সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরীক্ষাগুলো সহ্য করা যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করেছে

পরীক্ষাগুলো সহ্য করা যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করেছে

পরীক্ষাগুলো সহ্য করা যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করেছে

বলেছেন অ্যাডা ডেলো স্ট্রিটো

আমি সবেমাত্র আমার নোটবুকে দৈনিক শাস্ত্রপদটি কপি করা শেষ করেছি। আমার বয়স ৩৬ বছর কিন্তু সেই কয়েকটা লাইন লিখতে আমার দু-ঘন্টা লেগেছে। কেন এত সময় লেগেছে? আমার মা তা ব্যাখ্যা করবেন।—জোয়েল

আমার স্বামী এবং আমি ১৯৬৮ সালে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তাইজিত হই। ডেভিড ও মার্ক নামে দুটো সুস্থসবল ছেলের জন্ম দেওয়ার পর, আমি আমাদের তৃতীয় ছেলে জোয়েলের জন্ম দিই। সে ১৯৭৩ সালে, ব্রাসেল্‌সের প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে বেলজিয়ামের বিঁশ শহরের একটা হাসপাতালে নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করে। তার ওজন ছিল মাত্র ১.৭ কেজি। আমি যখন হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসি, তখন জোয়েলকে আরও ওজন বাড়ানোর জন্য সেখানেই রেখে আসতে হয়।

কয়েক সপ্তাহ পরও যখন আমাদের ছেলের মধ্যে কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যায়নি, তখন আমার স্বামী লুইজি এবং আমি তাকে নিয়ে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যাই। জোয়েলকে পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর, ডাক্তার বলেছিলেন: “আমি খুবই দুঃখিত। তার দাদাদের নেই এমন সব সমস্যাই জোয়েলের রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” এটা শোনার পর আমরা অনেকক্ষণ ধরে কেউ কোনো কথা বলতে পারিনি। সেই মুহূর্তে, আমি বুঝতে পারি যে, আমাদের ছোট্ট ছেলের এক গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। এরপর ডাক্তার আমার স্বামীকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাকে বলেন: “আপনাদের বাচ্চার ট্রাইসোমি ২১ হয়েছে,” যেটা ডাউন সিনড্রোম (বিকলাঙ্গতা) নামেও পরিচিত। *

সেই শিশু বিশেষজ্ঞের রোগনির্ণয়ের ফলাফল শুনে দুঃখিত হয়ে আমরা অন্য একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞকে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিই। তিনি একটা কথাও না বলে প্রায় এক ঘন্টা ধরে খুব মনোযোগ সহকারে ছোট্ট জোয়েলকে পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। লুইজি ও আমার কাছে তা এক দীর্ঘ যুগ বলে মনে হয়েছিল। পরিশেষে, ডাক্তার আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন: “আপনাদের সাহায্য ছাড়া আপনাদের সন্তান কিছুই করতে পারবে না।” এরপর, তিনি সদয়ভাবে এও বলেছিলেন, “তবে জোয়েল ভাগ্যবান কারণ তার বাবা-মা তাকে ভালোবাসে!” আবেগাপ্লুত হয়ে আমি আমার কোলের মধ্যে জোয়েলকে জড়িয়ে ধরি এবং তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। সেই সময় তার বয়স ছিল আট সপ্তাহ।

খ্রিস্টীয় সভাগুলো ও পরিচর্যা আমাদের শক্তিশালী করেছিল

চিকিৎসা সংক্রান্ত আরও পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল যে, জোয়েলের হৃদযন্ত্রের গঠনে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে আর তার এক ধরনের মারাত্মক রিকেটও (ভিটামিন ডি-এর অভাবে শিশুর হাড়ের অপুষ্টিজনিত রোগ-বিশেষ) রয়েছে। তার হার্ট খুব বড়ো হওয়ার কারণে, এটা তার ফুসফুসে চাপ সৃষ্টি করত আর এর ফলে তার সহজেই ইনফেকশন হওয়ার ভয় ছিল। খুব শীঘ্র, তার বয়স যখন চার মাস, তখন জোয়েলের নিউমোনিয়া হয় এবং তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, যেখানে তাকে পৃথক করে রাখা হয়। তাকে কষ্ট পেতে দেখা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। আমাদের মন চাইত তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে, কিন্তু নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক দশ সপ্তাহ যাবৎ আমাদেরকে তাকে একেবারে স্পর্শ পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। লুইজি এবং আমার, চেয়ে চেয়ে দেখা এবং পরস্পরকে ধরে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।

