সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মন্দতার উৎস উন্মোচিত হয়!

মন্দতার উৎস উন্মোচিত হয়!

মন্দতার উৎস উন্মোচিত হয়!

 প্রথম শতাব্দীতে, যিহুদিদের অনেকেই প্রতিজ্ঞাত মশীহের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিল। (যোহন ৬:১৪) যিশু দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়ে সান্ত্বনা ও জ্ঞানালোক নিয়ে এসেছিলেন। তিনি অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন, ক্ষুধার্তদের খাইয়েছিলেন, প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, এমনকি মৃত ব্যক্তিদের জীবিত করেছিলেন। (মথি ৮:২৬; ১৪:১৪-২১; ১৫:৩০, ৩১; মার্ক ৫:৩৮-৪৩) এ ছাড়া, তিনি যিহোবার বাক্য ও অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধেও কথা বলেছিলেন। (যোহন ৩:৩৪) যিশু যা বলেছিলেন এবং করেছিলেন, তার দ্বারা তিনি সম্পূর্ণভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনিই ছিলেন সেই মশীহ, সেই একমাত্র ব্যক্তি যিনি মানবজাতিকে পাপ এবং এর সমস্ত মন্দ পরিণতির হাত থেকে মুক্ত করবেন।

যুক্তিযুক্তভাবেই, যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের প্রথমে যিশুকে স্বাগত জানানো, তাঁর কথা শোনা এবং আনন্দের সঙ্গে তাঁর নির্দেশনা গ্রহণ করা উচিত ছিল। কিন্তু, তারা তা করেনি। এর পরিবর্তে, তারা তাঁকে ঘৃণা করেছিল, তাঁর ওপর তাড়না এনেছিল এবং তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল!—মার্ক ১৪:১; ১৫:১-৩, ১০-১৫.

যিশু উপযুক্তরূপেই সেই নিন্দনীয় লোকেদের তিরস্কার করেছিলেন। (মথি ২৩:৩৩-৩৫) কিন্তু, তাদের হৃদয়ের মধ্যে থাকা মন্দতার জন্য যে আর একজন ব্যক্তিও দায়ী, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের পিতা দিয়াবলের, এবং তোমাদের পিতার অভিলাষ সকল পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা; সে আদি হইতেই নরঘাতক, সত্যে থাকে নাই, কারণ তাহার মধ্যে সত্য নাই। সে যখন মিথ্যা বলে, তখন আপনা হইতেই বলে, কেননা সে মিথ্যাবাদী ও তাহার পিতা [“মিথ্যার পিতা,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসান]।” (যোহন ৮:৪৪) যদিও যিশু স্বীকার করেছিলেন যে, মানুষ মন্দ কাজগুলো করতে সক্ষম, তবুও তিনি মন্দতার মূল উৎস—শয়তান দিয়াবলকে—চিহ্নিত করেছিলেন।

শয়তান “সত্যে থাকে নাই,” এটা বলার দ্বারা যিশু প্রকাশ করেছিলেন যে, এই আত্মিক প্রাণী একসময় ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাস ছিল কিন্তু সে সঠিক পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল। শয়তান কেন যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল? কারণ সে এতটাই আত্মগৌরব বোধ করেছিল যে, সে সেই উপাসনা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিল যা শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই পাওয়ার অধিকার রয়েছে। *মথি ৪:৮, ৯.

শয়তানের বিদ্রোহী মনোভাব এদন উদ্যানে প্রকাশ পেয়েছিল, যখন সে হবাকে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল। সর্বকালের সর্বপ্রথম মিথ্যা বলার দ্বারা এবং যিহোবাকে অপবাদ দেওয়ার দ্বারা শয়তান নিজেকে “মিথ্যার পিতা” করে তুলেছিল। এ ছাড়া, আদম ও হবাকে অবাধ্য হওয়ার জন্য প্ররোচিত করে, সে তাদের ওপর পাপের কর্তৃত্ব এনেছিল, যা পরিশেষে তাদেরকে ও তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল। এভাবে, শয়তান নিজেকে একইসময়ে “নরঘাতক”—প্রকৃতপক্ষে সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ংকর খুনীতে—পরিণত করেছিল।—আদিপুস্তক ৩:১-৬; রোমীয় ৫:১২.

