সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কীভাবে টাকাপয়সার প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারেন?

আপনি কীভাবে টাকাপয়সার প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারেন?

আপনি কীভাবে টাকাপয়সার প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারেন?

টাকাপয়সার প্রতি আসক্তি ও ধনসম্পদের জন্য আকাঙ্ক্ষা কোন নতুন বিষয় নয়; অথবা এগুলোকে এই যুগের কোন প্রবণতা ভেবে বাইবেল এই সম্পর্কে যে কিছু বলে না তা-ও কিন্তু নয়। এগুলো খুবই পুরনো। মোশির ব্যবস্থাতে ইস্রায়েলীয়দেরকে ঈশ্বর নির্দেশ দিয়েছিলেন: “তোমার প্রতিবাসীর গৃহে লোভ করিও না . . . প্রতিবাসীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না।”—যাত্রাপুস্তক ২০:১৭.

 যীশুর দিনে টাকাপয়সা ও ধনসম্পদের প্রতি আসক্তি সাধারণ ব্যাপার ছিল। একজন “অতিশয় ধনবান্‌” যুবকের সঙ্গে যীশুর যে কথাবার্তা হয়েছিল সেই বিষয়টা চিন্তা করুন। “যীশু তাহাকে কহিলেন, এখনও এক বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে; তোমার যাহা কিছু আছে, সমস্ত বিক্রয় কর, আর দরিদ্রদিগকে বিতরণ কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদ্‌-গামী হও। কিন্তু এ কথা শুনিয়া সে অতিশয় দুঃখিত হইল, কারণ সে অতিশয় ধনবান্‌।”—লূক ১৮:১৮-২৩.

টাকাপয়সার প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি

এটা ভেবে নেওয়া ভুল হবে যে, টাকাপয়সাকে বা যে প্রয়োজনীয় কাজগুলোর জন্য এটা ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে বাইবেল নিন্দা করে। বাইবেল দেখায় যে টাকাপয়সা দিয়ে দরিদ্রতা ও দরিদ্রতার সঙ্গে আসা সমস্যাগুলো দূর করা যায় আর লোকেরা এর সাহায্যে তাদের প্রয়োজনগুলোকে মেটাতে পারে। রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “প্রজ্ঞা আশ্রয়, ধনও আশ্রয় বটে।” তিনি আরও লিখেছিলেন: “হাস্যের নিমিত্ত ভোজ প্রস্তুত করা হয়, এবং দ্রাক্ষারস জীবন আনন্দযুক্ত করে, আর রৌপ্য সকলই যোগায়।”—উপদেশক ৭:১২; ১০:১৯.

টাকাপয়সা সঠিকভাবে ব্যবহার করাকে ঈশ্বর অনুমোদন করেন। উদাহরণ হিসেবে যীশু বলেছিলেন: “আপনাদের জন্যে অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর।” (লূক ১৬:৯) এর মানে ঈশ্বরের সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকাপয়সা দান করা কারণ আমরা সবাই-ই যে ঈশ্বরকে বন্ধু হিসেবে চাই, তাতে কোন সন্দেহ নেই। শলোমন নিজে তার পিতা দায়ূদকে অনুকরণ করে যিহোবার মন্দির নির্মাণের জন্য প্রচুর পরিমাণে টাকাপয়সা ও দামি দামি জিনিসপত্র দান করেছিলেন। খ্রীষ্টানদের আরেকটা আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল আর তা হল, যারা অভাবে আছেন তাদের টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করা। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “পবিত্রগণের অভাবের সহভাগী হও।” তিনি আরও বলেছিলেন: “অতিথি-সেবায় রত হও।” (রোমীয় ১২:১৩) এর অর্থ সাধারণত কিছু টাকাপয়সা খরচ করাকে বোঝায়। কিন্তু টাকাপয়সার প্রতি আসক্তি সম্পর্কে কী বলা যায়?

