সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রহরীর সঙ্গে সেবা করা

প্রহরীর সঙ্গে সেবা করা

প্রহরীর সঙ্গে সেবা করা

“হে প্রভু [যিহোবা], আমি দিনমানে নিরন্তর প্রহরি-দুর্গে দাঁড়াইয়া থাকি, এবং প্রতি রাত্রিতে আপন পাহারা-স্থানে দণ্ডায়মান রহিয়াছি।”—যিশাইয় ২১:৮.

১. কোন্‌ চমৎকার প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করার ব্যাপারে যিহোবা নিজে নিশ্চয়তা দেন?

 যিহোবা মহান উদ্দেশ্যকারী ঈশ্বর। তাঁর নামকে মহিমান্বিত করার ও পরমদেশ পৃথিবীকে তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে শাসন করার জন্য যিহোবার যে মহৎ উদ্দেশ্য আছে সেটাকে ভেস্তে দিতে বিদ্রোহী দূত, শয়তান দিয়াবল কিছুই করতে পারেনি। (মথি ৬:৯, ১০) ঈশ্বরের রাজ্যের শাসনে মানবজাতি প্রচুর আশীর্বাদ পাবে। ঈশ্বর “মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন।” সুখী, একতাবদ্ধ মানুষেরা চিরকাল শান্তি ও সমৃদ্ধি উপভোগ করবে। (যিশাইয় ২৫:৮; ৬৫:১৭-২৫) আর যিহোবা নিজে নিশ্চয়তা দেন যে তাঁর এই প্রতিজ্ঞাগুলোকে তিনি পূর্ণ করবেন!

২. যিহোবার কোন্‌ মানব সাক্ষিরা ছিলেন?

লোকেদের তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য যিহোবা কিছু মানুষদেরও ব্যবহার করেছেন। আর তারা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে সেগুলো অবশ্যই পূর্ণ হবে। যীশু খ্রীষ্ট আসার আগে, এমন অনেকে ছিলেন যারা প্রচণ্ড বাধার মুখেও ধৈর্য ধরে অটল ছিলেন। বাইবেল তাদের “এক বৃহৎ সাক্ষিমেঘ” বলে যাদের মধ্যে প্রথম সাক্ষি ছিলেন হেবল। চমৎকার উদাহরণগুলো আজকের বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানদেরকে অনেক উৎসাহ দেয়। যীশু খ্রীষ্ট হলেন যিহোবার সবচেয়ে সাহসী সাক্ষি। (ইব্রীয় ১১:১–১২:২) উদাহরণ হিসেবে, পন্তীয় পীলাতের সামনে তাঁর শেষ সাক্ষ্যের কথা মনে করে দেখুন। যীশু বলেছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) সা.কা. ৩৩ সাল থেকে এই ২০০০ সাল পর্যন্ত উদ্যোগী খ্রীষ্টানেরা যীশুর মতো কাজ করেছেন এবং সাক্ষ্য দিয়ে চলেছেন, তারা সাহসের সঙ্গে “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা” ঘোষণা করছেন।—প্রেরিত ২:১১.

মিথ্যা ধর্মের শুরু

৩. যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে শয়তান কীভাবে তাতে বাধা দিয়ে চলেছে?

হাজার হাজার বছর ধরে ঈশ্বরের প্রধান শত্রু, শয়তান দিয়াবল ঈশ্বরের সাক্ষিদের বাধা দেওয়ার জন্য জঘন্যভাবে চেষ্টা করেছে। ‘মিথ্যাবাদীর পিতা,’ এই “মহানাগ . . . পুরাতন সর্প . . . সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি” জন্মিয়ে চলেছে। বিশেষ করে এই শেষকালে “যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন . . . করে” তাদের বিরুদ্ধে সে প্রচণ্ডভাবে লড়াই করে চলেছে।—যোহন ৮:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১৭.

৪. মহতী বাবিলের শুরু কীভাবে হয়েছিল?

