৭ আমরা যখন আমাদের উপাসনার ব্যাপারে অকৃত্রিম ও আন্তরিক হওয়ার প্রচেষ্টা করি, তখন আমরা অনেক আশীর্বাদ লাভ করি। গীতরচক বলেন, “ধন্য [“সুখী,” জুবিলী বাইবেল] সেই ব্যক্তি, যাহার পক্ষে সদাপ্রভু অপরাধ গণনা করেন না, ও যাহার আত্মায়  প্রবঞ্চনা নাই।” (গীত. ৩২:২) হ্যাঁ, যারা তাদের হৃদয় থেকে কপটতা দূর করেছে, তারা আরও সুখী হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নিখুঁত সুখ উপভোগ করার অপেক্ষায় আছে।

১৮ যারা মন্দ কাজ করে চলে অথবা দ্বৈত জীবনযাপন করে, যিহোবা উপযুক্ত সময়ে তাদের মুখোশ খুলে দেবেন, “ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ” স্পষ্ট করে দেবেন। (মালাখি ৩:১৮) এই সময়ের মধ্যে, এটা জানা আশ্বাসদায়ক যে, “ধার্ম্মিকগণের প্রতি প্রভুর [ঈশ্বরের] চক্ষু আছে; তাহাদের বিনতির প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে।”—১ পিতর ৩:১২.

^ অনু. 8 তীমথিয়ের উদ্দেশে পৌল পত্রগুলো লেখার কয়েক দশক পর, প্রকাশিত বাক্য ২১:১৪ পদে দ্বাদশ প্রেরিতের নাম খোদাই করা দ্বাদশ “ভিত্তিমূল” সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।

^ অনু. 12 আমরা কীভাবে অধার্মিকতা পরিত্যাগ করার মাধ্যমে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি, তা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।