সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের ভবিষ্যৎ কী পূর্বনির্ধারিত?

আমাদের ভবিষ্যৎ কী পূর্বনির্ধারিত?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য

আমাদের ভবিষ্যৎ কী পূর্বনির্ধারিত?

 কেউ কেউ বলে থাকে যে, আমাদের মৃত্যুর দিন অদৃষ্টের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত। অন্যেরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলে যে, আমাদের মৃত্যুর সময়টা ঈশ্বর নিজেই ঠিক করে থাকেন। অধিকন্তু, এই ধরনের লোকেরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে দেখে থাকে। আপনিও কি বিষয়গুলোকে এভাবে দেখে থাকেন?

আপনি হয়তো নিজেকে নীচের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘বস্তুতপক্ষে, আমাদের নিয়তিকে পরিবর্তন করার জন্য আমরা যদি কিছু করতেই না পারি আর ঈশ্বর অথবা অদৃষ্ট যদি কোনো বিষয়ের ফলাফল ইতিমধ্যেই নির্ধারণ করে রাখে, তাহলে প্রার্থনা করে লাভ কী? আর ইতিমধ্যেই যদি আমাদের নিয়তি নির্ধারণ করে রাখা হয়ে থাকে, তাহলে কেনই-বা আমাদের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেব? গাড়িতে করে ভ্রমণ করার সময় কেন সিট বেল্ট বাঁধব? বস্তুতপক্ষে, কেনই-বা মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকব?’

বাইবেল এই ধরনের বেপরোয়া আচরণকে কোনোভাবেই মার্জনা করে না। বিষয়গুলো অদৃষ্টের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে, বাইবেল ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দিয়েছিল যে, তারা যেন নিরাপত্তা সম্বন্ধে সচেতন হয়। উদাহরণস্বরূপ, তাদেরকে তাদের বাড়ির সমতল ছাদের চারদিকে এক নিচু প্রাচীর তৈরি করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, কেউ যেন দুর্ঘটনাবশত ছাদ থেকে পড়ে না যায়। কিন্তু, যদি একজন ব্যক্তির ছাদ থেকে পড়ে মারা যাওয়ার বিষয়টা আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে কেন ঈশ্বর এইরকম এক আজ্ঞা দেবেন?—দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৮.

সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য দুঃখজনক ঘটনার কারণে মারা যায়, যেগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে? তাদের “মৃত্যুর তারিখ” কি পূর্বনির্ধারিত? না, বাইবেলের লেখক রাজা শলোমন আমাদের আশ্বাস দেন যে, “[আমাদের] সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে।” (উপদেশক ৯:১১) তাই, পরিস্থিতি যতই অস্বাভাবিক বা অবিশ্বাস্য হোক না কেন, দুঃখজনক ঘটনাগুলো পূর্বনির্ধারিত নয়।

তবে, কেউ কেউ মনে করে যে, শলোমনের এই উক্তি তার আগের এই মন্তব্যের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে: “সকল বিষয়েরই সময় আছে, ও আকাশের নীচে সমস্ত ব্যাপারের কাল আছে। জন্মের কাল ও মরণের কাল।” (উপদেশক ৩:১) কিন্তু শলোমন কি প্রকৃতপক্ষে এক অদৃষ্টবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করছিলেন? আসুন আমরা এই কথাগুলোকে আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখি।

শলোমন বলছিলেন না যে, জন্ম এবং মৃত্যু হল পূর্বনির্ধারিত। বরং, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, লোকেরা জন্মগ্রহণ করে ও মারা যায় আর তা সবসময়ই ঘটে থাকে। নিশ্চিতভাবেই, জীবনে অনেক উত্থান-পতন থাকবে। ‘রোদন করিবার কাল ও হাস্য করিবার কাল আছে,’ শলোমন বলেন। শলোমন দেখান যে, জীবনে ও ‘আকাশের নীচে সমস্ত ব্যাপারে’ এই ধরনের বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্তি এবং অপ্রত্যাশিত দুর্যোগগুলো সাধারণ বিষয়। (উপদেশক ৩:১-৮; ৯:১১, ১২) তাই, তার উপসংহার হল, আমরা যেন আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে এতটাই ব্যস্ত হয়ে না পড়ি যে, আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে উপেক্ষা করি।—উপদেশক ১২:১, ১৩.

যদিও জীবন ও মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের সৃষ্টিকর্তা পুরোপুরি অবগত আছেন, তবু তিনি আমাদের ওপর নিয়তি ধার্য করে দেননি। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বর আমাদের সকলকেই চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা প্রদান করেন। কিন্তু, ঈশ্বর সেই প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য আমাদেরকে বাধ্য করেন না। এর পরিবর্তে, তাঁর বাক্য বলে: “যে ইচ্ছা করে, সে বিনামূল্যেই জীবন-জল গ্রহণ করুক।”—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭.

হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই “জীবন-জল গ্রহণ” করতে চাই। তাই, আমাদের ভবিষ্যৎ অদৃষ্টের দ্বারা নির্ধারিত নয়। আমাদের ভবিষ্যতের ওপর আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত, মনোভাব এবং কাজকর্মের প্রকৃত প্রভাব রয়েছে। (w০৯ ৪/১)