সেই কঠিন পরীক্ষার সময়েও, ডেভিড এবং মার্ককে নিয়ে আমরা ক্রমাগত সভাগুলোতে যোগদান করতাম, যাদের বয়স ছিল তখন যথাক্রমে ৬ ও ৩ বছর। আমাদের জন্য কিংডম হলে উপস্থিত থাকা, যিহোবার যত্নশীল হস্তের মধ্যে থাকার সমরূপ ছিল। যে-সময়টুকু আমরা সেখানে অর্থাৎ আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের মাঝে থাকতাম, সেই সময়টুকু আমাদের মনে হতো যে, আমরা যিহোবার ওপর আমাদের ভার অর্পণ করতে পেরেছি আর এর ফলে আমরা অনেকটা মনের শান্তি লাভ করতাম। (গীত. ৫৫:২২) এমনকী যে-নার্সরা জোয়েলের যত্ন নিত, তারাও মন্তব্য করেছিল যে, কীভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করা আমাদেরকে আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছে, তা তারা লক্ষ করেছে।

সেই সময়ে আমি যিহোবার কাছে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাওয়ার জন্য শক্তি চেয়েও বিনতি করেছিলাম। ঘরে বসে কান্নাকাটি করার চেয়ে বরং আমি অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে এবং তাদেরকে এই বিষয়টা জানাতে চেয়েছিলাম যে, কেন অসুস্থতাবিহীন এক জগৎ সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ওপর আমার নির্ভরতা আমাকে শক্তি প্রদান করেছে। প্রত্যেক বার যখনই আমি পরিচর্যায় যেতে সমর্থ হতাম, তখনই আমি অনুভব করতাম যে, যিহোবা আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন।

“সত্যিই, আশ্চর্য ঘটনা!”

অবশেষে, আমরা যখন জোয়েলকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনতে পেরেছিলাম, তখন সেটা কতই না আনন্দদায়ক দিন ছিল! কিন্তু ঠিক পরের দিনই, আমাদের আনন্দ দুঃখে পরিণত হয়। জোয়েলের অবস্থা দ্রুত খুবই খারাপ হয়ে যায় আর তাই আমরা তাড়াতাড়ি করে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাকে পরীক্ষা করার পর, ডাক্তাররা আমাদের বলেছিল: “জোয়েল খুব জোর আর ছয় মাস বাঁচবে।” দুই মাস পর, তার বয়স যখন প্রায় আট মাস, তখন ডাক্তারদের ভবিষ্যদ্‌বাণী সত্য বলে মনে হয়েছিল কারণ জোয়েলের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে। একজন ডাক্তার আমাদের পাশে বসে বলেছিলেন: “আমি খুবই দুঃখিত। তার জন্য আমরা এর চেয়ে আর বেশি কিছু করতে পারব না।” এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “এই সময়ে, একমাত্র যিহোবাই তাকে সাহায্য করতে পারেন।”

আমি হাসপাতালে জোয়েলের রুমে ফিরে যাই। যদিও আমি আবেগগত দিক দিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম ও শারীরিকভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু আমি কোনো মতেই তার বিছানার পাশ থেকে সরে না যাওয়ার সংকল্প নিয়েছিলাম। বেশ কয়েক জন খ্রিস্টান বোন পালা পালা করে আমার সঙ্গে ছিল কারণ লুইজিকে আমাদের দুই বড়ো ছেলের দেখাশোনা করতে হচ্ছিল। এক সপ্তাহ কেটে যায়। এরপর হঠাৎ জোয়েলের হার্ট অ্যাটাক হয়। নার্সরা দৌড়ে তার রুমে যায় কিন্তু তাকে সাহায্য করার জন্য তারা কিছুই করতে পারে না। কয়েক মিনিট পর, তাদের মধ্যে একজন মৃদুস্বরে বলেছিল: “সে আর নেই . . .।” অবসন্ন হয়ে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি ও সেই রুম থেকে চলে যাই। আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার চেষ্টা করি, কিন্তু আমার যন্ত্রণা প্রকাশ করার কোনো ভাষাই আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। প্রায় ১৫ মিনিট কেটে যায় আর এরপর একজন নার্স চিৎকার করে আমাকে ডেকে বলেন, “জোয়েল সুস্থ হয়ে উঠছে!” তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “আসুন, এখন আপনি তাকে দেখতে পারেন।” আমি যখন জোয়েলের কাছে ফিরে যাই, তখন আবারও তার হৃদস্পন্দন হচ্ছিল! তার সুস্থ হয়ে ওঠার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নার্স ও ডাক্তাররা তাকে দেখতে আসে আর অনেকেই অবাক হয়ে বলে “সত্যিই, আশ্চর্য ঘটনা!”

