সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যদিও আমি অন্ধ ছিলাম, তবুও আমার চোখ খোলা ছিল!

যদিও আমি অন্ধ ছিলাম, তবুও আমার চোখ খোলা ছিল!

জীবন কাহিনী

যদিও আমি অন্ধ ছিলাম, তবুও আমার চোখ খোলা ছিল!

বলেছেন এগন হ্যাউসার

দুমাস সত্যি সত্যি অন্ধ থাকার পর, বাইবেলের সেই সত্যের প্রতি আমার চোখ খুলে গিয়েছিল, যেটাকে আমি সারাজীবন ধরে অবজ্ঞা করে আসছিলাম।

 আমি যখন সত্তর বছরেরও আগের কথা স্মরণ করি, তখন আমার জীবনের বেশ কয়েকটা বিষয় আমাকে প্রচুর সন্তুষ্টি এনে দেয়। কিন্তু, আমি যদি আমার জীবনের একটা বিষয়কে পরিবর্তন করতে পারতাম, তা হলে খুব অল্প বয়সেই আমি যিহোবা ঈশ্বরকে জানতে ইচ্ছুক থাকতাম।

আমি ১৯২৭ সালে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের মাঝে অবস্থিত নাশপাতি আকারের এক ছোট্ট দেশ উরুগুয়েতে জন্মগ্রহণ করেছিলাম, যা আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে থাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিব্যাপ্ত ছিল। সেখানকার জনসংখ্যা মূলত ইতালি ও স্পেনের অভিবাসীদের বংশধরদের নিয়ে গঠিত। কিন্তু, আমার বাবামা ছিল হাঙ্গেরির অভিবাসী আর আমি যখন খুবই ছোট, তখন আমরা এক সাদামাটা কিন্তু একই মনোভাবাপন্ন প্রতিবেশীদের মধ্যে বাস করতাম। সেখানে দরজায় তালা দেওয়ার বা জানালায় খিল দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আমাদের মধ্যে জাতি বৈষম্য ছিল না। বিদেশি ও স্বদেশি, কালো ও সাদা—সবাই ছিলাম বন্ধু।

আমার বাবামা ছিল ক্যাথলিক এবং আমি দশ বছর বয়সে যাজকের সঙ্গে সেবক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছিলাম। বড় হয়ে আমি স্থানীয় যাজকীয় বিভাগের সঙ্গে কাজ করতাম এবং একটা দলের সদস্য ছিলাম, যারা বিশপের এলাকায় তার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করত। ডাক্তারি পেশা বেছে নিয়েছিলাম বলে আমাকে ভেনেজুয়েলায় ক্যাথলিক গির্জার দ্বারা আয়োজিত একটা সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ায় আমাদের দলকে গর্ভনিরোধক বড়িগুলোর ওপর গবেষণা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যেগুলো সেই সময়ে বাজারে নতুন ছিল।

একজন মেডিক্যাল ছাত্র হিসেবে শুরুর অনুভূতিগুলো

একজন মেডিক্যাল ছাত্র হিসেবে মানব শরীর সম্বন্ধে শিক্ষা গ্রহণ করার সময়, শরীরের গঠন থেকে যে-প্রজ্ঞা প্রদর্শিত হয় তা দেখে দিন দিন অভিভূত হয়ে যাচ্ছিলাম। উদাহরণ হিসেবে, আমি শরীরের নিজে নিজে সেরে ওঠা এবং ক্ষত অবস্থা থেকে আগের অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতা দেখে খুব বিস্মিত হয়েছিলাম, যেমনটা ঘটে থাকে যখন যকৃৎ বা পাঁজরের কিছু হাড়কে কেটে ফেলার পরও সেটা তার সাধারণ অবস্থায় বৃদ্ধি পেতে সক্ষম।