‘রুপো ভালবাসা’

পৌল যখন তার সহখ্রীষ্টান যুবক তীমথিয়কে লিখছিলেন, সেই সময় তিনি “ধনাসক্তি” যার আক্ষরিক অর্থ ‘রুপো ভালবাসা’ সেই বিষয়টা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন। পৌলের পরামর্শ ১ তীমথিয় ৬:৬-১৯ পদে পাওয়া যায়। বস্তুগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় তিনি যে মুখ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে “ধনাসক্তি” সম্বন্ধেও বলেছিলেন। আজকের সমাজ টাকাপয়সার ওপর যেরকম জোর দেয়, সেটা মনে রেখে আমাদের পৌলের অনুপ্রাণিত কথাগুলো ভাল করে অধ্যয়ন করা দরকার। এইধরনের অধ্যয়ন সত্যিই উপকারী কারণ এটা কীভাবে ‘প্রকৃত জীবন ধরিয়া রাখা’ যায় সেই রহস্য প্রকাশ করে।

পৌল সতর্ক করেন: “ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।” (১ তীমথিয় ৬:১০) এই পদ বা অন্য আর কোন পদ বলে না যে টাকাপয়সা খারাপ। এমনকি প্রেরিত পৌলও বলেননি যে, টাকাপয়সা “মন্দের” মূল কারণ বা প্রত্যেকটা সমস্যা টাকাপয়সার জন্যই হয়। বরং তিনি বলেন যে টাকাপয়সার প্রতি আসক্তি—যদিও এটাই একমাত্র কারণ নয়—সকল “মন্দের” কারণ হতে পারে।

লোভ থেকে সাবধান

শাস্ত্রে টাকাপয়সাকে নিন্দা করা হয়নি বলে তার মানে এই নয় যে, পৌলের সতর্কবাণীকে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। যে খ্রীষ্টানরা টাকাপয়সার প্রতি আসক্ত হতে শুরু করেছেন তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে বিশ্বাস থেকে সরে পড়া। পৌল কলসীয় খ্রীষ্টানদের যা বলেছিলেন সেই কথাগুলো এর সত্যতার ওপর জোর দেয়: “অতএব তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা . . . কুঅভিলাষ, এবং লোভ এ ত প্রতিমাপূজা।” (কলসীয় ৩:৫) কীভাবে লালসা, লোভ বা “ধনাসক্তি” প্রতিমাপূজার সমান? এর মানে কি এই যে একটা বড় বাড়ি, নতুন গাড়ি বা ভাল চাকরি চাওয়া ভুল? না, এগুলোর কোনটাই খারাপ নয়। তবে, প্রশ্ন হল: এগুলো চাওয়ার পিছনে একজনের কী উদ্দেশ্য আছে এবং এগুলো কি তার জন্য সত্যিই জরুরি?

স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা ও লোভের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে সেটাকে রান্নাবান্নার উদ্দেশে কোন ক্যাম্পে জ্বালানো ছোট্ট আগুন এবং জঙ্গলকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় এমন জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তার সঙ্গে তুলনা করা যায়। ভাল ও সঠিক আকাঙ্ক্ষা উপকারজনক হতে পারে। এইধরনের ইচ্ছা আমাদেরকে কিছু করে দেখানোর মতো কাজ করার প্রেরণা জোগায়। হিতোপদেশ ১৬:২৬ পদ বলে: “শ্রমীর ক্ষুধাই তাহাকে পরিশ্রম করায়; বস্তুতঃ তাহার মুখ তাহাকে পীড়াপীড়ি করে।” কিন্তু লোভ বিপদে ফেলে ও ধ্বংস ডেকে আনে। এটা এমন এক আকাঙ্ক্ষা, যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

টাকাপয়সার আকাঙ্ক্ষাকে বসে আনা এক বড় সমস্যা। আমাদের জমানো টাকাপয়সা অথবা জিনিসপত্রগুলো কি আমাদের প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য দাস হবে, নাকি প্রয়োজনগুলো আমাদেরকে টাকাপয়সার দাস করবে? সেইজন্য পৌল বলেছিলেন যে একজন “লোভী . . . সে ত প্রতিমাপূজক।” (ইফিষীয় ৫:৫) কোন কিছুর জন্য লোভী হওয়ার মানে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে এটার অধীন করা। সত্যি বলতে কী, আমরা এটাকে আমাদের প্রভু অর্থাৎ আমাদের ঈশ্বর বানিয়ে ফেলি ও এটাকে সেবা করি। কিন্তু, ঈশ্বর বলেন: “আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক।”—যাত্রাপুস্তক ২০:৩.