চার বছর বয়সে অবাক করার মতো এক উন্নতি

জোয়েলের জীবনের প্রথম বছরগুলোতে, সেই শিশু বিশেষজ্ঞ প্রায়ই আমাদের বলতেন, “জোয়েলের প্রচুর ভালোবাসার প্রয়োজন।” যেহেতু জোয়েলের জন্মের পর লুইজি ও আমি বিশেষভাবে যিহোবার প্রেমময় যত্ন অনুভব করেছিলাম, তাই আমরাও আমাদের ছেলেকে প্রেমময় যত্ন দিয়ে ঘিরে রাখতে চেয়েছিলাম। আমাদের তা করার অনেক সুযোগ ছিল কারণ তার সমস্ত কাজে আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল।

জোয়েলের জীবনের প্রথম সাত বছরের মধ্যে প্রতি বছরই আমাদেরকে একই ধারাবাহিক ঘটনার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছে। অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে সে একটার পর একটা স্বাস্থ্যগত সমস্যা ভোগ করত আর তাই আমাদেরকে বার বার তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ও সেখান থেকে নিয়ে আসতে হতো। একই সময়ে, আমি আমাদের ছেলে ডেভিড ও মার্ককে যতটা সম্ভব সময় দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম। পরে, জোয়েলকে উন্নতি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার ব্যাপারে তারাও অনেক প্রচেষ্টা করে—আর এর ফল হয় আশ্চর্যজনক। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক জন ডাক্তার আমাদের বলেছিল যে, জোয়েল কখনো হাঁটতে পারবে না। কিন্তু একদিন, জোয়েলের বয়স যখন চার বছর, তখন আমাদের ছেলে মার্ক বলে, “জোয়েল, মাকে দেখিয়ে দাও তো যে, তুমি হাঁটতে পারো!” আমাকে অবাক করে দিয়ে জোয়েল প্রথম বারের মতো পা ফেলেছিল! আমরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমাদের হৃদয় থেকে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য পরিবারগতভাবে একত্রে প্রার্থনা করেছিলাম। অন্যান্য সময়ে, জোয়েল যখন কোনো না কোনো ক্ষেত্রে এমনকী সামান্য উন্নতিও করত, তখনও আমরা সবসময় তাকে আন্তরিকভাবে প্রশংসা করতাম।

একেবারে ছোটোবেলা থেকেই ঈশ্বরীয় প্রশিক্ষণ উত্তম ফল নিয়ে আসে

যখনই সম্ভব হতো, তখনই আমরা জোয়েলকে আমাদের সঙ্গে করে কিংডম হলের সভাগুলোতে নিয়ে যেতাম। সহজেই অসুস্থ করে ফেলতে পারে এমন জীবাণুগুলো থেকে সুরক্ষা করার জন্য আমরা তাকে এক বিশেষ ধরনের স্ট্রলারে বসাতাম, যেটা একটা স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণ দিয়ে ঢাকা ছিল। কিন্তু, এমনকী সেই আবরণের ভিতরে থেকেও সে মণ্ডলীতে উপস্থিত থাকা উপভোগ করত।

আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনেরা আমাদের জন্য শক্তির এক উৎস ছিল, যারা আমাদেরকে প্রেম দিয়ে ঘিরে রেখেছিল ও ব্যবহারিক সাহায্য প্রদান করেছিল। একজন ভাই প্রায়ই আমাদের যিশাইয় ৫৯:১ পদের এই কথাগুলো মনে করিয়ে দিতেন: “দেখ, সদাপ্রভুর হস্ত এমন খাট নয় যে, তিনি পরিত্রাণ করিতে পারেন না; তাঁহার কর্ণ এমন ভারী নয় যে, তিনি শুনিতে পান না।” আশ্বাসদায়ক এই কথাগুলো আমাদেরকে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে সাহায্য করেছে।

