যিহোবার গুণাবলি পূর্ণরূপে উপলব্ধি করুন
“প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।”—ইফি. ৫:১.
১. (ক) একজন খ্রিস্টান যিহোবার কোন গুণাবলি নিয়ে বিবেচনা করতে পারে? (খ) ঈশ্বরের গুণাবলি পরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা কীভাবে উপকৃত হব?
আপনি যখন যিহোবার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে চিন্তা করেন, তখন আপনি কোন গুণাবলির কথা মনে করেন? আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রেম, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং শক্তির কথা চিন্তা করি। কিন্তু, আমরা বুঝতে পারি যে, যিহোবা অনেক চমৎকার গুণাবলির অধিকারী। বস্তুতপক্ষে, যিহোবার ৪০-টি ভিন্ন ভিন্ন গুণের একটা তালিকা তৈরি করা যেতে পারে, যেগুলোর প্রত্যেকটি নিয়ে আমাদের প্রকাশনায় আলোচনা করা হয়েছে। কেবল কল্পনা করুন যে, আমাদের ব্যক্তিগত অথবা পারিবারিক অধ্যয়নের মাধ্যমে যিহোবার ব্যক্তিত্বের আকর্ষণীয় দিকগুলো আবিষ্কার করার কী এক ভাণ্ডারই না অপেক্ষা করছে! এইরকম এক অধ্যয়ন থেকে আমরা কোন কোন উপায়ে উপকার লাভ করতে পারি? এটা আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে গভীর করতে পারে। ফল স্বরূপ, যিহোবার প্রতি আমাদের উপলব্ধি যতই গভীর হয়, ততই তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার এবং তাঁকে অনুকরণ করার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা দৃঢ় হয়।—যিহো. ২৩:৮; গীত. ৭৩:২৮.
২. (ক) আমরা কীভাবে যিহোবার গুণাবলির প্রতি আমাদের উপলব্ধি গভীর করতে পারি, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন। (খ) আমরা কী বিবেচনা করব?
২ কিন্তু, কোনো কিছু “উপলব্ধি” করার অর্থ কী? এখানে আমরা যে-শব্দটি ব্যবহার করব, সেটির অর্থ কোনো কিছুর সঠিক মূল্য বুঝতে পারা। উপলব্ধি ধীরে ধীরে গভীর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ: একটা নতুন খাবারের প্রতি আমাদের উপলব্ধি ধীরে ধীরে গভীর হয়, যখন আমরা এর ঘ্রাণ নিই, এরপর প্রতিটা কামড়ে এর স্বাদ উপভোগ করি এবং অবশেষে আমরা নিজেরাই সেই খাবার তৈরি করি। একইভাবে, সেই সময় যিহোবার একটা গুণের প্রতি আমাদের উপলব্ধি গভীর হয়, যখন আমরা সেই গুণের সঙ্গে পরিচিত হই, সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি এবং এরপর আমাদের জীবনে সেটা অনুকরণ করি। (ইফি. ৫:১) এই প্রবন্ধ এবং পরবর্তী দুটো প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হল, ঈশ্বরের সেই গুণাবলির প্রতি আমাদের উপলব্ধি গভীর করা, যেগুলো সম্বন্ধে আমরা হয়তো মুখ্য গুণগুলোর চেয়ে খুব কম চিন্তা করি। প্রতিটা গুণের ক্ষেত্রে আমরা এই বিষয়গুলো বিবেচনা করব: এটির অর্থ কী? কীভাবে যিহোবা এটি প্রদর্শন করেছেন? আর কীভাবে আমরা এই নির্দিষ্ট গুণ দেখানোর ক্ষেত্রে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?
যিহোবা বন্ধুত্বপরায়ণ
৩, ৪. (ক) এমন একজন ব্যক্তিকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন, যিনি বন্ধুত্বপরায়ণ? (খ) কীভাবে যিহোবা আমাদের এই আশ্বাস দেন যে, তিনি বন্ধুত্বপরায়ণ?