একই সময় আমি গুরুতরভাবে আহত অনেক ব্যক্তিকে দেখেছিলাম আর আমি খুব দুঃখ পেতাম, যখন তারা রক্ত নেওয়ার ফলে মারা যেত। এখনও আমার মনে পড়ে যে, সেই সমস্ত রোগীর আত্মীয়স্বজনদের কাছে গিয়ে কথা বলা কত কঠিন ছিল, যারা রক্ত নেওয়ার ফলে সৃষ্ট জটিলতার কারণে মারা গিয়েছিল। বেশির ভাগ সময়ে, সেই আত্মীয়স্বজনদের জানানো হতো না যে, রক্ত নেওয়ার কারণে তাদের প্রিয়জনের মৃত্যু ঘটেছে। বরং, তাদের অন্য কোনো কারণ জানানো হতো। যদিও অনেক বছর পেরিয়ে গিয়েছে কিন্তু রক্ত নেওয়া সম্বন্ধে অস্থির অনুভূতিগুলোর কথা এখনও আমার স্মরণে রয়েছে এবং পরিশেষে আমি এই উপসংহারে এসেছিলাম যে, রক্ত নেওয়ার বিষয়টার মধ্যে কিছু ত্রুটি রয়েছে। রক্তের পবিত্রতা সম্বন্ধে যিহোবার নিয়মটা যদি আমি আগে জানতাম, তা হলে কত ভাল হতো! এতে, আমি যা হতে দেখেছিলাম সেগুলো নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা আমার হয়তো থাকত না।—প্রেরিত ১৫:১৯, ২০.

লোকেদের সাহায্য করে সন্তুষ্টি লাভ

পরে আমি একজন শল্যচিকিৎসক ও স্যান্টা লুসিয়াতে চিকিৎসা সহযোগিতা কেন্দ্রের একজন পরিচালক হয়েছিলাম। এ ছাড়া, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্স-এও আমার কিছু দায়িত্ব ছিল। এই কাজ আমাকে প্রচুর সন্তুষ্টি এনে দিয়েছিল। আমি অসুস্থ লোকেদের সাহায্য করতাম, তাদের শারীরিক কষ্টকে দূর করতাম, অনেকের ক্ষেত্রে জীবন বাঁচিয়েছি এবং মায়েদের সন্তান-প্রসবের সময়ে সাহায্য করে নতুন নতুন জীবন পৃথিবীতে এনেছি। রক্ত নেওয়া সম্বন্ধে আমার পূর্বের অভিজ্ঞতাগুলোর কারণে আমি তাদের রক্ত দেওয়া এড়িয়ে চলতাম এবং রক্ত ছাড়া অনেক অপারেশন করেছিলাম। আমি যুক্তি দেখাতাম, রক্তক্ষরণ হল কোনো ঘড়া ফুটো হয়ে যাওয়ার মতো। তাই একমাত্র প্রকৃত সমাধান হল ফুটোটাকে সারানো, ঘড়াকে ভরে চলা নয়।

সাক্ষি রোগীদের চিকিৎসা করা

যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে আমার আলাপ-পরিচয় শুরু হয়েছিল ১৯৬০ এর দশকে, যখন তারা রক্ত ছাড়া অপারেশন করার জন্য আমাদের ক্লিনিকে আসতে শুরু করেছিল। মেরসেদেস গনজালেজ নামে একজন অগ্রগামী (পূর্ণ-সময়ের পরিচারিকা) রোগীর ঘটনা আমি কখনও ভুলব না। তিনি এতটা রক্তস্বল্পতায় ভুগছিলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ডাক্তাররা তাকে অপারেশন করার ঝুঁকি নিতে চায়নি কারণ তারা নিশ্চিত ছিল যে তিনি বাঁচবেন না। যদিও তার রক্ত কমে যাচ্ছিল, তবুও আমরা আমাদের ক্লিনিকে তার অপারেশন করেছিলাম। অপারেশন সফল হয়েছিল এবং ৮৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি অগ্রগামীর কাজ করে গিয়েছিলেন।

হাসপাতালে ভরতি তাদের খ্রিস্টীয় ভাইবোনদের যত্ন নেওয়ার সময় যে-প্রেম ও আগ্রহ সাক্ষিরা দেখাত, সেটা আমার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছিল। আমি যখন রোগীদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম, তখন আমি তাদের বিশ্বাসের অভিব্যক্তিগুলো শুনতে ভালবাসতাম ও তারা আমাকে যে-প্রকাশনাগুলো দিত সেগুলো আমি গ্রহণ করতাম। আমি স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি যে, শীঘ্রই আমি শুধু তাদের একজন ডাক্তারই হব না কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের আত্মিক ভাইও হব।

সাক্ষিদের সঙ্গে আমি আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম, যখন আমি একজন রোগীর মেয়ে বিয়াট্রিসকে বিয়ে করেছিলাম। তার পরিবারের অধিকাংশই ইতিমধ্যে সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করছিল এবং আমাদের বিয়ের পর, আমার স্ত্রীও একজন সক্রিয় সাক্ষি হয়েছিল। অপরদিকে, আমি আমার কাজে পুরোপুরি মগ্ন ছিলাম এবং চিকিৎসা জগতে কিছুটা খ্যাতি লাভ করেছিলাম। জীবন খুব উত্তম বলে মনে হয়েছিল। সেই সময় আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে, শীঘ্রই আমার জগৎ আমার চারপাশে ভেঙে পড়বে।

দুর্দশা ঘটে

একজন শল্যচিকিৎসকের জন্য তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কিছু হতে পারে না। আর আমার সেটাই হয়েছিল। হঠাৎ আমার উভয় অক্ষিপটে বিদারণ ঘটেছিল—আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ও আমি জানতাম না যে, আমার দৃষ্টি আমি আবার ফিরে পাব কি না। আমার চোখের অপারেশন হওয়ায়, উভয় চোখে পট্টি লাগানো অবস্থায় আমি শুয়েছিলাম আর প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছিলাম। আমি নিজেকে পুরোপুরি অকেজো ভেবেছিলাম আর এতটাই শূন্যতা বোধ করছিলাম যে, আমি আমার জীবনকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। যেহেতু আমি হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ছিলাম, তাই আমি আমার বিছানা থেকে উঠে দেওয়াল ধরে ধরে জানালা খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম। আমি আত্মহত্যা করার জন্য লাফ দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু নিজের অজান্তে আমি হাসপাতালের বারান্দায় ঢুকে পড়েছিলাম এবং একজন নার্স তাড়াতাড়ি করে আমাকে আমার বিছানায় পৌঁছে দিয়েছিলেন।

আমি আর আত্মহত্যা করার চেষ্টা করিনি। কিন্তু আমার অন্ধকার জগতে আমি হতাশ ও খিটখিটে হয়ে গিয়েছিলাম। অন্ধ থাকার এই পর্যায়ে আমি ঈশ্বরের কাছে একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, যদি আমি আবার দৃষ্টি ফিরে পাই, তা হলে আমি সম্পূর্ণ বাইবেলটি পড়ে শেষ করব। ধীরে ধীরে আংশিকভাবে আমি আবার দৃষ্টি পেয়েছিলাম এবং আমি পড়তে পেরেছিলাম। কিন্তু, একজন শল্যচিকিৎসক হিসেবে আমার কাজ আমি চালিয়ে যেতে পারিনি। তবে, উরুগুয়েতে একটা জনপ্রিয় প্রবাদ রয়েছে “নো হাই মাল কে পোর বিয়েন নো ভেঙ্গা,” “কোনো কিছুই এত খারাপ নয় যে, এর মধ্যে থেকে ভাল কিছু আসতে পারে না।” এই কথার সত্যতা আমি নিজেই দেখতে যাচ্ছিলাম।

ভুল পথ দিয়ে শুরু

আমি দ্যা যিরূশালেম বাইবেল এর বড় অক্ষরের সংস্করণটি কিনতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমি জানতে পেরেছিলাম যে, যিহোবার সাক্ষিদের কাছে কম দামের একটি বাইবেল রয়েছে, যেটা একজন যুবক সাক্ষি আমার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। পরের দিন সকালে সে সেই বাইবেলটি নিয়ে আমার বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল। আমার স্ত্রী দরজা খুলেছিল এবং তার সঙ্গে কথা বলেছিল। আমি তখন ঘরের ভিতর থেকে খুব রূঢ়ভাবে চেঁচিয়ে বলেছিলাম যে, যদি বাইবেলটির জন্য দাম দেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে সেই যুবকটির এই বাড়িতে আসার কোনো দরকার নেই এবং সে যেন সেই মুহূর্তে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় আর বলা বাহুল্য সেই যুবক সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমার কোনো ধারণাই ছিল না যে, এই যুবক ব্যক্তিটিই শীঘ্রই আমার জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

একদিন আমি আমার স্ত্রীর কাছে একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যা পূরণ করতে পারিনি। তাই তাকে খুশি করার জন্য সেটার বদলে আমি খ্রিস্টের মৃত্যুর বার্ষিক স্মরণার্থে তার সঙ্গে যাব বলে কথা দিয়েছিলাম। সেই দিনটা যেদিন এসেছিল, আমার প্রতিজ্ঞাটা আমার মনে পড়েছিল আর তাই তার সঙ্গে আমি সেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ ও সাদর অভ্যর্থনা আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিল। বক্তা যখন বক্তৃতা দিতে শুরু করেছিলেন, তখন আমি খুব অবাক হয়ে দেখেছিলাম যে, বক্তা হলেন সেই একই যুবক ব্যক্তি যাকে আমি অত্যন্ত অভদ্রের মতো বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলাম। তার বক্তৃতা আমার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল এবং তার প্রতি দুর্ব্যবহার করেছিলাম বলে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। এর ক্ষতিপূরণ আমি কীভাবে দিতে পারি?

আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম যে, তাকে যেন রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানায় কিন্তু আমার স্ত্রী আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল: “তোমার কি মনে হয় না যে, তুমি তাকে আমন্ত্রণ জানালে আরও ভাল হবে? তুমি এখানেই দাঁড়াও, সে নিজেই এখানে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবে।” তার কথাই ঠিক ছিল। সেই যুবকটি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল ও আমন্ত্রণটা গ্রহণ করেছিল।

সে যেদিন আমাদের বাড়িতে এসেছিল সেই সন্ধ্যায় যে-আলোচনা আমাদের মধ্যে হয়েছিল, তা আমার পরিবর্তনগুলোর শুরু ছিল। সে আমাকে যে সত্য অনন্ত জীবনে লইয়া যায় * বইটি দেখিয়েছিল আর আমি সেই একই বইয়ের ছয়টা কপি তাকে দেখিয়েছিলাম। হাসপাতালে বিভিন্ন সাক্ষি রোগী আমাকে সেগুলো দিয়েছিল কিন্তু আমি কখনও সেগুলো পড়িনি। খাবারের সময় ও পরে গভীর রাত পর্যন্ত আমি একের পর এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলাম—যেগুলোর সবকটার উত্তর সে বাইবেল থেকে দিয়েছিল। সেই আলোচনা পরের দিন ভোরবেলা পর্যন্ত চলেছিল। চলে যাওয়ার আগে সেই যুবকটি আমার সঙ্গে সত্য বইটির সাহায্যে বাইবেল অধ্যয়ন করার প্রস্তাব জানিয়েছিল। আমরা তিন মাসের মধ্যে সেই বইটি অধ্যয়ন করে শেষ করেছিলাম আর “পড়িল মহতী বাবিল!” ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করে! * (ইংরেজি) বইটি দিয়ে অধ্যয়ন করে গিয়েছিলাম। এরপর আমি যিহোবা ঈশ্বরের কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম।

পুনরায় উপযোগী বোধ করা

সত্যি সত্যি অন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বাইবেলের সত্যগুলোর প্রতি ‘আমার হৃদয়ের চক্ষু’ খুলে গিয়েছিল, যেগুলোকে আমি সেই সময় পর্যন্ত অবজ্ঞা করে আসছিলাম! (ইফিষীয় ১:১৮) যিহোবা ও তাঁর প্রেমময় উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানা আমার সম্পূর্ণ জীবনকে পালটে দিয়েছিল। আবারও আমি উপযোগী ও আনন্দিত বোধ করছিলাম। আমি শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক দিয়ে লোকেদের সাহায্য করি ও তাদের জানাই যে, কীভাবে এই বিধি ব্যবস্থায় আরও কিছু বছর ও ভবিষ্যৎ নতুন ব্যবস্থায় চিরকালের জন্য তারা তাদের জীবনকে বাড়াতে পারে।

আমি চিকিৎসা জগতের আধুনিক অগ্রগতি সম্বন্ধে অবগত থেকেছি এবং রক্ত নেওয়ার ঝুঁকি, বিকল্প চিকিৎসা, রোগীদের অধিকার ও বাইওএথিক্সের ওপর গবেষণা করেছি। স্থানীয় চিকিৎসক দলের কাছে এই তথ্য বন্টন করার সুযোগ আমার হয়েছিল, যখন আমাকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সেমিনারে এই বিষয়বস্তুর ওপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের রিও ডে জেনেরোতে সংগঠিত রক্ত ছাড়া চিকিৎসার ওপর প্রথম সম্মেলনে আমি যোগ দিয়েছিলাম ও রক্তক্ষরণের চিকিৎসা কীভাবে করা যায়, সেটার ওপর বক্তৃতা দিয়েছিলাম। সেই তথ্যের কিছু অংশ আমার লেখা একটা প্রবন্ধে, “উনা প্রোপওয়েস্টা: এসট্রাটিখিয়াস পারা এল ট্রাটামিয়েনটো ডি লাস এমরাখিয়াস” (“রক্তক্ষরণ-প্রতিরোধ চিকিৎসার এক কৌশলগত প্রস্তাব”) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যা চিকিৎসা সংক্রান্ত এক পত্রিকা হেমোটেরাপিয়া-তে প্রকাশিত হয়েছিল।

চাপের মধ্যে নীতিনিষ্ঠ থাকা

শুরুতে রক্ত নেওয়া সম্বন্ধে আমার যে-সন্দেহগুলো ছিল, তা প্রধানত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে ছিল। কিন্তু আমি নিজে যখন একজন রোগী হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম, তখন রক্ত নেওয়াকে প্রত্যাখ্যান করা ও ডাক্তারদের প্রচণ্ড চাপের মুখে আমার বিশ্বাস বজায় রাখা আমার জন্য সহজ ছিল না। এক বড় হার্ট আ্যটাকের পর আমাকে দুঘন্টারও বেশি সময় ধরে একজন শল্যচিকিৎসককে আমার পদক্ষেপ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল। সে ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছেলে আর সে বলেছিল, যদি সে মনে করে যে রক্ত নেওয়া আমার জীবন বাঁচাতে পারবে, তা হলে কোনোভাবেই সে আমাকে মরতে দেবে না। আমি যিহোবার কাছে এই বলে নীরবে প্রার্থনা করেছিলাম যে, এই ডাক্তার যদি আমার পদক্ষেপের সঙ্গে একমত না-ও হয়, তবুও তিনি যেন সেই ডাক্তারকে আমার পদক্ষেপ সম্বন্ধে বুঝতে ও সেটার প্রতি সম্মান দেখাতে সাহায্য করেন। অবশেষে, সেই ডাক্তার আমার ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছিল।