জোয়েল বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আমরা যিহোবার সেবা করার বিষয়টাকে তার জীবনের একটা বড়ো অংশ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। প্রতিটা সুযোগে আমরা তার সঙ্গে এমনভাবে যিহোবার বিষয়ে কথা বলতাম, যেন জোয়েল তার স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক প্রেমময় বন্ধন গড়ে তোলে। আমাদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করার জন্য আমরা যিহোবার কাছে বিনতি করতাম, যাতে ঈশ্বরীয় প্রশিক্ষণ উত্তম ফল নিয়ে আসে।

সে যখন কিশোর বয়সে পা দেয়, তখন আমরা এটা দেখে খুবই কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম যে, যাদের সঙ্গে জোয়েলের সাক্ষাৎ হতো, তাদেরকে বাইবেলের সত্যগুলো জানাতে সে ভালোবাসত। তার বয়স যখন ১৪ বছর, তখন বড়ো ধরনের একটা অস্ত্রোপচার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সময়, আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম যখন জোয়েল আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “মা, আমি কি সার্জনকে অনন্তকাল বইটি দিতে পারি?” কয়েক বছর পর, জোয়েলের আরও একটা অস্ত্রোপচার হয়। আমরা ভালোভাবেই জানতাম যে, এতে সে হয়তো আর বাঁচবে না। অস্ত্রোপচারের আগে, জোয়েল তার ডাক্তারদের হাতে একটা চিঠি দেয়, যেটা আমরা তার সঙ্গে একত্রে প্রস্তুত করেছিলাম। এই চিঠিতে রক্তের ব্যবহার সম্বন্ধে তার অবস্থানের বিষয়ে ব্যাখ্যা করা ছিল। সার্জন জোয়েলকে জিজ্ঞেস করেন, “তাহলে তুমি কি এর সঙ্গে একমত?” জোয়েল দৃঢ়তার সঙ্গে উত্তর দিয়েছিল, “হ্যাঁ, ডাক্তার।” নিজ সৃষ্টিকর্তার ওপর আমাদের ছেলের নির্ভরতা ও তাঁকে খুশি করার বিষয়ে তার দৃঢ়সংকল্প দেখে আমরা খুবই গর্ববোধ করেছিলাম। হাসপাতালের কর্মীরা অনেক সহযোগিতা করেছিল আর এর জন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

জোয়েলের আধ্যাত্মিক উন্নতি

১৭ বছর বয়সে, জোয়েল ঈশ্বরের কাছে তার উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। সেটা কী এক অবিস্মরণীয় দিনই না ছিল! তাকে আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে দেখে আমাদের মন গভীর আনন্দে ভরে ওঠে। সেই সময় থেকে, যিহোবার প্রতি তার প্রেম ও সত্যের প্রতি উদ্যোগ কখনো কমে যায়নি। বস্তুতপক্ষে, যার সঙ্গেই জোয়েলের সাক্ষাৎ হয়, তাদের প্রত্যেকেই সে এটা বলতে ভালোবাসে, “সত্যই হল আমার জীবন!”

কিশোর বয়সের শেষের দিকে, জোয়েল পড়তে ও লিখতে শেখে। এর জন্য অনেক প্রচেষ্টা করতে হয়েছে। প্রত্যেকটা ছোটো শব্দ লিখতে পারা তার জন্য এক বিজয়ের মতো ছিল। সেই সময় থেকে, সে প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করা পুস্তিকা থেকে দৈনিক শাস্ত্রপদটি বিবেচনা করার দ্বারা প্রতিটা দিন শুরু করে। এরপর, সে অত্যন্ত কষ্ট করে তার একটা নোটবুকে শাস্ত্রপদটি কপি করে, যেটা এখন এক উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ হয়ে উঠেছে!

সভার দিনগুলোতে, জোয়েল লক্ষ রাখে যেন আমরা একটু আগে কিংডম হলে যাই, কারণ সে চায় যাতে সেখানে সময়মতো গিয়ে যারা হলে প্রবেশ করে, তাদের সকলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে পারে। সভাগুলোর সময়ে, সে মন্তব্য করা ও নমুনাগুলোতে অংশ নেওয়া উপভোগ করে। এ ছাড়া, সে মাইক্রোফোন সামলাতে এবং অন্যান্য কাজ সম্পাদন করতেও সাহায্য করে। তার শরীর যদি ভালো থাকে, তাহলে প্রতি সপ্তাহে সে আমাদের সঙ্গে প্রচারে যায়। ২০০৭ সালে মণ্ডলীতে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, জোয়েলকে একজন পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম। যিহোবার কাছ থেকে কী সদয় এক আশীর্বাদ!

আমরা যিহোবার সাহায্য অনুভব করি

১৯৯৯ সালে আমরা আরেকটা পরীক্ষার মুখোমুখি হই। একজন বেপরোয়া গাড়িচালক আমাদের গাড়িকে ধাক্কা দেয় আর এতে লুইজি গুরুতরভাবে আহত হয়। তার একটা পা কেটে ফেলতে হয় আর তার মেরুদণ্ডে বড়ো রকমের কয়েকটা অস্ত্রোপচার করা হয়। আবারও, যিহোবার ওপর নির্ভর করার দ্বারা আমরা সেই শক্তি অনুভব করেছিলাম, যা তিনি তাঁর দাসদের প্রয়োজনের সময় দিয়ে থাকেন। (ফিলি. ৪:১৩) যদিও লুইজি এখন শারীরিকভাবে অক্ষম কিন্তু আমরা এর ইতিবাচক দিক দেখার চেষ্টা করি। যেহেতু সে জাগতিক কাজ করতে অসমর্থ, তাই জোয়েলকে দেখাশোনা করার পিছনে সে আরও বেশি সময় দিতে পারে। এটা আমাকে আধ্যাত্মিক কাজকর্মের জন্য আরও বেশি সময় আলাদা করে রাখার সুযোগ দেয়। এ ছাড়া, লুইজি আমাদের পরিবার ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীর সকলের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোর প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে, যেখানে সে প্রাচীনগোষ্ঠীর কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

আমাদের অস্বাভাবিক পরিস্থিতিগুলোর কারণে আমরা পরিবারগতভাবে একত্রে অনেক সময় কাটাতে পারি। সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আমরা যুক্তিবাদী হতে ও যা সম্ভব, তার চেয়ে বেশি আশা না করতে শিখেছি। যে-দিনগুলোতে আমরা নিরুৎসাহ বোধ করি, তখন আমরা প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আমাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করি। দুঃখের বিষয় যে, আমাদের ছেলে ডেভিড ও মার্ক যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় এবং ঘর থেকে অন্যত্র চলে যায়, তখন তারা ধীরে ধীরে যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দেয়। আমরা আশা রাখি যে, তারা হয়তো কোনো একদিন যিহোবার কাছে ফিরে আসবে।—লূক ১৫:১৭-২৪.

বছরের পর বছর ধরে, আমরা যিহোবার সমর্থন অনুভব করেছি এবং আমাদের সামনে আসা প্রত্যেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় তাঁর ওপর নির্ভর করতে শিখেছি। বিশেষভাবে যিশাইয় ৪১:১৩ পদে পাওয়া এই কথাগুলো আমাদের কাছে প্রিয়: “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব।” যিহোবা দৃঢ়ভাবে আমাদের হস্ত ধরে আছেন, এটা জানা সান্ত্বনার এক উৎস। বস্তুতপক্ষে, আমরা সত্যিই বলতে পারি যে, পরীক্ষাগুলো সহ্য করা আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করেছে।

[পাদটীকা]

^ ট্রাইসোমি ২১ হল জন্মগত এক ত্রুটি, যেটার কারণে শিশুরা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়। ক্রোমোজোম সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে কিন্তু যে-বাচ্চারা ট্রাইসোমি নিয়ে জন্মায়, তাদের একটা জোড়ায় অতিরিক্ত একটা ক্রোমোজোম থাকে। ২১ ক্রোমোজোমের ওপর ট্রাইসোমি ২১ প্রভাব ফেলে।

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

জোয়েল তার মা অ্যাডার সঙ্গে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

অ্যাডা, জোয়েল এবং লুইজি

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

জোয়েল কিংডম হলে আসা ভাইবোনদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো উপভোগ করে