সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিষ্রিয়েলে খনন করে তারা কী আবিষ্কার করেছেন?

যিষ্রিয়েলে খনন করে তারা কী আবিষ্কার করেছেন?

যিষ্রিয়েলে খনন করে তারা কী আবিষ্কার করেছেন?

 শত শত বছর ধরে, প্রাচীন যিষ্রিয়েল শহর জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। বাইবেল যেমন বলে একসময় এই শহরের অনেক নামডাক ছিল। কিন্তু এখন এই শহর আগের জৌলুস হারিয়েছে। আজ এই শহর মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে আর মাটির ঢিবি হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি, প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌রা খনন করে পাওয়া যিষ্রিয়েল শহরের ধ্বংসাবশেষগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করেছেন। এই ধ্বংসাবশেষগুলো থেকে বাইবেলে দেওয়া বিবরণ সম্বন্ধে আমরা কী জানতে পারি?

বাইবেলে বলা যিষ্রিয়েল শহর

যিষ্রিয়েল শহর ছিল যিষ্রিয়েল উপত্যকার পূর্ব দিকে আর এটা প্রাচীন ইস্রায়েলের শহরগুলোর মধ্যে এক উর্বর অঞ্চল ছিল। উপত্যকার ঠিক ওপারে উত্তর দিকে মোরি পাহাড় ছিল, যেখানে গিদিয়োন ও তার সৈন্যদের আক্রমণ করার জন্য মিদিয়নীয়রা তাদের শিবির স্থাপন করেছিল। এর পূর্ব দিকে গিল্‌বোয় * পর্বতের পাদদেশে হেরোদের কুয়ো ছিল। এখানেই যিহোবা গিদিয়োনের সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে মাত্র ৩০০ জন করেছিলেন যেন যিহোবা দেখাতে পারেন যে বিরাট সেনাবাহিনী ছাড়াই তিনি তাঁর লোকেদের রক্ষা করতে পারেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৭:১-২৫; সখরিয় ৪:৬) ইস্রায়েলের প্রথম রাজা শৌল গিল্‌বোয় পর্বতের কাছেই পলেষ্টীয়দের হাতে চরমভাবে হেরে গিয়েছিলেন আর এই যুদ্ধেই যোনাথন ও শৌলের অন্য দুই ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছিল এবং শৌল আত্মহত্যা করেছিলেন।—১ শমূয়েল ৩১:১-৫.

বাইবেল প্রাচীন যিষ্রিয়েল শহর সম্বন্ধে যা বলে তার থেকে অনেক কিছু জানা যায়। এটা এমন এক শহর ছিল যেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছিল, ইস্রায়েল শাসকরা সত্য উপাসনা থেকে সরে গিয়েছিল আবার সেইসঙ্গে এখানে এমন লোকেরাও ছিলেন যারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ও উৎসাহী ছিলেন। যিষ্রিয়েলেই সা.কা.পূ. দশম শতাব্দীর শেষ দিকে ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যের দশ বংশের রাজা আহাব তার রাজপ্রাসাদ বানিয়েছিলেন, যখন ইস্রায়েলের আসল রাজধানী ছিল শমরিয়া। (১ রাজাবলি ২১:১) যিষ্রিয়েল থেকেই আহাবের বিদেশীনি স্ত্রী ঈষেবল, যিহোবার ভাববাদী এলিয়কে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। রানি খুবই রেগে গিয়েছিলেন কারণ এলিয় কর্মিল পর্বতে সত্য ঈশ্বর আসলে কে তা প্রমাণ করার পর, কোন কিছুর পরোয়া না করে বালের ভাববাদীদের হত্যা করেছিলেন।—১ রাজাবলি ১৮:৩৬-১৯:২.

এরপর যিষ্রিয়েল শহরে আরেকটা অন্যায় কাজ হয়েছিল। যিষ্রিয়েলীয় নাবোতকে মেরে ফেলা হয়েছিল। নাবোতের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে রাজা আহাবের চোখ পড়েছিল। আহাব যখন নাবোতের কাছে সেই জমি চেয়েছিলেন তখন নাবোত বলেছিলেন: “আমি যে আপন পৈতৃক অধিকার আপনাকে দিই, সদাপ্রভু ইহা নিবারণ করুন।” এই উত্তর শুনে আহাব রেগে গিয়েছিলেন। রাজাকে বিষণ্ণ দেখে রানি ঈষেবল নাবোতের বিরুদ্ধে ঈশ্বর নিন্দার মিথ্যা দোষ চাপিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করেছিলেন। নির্দোষ নাবোতকে দোষী করা হয়েছিল ও পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছিল আর রাজা তার দ্রাক্ষাক্ষেত্র দখল করেছিলেন।—১ রাজাবলি ২১:১-১৬.

