সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর”

“তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর”

“তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; . . তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।”—মথি ২৮:১৯, ২০.

গান সংখ্যা: ৪৭, ১৭

১, ২. মথি ২৪:১৪ পদে প্রাপ্ত যিশুর কথা থেকে কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়?

যিশু ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, শেষকালে রাজ্যের সুসমাচার সমস্ত লোকের কাছে প্রচার করা হবে। (মথি ২৪:১৪) যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা প্রচার কাজের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কেউ কেউ আমাদের প্রচারিত বার্তা পছন্দ করে, আবার অন্যেরা করে না। কিন্তু যারা আমাদের বার্তা পছন্দ করে না, এমনকী তাদের মধ্যেও কেউ কেউ আমাদের এই কাজের জন্য আমাদের সম্মান করে। আমরা দাবি করি, যিশু যে-কাজের বিষয়ে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, আমরাই সেই কাজ করছি। এটা দাবি করার অধিকার কি আমাদের আছে? কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি, আমরা যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত প্রচার কাজই করছি?

অনেক ধর্মীয় দল দাবি করে, তারা যিশুর বার্তা প্রচার করছে। তবে তাদের প্রচার কাজ গির্জার মঞ্চ থেকে, টেলিভিশনের পর্দায় অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ধর্মোপদেশ দেওয়ার কিংবা যিশু সম্বন্ধে তারা যেভাবে শিখেছে, তা বলার মধ্যে সীমিত থাকে। অন্যেরা মনে করে, অভাবী লোকেদের সাহায্য করা অথবা ডাক্তার, নার্স কিংবা শিক্ষক হিসেবে দাতব্য সেবা প্রদান করাই হচ্ছে তাদের প্রচার করার উপায়। কিন্তু এই কাজগুলো কি সেই প্রচার কাজ, যে-বিষয়ে যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন?

৩. মথি ২৮:১৯ পদ অনুযায়ী যিশুর অনুসারীদের কোন চারটে কাজ করতে হবে?

যিশু কি এটা বোঝাতে চেয়েছিলেন, তাঁর শিষ্যরা অপেক্ষা করে বসে থাকবে আর লোকেরা তাদের কাছে আসবে? না! পুনরুত্থানের পর যিশু তাঁর শত শত অনুসারীকে এই কথা বলেছিলেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; . . . তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (মথি ২৮:১৯, ২০) তাই, যিশুর অনুসারী হিসেবে আমাদেরকে চারটে কাজ করতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই শিষ্য তৈরি করতে হবে, তাদের বাপ্তাইজিত করতে হবে এবং তাদের শিক্ষা দিতে হবে। কিন্তু প্রথমে, আমাদের লোকেদের কাছে যেতে হবে। একজন বাইবেল পণ্ডিত ব্যাখ্যা করেছিলেন: “‘যাওয়া’ হচ্ছে প্রত্যেক বিশ্বাসীর উপর অর্পিত কাজ, তা সেটা রাস্তা অতিক্রম করে যাওয়া হোক কিংবা মহাসাগর অতিক্রম করে যাওয়া হোক।”—মথি ১০:৭; লূক ১০:৩.

৪. “মনুষ্যধারী” হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত?

যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে কী আশা করেছিলেন? তিনি কোনটা চেয়েছিলেন, তারা একা একা প্রচার করবে, না কি একটা দল হিসেবে সংগঠিত হবে? যেহেতু একজন ব্যক্তির পক্ষে ‘সমুদয় জাতির’ কাছে প্রচার করা অসম্ভব, তাই তাঁর শিষ্যদের একটা দল হিসেবে সংগঠিত হতে হবে। যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের “মনুষ্যধারী” হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন তিনি এটাই বুঝিয়েছিলেন। (পড়ুন, মথি ৪:১৮-২২.) যিশু এমনটা বোঝাতে চাননি, একজন মৎসধারী বা জেলে তার বড়শি ফেলে মাছ কখন টোপ গিলবে সেই অপেক্ষায় থাকবে। এর পরিবর্তে, যিশু জাল ব্যবহার করে মাছ ধরার বিষয়ে বলছিলেন। এভাবে মাছ ধরার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, সংগঠিত হতে হয় এবং অনেক লোককে একসঙ্গে কাজ করতে হয়।—লূক ৫:১-১১.