শয়তানের মন্দ প্রভাব এমনকি আত্মিক রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে সে তার সঙ্গে বিদ্রোহে যোগ দেওয়ার জন্য অন্য দূতেদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। (২ পিতর ২:৪) শয়তানের মতো এই মন্দ দূতেরা মানুষের প্রতি এক অনুপযুক্ত আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে তাদের বেলায় এটা ছিল এক বিকৃত যৌন আকর্ষণ, যার পরিণতি ছিল ধ্বংসাত্মক ও মন্দ।

মন্দতা পৃথিবীকে পূর্ণ করে

বাইবেল আমাদের বলে: “যখন . . . মনুষ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল ও অনেক কন্যা জন্মিল, তখন ঈশ্বরের পুত্ত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাগণকে সুন্দরী দেখিয়া, যাহার যাহাকে ইচ্ছা, সে তাহাকে বিবাহ করিতে লাগিল।” (আদিপুস্তক ৬:১, ২) এখানে বর্ণিত “ঈশ্বরের পুত্ত্রেরা” কারা ছিল? তারা মানুষ নয় কিন্তু আত্মিক প্রাণী ছিল। (ইয়োব ১:৬; ২:১) কীভাবে আমরা তা জানতে পারি? একটা কারণ হল যে, এর আগে প্রায় ১,৫০০ বছর ধরে মানুষের মধ্যে বিবাহ হয়ে আসছিল আর এইজন্য এই বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কোনো কারণ ছিল না। তাই, “ঈশ্বরের পুত্ত্রেরা” যারা মানুষের রূপ ধারণ করেছিল ও “মনুষ্যদের কন্যাগণকে” বিবাহ করেছিল, তাদের যৌন মিলনের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করার দ্বারা এই বিবরণ স্পষ্টতই এক নজিরবিহীন, অস্বাভাবিক বিষয় সম্বন্ধে উল্লেখ করে।

এই মিলনের ফলে যে-ধরনের সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল, তার দ্বারা এই অস্বাভাবিকতার বিষয়টা নিশ্চিত হয়। এই সন্তানদের নেফিলিম নামে ডাকা হতো, তারা ছিল বর্ণসংকর যারা দৈত্যে পরিণত হয়েছিল। তারা নিষ্ঠুর উৎপীড়নকারীও ছিল। প্রকৃতপক্ষে, “নেফিলিম” শব্দের অর্থ হল “পতনকারী” বা “যারা অন্যদের পতনের কারণ হয়েছিল।” এই বর্বর ব্যক্তিদের “সেকালের প্রসিদ্ধ বীর” বলে বর্ণনা করা হয়েছে।—আদিপুস্তক ৬:৪.

নেফিলিম এবং তাদের পিতারা মন্দতাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। “তৎকালে পৃথিবী ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভ্রষ্ট . . . দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল,” আদিপুস্তক ৬:১১ পদ বলে। হ্যাঁ, মানুষেরা তাদের মধ্যে থাকা নবাগতদের হিংস্র, কলুষতাপূর্ণ পথকে অবলম্বন করেছিল।

নেফিলিম এবং তাদের পিতারা কীভাবে মানুষের ওপর এক শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করেছিল? মানবজাতির পাপপূর্ণ প্রবণতা এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে। পরিণতি কী হয়েছিল? “পৃথিবীস্থ সমুদয় প্রাণী ভ্রষ্টাচারী হইয়াছিল।” শেষ পর্যন্ত, যিহোবা সেই জগৎকে এক জলপ্লাবনের দ্বারা ধ্বংস করেছিলেন, শুধুমাত্র ধার্মিক ব্যক্তি নোহ ও তার পরিবারকে রক্ষা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৬:৫, ১২-২২) কিন্তু, মানুষের রূপ ধারণকারী দূতেরা অপমানিত হয়ে আত্মিক রাজ্যে ফিরে যায়। অধঃপতিত মন্দ দূত হিসেবে, তারা ক্রমাগতভাবে ঈশ্বর এবং তাঁর বিশ্বস্ত দূতেদের ধার্মিক পরিবারের বিরোধিতা করতেই থাকে। এটা স্পষ্ট যে, সেই সময় থেকে ঈশ্বর এই মন্দ আত্মাদের মানুষের রূপ ধারণ করাকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। (যিহূদা ৬) তা সত্ত্বেও, মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের এক শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে।

মন্দ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণভাবে উন্মোচন করা হয়!