এছাড়া আমাদের লোভী হওয়া এও ইঙ্গিত করে যে, আমাদের প্রয়োজনগুলো মেটাবেন বলে ঈশ্বর যে প্রতিজ্ঞা করেছেন তা তিনি পূরণ করতে পারেন, সেই বিষয়ে আমরা আস্থা রাখি না। (মথি ৬:৩৩) তাই লোভ আমাদেরকে ঈশ্বর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এই অর্থেও এটা ‘প্রতিমাপূজা।’ তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৌল স্পষ্টভাবে এটা থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন!

যীশুও লোভী না হওয়ার জন্য স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। আমাদের যেটা নেই তার জন্য আকাঙ্ক্ষা করার বিষয়ে সাবধান থাকতে আমাদের তিনি আদেশ দিয়েছেন এই বলে: “সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) যীশুর এই কথাগুলো ও পরে দেওয়া তাঁর দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায় যে, একজন ব্যক্তির কতটা আছে সেটাই তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এই মূর্খ ধারণার ওপর ভিত্তি করে লোভ গড়ে ওঠে। এটা টাকাপয়সা, মান-মর্যাদা, ক্ষমতা বা এইরকম আরও অন্যকিছু হতে পারে। যা পাওয়া সম্ভব এমন যে কিছুর জন্য লোভ চলে আসতে পারে। আমরা হয়তো ভাবতে পারি যে সেটা পেলে আমরা সন্তুষ্ট হব। কিন্তু বাইবেল ও সেইসঙ্গে মানুষের অভিজ্ঞতা দেখায় যে, একমাত্র ঈশ্বর আমাদের প্রকৃত প্রয়োজন সকল মেটাতে পারেন এবং তা তিনি মেটাবেন, যা যীশু তাঁর শিষ্যদের যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।—লূক ১২:২২-৩১.

আজকের সমাজে লোকেরা ভোগ্যপণ্য বেচাকেনায় এত বেশি ব্যস্ত যে, তা লোভের আগুনকে জ্বলে উঠতে ইন্ধন জোগায়। অনেকে যারা চতুর ও শক্তিশালী কৌশলগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন তারা এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে, তাদের যা আছে তা যথেষ্ট নয়। তাদের আরও বড় ও ভাল জিনিসের প্রয়োজন। যদিও আমাদের চারপাশের জগৎকে আমরা বদলাতে পারি না কিন্তু ব্যক্তিগত দিক দিয়ে কীভাবে আমরা এই প্রবণতাকে ঠেকাতে পারি?

লোভের পরিবর্তে সন্তুষ্টি

লোভ করার পরিবর্তে সন্তুষ্ট হওয়ার বিষয়ে পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব।” (১ তীমথিয় ৬:৮) এই কথাগুলো জানায় যে আসলে আমাদের যেগুলো প্রয়োজন, তা হল “গ্রাসাচ্ছাদন” যেটা হয়তো খুব সাধারণ জীবনযাপন করাকে বোঝায়। অনেক লোকেরা টিভির প্রোগ্রাম দেখে আনন্দ পান কারণ এটার মাধ্যমে তারা বিখ্যাত ব্যক্তিদের, যারা বিলাসপূর্ণ ঘরে থাকেন তাদের দেখতে পান। এভাবে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না।

তবে, ঈশ্বরের দাসদেরকে নিজেদের তৈরি দারিদ্রের মধ্যে জীবনযাপন করার জন্য বলা হচ্ছে না। (হিতোপদেশ ৩০:৮, ৯) পৌল আমাদের মনে করিয়ে দেন যে দারিদ্র বলতে আসলে কী বোঝায়: খাবার, কাপড়চোপড় ও ঘর না থাকা, যা একজনের বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই দরকার। কিন্তু আমাদের যদি এগুলো থাকে, তাহলে আমাদের সন্তুষ্ট থাকার কারণ আছে।