তার এই কুকর্মের জন্য এলিয় ভাববাণী করেছিলেন: “কুকুরেরা যিষ্রিয়েলের দুর্গপ্রাচীরের কাছে ঈষেবলকে খাইবে।” ভাববাদী আরও ঘোষণা করেছিলেন: “আহাবের যে কেহ নগরে মরিবে, কুকুরেরা তাহাকে খাইবে; . . . আহাব, যিনি আপন স্ত্রী ঈষেবল কর্ত্তৃক উত্তেজিত হইয়া সদাপ্রভুর সাক্ষাতে কদাচরণ করিতে আপনাকে বিক্রয় করিয়াছিলেন, তাঁহার তুল্য আর কেহ কখনও হয় নাই।” কিন্তু এলিয় যখন যিহোবার বিচার ঘোষণা করেছিলেন তখন আহাব যিহোবার সামনে নিজেকে নত করেছিলেন বলে যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন যে আহাবের জীবনকালে তিনি তার প্রতি কোন অমঙ্গল ঘটাবেন না। (১ রাজাবলি ২১:২৩-২৯) বাইবেলের বিবরণ বলে চলে যে এলিয়ের পরের ভাববাদী ইলীশায়ের সময়ে যেহূকে ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়েছিল। যেহূ রথে চড়ে যিষ্রিয়েলে এসেই আদেশ দিয়েছিলেন যে ঈষেবলকে যেন তার রাজপ্রাসাদের জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় আর তিনি ঘোড়াদের পদতলে দলিত হয়েছিলেন। পরে দেখা যায় যে রাস্তার কুকুরেরা এসে তার মাংস খেয়েছিল শুধু তার খুলি, পা ও হাতের হাড়ই পড়েছিল। (২ রাজাবলি ৯:৩০-৩৭) যিষ্রিয়েল সম্বন্ধে বাইবেলে লেখা শেষ ঘটনাটা ছিল আহাবের ৭০ জন পুত্রের মৃত্যু। যেহূ তাদের মুণ্ডগুলো যিষ্রিয়েলের নগরদ্বারে রাশি করে রেখেছিলেন আর এর পরপরই তিনি ধর্মভ্রষ্ট আহাবের রাজ্যের সমস্ত বড় বড় লোক ও যাজকদের হত্যা করেছিলেন।—২ রাজাবলি ১০:৬-১১.

প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌রা কী পেয়েছেন?

১৯০০ সালে কিছু লোকেরা মিলে যিষ্রিয়েলে খনন কাজ করতে শুরু করেন। এই দলে ডেভিড উশিশকিনের নেতৃত্বে তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ও জন উড্‌হেডের নেতৃত্বে যিরূশালেমের ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ব স্কুলের লোকেরা ছিলেন। তারা যিষ্রিয়েলে খনন করার জন্য ৮০ থেকে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর এক দল তৈরি করে ১৯৯০-৯৬ সালের মধ্যে সাত বার কাজ করেছেন আর তারা একটানা ছয় সপ্তা করে কাজ করতেন।

আজকাল প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌রা তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আগের কোন ধারণা অথবা তত্ত্বের সাহায্য নেন না। আর তারা বাইবেলে বলা ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করেও কোন সিদ্ধান্তে আসেন না। বরং তারা খনন করে পাওয়া জিনিসপত্র ভালভাবে পরীক্ষা করে তবেই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। জন উড্‌হেড বলেন যে যিষ্রিয়েলের ব্যাপারে একটা সমস্যা আছে। যিষ্রিয়েল সম্বন্ধে বাইবেল থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেলেও এই সম্বন্ধে আর অন্য কোন প্রাচীন লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় না। তাই প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌দের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় দেখতে হবে যে বাইবেল এই শহর সম্বন্ধে আর যে সময়ে এই শহর ছিল সেই সময় সম্বন্ধে কী বলে। তাহলে প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌দের কাজ থেকে কী জানা গিয়েছে?