৫. কোন চারটে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং কেন?

কারা বর্তমানে সুসমাচার প্রচার করছে, তা জানার জন্য আমাদের এই চারটে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে:

  • যিশুর অনুসারীরা কোন বার্তা প্রচার করবে?

  • তাদের কোন উদ্দেশ্য থাকবে?

  • তারা কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবে?

  • কাজের পরিধি কেমন হবে আর তা কত সময় ধরে চলবে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের এটা শনাক্ত করতে সাহায্য করবে, কারা এই জীবনরক্ষাকারী কাজ করছে। এ ছাড়া, এটা আমাদের প্রচার কাজ করে চলার আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করবে।—১ তীম. ৪:১৬.

কোন বার্তা প্রচার করবে?

৬. কেন আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন, যিহোবার সাক্ষিরা সঠিক বার্তা প্রচার করছে?

লূক ৪:৪৩ পদ পড়ুন। যিশু “রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করেছিলেন এবং তিনি চান যেন তাঁর শিষ্যরাও একই বিষয় করে। কারা দলগতভাবে সমস্ত লোকের কাছে সেই বার্তা প্রচার করছে? একমাত্র যিহোবার সাক্ষিরা! যারা আমাদের পছন্দ করে না, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এটা স্বীকার করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন মিশনারি যাজক, যিনি বিভিন্ন দেশে থেকেছেন, তিনি একজন যিহোবার সাক্ষিকে কী বলেছেন, তা লক্ষ করুন। সেই যাজক প্রতিটা দেশে যিহোবার সাক্ষিদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা কোন বার্তা প্রচার করছে। এরপর সেই যাজক বলেছিলেন, “তারা খুব বোকা কারণ তারা সবাই একই উত্তর দিয়েছে: ‘রাজ্যের সুসমাচার।’” যাজকের এই মন্তব্য আসলে প্রমাণ করে যে, আমরা বোকা নই বরং সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা একতাবদ্ধ। (১ করি. ১:১০) এ ছাড়া, প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে, পত্রিকার মূল বার্তা হল ঈশ্বরের রাজ্য। এই পত্রিকা ২৫৪টা ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে এবং প্রতিটা সংখ্যা গড়ে প্রায় ৫,৯০,০০,০০০ কপি ছাপানো হচ্ছে। এটা প্রমাণ দেয়, পৃথিবীর মধ্যে প্রহরীদুর্গ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বিতরিত পত্রিকা!

৭. কীভাবে আমরা বলতে পারি, খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিরা সঠিক বার্তা প্রচার করছেন না?

খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিরা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করেন না। রাজ্য সম্বন্ধে তারা যদি কথা বলেও থাকেন, তা হলে অনেকে এমনটা বলেন, এই রাজ্য হল একজন ব্যক্তির হৃদয়ের অনুভূতি। (লূক ১৭:২১) তারা লোকেদের এটা শিক্ষা দেন না, রাজ্য হল এক স্বর্গীয় সরকার আর এর শাসক হলেন যিশু। এর পরিবর্তে, তারা সাধারণত শুধু বড়োদিন অথবা ইস্টারের সময় যিশুর বিষয়ে কথা বলেন। তারা এটা ব্যাখ্যা করেন না, রাজ্য মানবজাতির সমস্যার সমাধান করবে এবং শীঘ্রই পৃথিবী থেকে সমস্ত দুষ্টতা দূর করে দেবে। (প্রকা. ১৯:১১-২১) স্পষ্টতই, ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে যিশু কী করবেন, তা খ্রিস্টীয়জগতের নেতারা জানেন না। আর যেহেতু তারা যিশুর বার্তা বুঝতে পারেন না, তাই তারা এটাও বুঝতে পারেন না, কেন তাদের প্রচার করতে হবে।

প্রচার করার পিছনে কোন উদ্দেশ্য থাকবে?

৮. প্রচার কাজ করার পিছনে কোন ভুল উদ্দেশ্য থাকতে পারে?