সন্তুষ্ট থাকার ব্যাপারে পৌলের এই বর্ণনা কি সঠিক? শুধু মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন খাবার, কাপড়চোপড় ও ঘর পেলেই কি সত্যি সত্যি সন্তুষ্ট থাকা যায়? এই বিষয়টা পৌল খুব ভালভাবেই জানেন। কারণ, যিহুদি সমাজে ও রোমের নাগরিক থাকার সময় তিনি খুব ধনী এবং উচ্চপদে ছিলেন। (প্রেরিত ২২:২৮; ২৩:৬; ফিলিপীয় ৩:৫) সেইসঙ্গে পৌল মিশনারি কাজ করার সময় অনেক কষ্ট সহ্য করেছিলেন। (২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৮) এগুলোর মধ্যে দিয়ে তিনি এক রহস্য জানতে পেরেছিলেন, যা তাকে সন্তুষ্ট থাকতে সাহায্য করেছিল। সেটা কী ছিল?

“আমি . . . দীক্ষিত হইয়াছি”

পৌল তার পত্রগুলোর একটাতে এভাবে বলেছিলেন: “আমি অবনত হইতে জানি, উপচয় ভোগ করিতেও জানি; প্রত্যেক বিষয়ে ও সর্ব্ববিষয়ে আমি তৃপ্ত কি ক্ষুধিত হইতে, এবং উপচয় কি অনাটন ভোগ করিতে দীক্ষিত হইয়াছি।” (ফিলিপীয় ৪:১২) পৌলকে খুব অটল, খুব আশাবাদী বলে মনে হয়! তার এই লেখা দেখে মনে হতে পারে যে তিনি যখন এই কথাগুলো লিখেছিলেন, তখন তিনি এক ভাল সময়ের মধ্যে ছিলেন কিন্তু আসলে তা ছিল না। সেই সময় তিনি রোমের জেলে ছিলেন!—ফিলিপীয় ১:১২-১৪.

এই গুরুগম্ভীর বিষয়টা নিয়ে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে এই কথাগুলো শুধু টাকাপয়সার দিক দিয়ে সন্তুষ্ট থাকার কথাই নয় সেইসঙ্গে যে অবস্থা থাকে সেই অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার বিষয়েও বলে। অতি ধনী হওয়া বা খুব কষ্টকর পরিস্থিতি, আমাদের জীবনে কোন্‌ বিষয়গুলো প্রথম সেই সম্বন্ধে আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলতে পারে। আধ্যাত্মিক ধন যেটা পৌলকে আর্থিক পরিস্থিতি যেমনই থাক তাতে সন্তুষ্ট থাকতে সাহায্য করেছিল, সেই বিষয়ে তিনি বলেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” (ফিলিপীয় ৪:১৩) পৌল তার ধনসম্পদ বেশি বা কম অথবা তার পরিস্থিতি ভাল বা মন্দ যাই থাকুক না কেন, সেগুলোর ওপর নির্ভর করেননি কিন্তু তার প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করেছিলেন। এর ফলে তিনি সন্তুষ্ট থাকতে পেরেছিলেন।

পৌলের উদাহরণ তীমথিয়ের জন্য খুব বেশি জরুরি ছিল। প্রেরিত পৌল এই যুবককে এমন ধরনের জীবনযাপন করতে বলেছিলেন, যা ধনসম্পদকে নয় কিন্তু ঈশ্বরীয় ভক্তি এবং ঈশ্বরের সঙ্গে এক কাছের সম্পর্ককে প্রথমে রাখে। পৌল বলেছিলেন: “কিন্তু তুমি, হে ঈশ্বরের লোক, এই সকল হইতে পলায়ন কর; এবং ধার্ম্মিকতা, ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর।” (১ তীমথিয় ৬:১১) এই কথাগুলো হয়তো তীমথিয়কে বলা হয়েছিল কিন্তু যারা ঈশ্বরকে সম্মান করতে এবং সত্যিকারের এক সুখী জীবন চায়, তাদের সবার জন্যই কাজে লাগতে পারে।