প্রায় ৪,০০০ বছর আগে নোহের দিনের জলপ্লাবনের পর শয়তান নিম্রোদকে ব্যবহার করেছিল যে “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে পরাক্রান্ত ব্যাধ” ছিল। (আদিপুস্তক ১০:৯, ১০) নিম্রোদ বিখ্যাত বাবিলন শহর তৈরি করেছিল আর পরে তা মিথ্যা ধর্মের এক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। আর মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের শুরু শয়তান এখান থেকেই করেছিল। যিহোবা যখন বাবিলের দুর্গ নির্মাতাদের ভাষা ভেদ করে দিয়েছিলেন তখন তারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তারা যেখানেই গিয়েছিল সঙ্গে করে মিথ্যা ধর্ম ও রীতিনীতিকে নিয়ে গিয়েছিল। এইজন্য প্রকাশিত বাক্যের বইয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা এই মিথ্যা ধর্মকে মহতী বাবিল নাম দেওয়া হয়েছে। আর এই বই-ই বলে যে খুব শীঘ্রিই এই মহতী বাবিল ধ্বংস হয়ে যাবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৭:৫; ১৮:২১.

সাক্ষিদের এক জাতি

৫. যিহোবা তাঁর সাক্ষি হিসেবে কোন্‌ জাতিকে গঠন করেছিলেন কিন্তু কেন তিনি তাদেরকে বাবিলনের বন্দিত্বে যেতে দিয়েছিলেন?

নিম্রোদের সময়ের প্রায় ৫০০ বছর পর, যিহোবা পৃথিবীতে বিশ্বস্ত অব্রাহামের বংশ থেকে ইস্রায়েল জাতিকে গঠন করেছিলেন যারা তাঁর সাক্ষি হয়েছিল। (যিশাইয় ৪৩:১০, ১২) এই জাতির অনেকে বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করেছিলেন। কিন্তু, কয়েকশ বছরের মধ্যে ইস্রায়েলীয়রা আশেপাশের জাতিগুলোর মিথ্যা ধর্মকে মানতে শুরু করেছিল আর এইভাবে যিহোবার নিজের সাক্ষিরাই তাঁর কাছ থেকে সরে গিয়ে মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করতে শুরু করেছিল। তাই, সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে, রাজা নবুখদ্‌নিৎসরের নেতৃত্বে বাবিলনীয় সৈন্যরা, যিরূশালেম ও এর মন্দিরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং বেশির ভাগ যিহুদিকে বন্দি করে বাবিলনে নিয়ে গিয়েছিল।

৬. যিহোবার প্রহরী কোন্‌ সুখবর ঘোষণা করেছিলেন আর এটা কখন পূর্ণ হয়েছিল?

মিথ্যা ধর্মের জন্য এটা কত বড় এক বিজয় ছিল! কিন্তু, বাবিলনের কর্তৃত্ব খুব বেশি দিন টেকেনি। যিহোবা আদেশ দিয়েছিলেন: “যাও, একজন প্রহরী নিযুক্ত কর; সে যাহা যাহা দেখিবে, তাহার সংবাদ দিউক।” সেই প্রহরীকে কোন্‌ খবর ঘোষণা করতে বলা হয়েছিল? “‘পড়িল, বাবিল পড়িল, এবং তাহার দেবগণের সমস্ত ক্ষোদিত প্রতিমা ভাঙ্গিয়া ভূমিসাৎ হইল।’” (যিশাইয় ২১:৬, ৯) ২০০ বছর পর সা.কা.পূ. ৫৩৯ সালে এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছিল। শক্তিশালী বাবিলন পতিত হয়েছিল এবং ঈশ্বরের সাক্ষি যিহুদি লোকেরা নিজেদের দেশে ফিরে এসেছিল।

৭. (ক) যিহোবার শাস্তি থেকে যিহুদিরা কী শিখেছিল? (খ) নির্বাসন থেকে ফিরে আসা যিহুদিরা কোন্‌ ফাঁদে পা দিয়েছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?

ফিরে আসা যিহুদিরা শিখেছিল যে তাদেরকে প্রতিমাপূজা এবং প্রেতচর্চার সঙ্গে জড়িত ধর্মকে ছাড়তে হবে। কিন্তু, সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অন্যান্য ফাঁদে পা দিয়েছিল। কেউ কেউ গ্রিক দর্শনের জালে আটকা পড়েছিল। অন্যেরা ঈশ্বরের বাক্যের চেয়ে মানুষের রীতিনীতিগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিতে শুরু করেছিল। কেউ বা জাতীয়তাবাদী মনোভাব গড়ে তুলেছিল। (মার্ক ৭:১৩; প্রেরিত ৫:৩৭) যীশু যখন জন্ম নিয়েছিলেন সেই সময়ের মধ্যে এই জাতি আবারও সত্য উপাসনা থেকে সরে গিয়েছিল। যদিও কিছু যিহুদি যীশুর সুসমাচারে কান দিয়েছিলেন কিন্তু জাতি হিসেবে তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল আর তাই ঈশ্বরও তাদের ত্যাগ করেছিলেন। (যোহন ১:৯-১২; প্রেরিত ২:৩৬) সেই সময় থেকে ইস্রায়েল জাতি আর ঈশ্বরের সাক্ষি ছিল না এবং সা.কা. ৭০ সালে আবারও একবার রোমীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেম ও এর মন্দিরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।—মথি ২১:৪৩.