শয়তানের মন্দ প্রভাবের পরিধি ১ যোহন ৫:১৯ পদে প্রকাশ পেয়েছে, যেটি বলে: “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” দিয়াবল মানবজাতিকে বৃদ্ধিরত সন্তাপের প্রবল ঝড়ের দিকে কৌশলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সে এখন ক্ষতি করার জন্য আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কেন? কারণ ১৯১৪ সালে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাকে এবং তার মন্দ দূতেদের স্বর্গ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে। এই বহিষ্কার সম্বন্ধে বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: ‘পৃথিবীর সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।’ (প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১২) তা হলে আজকে শয়তান কীভাবে মানবজাতির ওপর তার প্রভাব বিস্তার করে?

শয়তান মূলত এমন এক মনোভাবকে ছড়িয়ে দিয়েছে, যা লোকেদের চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মকে প্রভাবিত করে। এইজন্য, ইফিষীয় ২:২ পদ দিয়াবলকে ‘আকাশের কর্ত্তৃত্বাধিপতি,’ বলে উল্লেখ করে “যে আত্মা [বা প্রভাবশালী মনোভাব] এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে।” ঈশ্বরীয় ভয় এবং মঙ্গলভাবকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে, এই পৈশাচিক ‘আকাশ’ বা বাতাস ঈশ্বর ও তাঁর মানগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে জন্ম দেয়। এভাবে শয়তান এবং তার দূতেরা মানুষের করা মন্দতাকে ছড়িয়ে দেয় এবং বৃদ্ধি করে।

“তোমার হৃদয় রক্ষা কর”

এই “আকাশের” বা বাতাসের এক প্রকাশ হচ্ছে, মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়া পর্নোগ্রাফি, যা অনুপযুক্ত যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে এবং অস্বাভাবিক আচারআচরণকে আকর্ষণীয় বলে দেখায়। (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৫) ধর্ষণ, বিকৃত যৌনতা, গণধর্ষণ, পশুগমন এবং শিশুদের প্রতি যৌন নিপীড়ন হল কয়েকটা বিষয়, যেগুলোকে পর্নোগ্রাফি বিনোদন হিসেবে উপস্থাপন করে। সামান্য ক্ষতিকর বিষয় রয়েছে এমন পর্নোগ্রাফি প্রচণ্ড আসক্তি জন্মাতে পারে এবং সেই ব্যক্তিদের ক্ষতি করে থাকে, যারা এটা দেখে বা পড়ে আর এর ফলে তারা এমন ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারে, যারা গোপনে অন্যের নগ্ন শরীর বা যৌনক্রিয়া দেখে আনন্দ পায়। * এটা এক মন্দ বিষয়, যা মানব সম্পর্ক এবং ঈশ্বরের সঙ্গে একজনের সম্পর্ক দুটোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। পর্নোগ্রাফি মন্দ দূতেদের অধঃপতিত মানসিকতাকে প্রতিফলিত করে, যারা এটাকে ছড়িয়ে দিয়েছিল—সেই বিদ্রোহীরা, যাদের অনুপযুক্ত যৌন আকাঙ্ক্ষা নোহের দিনের জলপ্লাবনের পূর্বে জেগে উঠেছিল।

উপযুক্ত কারণেই জ্ঞানী ব্যক্তি শলোমন উপদেশ দিয়েছিলেন: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।” (হিতোপদেশ ৪:২৩) ব্যবহারিকভাবে বললে, আপনার হৃদয়কে পর্নোগ্রাফির ফাঁদ থেকে রক্ষা করার অর্থ হতে পারে টেলিভিশনের চ্যানেল বদলে ফেলা বা কম্পিউটারে কুরুচিপূর্ণ ছবিগুলো আসলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া আর এই বিষয়ে দ্রুত ও দৃঢ়তার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ! আপনি নিজেকে এমন একজন সৈনিক হিসেবে কল্পনা করুন, যিনি তার হৃদয়কে লক্ষ্য করে ছোঁড়া একটা বর্শাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছেন। শয়তান আপনার রূপক হৃদয়—প্রেরণার ও আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থলকে—লক্ষ্যবস্তু করে এবং সেটাকে কলুষিত করার চেষ্টা করে।