অন্যান্য খ্রীষ্টানদের মতো তীমথিয়েরও লোভ থেকে সাবধান হওয়ার দরকার ছিল। এটা স্পষ্ট যে, পৌল যখন তীমথিয়কে চিঠি লিখেছিলেন তখন তীমথিয় ইফিষে ছিলেন আর ইফিষীয় মণ্ডলীতে সেই সময় কয়েকজন ধনী বিশ্বাসী ভাইয়েরা ছিলেন। (১ তীমথিয় ১:৩) পৌল সমৃদ্ধশালী ব্যাবসার এই কেন্দ্রে লোকেদেরকে খ্রীষ্টের সুসমাচার শুনিয়েছিলেন ও অনেককে খ্রীষ্টান করেছিলেন। তাই কোন সন্দেহ নেই যে, এদের মধ্যে অনেকে ধনী ব্যক্তি ছিলেন, যেমন বর্তমান দিনে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতেও আছেন।

তাই ১ তীমথিয় ৬:৬-১০ পদে দেওয়া শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে এই প্রশ্ন ওঠে যে, যাদের প্রচুর টাকা আছে তারা ঈশ্বরকে সম্মান করতে চাইলে কী করবেন? পৌল বলেন যে শুরুতে তাদের নিজেদের মনোভাবকে পরীক্ষা করা উচিত। নিজের ক্ষমতার ওপর টাকাপয়সা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে আসতে পারে। পৌল বলেন: “যাহারা এই যুগে ধনবান্‌, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, যেন তাহারা গর্ব্বিতমনা না হয়, এবং ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে।” (১ তীমথিয় ৬:১৭) ধনী লোকেদের টাকাপয়সার ওপর নির্ভর করার চেয়ে বরং ঈশ্বর যিনি সমস্ত ধনের উৎস তাঁর ওপর নির্ভর করতে শিখতে হবে।

কিন্তু, এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য শুধু মনোভাবকে ঠিক রাখাই যথেষ্ট নয়। ধনী খ্রীষ্টীয় ভাইবোনদের নিজেদের ধনসম্পদকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করতে শিখতে হবে। পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: ‘পরের উপকার কর, সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান্‌ হও, দানশীল হও, সহভাগীকরণে তৎপর হও।’—১ তীমথিয় ৬:১৮.

‘প্রকৃত জীবন’

পৌলের পরামর্শের প্রধান উদ্দেশ্য হল, আমরা যাতে আমাদের মনে করিয়ে দিই যে টাকাপয়সার মূল্য আপেক্ষিক। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “ধনবানের ধনই তাহার দৃঢ় নগর, তাহার বোধে তাহা উচ্চ প্রাচীর।” (হিতোপদেশ ১৮:১১) হ্যাঁ, ধনসম্পদ সুরক্ষা দিতে পারে তা আসলে মানুষের ধারণা আর তা মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়। আমরা যদি ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা না করে এগুলোর দিকে মনোযোগ দিই, তাহলে তা ভুল হবে।

ধনসম্পদ যে কোন সময়ে ফুরিয়ে যেতে পারে আর তাই এটা এতই দুর্বল যে এর ওপর আশা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সত্যিকারের আশা কোন দৃঢ়, অর্থপূর্ণ ও স্থায়ী বিষয়ের ওপর রাখা দরকার। খ্রীষ্টীয় আশা আমাদের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর যিহোবা ও অনন্ত জীবন সম্বন্ধে তাঁর প্রতিজ্ঞার ওপর স্থির আছে। টাকাপয়সা দিয়ে সুখ কেনা যায় না এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে টাকাপয়সা পরিত্রাণ আনতে পারে না তা আরও বেশি সত্যি। একমাত্র ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাসই এইধরনের আশা দিতে পারে।

তাই ধনী বা গরিব যা-ই হই না কেন, আসুন আমরা এমন ধরনের জীপনযাপন করি যেটা আমাদের “ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌” করবে। (লূক ১২:২১) সৃষ্টিকর্তার অনুমোদন থাকা সবকিছুর থেকে মূল্যবান। এটাকে ধরে রাখার জন্য আমাদের সব ধরনের চেষ্টা ‘আমাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করিবে, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারি।’—১ তীমথিয় ৬:১৯.

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

পৌল সন্তুষ্ট থাকার জন্য দীক্ষিত হয়েছিলেন

[৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আমাদের কাছে যা কিছু আছে তাতে আমরা সুখী ও সন্তুষ্ট থাকতে পারি