৩ আসুন, প্রথমে আমরা বন্ধুত্বপরায়ণ গুণটি বিবেচনা করি। এমন একজন ব্যক্তিকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন, যিনি বন্ধুত্বপরায়ণ? আপনি হয়তো বলতে পারেন, ‘যিনি সদয়, যাকে যেকোনো সময়ে পাওয়া যায় এবং যার সঙ্গে সহজেই কথা বলা যায়।’ একজন ব্যক্তি বন্ধুত্বপরায়ণ কি না, তা প্রায়ই আপনি সেই ব্যক্তির কথা শোনার এবং তার দেহভঙ্গি—অঙ্গভঙ্গি, মৌখিক অভিব্যক্তি এবং অন্যান্য নির্বাক সংকেত—লক্ষ করার মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারেন।
৪ কীভাবে যিহোবা প্রদর্শন করেন যে, তিনি বন্ধুত্বপরায়ণ? যদিও তিনি আমাদের নিখিলবিশ্বের সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা, তবুও যিহোবা আমাদের নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনার ও সেগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য ইচ্ছুক এবং উৎসুক। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১৪৫:১৮; যিশাইয় ৩০:১৮, ১৯.) আমরা তাঁর সঙ্গে যেকোনো সময় বা স্থানে দীর্ঘসময় ধরে কথা বলতে পারি। আমরা স্বচ্ছন্দে তাঁর কাছে আসতে পারি এটা জেনে যে, তিনি কখনোই এর জন্য আমাদের তিরস্কার করবেন না। (গীত. ৬৫:২; যাকোব ১:৫) ঈশ্বরের বাক্য যিহোবাকে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণনা করে এটা ইঙ্গিত করার জন্য যে, তিনি চান যেন আমরা তাঁর নিকটে আসি। উদাহরণস্বরূপ, গীতরচক দায়ূদ লিখেছিলেন, আমাদের “প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে” এবং তাঁর “দক্ষিণ হস্ত” আমাদের “ধরিয়া রাখে।” (গীত. ৩৪:১৫; ৬৩:৮) ভাববাদী যিশাইয় এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে যিহোবাকে একজন মেষপালকের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন: “তিনি শাবকদিগকে বাহুতে সংগ্রহ করিবেন, এবং কোলে করিয়া বহন করিবেন।” (যিশা. ৪০:১১) একটু কল্পনা করুন! একটা মেষশাবক যেমন একজন যত্নশীল মেষপালকের কোলে আশ্রয় নেয়, তেমনই যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর নিকটবর্তী হই। কী এক চমৎকার পিতাই না আমাদের রয়েছে! এই ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?
অত্যন্ত মূল্যবান এক গুণ
৫. কেন প্রাচীনদের জন্য বন্ধুত্বপরায়ণ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ?
৫ খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, বিভিন্ন মহাদেশে বসবাসরত উদ্যোগী সাক্ষিদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “একজন প্রাচীনের কোন গুণকে আপনি সবচেয়ে বেশি মূল্যবান বলে মনে করেন?” তাদের মধ্যে অধিকাংশই উত্তর দিয়েছিল, “বন্ধুত্বপরায়ণ মনোভাব।” এটা ঠিক যে, প্রত্যেক খ্রিস্টানেরই পূর্ণরূপে সেই গুণ গড়ে তোলা প্রয়োজন কিন্তু বিশেষভাবে প্রাচীনদের জন্য বন্ধুত্বপরায়ণ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। (যিশা. ৩২:১, ২) একজন বোন কেন মনে করেন যে, এই গুণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেই সম্বন্ধে তিনি বলেন: “একজন প্রাচীন যদি বন্ধুত্বপরায়ণ হন, একমাত্র তাহলেই আমরা তার অন্যান্য চমৎকার গুণ থেকে উপকার লাভ করতে পারব।” আপনি কি এই মন্তব্যের যুক্তি বুঝতে পারছেন? কিন্তু, কী একজন ব্যক্তিকে বন্ধুত্বপরায়ণ করে তোলে?
৬. বন্ধুত্বপরায়ণ হওয়ার একটা চাবিকাঠি কী?
৬ বন্ধুত্বপরায়ণ হওয়ার একটা চাবিকাঠি হল, অন্যদের প্রতি অকৃত্রিম আগ্রহ দেখানো। একজন প্রাচীন যদি অন্যদের জন্য চিন্তা করেন এবং তাদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছুক হন, তাহলে তার সমস্ত ভাইবোন, যাদের মধ্যে অল্পবয়সিরাও রয়েছে, হয়তো এই মনোভাব উপলব্ধি করতে পারবে। (মার্ক ১০:১৩-১৬) ১২ বছর বয়সি কার্লোস বলে: “হলের মধ্যে আমি প্রাচীনদের হাসিখুশি মুখ এবং সদয় কাজ দেখতে পাই আর তাদের এই বিষয়টা দেখে আমার ভালো লাগে।” অবশ্য, একজন প্রাচীনের পক্ষে শুধু এটা বলাই যথেষ্ট নয় যে, তিনি বন্ধুত্বপরায়ণ কিন্তু তার এই গুণ প্রকাশ করাও উচিত। (১ যোহন ৩:১৮) কীভাবে তিনি তা করতে পারেন?
৭. কেন একটা সম্মেলনের ব্যাজ কার্ড পরা প্রায়ই আলোচনা শুরু করে এবং এটা থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
৭ এই তুলনাটা চিন্তা করে দেখুন। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, একজন ভাই অন্য একটা দেশে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর, তার ব্যাজ কার্ড পরিহিত অবস্থায় প্লেনে করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। প্লেনের একজন পরিচারক যখন ব্যাজ কার্ডের এই কথাগুলো দেখেছিলেন, “ঈশ্বরের রাজ্য আইসুক!” তখন তিনি ভাইকে বলেছিলেন, “হ্যাঁ, তা আইসুক—বিষয়টা নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে আরও কথা বলতে চাই।” পরে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল এবং সেই পরিচারক সানন্দে আমাদের পত্রিকা গ্রহণ করেছিলেন। আমাদের মধ্যে অনেকের একইরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, কেন একটা সম্মেলনের ব্যাজ কার্ড দেখে প্রায়ই আলোচনা শুরু হয়? কারণ, এক অর্থে এটা লোকেদের বলে: “আমার কাছে আসতে স্বচ্ছন্দ বোধ করুন। আমি কোথায় যাচ্ছি, তা আমাকে জিজ্ঞেস করুন।” ব্যাজ কার্ড এক দৃশ্যত সংকেত, যা লোকেদের বলে যে, আমরা আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে জানাতে ইচ্ছুক। একইভাবে, খ্রিস্টান প্রাচীনরা এমন দৃশ্যত সংকেতগুলো দিতে চান, যেগুলো তাদের সহবিশ্বাসীদের এই কথা বলে: “আমার কাছে আসতে স্বচ্ছন্দ বোধ করুন।” সেই সংকেতগুলোর মধ্যে কয়েকটা কী?
৮. কীভাবে প্রাচীনরা অন্যদের প্রতি অকৃত্রিম আগ্রহের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে আর কীভাবে সেটা মণ্ডলীর ওপর প্রভাব ফেলে?
৮ বিভিন্ন দেশের রীতি বিভিন্ন রকম হতে পারে কিন্তু আমরা যখন আমাদের ভাই ও বোনদের দেখে উষ্ণ হাসি দিই, আন্তরিকভাবে হাত মেলাই, সাদর সম্ভাষণ জানাই, তখন আমরা এই ইঙ্গিত দিই যে, আমরা আসলেই তাদের প্রতি আগ্রহী। এই ক্ষেত্রে কার আগে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? যিশুর দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ লক্ষ করুন। মথি বলেন যে, তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়: “যীশু নিকটে আসিয়া তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন।” (মথি ২৮:১৮) একইভাবে, বর্তমানে প্রাচীনরা তাদের সহবিশ্বাসীদের কাছে গিয়ে কথা বলার জন্য আগে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। কীভাবে এটা মণ্ডলীকে প্রভাবিত করতে পারে? ৮৮ বছর বয়সি একজন অগ্রগামী বোন বলেছিলেন: “কিংডম হলে ঢোকার সময় প্রাচীনরা আমাকে দেখে যখন উষ্ণ হাসি দেয় এবং উৎসাহমূলক মন্তব্য করে, তখন আমি তাদের প্রতি আরও আকৃষ্ট হই।” আরেকজন বিশ্বস্ত বোন যুক্ত করেছিলেন: “যদিও এটাকে একটা সামান্য বিষয় বলে মনে হতে পারে কিন্তু একজন প্রাচীন যখন সভাতে হাসিমুখে আমাকে অভ্যর্থনা জানান, তখন সেটা আমার জন্য অনেক অর্থ রাখে।”
যিনি বন্ধুত্বপরায়ণ এবং যাকে যেকোনো সময়ে পাওয়া যায়
৯, ১০. (ক) যিহোবা কোন চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন? (খ) কীভাবে প্রাচীনরা যেকোনো সময়ে অন্যদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিতে পারে?