যিশুর শিষ্যরা টাকা আয় করার জন্য কিংবা বড়ো বড়ো দালানকোঠা নির্মাণ করার জন্য প্রচার করে না। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা বিনামূল্যে পাইয়াছ, বিনামূল্যেই দান করিও।” (মথি ১০:৮) তাই, ‘ভাঁজ দিবার [‘ব্যবসা করার,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] উদ্দেশ্যে প্রচার করা ঠিক হবে না। (২ করি. ২:১৭) যিশুর শিষ্যরা তাদের প্রচার কাজের জন্য কোনো টাকা দাবি করবে না। (পড়ুন, প্রেরিত ২০:৩৩-৩৫.) যিশুর এই স্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও অধিকাংশ গির্জা টাকা সংগ্রহ করার মাধ্যমে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে, কারণ তারা সেই টাকা দিয়ে তাদের গির্জার তত্ত্বাবধান করে এবং পাদরিদের ও অন্যান্য কর্মচারীদের বেতন দিয়ে থাকে। এর ফলে, খ্রিস্টীয়জগতের অনেক নেতা প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছে।—প্রকা. ১৭:৪, ৫.

৯. কীভাবে যিহোবার সাক্ষিরা দেখিয়েছে, তারা সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচার কাজ করে থাকে?

যিহোবার সাক্ষিরা কি তাদের কিংডম হলে অথবা সম্মেলন হলে চাঁদা সংগ্রহ করে? না! তাদের কাজ স্বেচ্ছাকৃত দানের দ্বারা চলে। (২ করি. ৯:৭) তা সত্ত্বেও, গত বছর যিহোবার সাক্ষিরা সুসমাচার প্রচার কাজে প্রায় দু-শো কোটি ঘণ্টা ব্যয় করেছে এবং প্রতি মাসে নব্বই লক্ষেরও বেশি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেছে। প্রচার কাজ করার জন্য তাদের কোনো বেতন দেওয়া হয় না। বরং তারা এই কাজ করার জন্য আনন্দের সঙ্গে নিজেদের অর্থ ব্যবহার করে থাকে। একজন গবেষক যিহোবার সাক্ষিদের কাজ সম্বন্ধে এই মন্তব্য করেছেন: “প্রধান লক্ষ্য হল প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়া।” তিনি আরও বলেছিলেন, যিহোবার সাক্ষিদের কোনো বেতনভোগী পাদরি নেই। প্রচার করার পিছনে আমাদের যদি টাকা আয় করার উদ্দেশ্যে না থাকে, তা হলে আমরা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচার করি? আমরা স্বেচ্ছায় এই কাজ করি কারণ আমরা যিহোবাকে ও সেইসঙ্গে লোকেদের ভালোবাসি। এই ধরনের মনোভাব গীতসংহিতা ১১০:৩ পদের ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ করে। (পড়ুন।)

কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবে?

আমরা যেখানেই লোকেদের পাই, সেখানেই প্রচার করি (১০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১০. প্রচার করার জন্য যিশু ও তাঁর শিষ্যরা কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন?

১০ যিশু ও তাঁর শিষ্যরা প্রচার করার জন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন? যেখানেই লোক পাওয়া যেত, সেখানেই তারা গিয়েছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তারা রাস্তায় রাস্তায় এবং বাজারে বাজারে প্রচার করেছিলেন। এ ছাড়া, তারা ঘরে ঘরে গিয়েও লোকেদের খুঁজে থাকে। (মথি ১০:১১; লূক ৮:১; প্রেরিত ৫:৪২; ২০:২০) ঘরে ঘরে প্রচার করা ছিল সমস্ত ধরনের লোকের কাছে পৌঁছানোর এক সংগঠিত উপায়।

১১, ১২. সুসমাচার প্রচার করার বিষয়ে, যিহোবার লোকেদের ও খ্রিস্টীয় জগতের লোকেদের প্রচেষ্টার মধ্যে কোন পার্থক্য দেখা যায়?