এ ছাড়া আপনার হৃদয়কে রক্ষা করতে হবে, যাতে দৌরাত্ম্যের প্রতি ভালবাসা গড়ে না ওঠে কারণ দিয়াবল জানে যে, “দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক [সদাপ্রভুর] প্রাণের ঘৃণাস্পদ।” (গীতসংহিতা ১১:৫) আপনাকে ঈশ্বরের শত্রুতে পরিণত করার জন্য শয়তানের আপনাকে একজন রক্তপিপাসু দুর্বৃত্ত ব্যক্তিতে পরিণত করার প্রয়োজন নেই; শুধুমাত্র আপনার মধ্যে দৌরাত্ম্যের প্রতি ভালবাসা গড়ে তোলাই তার জন্য যথেষ্ট। জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো প্রায়ই জাদুমন্ত্রের বিষয়সহ দৌরাত্ম্যমূলক বিষয়ে পূর্ণ থাকা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। নেফিলিমরা মারা গিয়েছে এবং এখন আর অস্তিত্বে নেই কিন্তু তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও আচারআচরণ এখনও ব্যাপকভাবে বিদ্যমান! আপনার বিনোদন বাছাই করা কি দেখায় যে, আপনি শয়তানের কলাকৌশলগুলোকে প্রতিরোধ করছেন?—২ করিন্থীয় ২:১১.

শয়তানের মন্দ প্রভাবকে যেভাবে প্রতিরোধ করা যায়

মন্দতার শক্তিগুলোকে মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। বাইবেল বলে যে, যারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রচেষ্টা করছে তারা ‘স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত মল্লযুদ্ধ করিতেছে’ ও সেইসঙ্গে তারা তাদের নিজেদের অসিদ্ধ মাংসের সঙ্গেও লড়াই করছে। সেই লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার ও ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের আয়োজিত বিভিন্ন ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করতে হবে।—ইফিষীয় ৬:১২; রোমীয় ৭:২১-২৫.

এই ব্যবস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্ত, নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা। প্রেরিত পৌল প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের লিখেছিলেন: “আমরা জগতের আত্মাকে পাই নাই, বরং ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি।” (১ করিন্থীয় ২:১২) যারা ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়, তাদের ঈশ্বর যা ভালবাসেন সেটার প্রতি ভালবাসা গড়ে ওঠে এবং তিনি যা ঘৃণা করেন সেটার প্রতি ঘৃণা গড়ে ওঠে। (আমোষ ৫:১৫) কীভাবে একজন ব্যক্তি পবিত্র আত্মা লাভ করতে পারেন? মূলত প্রার্থনার, বাইবেল অধ্যয়নের—যে-বাইবেল পবিত্র আত্মার এক উৎপাদন—এবং যারা সত্যিই ঈশ্বরকে ভালবাসে, তাদের সঙ্গে গঠনমূলক মেলামেশা করার মাধ্যমে।—লূক ১১:১৩; ২ তীমথিয় ৩:১৬; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

এই ঐশিক ব্যবস্থাগুলোর সদ্ব্যবহার করার দ্বারা, আপনি “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান” করতে শুরু করেন, যা “দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর” থেকে একমাত্র নিশ্চিত সুরক্ষা। (ইফিষীয় ৬:১১-১৮) এই ব্যবস্থাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগানো অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরও বেশি জরুরি। কীভাবে?

মন্দতার শেষ নিকটবর্তী!

“দুষ্টগণ যখন তৃণের ন্যায় অঙ্কুরিত হয়, অধর্ম্মাচারী সকলে যখন প্রফুল্ল হয়, তখন তাহাদের চির-বিনাশের জন্য সেইরূপ হয়,” গীতরচক বলেছিলেন। (গীতসংহিতা ৯২:৭) হ্যাঁ নোহের দিনের মতো, বর্তমানে মন্দতার বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে, ঈশ্বরের বিচার আসন্ন, শুধুমাত্র দুষ্ট মানুষের ওপরই নয় কিন্তু শয়তান ও তার মন্দ দূতেদের ওপরও, যাদেরকে তাদের চূড়ান্ত ধ্বংসের শুরু হিসেবে অগাধলোকে নিক্ষেপ করা হবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫; প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩, ৭-১০) কে সেই বিচার করবেন? যিশু খ্রিস্ট ছাড়া আর কেউ নন, যাঁর সম্পর্কে আমরা পড়ি: “ঈশ্বরের পুত্ত্র এই জন্যই প্রকাশিত হইলেন, যেন দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করেন।”—১ যোহন ৩:৮.