আরেকবার আমাকে মুত্রগ্রন্থি থেকে এক বিরাট টিউমার অপারেশন করাতে হয়েছিল। রক্তক্ষরণ হয়েছিল। আরেকবার আমাকে রক্ত নেওয়া প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে কারণগুলো জানাতে হয়েছিল আর যদিও আমার দুই তৃতীয়াংশ রক্ত কমে গিয়েছিল, তবুও হাসপাতালের কর্মকর্তা আমার পদক্ষেপের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল।

মনোভাবের পরিবর্তন

ইন্টারন্যাশনাল আ্যসোশিয়েশন অফ বাইওএথিক্স এর একজন সদস্য হিসেবে, রোগীর অধিকারগুলোর প্রতি হাসপাতালের কর্মকর্তা এবং আইনি কর্তৃপক্ষদের মনোভাবের মধ্যে পরিবর্তন দেখার সন্তুষ্টি আমার হয়েছে। ডাক্তারদের কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে রোগীর জেনেশুনে নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখানো হয়। তারা এখন রোগীদের চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকে। যিহোবার সাক্ষিদের আর এমন গোঁড়া বলে বিবেচনা করা হয় না, যারা চিকিৎসার যোগ্য নয়। বরং, তাদেরকে এমন রোগী বলে বিবেচনা করা হয়, যাদের অধিকারগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো উচিত কারণ তারা জেনেবুঝে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। চিকিৎসা সংক্রান্ত সেমিনার ও টেলিভিশনের কার্যক্রমগুলোতে সুপরিচিত অধ্যাপকগণ বলেছে: “যিহোবার সাক্ষিদের প্রচেষ্টার কল্যাণে, এখন আমরা বুঝতে পারি . . . ” “আমরা সাক্ষিদের কাছ থেকে শিখতে পেরেছি . . . ” এবং “তারা আমাদের উন্নতি করতে শিক্ষা দিয়েছে।”

কথিত আছে যে, জীবন হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা ছাড়া স্বাধীনতা, মুক্তি ও মর্যাদা অর্থহীন হয়ে যাবে। অনেকে এখন উচ্চতর বৈধ ধারণা গ্রহণ করে ও উপলব্ধি করে যে, প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজস্ব ব্যক্তিগত অধিকারগুলোর মালিক এবং তিনিই হলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, যেকোনো পরিস্থিতিতে তার অধিকারগুলোর মধ্যে কোনটা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এভাবে, মর্যাদা, বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। রোগীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা স্থাপিত হসপিটাল ইনফরমেশন সারভিসেস অনেক ডাক্তারকে এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে তাদের বোধগম্যতায় আরও উন্নতি আনতে সাহায্য করেছে।

আমার পরিবারের ক্রমাগত সমর্থন আমাকে যিহোবার সেবায় উপযোগী হওয়ার এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমি যেমন আগেই উল্লেখ করেছি যে, আমার জীবনের প্রথম দিকে যিহোবা সম্বন্ধে না শেখার জন্য আমি সবচেয়ে বেশি আপশোস করি। কিন্তু, আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে ঈশ্বরের রাজ্য ব্যবস্থায় বাস করার চমৎকার আশা সম্বন্ধে আমার চোখ খুলে দিয়েছেন, যেখানে “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।”—যিশাইয় ৩৩:২৪. *

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

^ এই প্রবন্ধটি যখন প্রস্তুত করা হচ্ছিল, সেই সময় ভাই এগন হ্যাউসার মারা যান। তিনি বিশ্বস্ত থেকে মারা গেছেন এবং আমরা তার সঙ্গে আনন্দ করি যে তার আশা নিশ্চিত।

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার বয়স যখন ৩০ এর কোঠায়, তখন স্যান্টা লুসিয়াতে হাসপাতালে কাজ করছি

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৯৫ সালে আমার স্ত্রী বিয়াট্রিসের সঙ্গে