সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়সিরা—তোমরা তোমাদের জীবনকে কীভাবে কাজে লাগাবে?

অল্পবয়সিরা—তোমরা তোমাদের জীবনকে কীভাবে কাজে লাগাবে?

অল্পবয়সিরা—তোমরা তোমাদের জীবনকে কীভাবে কাজে লাগাবে?

“আমি . . . এরূপে মুষ্ঠিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না।”—১ করি. ৯:২৬.

১, ২. প্রাপ্তবয়স্ক হতে থাকার সময় সফল হতে চাইলে, তোমাদের কী থাকতে হবে?

 তোমরা যদি কোনো অচেনা পথে যাত্রা করো, তাহলে তোমরা হয়তো সঙ্গে করে একটা মানচিত্র ও একটা কম্পাস নিতে চাইবে। সেই মানচিত্র তোমাদেরকে বর্তমান অবস্থান শনাক্ত করতে এবং সঠিক পথের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। কম্পাস তোমাদেরকে সঠিক পথে অবস্থান করতে সাহায্য করবে। কিন্তু, সেই মানচিত্র ও কম্পাস তোমাদেরকে তেমন কোনো উপকারই করবে না, যদি না তোমরা জানো যে, কোন দিকে যাচ্ছ। উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে-বেড়ানো এড়িয়ে চলার জন্য তোমাদেরকে সঠিকভাবে তোমাদের গন্তব্য জানতে হবে।

তোমরা একই রকমের পরিস্থিতির মুখোমুখি হও, যখন তোমরা প্রাপ্তবয়স্ক হতে থাক। তোমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য এক মানচিত্র ও একটা কম্পাস, দুটোই রয়েছে। বাইবেল হচ্ছে এমন একটি মানচিত্র, যেটি তোমাদেরকে জানতে সাহায্য করতে পারে যে, কোন পথটা বাছাই করতে হবে। (হিতো. ৩:৫, ৬) উপযুক্তভাবে প্রশিক্ষিত করা হলে, তোমাদের সংবেদ বা বিবেক তোমাদেরকে সঠিক পথে থাকার জন্য এক বিরাট সহায়ক হতে পারে। (রোমীয় ২:১৫) এটা একটা কম্পাসের মতো কাজ করতে পারে। কিন্তু, জীবনকে সফল করতে হলে, তোমাদেরকেও জানতে হবে যে, তোমরা কোন দিকে যাচ্ছ। তোমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন।

৩. প্রথম করিন্থীয় ৯:২৬ পদে পৌল বিভিন্ন লক্ষ্য রাখার কোন উপকারগুলো তুলে ধরেছেন?

প্রেরিত পৌল বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করার এবং সেই লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা করার উপকারগুলো সম্বন্ধে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছিলেন, যখন তিনি এই কথা লিখেছিলেন: “আমি এরূপে দৌড়িতেছি যে বিনালক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্ঠিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না।” (১ করি. ৯:২৬) তোমাদের যদি বিভিন্ন লক্ষ্য থাকে, তাহলে তোমরা নিশ্চয়তা সহকারে দৌড়াতে পারবে। শীঘ্র, তোমাদেরকে উপাসনা, চাকরি, বিয়ে এবং পরিবার সম্বন্ধে বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেগুলো হল মাত্র কয়েকটা উদাহরণ। মাঝে মাঝে তোমাদের মনে হতে পারে যে, তোমরা অনেক বিভ্রান্তিমূলক বাছাইয়ের মুখোমুখি হয়েছ। কিন্তু, তোমরা যদি আগে থেকেই তোমাদের পথ সম্বন্ধে পরিকল্পনা করে রাখো, ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত সত্য ও নীতিগুলো অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নাও, তাহলে তোমরা ভুল পথে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হবে না।—২ তীম. ৪:৪, ৫.

৪, ৫. (ক) তোমরা যদি নিজেদের লক্ষ্য নিজেরাই স্থাপন না করো, তাহলে কী হতে পারে? (খ) কেন তোমাদের বাছাইগুলো করার সময় এর পিছনে ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত?