মন্দতা শেষ হওয়ার অধীর আকাঙ্ক্ষা কি আপনার রয়েছে? যদি থাকে, তা হলে আপনি বাইবেলে লিপিবদ্ধ প্রতিজ্ঞাগুলো থেকে সান্ত্বনা পেতে পারেন। অন্য আর কোনো বইই মন্দতার মূল উৎস, শয়তানকে উন্মোচিত করে না এবং অন্য আর কোনো বইই দেখায় না যে, কীভাবে সে ও তার সমস্ত দুষ্ট কাজকর্মকে শেষপর্যন্ত ধ্বংস করা হবে। আমরা আপনাকে বাইবেলের সঠিক জ্ঞান নিতে আমন্ত্রণ জানাই, যাতে আপনি এখনই শয়তানের মন্দ প্রভাবগুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং মন্দতাবিহীন এক জগতে বেঁচে থাকার আশাকে নিশ্চিত করতে পারেন।—গীতসংহিতা ৩৭:৯, ১০.

[পাদটীকাগুলো]

^ যে-দূতটি শয়তানে পরিণত হয়েছিল তার প্রকৃত নামটা অজানা রয়েছে। “শয়তান” এবং “দিয়াবল” এই শব্দ দুটির মানে হল, “বিপক্ষ” এবং “অপবাদক।” কিছু কিছু ক্ষেত্রে, শয়তানের কাজ প্রাচীন সোরের রাজার মতো ছিল। (যিহিষ্কেল ২৮:১২-১৯) উভয়ের পথই শুরুতে অনিন্দনীয় ছিল কিন্তু তারা তাদের নিজ উদ্ধত মনোভাবের শিকার হয়েছিল।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০৩ সালের অক্টোবর - ডিসেম্বর সংখ্যার সচেতন থাক! পত্রিকার “অশ্লীল বিষয়গুলো—অক্ষতিকর অথবা ক্ষতিকর?” ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলো দেখুন।

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

যে-রূপকথাগুলোতে সামান্যই সত্য রয়েছে

উপদেবতা, দৈত্য-দানব এবং একটা ধ্বংসাত্মক বন্যার কাহিনি সারা পৃথিবীর প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনিগুলোতে পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, গিলগ্যামেশের আ্যকেডিয়ান মহাকাব্য এক বন্যা, একটা জাহাজ এবং রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে উল্লেখ করে। স্বয়ং গিলগ্যামেশকে একজন কামলালসাপূর্ণ, হিংস্র উপদেবতা অথবা অর্ধেক দেবতা ও অর্ধেক মানুষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আ্যজটেক উপজাতির পৌরাণিক কাহিনি দৈত্যরা বাস করত এমন এক প্রাচীন জগৎ এবং এক মহাপ্লাবন সম্বন্ধে বলে। নরওয়ের রূপকথা দৈত্যদের এক বংশ সম্বন্ধে বলে এবং বারগেলমির নামে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির বিষয়ে বর্ণনা করে, যিনি একটা বিশাল নৌকা বানিয়েছিলেন এবং নিজেকে ও তার স্ত্রীকে রক্ষা করেছিলেন। এই ধরনের সমস্ত রূপকথা সম্মিলিত সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো বাইবেলের এই সাক্ষ্যকে নিশ্চিত করে যে, সমস্ত মানুষই এক মহাপ্লাবন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বংশ থেকে এসেছে, যে-প্লাবন এক প্রাচীন দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।

[চিত্র]

গিলগ্যামেশের মহাকাব্য খোদাই করা ফলক

[সৌজন্যে]

The University Museum, University of Pennsylvania (neg. # ২২০৬৫)

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

নেফিলিমদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো আজকের দিনে লোকেদের মধ্যে দেখা যায়

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

সঠিক জ্ঞান আমাদেরকে মন্দ প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে