সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘বাক্য প্রচার’ সতেজতা নিয়ে আসে

‘বাক্য প্রচার’ সতেজতা নিয়ে আসে

“আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে সতেজতা দিব”

‘বাক্য প্রচার’ সতেজতা নিয়ে আসে

 তিনি ছিলেন, এক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রেরিত একজন সিদ্ধ ব্যক্তি। তাঁর শিক্ষা দানের পদ্ধতি এতটাই কার্যকারী ছিল যে, “লোকসমূহ তাঁহার উপদেশে চমৎকার জ্ঞান করিল।” (মথি ৭:২৮) এছাড়া, তিনি একজন অদম্য প্রচারক ছিলেন। তিনি তাঁর সময়, শক্তি এবং সম্পদকে মূলত ঈশ্বরের রাজ্যের প্রচার কাজে লাগিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, একজন অতুলনীয় প্রচারক ও শিক্ষক হিসেবে যীশু খ্রীষ্ট তাঁর দেশের সমস্ত জায়গায় ভ্রমণ করেছিলেন।—মথি ৯:৩৫.

যীশুর জরুরি কাজটা ছিল তাঁর সময়ের লোকেদের কাছে “রাজ্যের সুসমাচার” প্রচার করা এবং সারা পৃথিবীতে আরও বড় আকারে সেই একই কাজ করার জন্য তাঁর শিষ্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। (মথি ৪:২৩; ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) প্রচার কাজের গুরু দায়িত্ব, এর প্রয়োজনীয়তা ও সেইসঙ্গে এইরকম এক বিরাট কাজ কি তাঁর অসিদ্ধ ও অসামর্থ্য অনুসারীদের ওপর চাপের সৃষ্টি করেছিল?

কখনোই না! যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে ‘শস্যক্ষেত্রের স্বামী,’ যিহোবা ঈশ্বরের কাছে আরও কর্মী চেয়ে প্রার্থনা করার নির্দেশনা দিয়ে লোকেদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদেরকে পাঠিয়েছিলেন। (মথি ৯:৩৮; ১০:১) তারপর তিনি তাদেরকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন যে, তাঁর অনুসারী হওয়ার দায়িত্ব—যার মধ্যে প্রচার কাজও রয়েছে—সত্যিকারের স্বস্তি ও সান্ত্বনা নিয়ে আসবে। যীশু বলেছিলেন: “আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম [“সতেজতা,” NW] দিব।”—মথি ১১:২৮.

আনন্দের এক উৎস

এই আমন্ত্রণে কতই না করুণা, প্রেম ও দয়া মেশানো রয়েছে! এর থেকে প্রকাশ পেয়েছিল যে, যীশু তাঁর অনুসারীদের জন্য চিন্তা করতেন। তাঁর শিষ্যরা ঈশ্বরের রাজ্যের “সুসমাচার” প্রচার করার দায়িত্ব পালন করে সতেজতা খুঁজে পান। এটা তাদের জন্য সত্যিকারের আনন্দ ও পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে।—যোহন ৪:৩৬.

যীশু পৃথিবীতে আসার অনেক বছর আগে, শাস্ত্রে জোর দিয়ে বলা হয়েছিল যে ঈশ্বরকে পবিত্র সেবা দেওয়ার একটা বৈশিষ্ট্য হল আনন্দ। এটা স্পষ্ট হয়েছিল যখন গীতরচক গেয়েছিলেন: “সমস্ত পৃথিবী! সদাপ্রভুর উদ্দেশে জয়ধ্বনি কর; সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা কর; আনন্দগানসহ তাঁহার সম্মুখে আইস।” (গীতসংহিতা ১০০:১, ২) আজকে, সমস্ত জাতির লোকেরা যিহোবাতে আনন্দিত হন আর তাদের প্রশংসার বাক্যগুলো এক বিজয়ী সৈন্যের জয়ধ্বনির মতো। যারা ঈশ্বরের কাছে নিজেদেরকে সত্যিই উৎসর্গ করেছেন, তারা “আনন্দগানসহ” তাঁর সামনে আসেন। আর আসলে এটা যথার্থ, কারণ যিহোবা হলেন ‘পরম ধন্য ঈশ্বর’ যিনি চান যে, তাঁর দাসেরা যেন তাঁর প্রতি তাদের উৎসর্গীকরণ অনুসারে জীবনযাপন করে আনন্দ খুঁজে পান।—১ তীমথিয় ১:১১.

সতেজ পরিচারকরা

ক্ষেত্রের পরিচর্যায় আমাদের কঠোর পরিশ্রম আমাদেরকে ক্লান্ত না করে যে সতেজ করে, তা কী করে সম্ভব? যিহোবার কাজ করা যীশুর কাছে এমন খাদ্যের মতো ছিল, যা তাঁকে নতুন করে শক্তি জোগাতো। তিনি বলেছিলেন: “আমার খাদ্য এই, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য্য সাধন করি।”—যোহন ৪:৩৪.