তোমরা যদি নিজেদের লক্ষ্য নিজেরাই স্থাপন না করো, তাহলে তোমাদের সঙ্গীসাথি ও শিক্ষকরা হয়তো তাদের কাছে তোমাদের জন্য যেটা সঠিক বলে মনে হয়, সেটা করতে প্ররোচিত করবে। অবশ্য, এমনকী তোমাদের যদি সুস্পষ্ট লক্ষ্যও থাকে, তবুও কেউ কেউ হয়তো তাদের মতামত জানাতে পারে। তাদের পরামর্শ শোনার সময় নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করো, ‘তাদের উল্লেখিত লক্ষ্যগুলো কী আমাকে যুবক বা যুবতী থাকাকালীন আমার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে সাহায্য করবে, নাকি সেগুলো আমাকে তা করা থেকে বিক্ষিপ্ত করবে?’—পড়ুন, উপদেশক ১২:১.

কেন তোমাদের জীবনের বাছাইগুলো করার সময় এর পিছনে ঈশ্বরকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত? একটা কারণ হল যে, যিহোবা আমাদেরকে সমস্ত উত্তম বিষয় দিয়েছেন। (যাকোব ১:১৭) সত্যিই, প্রত্যেকেই যিহোবার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে বাধ্য। (প্রকা. ৪:১১) লক্ষ্য স্থাপন করার সময় যিহোবার কথা মনে রেখে উপলব্ধি দেখানোর চেয়ে উত্তম উপায় আর কীই-বা হতে পারে? এসো আমরা বিবেচনা করি যে, কোন লক্ষ্যগুলো অর্জন করা উপযুক্ত এবং সেগুলোতে পৌঁছানোর জন্য তোমাদেরকে কী করতে হবে।

তোমরা কোন লক্ষ্যগুলো স্থাপন করতে পারো?

৬. তোমরা কোন মৌলিক লক্ষ্য স্থাপন করতে পারো এবং কেন?

আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, একটা মৌলিক যে-লক্ষ্য তোমরা স্থাপন করতে পারো, তা হল বাইবেলে যা বলা হয়েছে, তা সত্য কি না, সেটা নিজে প্রমাণ করে দেখা। (রোমীয় ১২:২; ২ করি. ১৩:৫) তোমাদের সঙ্গীসাথিরা হয়তো বিবর্তনবাদে অথবা বিভিন্ন মিথ্যা ধর্মীয় মতবাদগুলোতে বিশ্বাস করে কারণ অন্যেরা তাদেরকে বলেছে যে, এটাই তাদের বিশ্বাস করা উচিত। কিন্তু তোমাদের ক্ষেত্রে, কেবল অন্যেরা চায় বলেই যে কোনো কিছুতে বিশ্বাস করতে হবে এমন নয়। মনে রাখবে যে, যিহোবা চান যেন তোমরা তাঁকে সমস্ত মন দিয়ে সেবা করো। (পড়ুন, মথি ২২:৩৬, ৩৭.) আমাদের স্বর্গীয় পিতা চান যেন তোমরা প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে তোমাদের বিশ্বাস গড়ে তোলো।—ইব্রীয় ১১:১.

৭, ৮. (ক) স্বল্পমেয়াদী কোন লক্ষ্যগুলো স্থাপন করা তোমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে? (খ) তোমরা যদি কয়েকটা স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যে পৌঁছাও, তাহলে তোমরা কী উপভোগ করবে?

তোমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য কিছু স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য স্থাপন করো না কেন? একটা লক্ষ্য হতে পারে, প্রতিদিন প্রার্থনা করা। তোমাদের প্রার্থনাকে বিশুদ্ধ ও নির্দিষ্ট করার জন্য তোমরা দৈনন্দিন এমন ঘটনা সম্বন্ধে মনে রাখতে বা নোট লিখে রাখতে পারো, যেগুলো তোমরা তোমাদের প্রার্থনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাও। তোমাদের প্রার্থনায় কেবল তোমরা যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়েছ, সেগুলোই নয় বরং সেইসঙ্গে তোমরা যে-বিষয়গুলো উপভোগ করেছ, সেগুলোও উল্লেখ করো। (ফিলি. ৪:৬) আরেকটা লক্ষ্য হল প্রতিদিন বাইবেল পাঠ করা। তোমরা কি জানো যে, প্রতিদিন তোমরা যদি প্রায় চার পৃষ্ঠা করে বাইবেল পড়ো, তাহলে তোমরা মাত্র এক বছরে পুরো বাইবেল পড়ে শেষ করতে পারবে? * “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে . . . সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে,” গীতসংহিতা ১:১, ২ পদ বলে, “তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে।”

তৃতীয় স্বল্পমেয়াদী যে-লক্ষ্য তোমরা স্থাপন করতে পারো, তা হল মণ্ডলীর প্রতিটা সভার জন্য একটা উত্তর প্রস্তুত করা। প্রথম প্রথম, তোমরা হয়তো পড়ে উত্তর দিতে অথবা একটা শাস্ত্রপদ পড়তে চাইবে। পরে, তোমরা নিজের ভাষায় উত্তর দেওয়ার লক্ষ্য স্থাপন করতে পারো। বস্তুতপক্ষে, যত বার তোমরা উত্তর দাও, তত বার তোমরা যিহোবাকে একটা করে উপহার দান করে থাকো। (ইব্রীয় ১৩:১৫) একবার তোমরা এই লক্ষ্যগুলোর কয়েকটাতে পৌঁছানোর পর, তোমাদের আস্থা ও সেইসঙ্গে যিহোবার প্রতি তোমাদের উপলব্ধি বৃদ্ধি পাবে এবং তোমরা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলো স্থাপন করার জন্য প্রস্তুত হবে।

৯. তোমরা যদি এখনও রাজ্যের একজন প্রকাশক না হয়ে থাকো, তাহলে তোমরা নিজেদের জন্য কোন দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলো স্থাপন করতে পারো?

তোমরা নিজেদের জন্য কোন দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলো স্থাপন করতে পারো? তোমরা যদি এখনও জনসাধারণ্যে সুসমাচার ঘোষণা করতে শুরু না করে থাকো, তাহলে তোমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হতে পারে রাজ্যের একজন প্রকাশক হওয়া। একবার এই সম্মানজনক লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর, তোমরা তা নিয়মিত ও কার্যকারীভাবে করতে চাইবে, পরিচর্যা না করে একটা মাসও অতিবাহিত করবে না। এ ছাড়া, তোমরা পরিচর্যায় বাইবেল ব্যবহার করাও শিখতে চাইবে। তা করলে, তোমরা হয়তো দেখবে যে, তোমরা আরও বেশি করে প্রচার কাজ উপভোগ করছ। এরপর তোমরা ঘরে ঘরে কাজে যে-সময় ব্যয় করো, সেটা বাড়াতে অথবা এমনকী একটা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার প্রচেষ্টা করতে পারবে। একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হিসেবে, বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হওয়ার এবং যিহোবা ঈশ্বরের একজন উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত সাক্ষি হওয়ার লক্ষ্য স্থাপন করার চেয়ে উত্তম আর কোন লক্ষ্য তুমি স্থাপন করতে পারো?

১০, ১১. কোন দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলো বাপ্তাইজিত অল্পবয়সিরা নিজেদের জন্য স্থাপন করতে পারে?

১০ তোমরা যদি ইতিমধ্যেই যিহোবার একজন বাপ্তাইজিত দাস হয়ে থাকো, তাহলে এখানে কিছু দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলোতে তোমরা পৌঁছাতে পারো। তোমরা হয়তো মাঝে মাঝে মণ্ডলীকে কদাচিৎ প্রচার করা হয় এমন এলাকায় প্রচার করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারো। এ ছাড়া, তোমরা হয়তো সহায়ক বা নিয়মিত অগ্রগামীর কাজে তোমাদের শক্তি এবং উত্তম স্বাস্থ্য ব্যবহার করা বেছে নিতে পারো। হাজার হাজার আনন্দিত অগ্রগামী তোমাদেরকে বলবে যে, পূর্ণসময়ের সেবা হচ্ছে তোমাদের অল্পবয়সে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করার এক পরিতৃপ্তিদায়ক উপায়। এই লক্ষ্যগুলো তোমরা নিজেদের বাড়িতে থেকেই অর্জন করতে পারো। সেগুলোতে পৌঁছালে তোমাদের স্থানীয় মণ্ডলীও উপকৃত হবে।

১১ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য তোমাদেরকে কেবল স্থানীয় মণ্ডলীকে উপকৃত করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করার সুযোগ দেবে। উদাহরণস্বরূপ, তোমরা হয়তো আরেকটা এলাকায় অথবা দেশে গিয়ে সেবা করার পরিকল্পনা করতে পারো, যেখানে বেশি প্রয়োজন। তোমরা হয়তো বিদেশে কিংডম হল অথবা শাখা অফিসগুলো নির্মাণে সাহায্য করতে চাইতে পারো। তোমরা এমনকী বেথেল পরিচর্যায় প্রবেশ করতে অথবা একজন মিশনারি হতে পারো। অবশ্য, এখানে উল্লেখিত অধিকাংশ দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে তোমাকে যে-প্রথম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে, তা হল বাপ্তাইজিত হওয়া। তুমি যদি এখনও বাপ্তাইজিত না হয়ে থাকো, তাহলে তোমার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে পৌঁছানোর সঙ্গে কী জড়িত, তা বিবেচনা করো।

বাপ্তিস্মের লক্ষ্যে পৌঁছানো

১২. কোন কারণগুলোর জন্য কেউ কেউ বাপ্তাইজিত হয় এবং কেন এই কারণগুলো সন্তোষজনক নয়?