৯ স্পষ্টতই, আমাদের যদি যেকোনো সময়ে পাওয়া না যায়, তাহলে আমরা বন্ধুত্বপরায়ণ হতে পারব না। এক্ষেত্রে, যিহোবা এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। “তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (প্রেরিত ১৭:২৭) একটা যে-উপায়ে প্রাচীনরা যেকোনো সময়ে নিজেদের বিলিয়ে দিতে পারে, সেটা হল খ্রিস্টীয় সভাগুলোর আগে এবং পরে ভাই ও বোনদের—যুবক-বৃদ্ধ সকলের—সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় আলাদা করে রাখার মাধ্যমে। একজন অগ্রগামী ভাই মন্তব্য করেছিলেন: “একজন প্রাচীন যখন আমার খবরাখবর জানতে চান এবং মন দিয়ে আমার উত্তর শোনেন, তখন আমি অনুভব করি যে, আমাকে মূল্যবান বলে গণ্য করা হয়।” প্রায় ৫০ বছর ধরে যিহোবার সেবা করছেন এমন একজন বোন বলেছিলেন: “যে-প্রাচীনরা সভার পরে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় করে নেয়, তারা আমাকে এইরকম অনুভব করতে পরিচালিত করে যে, আমি মূল্যবান।”
১০ এটা ঠিক যে, খ্রিস্টান পালকদের অন্যান্য দায়িত্বও পালন করতে হয়। কিন্তু, সভাতে প্রথমে মেষদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া তাদের একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত।
যিহোবা পক্ষপাতহীন
১১, ১২. (ক) পক্ষপাতহীন হওয়ার অর্থ কী? (খ) কীভাবে বাইবেল দেখায় যে, যিহোবা পক্ষপাতহীন?
১১ যিহোবার আরেকটি চমৎকার গুণ হচ্ছে পক্ষপাতহীন মনোভাব। পক্ষপাতহীন হওয়ার অর্থ কী? এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ন্যায্য হওয়া, পক্ষানুরাগ অথবা বিশেষ অনুরাগ থেকে মুক্ত কিংবা এগুলো না দেখানো। অকৃত্রিম পক্ষপাতহীন মনোভাবের দুটো দিক রয়েছে: মনোভাব এবং কাজ। কেন দুটোই প্রয়োজন? কারণ, কেবল একজন ব্যক্তি যদি মনোভাবের ক্ষেত্রে পক্ষপাতহীন হন, তাহলেই তিনি সকলের সঙ্গে পক্ষপাতহীনভাবে আচরণ করতে পরিচালিত হবেন। খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রে “পক্ষপাতপূর্ণ না” হওয়ার আক্ষরিক অর্থ হল, “মুখ বাছাই” না করা, মুখ দেখে অনুগ্রহ না করা। (প্রেরিত ১০:৩৪; কিংডম ইন্টারলিনিয়ার) তাই, যিনি পক্ষপাতহীন, তিনি ব্যক্তি-বিশেষের বাহ্যিক বেশভূষা অথবা পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং ব্যক্তি হিসেবে তার বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত সম্মান দেখাবেন।
১২ পক্ষপাতহীন মনোভাবের ক্ষেত্রে যিহোবা হলেন সর্বমহান উদাহরণ। তার বাক্য বলে যে, তিনি “মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারসন] করেন না” এবং তিনি “কাহারও মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাত,” জুবিলী বাইবেল] করেন না।” (পড়ুন, প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৭.) মোশির দিনের একটা পরিস্থিতি এই বিষয়টা তুলে ধরে।
১৩, ১৪. (ক) সলফাদের মেয়েরা কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল? (খ) কীভাবে যিহোবা পক্ষপাতহীন মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন?
১৩ ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার ঠিক আগে, পাঁচ জন অবিবাহিত আপন বোন একটা কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল। সেটা কী? তারা জানত যে, অন্যান্য ইস্রায়েলীয় পরিবারের মতো তাদের পরিবারও তাদের বাবার অধিকারভুক্ত একটা জমি লাভ করবে। (গণনা. ২৬:৫২-৫৫) কিন্তু, তাদের বাবা সলফাদ মারা গিয়েছিলেন, যিনি মনঃশি বংশের ছিলেন। প্রথা অনুযায়ী, সেই জমির অধিকার সলফাদের ছেলেদের পাওয়ার কথা কিন্তু তার কেবল মেয়ে ছিল। (গণনা. ২৬:৩৩) যেহেতু সেই জমি লাভ করার জন্য পরিবারে কোনো ছেলে ছিল না, তাই পরিবারের জমি কি আত্মীয়দের দিয়ে দেওয়া হবে এবং মেয়েরা পারিবারিক উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে?
১৪ সেই পাঁচ বোন মোশির কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল: “আমাদের পিতার পুত্ত্র নাই বলিয়া তাঁহার গোষ্ঠী হইতে তাঁহার নাম কেন লোপ পাইবে?” তারা অনুনয় করে বলেছিল: “আমাদের পিতৃকুলের ভ্রাতৃগণের মধ্যে আমাদিগকে অধিকার দিউন।” মোশি কি এইরকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন যে, ‘নিয়ম ভাঙা যাবে না’? না, তিনি “সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাদের বিচার উপস্থিত করিলেন।” (গণনা. ২৭:২-৫) যিহোবা কী বলেছিলেন? যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন: “সলফাদের কন্যাগণ যথার্থ কহিতেছে; তুমি উহাদের পিতৃকুলের ভ্রাতাদিগের মধ্যে অবশ্য উহাদিগকে স্বত্বাধিকার দিবে, ও উহাদের পিতার অধিকার উহাদিগকে সমর্পণ করিবে।” যিহোবা আরও কিছু করেছিলেন। তিনি মোশিকে নির্দেশনা প্রদান করার মাধ্যমে এই ব্যতিক্রম পরিস্থিতির জন্য একটা নিয়ম স্থাপন করেছিলেন: “কেহ যদি অপুত্ত্রক হইয়া মরে, তবে তোমরা তাহার অধিকার তাহার কন্যাকে দিবে।” (গণনা. ২৭:৬-৮; যিহো. ১৭:১-৬) এরপর থেকে, একইরকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল এমন সমস্ত ইস্রায়েলীয় নারী সুরক্ষা লাভ করেছিল।
১৫. (ক) যিহোবা তাঁর লোকেদের সঙ্গে, এমনকী যারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রয়েছে, তাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করেন? (খ) বাইবেলের অন্যান্য কোন বিবরণ দেখায় যে, যিহোবা পক্ষপাতহীন?
১৫ সেটা কত সদয় এবং পক্ষপাতহীন এক সিদ্ধান্তই না ছিল! যিহোবা এই নারীদের সঙ্গে, যারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছিল, মর্যাদা সহকারে আচরণ করেছিলেন, যেমনটা তিনি সেই ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গেও করেছিলেন, যারা আরও অনুকূল পরিস্থিতিতে ছিল। (গীত. ৬৮:৫) এটা হল বাইবেলের এমন অনেক বিবরণের মধ্যে মাত্র একটা বিবরণ, যা এই হৃদয়গ্রাহী সত্য সম্বন্ধে তুলে ধরে: যিহোবা তাঁর সমস্ত দাসের সঙ্গে পক্ষপাতহীনভাবে আচরণ করেন।—১ শমূ. ১৬:১-১৩; প্রেরিত ১০:৩০-৩৫, ৪৪-৪৮.
আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি
১৬. কীভাবে আমরা পক্ষপাতহীন মনোভাব গড়ে তুলতে এবং তা শক্তিশালী করতে পারি?
১৬ কীভাবে আমরা যিহোবার পক্ষপাতহীন মনোভাবকে অনুকরণ করতে পারি? মনে রাখবেন, পক্ষপাতহীন মনোভাবের দুটো দিক রয়েছে। কেবল আমরা যদি পক্ষপাতহীন হই, তাহলে আমরা অন্যদের সঙ্গে পক্ষপাতহীনভাবে আচরণ করতে পারব। এটা ঠিক যে, আমরা সকলেই নিজেদেরকে খোলা মনের এবং পক্ষপাতহীন বলে মনে করতে চাই। কিন্তু, আপনি হয়তো একমত হবেন যে, আমাদের নিজেদের অনুভূতিগুলো নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করা সবসময় সহজ নয়। তাই, আমরা পক্ষপাতহীন ব্যক্তি কি না, তা নির্ণয় করার জন্য আমরা কী করতে পারি? যিশু যখন লোকেরা তাঁর সম্বন্ধে কী বলে, তা জানতে আগ্রহী ছিলেন, তখন তিনি তাঁর নির্ভরযোগ্য বন্ধুদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র কে, এ বিষয়ে লোকে কি বলে?” (মথি ১৬:১৩, ১৪) এক্ষেত্রে, যিশুকে অনুসরণ করুন না কেন? আপনাকে অকপটভাবে উত্তর দেবে এমন কিছু বন্ধুকে আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, পক্ষপাতহীন ব্যক্তি হিসেবে আপনার সুনাম রয়েছে কি না। তিনি যদি স্বীকার করেন যে, আপনি হয়তো বর্ণ, সামাজিক পদমর্যাদা অথবা টাকাপয়সা দেখে কিছুটা পক্ষপাতিত্ব করে থাকেন, তাহলে আপনার কী করা উচিত? আপনার অনুভূতি সম্বন্ধে যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করুন, আপনার মনোভাব পরিবর্তন করার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য তাঁর কাছে অনুরোধ করুন, যাতে আপনি তাঁর পক্ষপাতহীন মনোভাবকে পূর্ণরূপে প্রতিফলিত করতে পারেন।—মথি ৭:৭; কল. ৩:১০, ১১.
১৭. কোন কোন উপায়ে আমরা অন্যদের সঙ্গে পক্ষপাতহীনভাবে আচরণ করতে পারি?
১৭ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমাদের সমস্ত ভাই ও বোনদের সঙ্গে মর্যাদা ও প্রেমপূর্ণ দয়া সহকারে আচরণ করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার পক্ষপাতহীন মনোভাব অনুকরণ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করি। উদাহরণস্বরূপ, আতিথেয়তা দেখানোর ক্ষেত্রে, আমরা সব শ্রেণীর সহবিশ্বাসীকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই, যার অন্তর্ভুক্ত সেই ব্যক্তিরা, যারা ভিন্ন পটভূমি থেকে এসেছে, গরিব, অনাথ অথবা বিধবা। (পড়ুন, গালাতীয় ২:১০; যাকোব ১:২৭.) এ ছাড়া, রাজ্যের প্রচার কাজের সময় আমরা সমস্ত পটভূমির লোকেদেরকে, যার অন্তর্ভুক্ত বিদেশি লোকেরাও, পক্ষপাতহীনভাবে সুসমাচার জানিয়ে থাকি। আমরা কত আনন্দিত যে, আমাদের বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি প্রায় ৬০০-টা ভাষায় পাওয়া যায়। পক্ষপাতহীন মনোভাবের কী এক স্পষ্ট প্রমাণ!
১৮. আপনি কীভাবে ব্যক্তিগত উপায়ে প্রদর্শন করবেন যে, আপনি যিহোবার বন্ধুত্বপরায়ণ এবং পক্ষপাতহীন মনোভাবকে উপলব্ধি করেন?
১৮ সত্যিই, যিহোবা কতটা বন্ধুত্বপরায়ণ এবং পক্ষপাতহীন, সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য আমরা যখন সময় করে নিই, তখন তাঁর প্রতি আমাদের উপলব্ধি আরও গভীর হয়। গভীর উপলব্ধি যেন আমাদেরকে যিহোবার গুণাবলি পূর্ণরূপে অনুকরণ করার জন্য পরিচালিত করে, সেগুলো সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে এবং যাদের কাছে আমরা প্রচার করি, তাদের সঙ্গে আমাদের আচরণে প্রদর্শিত হয়।