১১ খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলো কি যিশুর মতো সুসমাচার প্রচার করে? বেতনভোগী পাদরিরা সাধারণত তাদের সদস্যদের উদ্দেশে ধর্মোপদেশ দিয়ে থাকেন। এই নেতারা নতুন কোনো শিষ্য তৈরি করেন না বরং ইতিমধ্যে গির্জার যে-সদস্যরা রয়েছে, তাদের ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কখনো কখনো, তারা তাদের সদস্যদেরকে প্রচার করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০০১ সালে পোপ জন পল ২য় একটা চিঠিতে বলেছিলেন, গির্জার সদস্যদের সুসমাচার প্রচার করা উচিত এবং প্রেরিত পৌলের মতো উদ্যম থাকা উচিত, যিনি বলেছিলেন: “ধিক্‌ আমাকে, যদি আমি সুসমাচার প্রচার না করি।” এরপর পোপ বলেছিলেন, শুধু অল্প কয়েক জন প্রশিক্ষিত ব্যক্তি নয় বরং গির্জার সকল সদস্য এই প্রচার কাজ করবে। কিন্তু অল্প লোকই সেই উৎসাহের প্রতি সাড়া দিয়েছিল।

১২ যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? শুধু মাত্র তারাই এটা প্রচার করে থাকে, যিশু ১৯১৪ সাল থেকে রাজা হিসেবে শাসন করছেন। তারা যিশুর বাধ্য থাকে এবং প্রচার কাজকে তাদের জীবনে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। (মার্ক ১৩:১০) পিলারস্‌ অভ্‌ ফেইথ—আ্যমেরিকান কংগ্রিগেশনস্‌ আ্যন্ড দেয়ার পার্টনারস্‌ বইয়ে বলা হয়েছে, যিহোবার সাক্ষিদের কাছে প্রচার কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বইয়ে এটাও বলা হয়েছে, তারা যখন ক্ষুধার্ত, নিঃসঙ্গ ও অসুস্থ লোকদের দেখতে পায়, তখন তারা তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করে, কিন্তু তারা কখনো এটা ভুলে যায় না যে, এই জগতের শেষ সম্বন্ধে প্রচার করা এবং লোকেদেরকে পরিত্রাণ সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। যিহোবার সাক্ষিরা ক্রমাগত সেই বার্তা প্রচার করে যাচ্ছে এবং যিশু ও তাঁর শিষ্যদের প্রচার করার পদ্ধতি অনুকরণ করছে।

কাজের পরিধি কেমন হবে আর তা কত সময় ধরে চলবে?

১৩. প্রচার কাজের পরিধি কেমন হবে?

১৩ যিশু বলেছিলেন, তার অনুসারীরা “সর্ব্ব জাতির কাছে” প্রচার করবে ও শিক্ষা দেবে। তাদের আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল যেন তারা ‘সমুদয় জাতির’ লোকেদের শিষ্য করে। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) এর অর্থ হল, পৃথিবীব্যাপী এই সুসমাচার প্রচার করতে হবে।

১৪, ১৫. যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণীতে প্রচার কাজের পরিধি সম্বন্ধে যা বলা আছে, সেটা যে যিহোবার সাক্ষিরা পরিপূর্ণ করছে, তার কোন প্রমাণ রয়েছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

১৪ সমস্ত জগতে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা হবে, যিশুর এই ভবিষ্যদ্‌বাণী শুধুমাত্র যিহোবার সাক্ষিরাই পরিপূর্ণ করছে। কেন আমরা তা বলতে পারি? যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিস্টীয়জগতের পাদরিদের সংখ্যা প্রায় ৬,০০,০০০ কিন্তু সেই দেশে প্রায় ১২,০০,০০০ যিহোবার সাক্ষি সুসমাচার প্রচার করছে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪,০০,০০০ ক্যাথলিক যাজক রয়েছে, কিন্তু ৮০ লক্ষেরও বেশি যিহোবার সাক্ষি দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে ২৪০টা জায়গায় সুসমাচার প্রচার করছে। তাই এটা স্পষ্ট, যিহোবার সাক্ষিরা সমগ্র পৃথিবীতে সুসমাচার প্রচার করছে আর এই কাজ যিহোবার সম্মান ও গৌরব নিয়ে আসছে!—গীত. ৩৪:১; ৫১:১৫.