৮. কারা যিহোবার সাক্ষি হয়েছিলেন এবং এই সাক্ষির প্রতি পৌলের সাবধানবাণী কেন একেবারে ঠিক সময়েই ছিল?

এই সময় থেকে নতুন খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী ঈশ্বরের সাক্ষি হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিল। এটাকে ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ বলা হতো। (গালাতীয় ৬:১৬) কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি শয়তান এই নতুন, আত্মিক জাতিকেও কলুষিত করার ফন্দি এঁটেছিল। প্রথম শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই সে মণ্ডলীগুলোতে দলভেদ তৈরি করে দিয়েছিল। (প্রকাশিত বাক্য ২:৬, ১৪, ২০) এই ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পৌল সাবধান করেছিলেন: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।”—কলসীয় ২:৮.

৯. পৌলের সাবধানবাণী অনুযায়ী কীভাবে খ্রীষ্টীয়জগতের জন্ম হয়?

কিন্তু শেষ পর্যন্ত খ্রীষ্টান বলে দাবি করতেন এমন কিছু লোকেরা গ্রিক দর্শন, বাবিলনীয় মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষাকে মেনে নিয়েছিল। এছাড়া মানুষের “জ্ঞান” তাদেরকে অস্বীকার করতে শেখায় যে বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য ও ঈশ্বরই সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছেন, তারা বলতে লাগে যে মানুষ ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে। পৌল আগেই এই বিষয়ে বলেছিলেন: “আমি জানি, আমি গেলে পর দুরন্ত কেন্দুয়ারা তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করিবে, পালের প্রতি মমতা করিবে না; এবং তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে।” (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) এইভাবে সত্য ধর্ম পথভ্রষ্ট হয়ে যায় ও সারা পৃথিবীতে ধর্মভ্রষ্ট খ্রীষ্টীয়জগতের জন্ম হয়।

১০. কোন্‌ ঘটনাগুলো স্পষ্ট করেছে যে সকলেই খ্রীষ্টীয়জগতের কলুষিত উপাসনায় যোগ দেননি?

১০ এইজন্য যারা সত্যিই সত্য ধর্ম পালন করতেন তাদেরকে “পবিত্রগণের কাছে একবারে সমর্পিত বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ করিতে” হয়েছিল। (যিহূদা ৩) সত্য ধর্ম এবং যিহোবার সাক্ষিদের কি পৃথিবী থেকে একেবারে শেষ করে দিতে পারা গিয়েছিল? না। বিদ্রোহী শয়তান এবং তার সমস্ত কাজের ধ্বংস এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে সকলেই খ্রীষ্টীয়জগতের মিথ্যা শিক্ষাকে মেনে নেননি। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে আন্তরিক বাইবেল ছাত্ররা একটা দল গঠন করেছিলেন আর এই ছাত্রদের দিয়েই আজকের দিনের যিহোবার সাক্ষিদের শুরু হয়েছিল। এই খ্রীষ্টানেরা বাইবেল থেকে প্রমাণ দেখিয়ে লোকেদের বলেছিলেন যে পৃথিবীর দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ একেবারেই কাছে। আর তাদের এই কথা ১৯১৪ সালে সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল আর ‘যুগান্ত’ শুরু হয়েছিল। (মথি ২৪:৩, ৭) অনেক জোরালো প্রমাণ আছে যে সেই বছরের পরই শয়তান ও তার মন্দ দূতদেরকে স্বর্গ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সমস্যায় ভরা এই বিংশ শতাব্দীই প্রমাণ দেয় যে শয়তান সক্রিয় এবং এখন যীশু রাজা হিসেবে স্বর্গে রাজত্ব করছেন।—মথি ২৪ এবং ২৫ অধ্যায়; মার্ক ১৩ অধ্যায়; লূক ২১ অধ্যায়; প্রকাশিত বাক্য ১২:১০, ১২.