মাটি খুঁড়ে যে প্রাচীর ও মাটির বাসনপত্র বের করা হয়েছে, সেগুলো দেখে একেবারে শুরু থেকেই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে এই ধ্বংসাবশেষগুলো লৌহ যুগের। বাইবেল যিষ্রিয়েল শহরের বিষয়ে যা কিছু বলে তা লৌহ যুগের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু খনন কাজ করে চলার সঙ্গে সঙ্গে অবাক করার মতো অনেক বিষয় দেখা গেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌রা জেনে অবাক হয়েছেন যে এই শহর খুবই বড় ছিল আর এর প্রাচীরও বিরাট ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌রা আশা করছিলেন যে এর প্রাচীর ইস্রায়েল রাজ্যের রাজধানী প্রাচীন শমরিয়ার মতো হবে। কিন্তু আরও খনন কাজ করতে করতে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে যিষ্রিয়েল আসলে শমরিয়ার চেয়েও আরও অনেক বড় ছিল। চারদিকের প্রাচীর নিয়ে এই শহরের প্রাচীর প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা ও প্রায় ১৫০ মিটার চওড়া ছিল আর শহরের আয়তন সেই সময়ে ইস্রায়েলের যে কোন শহরের চেয়ে তিন গুণ বড় ছিল। এর চারদিকে এক শুকনো খাল ছিল, যা প্রাচীরের চেয়ে প্রায় ১১ মিটার নিচে। অধ্যাপক উশিশকিন বলেন বাইবেলের সময়ে ইস্রায়েলে এই একটা মাত্র শহরই ছিল যার চারিদিকে এক গভীর খাল ছিল। তিনি বলেন, “বাইবেলের সময়ে আর কোথাও এইরকম সুরক্ষার ব্যবস্থা দেখা যায় না। এইরকম সুরক্ষার ব্যবস্থা শুধু একাদশ শতাব্দীর কাছাকাছি সময় থেকেই দেখা যায়।”

অবাক করে দেওয়ার মতো আরেকটা বিষয় হল যে ওই শহরে কোন বড় অট্টালিকা ছিল না। ওই শহর গড়ে তোলার সময় প্রচুর পরিমাণে লালচে বাদামী রংয়ের মাটি নিয়ে আসা হয়েছিল যা দিয়ে সেখানে উঁচু সমভূমি তৈরি করা হয়েছিল আর এটা দেখতে বিরাট মঞ্চের মতো ছিল। তেল যিষ্রিয়েলে করা খনন কাজের ওপর সেকেন্ড প্রিলিমিনারি রিপোর্ট মন্তব্য করে যে এই বিখ্যাত মঞ্চ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যিষ্রিয়েলে শুধু রাজাদের বাসভবনই ছিল না। এটা বলেছিল: “আমরা বলতে চাই যে যিষ্রিয়েল ছিল অম্রিয় [অম্রি ও তার বংশধরদের] রাজাদের সময়ে ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীর প্রধান সেনানিবাস . . . যেখানে রাজার রথ ও অশ্বারোহী সৈনিকদের রাখা হতো ও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।” এই উঁচু মঞ্চের আকার ও জায়গা দেখে উড্‌হেড অনুমান করেন যে এটা হয়তো ওই সময়ে মধ্য প্রাচ্যের সবচেয়ে বড় প্যারেড মাঠ ছিল যেখানে রাজা তার সেনাবাহিনীর প্রদর্শন করতেন কারণ সেই সময়ে তার সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় আর শক্তিশালী ছিল।

খনন করে ওই নগর দ্বারের যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় তা প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌দের জন্য বিশেষ আগ্রহের বিষয়। সেখানে কম করে হলেও চার-প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট একটা দ্বার দেখা যায়। কিন্তু শত শত বছর ধরে যেহেতু সেখানকার অনেক পাথর চুরি হয়ে গিয়েছে, তাই সেখানে যা পাওয়া গেছে সেগুলো দেখে স্পষ্ট কিছু বোঝা যায় না। উড্‌হেড মনে করেন, সেখানে যা আছে সেগুলো দেখে মনে হয় যে এটা হয়তো ছয়-প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট দ্বার ছিল যেগুলোর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা মগিদ্দো, হাৎসোর ও গেষর পাওয়া দ্বারগুলোর মতোই ছিল। *

প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌দের আবিষ্কার থেকে বোঝা যায় যে এটা খুবই ফলদায়ক ও উর্বর শহর ছিল আর এটা পুরোপুরি সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল যে এই শহর খুব অল্প সময়ই টিকে ছিল। উড্‌হেড জোর দিয়ে বলেন যে যিষ্রিয়েল খুবই বড়, মজবুত ও সুরক্ষিত শহর ছিল কিন্তু তা শুধু অল্প সময়ই টিকে ছিল—কেবল কয়েক দশক। এই শহর বাইবেলের সময়ের অন্যান্য প্রধান জায়গা যেমন মগিদ্দো, হাৎসোর ও রাজধানী শমরিয়ার মতো নয়, যেগুলোকে বার বার গড়ে তোলা হয়েছে, সীমানা বাড়ানো হয়েছে ও বিভিন্ন সময়ে যেগুলোতে লোকেরা বসবাস শুরু করেছে। কিন্তু এই বড় শহর কেন এত তাড়াতাড়ি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল? উড্‌হেড মনে করেন যে আহাব ও তার রাজবংশের লোকেরা এখানকার সম্পদ উড়িয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক পতন ডেকে এনেছিল। এটা যিষ্রিয়েলের বিরাট আয়তন ও শক্তি দেখেই বোঝা যায়। আর নতুন রাজা যেহূ হয়তো আহাবের রাজত্বের সমস্ত স্মৃতিই ভুলে যেতে চেয়েছিলেন তাই তিনি এই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