১৫ যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমাদের লক্ষ্য হল, শেষ আসার আগে যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে সুসমাচার প্রচার করা। এই কাজ করার জন্য আমরা ৭০০-রও বেশি ভাষায় লক্ষ লক্ষ বই, পত্রিকা, ট্র্যাক্ট এবং সম্মেলন ও স্মরণার্থ সভার আমন্ত্রণপত্র অনুবাদ ও প্রকাশ করেছি। আমরা এগুলো লোকেদেরকে বিনা মূল্যে দিয়ে থাকি। গত বছর, আমরা প্রায় ৪৫০ কোটি বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি প্রকাশ করেছি। এ ছাড়া, ১৩০টারও বেশি ভাষায় ২০ কোটিরও বেশি পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল প্রকাশ করা হয়েছে। আর আমাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য ৭৫০-রও বেশি ভাষায় রয়েছে। একমাত্র যিহোবার সাক্ষিরাই এই ধরনের বিস্ময়কর কাজ করছে।

১৬. যিহোবার সাক্ষিদের উপর যে ঈশ্বরের আত্মার সাহায্য রয়েছে, তা আমরা কীভাবে জানি?

১৬ কত সময় ধরে এই প্রচার কাজ চলবে? যিশু বলেছিলেন, শেষ না আসা পর্যন্ত সুসমাচার প্রচার করা হবে। যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমাদের উপর যিহোবার পবিত্র আত্মার সাহায্য রয়েছে। কীভাবে আমরা তা জানি? কারণ পবিত্র আত্মার সাহায্যেই আমরা এই শেষকালজুড়ে প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পারছি। (প্রেরিত ১:৮; ১ পিতর ৪:১৪) কোনো কোনো ধর্মভীরু লোক নিজেদের সম্বন্ধে হয়তো এভাবে বলে থাকে, “আমাদের কাছে পবিত্র আত্মা রয়েছে।” কিন্তু এই শেষকালে যিহোবার সাক্ষিরা যে-কাজ করছে, তারা কি সেই কাজ করতে পারছে? কোনো কোনো দল আমাদের মতো প্রচার করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। অন্যেরা ইচ্ছুক মনোভাব নিয়ে প্রচার করে থাকে, তবে কেবল নির্ধারিত সময়ের জন্য। আবার অনেকে ঘরে ঘরে প্রচার করে ঠিকই, কিন্তু তারা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে না। তাই, তারা আসলে সেই কাজ করছে না, যা যিশু শুরু করেছিলেন।

বর্তমানে কারা সত্যিই সুসমাচার প্রচার করছে?

১৭, ১৮. (ক) কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি, বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিরাই রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছে? (খ) কীভাবে আমাদের পক্ষে এই কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে?

১৭ তা হলে, বর্তমানে কারা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করছে? শুধুমাত্র যিহোবার সাক্ষিরা! কীভাবে আমরা তা জানি? কারণ আমরা সঠিক বার্তা প্রচার করছি আর তা হল রাজ্যের সুসমাচার। আমরা পরিচর্যায় গিয়ে লোকেদের খুঁজে থাকি আর তাই আমরা সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করি। প্রচার করার জন্য আমাদের সঠিক উদ্দেশ্য রয়েছে আর সেটা হল, আমরা যিহোবাকে ভালোবাসি এবং লোকেদের ভালোবাসি। আমাদের প্রচার কাজের পরিধি ব্যাপক কারণ আমরা সমস্ত জাতি ও ভাষার লোকেদের কাছে প্রচার করি। আর শেষ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজ চালিয়ে যাব!

১৮ এই শেষকালজুড়ে সুসমাচার প্রচার করার জন্য যিহোবার লোকেরা যে-চমৎকার কাজ সম্পন্ন করছে, তা দেখা সত্যিই বিস্ময়কর। কিন্তু কীভাবে আমরা এই কাজ সম্পন্ন করতে পারছি? প্রেরিত পৌল এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “ঈশ্বরই আপন হিতসঙ্কল্পের নিমিত্ত তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য্য উভয়ের সাধনকারী।” (ফিলি. ২:১৩) আমরা যাতে ক্রমাগত সুসমাচার প্রচার করার জন্য যথাসাধ্য করতে পারি, সেইজন্য যিহোবা যেন সবসময় আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করেন!—২ তীম. ৪:৫.