১১. শয়তান কোন্‌ চেষ্টা চালিয়েছিল কিন্তু কীভাবে তার সমস্ত চেষ্টা নিষ্ফল হয়েছিল?

১১ ১৯১৮ সালের মধ্যে বাইবেল ছাত্ররা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচার কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। ওই বছরের জুন মাসে শয়তান ওই বাইবেল ছাত্রদেরকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল। এছাড়াও সে তাদের বৈধ সংস্থা, ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটিকেও ধ্বংস করে দিতে চেষ্টা করেছিল। যে ভাইরা দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে জেলে পাঠানো হয়েছিল, রাজদ্রোহী বলে তাদের ওপর মিথ্যা দোষ চাপানো হয়েছিল, ঠিক যেমন প্রথম শতাব্দীতে যীশুর প্রতি করা হয়েছিল। (লূক ২৩:২) কিন্তু, ১৯১৯ সালে এই ভাইরা মুক্তি পেয়েছিলেন আর তারা তাদের প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়েছিল।

‘প্রহরীর’ কড়া নজর

১২. আজকে কারা যিহোবার প্রহরী শ্রেণী অথবা “প্রহরী” গঠন করেন আর তারা কোন্‌ মনোভাব দেখিয়ে আসছেন?

১২ অতএব, “শেষকাল” যখন শুরু হয় সেই সময় যিহোবা আবারও একজন প্রহরী নিযুক্ত করেন, যিহোবা এইজন্য এই প্রহরীকে নিযুক্ত করেন যাতে তিনি পৃথিবীতে হয়ে চলা ঘটনাগুলোর ওপর নজর রাখেন ও লোকেদেরকে যিহোবার উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার খবর দিয়ে সাবধান করবেন। (দানিয়েল ১২:৪; ২ তীমথিয় ৩:১) আজ পর্যন্ত এই প্রহরী শ্রেণী অর্থাৎ ঈশ্বরের ইস্রায়েল, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন ঠিক সেইরকম যেমন যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “সে যথাসাধ্য সাবধানে কর্ণপাত করিবে। আর সে সিংহবৎ উচ্চ শব্দ করিয়া কহিল, হে যিহোবা, আমি দিনমানে নিরন্তর প্রহরি-দুর্গে দাঁড়াইয়া থাকি, এবং প্রতি রাত্রিতে আপন পাহারা-স্থানে দণ্ডায়মান রহিয়াছি।” (যিশাইয় ২১:৭, ৮) এই প্রহরী তার কাজকে খুবই জরুরি বলে মনে করেন!

১৩. (ক) যিহোবার প্রহরী কোন্‌ খবর ঘোষণা করেছেন? (খ) কীভাবে বলা যায় যে মহতী বাবিলের পতন হয়েছে?

১৩ এই প্রহরী কী দেখেছিলেন? যিশাইয়ের দিনের মতো আজকেও যিহোবার প্রহরী ঘোষণা করেছিলেন: ‘পড়িল, বাবিল পড়িল, এবং [যিহোবা] তাহার দেবগণের সমস্ত ক্ষোদিত প্রতিমা ভাঙ্গিয়া ভূমিসাৎ করিলেন।’ (যিশাইয় ২১:৯) এবারে, প্রহরী যে বাবিলের কথা বলছিলেন সেটা হল মহতী বাবিল অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য। লোকেদের ওপর এই ধর্মগুলোর প্রভাব কমে আসছে। আর এই খরব প্রহরী প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দিয়ে আসছেন। (যিরমিয় ৫০:১-৩; প্রকাশিত বাক্য ১৪:৮) এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই! কারণ খ্রীষ্টীয়জগতের বিভিন্ন দেশগুলোই প্রথমে এই মহাযুদ্ধ শুরু করেছিল। আর দুপক্ষের পাদ্রিরা তেজি যুবকদের যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিয়ে কতই না ঘৃণ্য কাজ করেছিল! ১৯১৯ সালে মহতী বাবিল বাইবেল ছাত্রদের কোনভাবেই থামাতে পারেনি। আজকে এই বাইবেল ছাত্রদের যিহোবার সাক্ষি বলা হয়। এই বাইবেল ছাত্ররা তাদের নিষ্ক্রিয় অবস্থা থেকে জীবিত হয়েছিলেন এবং সারা পৃথিবীতে সাক্ষ্যদানের কাজ শুরু করেছিলেন আর আজও তারা তা করে চলেছেন। (মথি ২৪:১৪) এই প্রচার কাজ বুঝিয়েছিল যে মহতী বাবিলের পতন শুরু হয়ে গিয়েছে, ঠিক যেমন সা.কা.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে ইস্রায়েলীয়রা বাবিলন থেকে ছাড়া পেয়েছিল তেমনই ১৯১৯ সালে বাইবেল ছাত্ররা মহতী বাবিল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।