একইভাবে, আজকে উদ্যোগী খ্রীষ্টান প্রচারকরা ‘বাক্য প্রচার করিয়া’ আনন্দ খুঁজে পান। (২ তীমথিয় ৪:২) কানি নামে মধ্যবয়স্কা একজন খ্রীষ্টান মহিলা, যিনি মাসে ৭০ ঘন্টা প্রচার করেন, তিনি বলেন: “এমনকি দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও, পরিচর্যার পর আমি পরিতৃপ্তি ও আনন্দ পাই।”

লোকেরা যদি রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া না দেয়, তাহলে কী? কানি আরও বলেন: “প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, পরিচর্যায় অংশ নিয়ে আমি কখনও আপশোস করিনি। যিহোবাকে যা খুশি করে আমি তা-ই করছি, এটা জানা ছাড়াও, সত্য সম্বন্ধে কথা বলাকে আমি একটা আনন্দের বিষয় বলে মনে করি কারণ আমি যখন তা করি, তখন বাইবেলের সেই অপূর্ব আশা আমার হৃদয়ে নতুন শক্তি জোগায়।”

অন্যেরা মনে করেন যে ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নিতে লোকেদেরকে সাহায্য করা তাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। মাসে নিয়মিত ৫০ ঘন্টারও বেশি প্রচার করেন, এমন একজন অল্পবয়স্কা মহিলা মেলোনি বলেন: “পরিচর্যা সতেজ করে কারণ জীবনে চলার পথে এটা আমাকে পথ দেখায় ও উদ্দেশ্য এনে দেয়। আমি যখন পরিচর্যায় অংশ নিই, তখন ব্যক্তিগত সমস্যা ও রোজকার চাপগুলোকে খুবই তুচ্ছ বলে মনে হয়।”

যিহোবার সাক্ষিদের আরেকজন উদ্যোগী পরিচারিকা মিলিসেন্ট বলেন: “আমি যখন অন্যদের সঙ্গে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিটা দিন কথা বলি ও তাদেরকে বুঝিয়ে দিই যে কীভাবে পরমদেশ পুনর্থাপিত হবে, তখন তা অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। এর ফলে রোজ যিহোবা আমার কাছে বাস্তব হয়ে ওঠেন এবং তা আমাকে মনের শান্তি ও সুখ এনে দেয়, যা আর অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে পাওয়া যায় না।”

সতেজতা গ্রহণকারীরা

সত্যি, খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার দ্বারা রাজ্যের প্রচারকরা সতেজ হন আর যারা জীবন দানকারী বার্তা গ্রহণ করেন, তারা সান্ত্বনা লাভ করেন। পোর্তুগালের একজন স্কুলশিক্ষিকা যদিও নান ও পুরোহিতদের কাছে শিক্ষা পেয়েছিলেন কিন্তু তার মনে হয়েছিল যে গির্জা তার আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো মেটাতে পারেনি। বাইবেলের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তার কাছে অজানাই রয়ে যায়। একজন যিহোবার সাক্ষির সঙ্গে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করে তিনি ধীরে ধীরে শাস্ত্র বুঝতে পারেন। স্কুলশিক্ষিকা খুবই রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রতি বুধবার অধীর আগ্রহ নিয়ে আমি অধ্যয়নের জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম কারণ বাইবেল-ভিত্তিক জোরালো প্রমাণ সহ একে একে আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আমি পাচ্ছিলাম।’ আজকে, এই মহিলা যিহোবার একজন উৎসর্গীকৃত দাসী এবং বাইবেলের সত্য দিয়ে তিনিও অন্যদেরকে সতেজ করছেন।

অতএব এটা স্পষ্ট যে, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের প্রচার কাজের গুরুত্ব অথবা সারা পৃথিবীতে তাদের বিরাট প্রচারের এলাকার জন্য ভারগ্রস্ত নন। লোকেদের শোনার অনিচ্ছা অথবা বিরোধিতা কোন কিছুই তাদের উদ্যোগকে দমিয়ে দিতে পারে না। রাজ্য প্রচার করার দায়িত্ব মেনে চলার জন্য তারা নিজেদেরকে পুরোপুরি বিলিয়ে দিয়েছেন। যেখানেই লোকেদের পাওয়া যায়—যুক্তরাষ্ট্রে একটা ট্রাক থামার জায়গায় (১), কোরিয়ার একটা বিমানবন্দরে (২), আন্দিজে (৩), অথবা লন্ডনের বাজারে (৪)—তারা তাদের কাছে সুসমাচার জানান। যীশুর আজকের দিনের অনুসারীরা আনন্দের সঙ্গে সারা পৃথিবীতে এই মূল্যবান কাজ করে চলেন। আর তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী, তিনি তাদেরকে সতেজ করেছেন এবং আরও অনেককে সতেজ করার জন্য তাদেরকে ব্যবহার করেছেন।—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৭.