১২ বাপ্তিস্মের উদ্দেশ্যকে তোমরা কীভাবে বর্ণনা করবে? কেউ কেউ হয়তো চিন্তা করে যে, এটা তাদেরকে পাপের কাছে নতিস্বীকার করা থেকে সুরক্ষা করার জন্য। অন্যেরা হয়তো এইরকম মনে করতে পারে যে, তাদের সঙ্গীসাথিরা বাপ্তাইজিত হয়েছে বলে বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত। অন্যান্য অল্পবয়সি হয়তো তাদের বাবা-মাদের খুশি করতে চায়। কিন্তু, বাপ্তিস্ম এমন কোনো চুক্তি নয়, যা তোমাদেরকে সেই কাজগুলো থেকে বিরত রাখবে, যেগুলো তোমরা গোপনে করতে চাও; অথবা অন্যদের চাপে পড়েও তোমাদের বাপ্তাইজিত হওয়া উচিত নয়। তোমাদের সেই সময় বাপ্তাইজিত হওয়া দরকার, যখন তোমরা যিহোবার সাক্ষি হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত, তা পুরোপুরি বুঝতে পারো এবং যখন তোমরা নিশ্চিত হও যে, তোমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত ও ইচ্ছুক।—উপ. ৫:৪, ৫.

১৩. কেন তোমাদের বাপ্তাইজিত হওয়া উচিত?

১৩ বাপ্তিস্ম নেওয়ার একটা কারণ হল যে, যিশু তাঁর অনুসারীদের ‘শিষ্য করিবার, তাহাদিগকে বাপ্তাইজিত করিবার’ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, বাপ্তাইজিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি নিজেও উদাহরণ স্থাপন করেছেন। (পড়ুন, মথি ২৮:১৯, ২০; মার্ক ১:৯.) অধিকন্তু, যারা রক্ষা পেতে চায়, তাদের জন্য বাপ্তিস্ম হচ্ছে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নোহ ও তার পরিবার জলপ্লাবনের সময় যে-জাহাজে রক্ষা পেয়েছিল, সেটার নির্মাণের বিষয় উল্লেখ করার পর প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম . . . তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে।” (১ পিতর ৩:২০, ২১) কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, বাপ্তিস্ম হচ্ছে একটা বিমা চুক্তি করার মতো, যা তোমরা কোনো দুর্যোগ আসতে পারে চিন্তা করে করতে পারো। এর পরিবর্তে, তোমরা বাপ্তাইজিত হও কারণ তোমরা যিহোবাকে ভালোবাসো এবং তোমাদের সমস্ত হৃদয়, প্রাণ, মন এবং শক্তি দিয়ে তাঁর সেবা করতে চাও।—মার্ক ১২:২৯, ৩০.

১৪. কেন কেউ কেউ বাপ্তাইজিত হতে ইতস্তত করে কিন্তু তোমাদের কোন আশ্বাস রয়েছে?

১৪ কেউ কেউ হয়তো এই ভয়ে বাপ্তাইজিত হতে ইতস্তত করে যে, পরে সে হয়তো সমাজচ্যুত হতে পারে। তোমরা কী এইরকম ভয় পাও? যদি পাও, তাহলে এই ধরনের ভয় আসলে খারাপ নয়। এর অর্থ হতে পারে যে, তোমরা সেই গুরু দায়িত্বকে উপলব্ধি করো, যা একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার মাধ্যমে আসে। অন্যান্য আরও কারণ কি থাকতে পারে? তোমরা হয়তো এখনও এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওনি যে, ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা হল জীবনের সর্বোত্তম পথ। এই ক্ষেত্রে, বাইবেলের মানগুলো উপেক্ষা করে এমন ব্যক্তিদের পরিণতি সম্বন্ধে চিন্তা করা তোমাদেরকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে, তোমরা হয়তো ঈশ্বরের মানগুলোকে ভালোবাসতে পারো কিন্তু সেগুলো পালন করতে পারবে কি না, সেই ব্যাপারে নিজেদের ওপর নির্ভর করতে পারো না। আসলে, এটা এক ভালো লক্ষণ হতে পারে কারণ এটা তোমাদের নম্রতাকে প্রকাশ করে। কারণ বাইবেল বলে যে, সমস্ত অসিদ্ধ মানুষের হৃদয় প্রবঞ্চক। (যির. ১৭:৯) কিন্তু, তোমরা সফল হতে পার, যদি তোমরা ক্রমাগত ‘ঈশ্বরের বাক্যানুসারে সাবধান হও।’ (পড়ুন, গীতসংহিতা ১১৯:৯.) বাপ্তাইজিত হওয়ার বিষয়ে ইতস্তত করার যে-কারণই তোমাদের থাকুক না কেন, তোমাদের সেই বিষয়গুলো ও উদ্‌বেগগুলো মীমাংসা করতে হবে। *

১৫, ১৬. তোমরা বাপ্তিস্মের জন্য প্রস্তুত কি না, তা তোমরা কীভাবে বলতে পার?

১৫ কিন্তু, তোমরা বাপ্তিস্মের জন্য প্রস্তুত কি না, তা তোমরা কীভাবে বলতে পার? একটা উপায় হল নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা: ‘আমি কি অন্যদের কাছে বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো ব্যাখ্যা করতে পারি? আমি কি সেই সময়েও পরিচর্যায় যাই, এমনকী যখন আমার বাবা-মা না-ও যায়? আমি কি সমস্ত খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করার চেষ্টা করি? আমি কি নির্দিষ্ট ঘটনার কথা স্মরণ করতে পারি, যখন আমি সঙ্গীসাথিদের চাপ প্রতিরোধ করেছি? আমি কি যিহোবাকে সেবা করে যেতে পারব, এমনকী যদিও আমার বাবা-মা এবং বন্ধুবান্ধবরা তা করা বাদ দিয়ে দেয়? আমি কি ঈশ্বরের সঙ্গে আমার সম্পর্কের ব্যাপারে প্রার্থনা করেছি? আর আমি কি সত্যিই প্রার্থনায় যিহোবার কাছে অকপট উৎসর্গীকরণ করেছি?’

১৬ বাপ্তিস্ম হচ্ছে জীবন পালটে দেওয়ার মতো একটা ধাপ, যেটাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। তোমরা কি এই ধাপ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার মতো যথেষ্ট পরিপক্ব হয়েছ? পরিপক্বতার অর্থ কেবল মঞ্চ থেকে খুব ভালো বক্তৃতা দিতে পারার অথবা কোনো সভার সময় প্রভাববিস্তারকারী উত্তর দেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু। এর জন্য বাইবেলের নীতিগুলোর বোধগম্যতার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হওয়া প্রয়োজন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৫:১৪.) তোমরা যদি জীবনের কোনো একটা পর্যায়ে থাকো, যেখানে তোমরা তা করতে পারো, তাহলে তোমাদের সামনে সবচেয়ে মহৎ এক সুযোগ আর তা হল, সর্বান্তঃকরণে যিহোবার সেবা করা এবং এমনভাবে জীবনযাপন করা, যা দেখায় যে, তোমরা আসলেই তাঁর কাছে উৎসর্গীকৃত।

১৭. কী তোমাদেরকে সেই পরীক্ষাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে, যেগুলো তোমাদের বাপ্তিস্মের পরে আসতে পারে?

১৭ বাপ্তিস্মের পর পরই তোমাদের হয়তো ঈশ্বরকে সেবা করার ব্যাপারে অনেক উদ্যম থাকতে পারে। কিন্তু, শীঘ্র তোমরা হয়তো এমন পরীক্ষাগুলোর সম্মুখীন হতে পারো, যেগুলো তোমাদের বিশ্বাস ও দৃঢ়তাকে পরীক্ষায় ফেলবে। (২ তীম. ৩:১২) এইরকমটা মনে করবে না যে, তোমাদেরকে একাই এই পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। তোমাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে উপদেশ চাও। মণ্ডলীর পরিপক্ব ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চাও। সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলো, যারা তোমাকে সমর্থন করবে। কখনো ভুলে যাবে না যে, যিহোবা তোমাদের জন্য চিন্তা করেন এবং তিনি তোমাদেরকে যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করবেন।—১ পিতর ৫:৬, ৭.

কীভাবে তোমরা তোমাদের লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে পারো?

১৮, ১৯. কীভাবে তোমরা তোমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পরীক্ষা করার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারো?

১৮ সবচেয়ে ভালো অভিপ্রায় থাকা সত্ত্বেও তোমাদের কি এইরকমটা মনে হয় যে, তোমরা যা করতে চাও এবং তোমাদের যা করতে হবে, সেটার জন্য কখনো পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকে না? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে তোমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পরীক্ষা করে দেখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ: একটা প্লাস্টিকের বালতি নাও এবং সেটার ভিতর বেশ কয়েকটা বড়ো বড়ো পাথর রাখো। এরপর বালতিটা বালি দিয়ে পূর্ণ করো। তোমাদের কাছে পাথর ও বালি ভরতি একটা বালতি রয়েছে। বালতিটা খালি করো কিন্তু সেই বালি ও পাথরগুলো রেখে দাও। এরপর, প্রথমে বালতিটা বালি দিয়ে পূর্ণ করো আর তার পর বালতির ভিতর পাথরগুলো রাখার চেষ্টা করো। কোনো জায়গা নেই, তাই না? এর কারণ হল, তোমরা তোমাদের বালতিতে প্রথমে বালি রেখেছ।

১৯ তোমরাও একই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হও যখন তোমরা তোমাদের সময়কে সমন্বয় করতে যাও। তোমরা যদি বিনোদনের মতো বিষয়গুলোকে প্রথম স্থানে রাখো, তাহলে তোমরা কখনো তোমাদের জীবনে বড়ো বড়ো বিষয়—আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো—রাখার জন্য হয়তো পর্যাপ্ত স্থান পাবে না। কিন্তু, তোমরা যদি “যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW]” এমন বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখার ক্ষেত্রে বাইবেলের উপদেশ অনুসরণ করো, তাহলে তোমরা দেখবে যে, তোমাদের রাজ্যের বিষয় এবং সেইসঙ্গে কিছুটা বিনোদনের জন্য স্থান রয়েছে।—ফিলি. ১:১০.

২০. তোমাদের লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর সময় তোমরা যদি উদ্‌বিগ্ন হও অথবা সন্দেহ করো, তাহলে তোমাদের কী করা উচিত?

২০ তোমরা যদি বাপ্তিস্মসহ তোমাদের লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা করো, তাহলে তোমরা হয়তো মাঝে মাঝে উদ্‌বিগ্ন হতে এবং সন্দেহ করতে পারো। যখন এইরকমটা হবে, তখন “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন।” (গীত. ৫৫:২২) এই মুহূর্তে, তোমাদের মানব ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে আর তা হল, পৃথিবীব্যাপী প্রচার ও শিক্ষাদানের অভিযান। (প্রেরিত ১:৮) তোমরা হয়তো এই কাজে অংশ না নেওয়া বেছে নিতে পারো। অথবা তোমরা হয়তো এই রোমাঞ্চকর কাজে সক্রিয় অংশ নিতে পারো। রাজ্যের বিষয়গুলোকে বাড়ানোর জন্য তোমাদের কর্মক্ষমতা ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকো না। তোমরা কখনো “যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্তাকে” সেবা করার কারণে অনুশোচনা করবে না।—উপ. ১২:১.

[পাদটীকাগুলো]

^ ২০১০ সালের জানুয়ারি – মার্চ প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৩-২৬ পৃষ্ঠা দেখো।

^ এই ক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়ার জন্য যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে, খণ্ড ২ (ইংরেজি) বইয়ের ৩৪ অধ্যায় দেখো।

কীভাবে আপনি উত্তর দেবেন?

• কেন তোমাদের বিভিন্ন লক্ষ্য স্থাপন করা উচিত?

• কিছু লক্ষ্য কী, যেগুলোতে পৌঁছানো উপযুক্ত?

• বাপ্তিস্মের লক্ষ্যে পৌঁছানোর সঙ্গে কী জড়িত?

• তোমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পরীক্ষা করা কীভাবে তোমাদের লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

তোমাদের কি প্রতিদিন বাইবেল পড়ার এক লক্ষ্য রয়েছে?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

কী তোমাদেরকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে?

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

এই উদাহরণ থেকে তুমি কী শিখতে পারো?