১৪. যিহোবার প্রহরী শ্রেণী কোন্‌ পত্রিকাকে বিশেষ করে ব্যবহার করেছেন আর যিহোবা কীভাবে এর ব্যবহারকে আশীর্বাদ করেছেন?

১৪ প্রহরী শ্রেণী সবসময়ই উদ্যোগ ও আগ্রহ নিয়ে যা সঠিক তা করার জন্য তাদের কাজ করে চলেছেন। ১৮৭৯ সালের জুলাই মাসে বাইবেল ছাত্ররা একটা পত্রিকা ছাপাতে শুরু করেছিলেন, তখন যেটার নাম ছিল জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার আ্যন্ড হেরাল্ড অফ ক্রাইস্টস্‌ প্রেজেন্স। ১৮৭৯ সাল থেকে ১৯৩৮ সালের ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটা সংখ্যার প্রচ্ছদ পাতায় এই কথাগুলো লেখা হতো, “‘প্রহরি, রাত্রি কত?’—যিশাইয় ২১:১১.” * ১২০ বছর ধরে প্রহরীদুর্গ যথাযথভাবে জগতের বিভিন্ন ঘটনার ওপর নজর রাখছে এবং এগুলো কীভাবে ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করছে সেই বিষয়ে আলোচনা করছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১৩) ঈশ্বরের প্রহরী শ্রেণী এবং তাদের “অপর মেষ” সঙ্গীরা এই পত্রিকার সাহায্যে পৃথিবীর মানুষদের কাছে সক্রিয়ভাবে ঘোষণা করছেন যে খ্রীষ্টের রাজ্যের মাধ্যমে যিহোবার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সময় খুবই কাছে। (যোহন ১০:১৬, NW) যিহোবা তাঁর এই সাক্ষি পত্রিকাকে কি আশীর্বাদ করেছেন? ১৮৭৯ সালে প্রথমে ৬,০০০ কপি প্রহরীদুর্গ ছাপানো হয়েছিল আর এখন সারা পৃথিবীতে ১৩২টা ভাষায় ২,২০,০০,০০০ কপি ছাপানো হয়—এর মধ্যে ১২১টা ভাষায় এই পত্রিকা মাসে দুটো করে ছাপানো হয়। যে পত্রিকা সত্য ঈশ্বর যিহোবার নামকে মহিমান্বিত করে ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সারা পৃথিবীতে সাক্ষ্য দেয় সেই পত্রিকার জন্য এটাই আশা করা যায়!

একটার পর একটা সংশোধন

১৫. এমনকি ১৯১৪ সালের আগে কোন্‌ সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছিল?

১৫ ১৯১৪ সালে খ্রীষ্টের স্বর্গীয় শাসন শুরু হওয়ার আগের ৪০ বছরের মধ্যে বাইবেল ছাত্ররা খ্রীষ্টীয়জগতের অনেক অশাস্ত্রীয় মতবাদ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন যেমন, শিশু বাপ্তিস্ম, আত্মার অমরত্ব, পুরগাতরী, নরকাগ্নি এবং ত্রিত্ব। কিন্তু সমস্ত ভুল ধারণা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার জন্য আরও সময় লেগেছিল। যেমন, ১৯২০ দশকে অনেক বাইবেল ছাত্ররা ক্রুশ-ও-মুকুটের চিহ্ন দেওয়া একটা ব্যাজ পরতেন এবং খুব ধূমধাম করে বড়দিন ও অন্যান্য পৌত্তলিক ছুটির দিনগুলো পালন করতেন। কিন্তু, উপাসনাকে শুদ্ধ রাখার জন্য প্রতিমাপূজা থেকে পুরোপুরি দূরে থাকতে হবে। একজন খ্রীষ্টানের জীবন ও বিশ্বাসের মূল ভিত্তি হবে ঈশ্বরের বাক্য, পবিত্র বাইবেল। (যিশাইয় ৮:১৯, ২০; রোমীয় ১৫:৪) ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে কিছু যোগ করা অথবা এর থেকে কিছু বাদ দেওয়া অন্যায়।—দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২; প্রকাশিত বাক্য ২২:১৮, ১৯.

১৬, ১৭. (ক) বেশ কিছু বছর পর্যন্ত প্রহরী শ্রেণী কোন্‌ মিথ্যা ধারণায় বিশ্বাস করেছিলেন? (খ) ‘মিসরের’ “যজ্ঞবেদি” এবং ‘স্তম্ভের’ আসল মানে কী?

১৬ এই নীতিটা যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝার জন্য আসুন আমরা একট উদাহরণ দেখি। ১৮৮৬ সালে সি. টি. রাসেল একটা বই লিখেছিলেন যেটার নাম ছিল বিভিন্ন যুগ সম্বন্ধে ঐশিক পরিকল্পনা (ইংরেজি)। ওই বইয়ে একটা তালিকা ছিল যাতে মানুষের যুগকে মিশরের বিরাটকায় পিরামিডের সঙ্গে তুলনা করে বোঝানো হয়েছিল। তখন মনে করা হয়েছিল যে যিশাইয় ১৯:১৯, ২০ পদে যে স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে সেটাই মিশরের ফরৌণ কুফোর পিরামিড, ওই পদ বলে: “সেই দিন মিসর দেশের মধ্যস্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি হইবে, এবং তাহার সীমার নিকটে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক স্তম্ভ স্থাপিত হইবে। তাহা মিসর দেশে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্দেশে চিহ্ন ও সাক্ষীস্বরূপ হইবে।” এই পিরামিডের সঙ্গে বাইবেলের কী সম্পর্ক? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই বিরাট পিরামিডে বেশ কয়েকটা প্রবেশপথ ছিল আর মনে করা হতো যে কিছু প্রবেশপথের দৈর্ঘ্য থেকে মথি ২৪:২১ পদে বলা “মহাক্লেশ” কবে শুরু হবে তা জানা যায়। তারা কোন্‌ দিন স্বর্গে যাবেন তা বের করার জন্য কিছু বাইবেল ছাত্ররা পিরামিডের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা মাপার কাজে লেগে গিয়েছিলেন!

১৭ বাইবেল ছাত্ররা কিছু বছর পর্যন্ত এই পিরামিডকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। কিন্তু ১৯২৮ সালের ১৫ই নভেম্বর এবং ১লা ডিসেম্বরের প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এই বিষয়টাকে পরিষ্কার করে দিয়েছিল যে মূর্তিপূজক ফরৌণদের দিয়ে বানানো পাথরের স্মৃতিসৌধকে যিহোবা ব্যবহার করবেন না আর বাইবেলে বলা সাক্ষ্যকে চেনার জন্য জ্যোতিষীদের ব্যবহৃত চিহ্নের দরকার নেই। ওই পত্রিকা বলেছিল যে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী বরং আধ্যাত্মিক অর্থে পরিপূর্ণ হয়েছিল। যেমন প্রকাশিত বাক্য ১১:৮ পদে দেওয়া “মিসর” হল শয়তানের জগৎ। “সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞবেদি” এই জগতের অস্থায়ী বাসিন্দা, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের গ্রহণযোগ্য ত্যাগস্বীকারের কথা মনে করিয়ে দেয়। (রোমীয় ১২:১; ইব্রীয় ১৩:১৫, ১৬) “[মিসরের] সীমার নিকটে” স্তম্ভ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মণ্ডলীকে বোঝায়, যা হল “সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি” আর তা “মিসরের” মধ্যে অর্থাৎ এই জগতে রয়েছে যাকে তারা খুব তাড়াতাড়িই ছেড়ে যাবেন।—১ তীমথিয় ৩:১৫.

১৮. (ক) আন্তরিক বাইবেল ছাত্রদের জন্য যিহোবা কীভাবে বিষয়গুলো পরিষ্কার করে চলেছেন? (খ) কোন খ্রীষ্টানের যদি বাইবেলের কোন ব্যাখ্যা বোঝা কঠিন বলে মনে হয়, তাহলে তার কী করা ভাল?

১৮ সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবা সত্যকে আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট করেছেন, যার মধ্যে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যের সঠিক অর্থও রয়েছে। (হিতোপদেশ ৪:১৮) কয়েক বছর আগে আমরা বেশ কিছু বিষয় আরও গভীরভাবে বুঝেছি যেমন আমাদের বলা হয়েছে যে শেষ আসার আগে যে বংশের লোপ হবে না সেই বংশ কী, মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্ত কখন পূর্ণ হবে, ঘৃণার্হ বস্তু কী এবং এটা কখন পবিত্র স্থানে দাঁড়াবে, নতুন চুক্তি, যীশুর রূপান্তর এবং যিহিষ্কেলের মন্দির সম্বন্ধীয় দর্শন কী বোঝায়। নতুন ব্যাখ্যাগুলো বুঝতে হয়তো কিছুটা কঠিন বলে মনে হতে পারে কিন্তু এর পিছনে যে যুক্তিগুলো দেওয়া আছে সেগুলো আস্তে আস্তে আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোন খ্রীষ্টান যদি বাইবেলের কোন ব্যাখ্যা পুরোপুরি বুঝতে না পারেন, তাহলে তিনি নম্রভাবে ভাববাদী মীখার কথাগুলো মেনে নিলে ভাল করবেন: “আমি . . . আমার ত্রাণেশ্বরের অপেক্ষা করিব।”—মীখা ৭:৭.

১৯. অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশ এবং তাদের সঙ্গী অপর মেষেরা কীভাবে এই শেষকালে সিংহের মতো সাহস দেখিয়েছেন?

১৯ মনে করে দেখুন যে প্রহরী “সিংহবৎ উচ্চ শব্দ করিয়া কহিল, হে যিহোবা, আমি দিনমানে নিরন্তর প্রহরি-দুর্গে দাঁড়াইয়া থাকি, এবং প্রতি রাত্রিতে আপন পাহারা-স্থানে দণ্ডায়মান রহিয়াছি।” (যিশাইয় ২১:৮) আজকে অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশরা সিংহের মতো সাহসী হয়ে মিথ্যা ধর্মকে প্রকাশ করে দিয়েছেন ও লোকেদের স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:২-৫) তারা আজ “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” হিসেবে কাজ করছেন ও অনেক ভাষায় বাইবেল, পত্রিকা এবং অন্যান্য সাহিত্যাদি প্রকাশ করেছেন যা হল “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য।” (মথি ২৪:৪৫) তারা “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক”-দের সংগ্রহ করায় নেতৃত্ব নিয়েছেন। তারাও যীশুর মুক্তির মূল্যের রক্তের দ্বারা পরিষ্কৃত হয়েছেন এবং “দিবারাত্র . . . আরাধনা” করার জন্য সিংহের মতো সাহস দেখিয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪, ১৫) যিহোবার অভিষিক্ত সাক্ষিদের ক্ষুদ্র দল ও তাদের সঙ্গী অর্থাৎ বিরাট জনতা গত কয়েক বছরে কী ফল পেয়েছেন? আমাদের পরের প্রবন্ধ তা জানাবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ ১৯৩৯ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে প্রচ্ছদ পাতায় এই কথাগুলো লেখা হতো, “‘তাহাতে লোকে জানিবে যে, আমিই [যিহোবা]।’—যিহিষ্কেল ৩৫:১৫.”

আপনার কি মনে আছে?

• বছরের পর বছর ধরে যিহোবা কোন্‌ সাক্ষিদের তৈরি করেছেন?

• মহতী বাবিলের শুরু কীভাবে হয়েছে?

• যিহোবা কেন তাঁর সাক্ষিদের রাজধানী যিরূশালেমকে সা.কা.পূ. ৬০৭ এবং সা.কা. ৭০ সালে ধ্বংস হতে দিয়েছিলেন?

• যিহোবার প্রহরী শ্রেণী এবং তাদের সঙ্গীরা কোন্‌ মনোভাব দেখিয়েছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

“হে প্রভু, আমি . . . নিরন্তর প্রহরি-দুর্গে দাঁড়াইয়া থাকি”

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবার প্রহরী শ্রেণী তাদের কাজকে খুবই জরুরি বলে মনে করেন