মাটি খুঁড়ে বের করা অন্যান্য প্রমাণগুলো নিশ্চিত করে যে লৌহ যুগে যিষ্রিয়েল ইস্রায়েলীয়দের একটা প্রধান শহর ছিল। এর আয়তন ও প্রাচীর, বাইবেলে আহাব ও ঈষেবলের বিখ্যাত রাজপ্রাসাদের যে বর্ণনা দেওয়া আছে তার সঙ্গে মিলে যায়। সেই সময়ে এখানে খুব কম লোক বাস করত আর তা বাইবেল এই শহরের বিষয়ে যা বলে তার সঙ্গে মিলে যায়: আহাবের রাজত্বের সময় এই শহর খুব তাড়াতাড়ি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল কিন্তু তারপর যিহোবার আদেশে এর ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছিল যখন যেহূ “আহাব-কুলের যত লোক অবশিষ্ট ছিল, . . . তাহাদিগকে, তাঁহার সমস্ত মহৎ লোককে, তাঁহার বন্ধুবান্ধবদিগকে ও তাঁহার যাজকদিগকে বধ করিলেন, তাঁহার সম্বন্ধীয় কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না।”—২ রাজাবলি ১০:১১.

যিষ্রিয়েল শহর যে যুগে ছিল

জন উড্‌হেড স্বীকার করেন যে “প্রত্নতত্ত্ববিদ্যায় খনন করে পাওয়া জিনিসের একেবারে সঠিক তারিখ বের করা খুবই কঠিন।” তাই প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌রা সাত বছর মাটি খুঁড়ে যা পেয়েছেন সেগুলো তারা অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গাগুলো থেকে পাওয়া জিনিসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। আর এই বিষয়টা আবারও পরীক্ষানিরীক্ষা করার ও বিভিন্ন তর্কবিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কেন? কারণ ১৯৬০ দশকে ও ১৯৭০ দশকের প্রথম দিকে মগিদ্দোতে ইস্রায়েলী প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌ ইগায়েল ইয়াদীনের খনন কাজের সময় থেকে প্রত্নতত্ত্ব জগতের অনেকে মেনে নিয়েছিলেন যে তিনি যে প্রাচীর ও শহরের দ্বারগুলো আবিষ্কার করেছিলেন সেগুলো রাজা শলোমনের সময়কার। যিষ্রিয়েলে যে প্রাচীর, মাটির পাত্র ও দ্বারগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো এখন লোকেদের মনে সন্দেহ এনে দিয়েছে কারণ এখানে পাওয়া জিনিস আর মগিদ্দোতে পাওয়া জিনিস একইরকম ছিল।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিষ্রিয়েলে মাটির যে স্তরে মাটির পাত্র পাওয়া গেছে মগিদ্দোতেও সেই স্তরেই মাটির পাত্র পাওয়া গিয়েছে, যেগুলোকে ইয়াদীন রাজা শলোমনের সময়কার বলেছিলেন। দ্বারের গঠন ও দুটো জায়গায় আয়তন হুবহু না মিললেও প্রায় একইরকম। উড্‌হেড বলেন: “এই সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে হয় যিষ্রিয়েল শহরটা শলোমনের সময়ের নয়তো বা [মগিদ্দো ও হাৎসোর] রাজা আহাবের সময়ের।” বাইবেল স্পষ্ট করে বলে যে যিষ্রিয়েল শহর রাজা আহাবের সময়ের, তাই তিনি এই মগিদ্দোকেও আহাবের সময়কার বলে মেনে নেওয়াকে যুক্তিসংগত বলে মনে করেন। ডেভিড উশিশকিন তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেন: “বাইবেল বলে না যে শলোমন ওই দুটো দ্বার বানিয়েছিলেন কিন্তু বাইবেল শুধু বলে যে শলোমন মগিদ্দো বানিয়েছিলেন। তাই এই দুটো দ্বার পরে হয়তো অন্য কেউ বানিয়েছিলেন।”

যিষ্রিয়েলের ইতিহাস কি জানা যেতে পারে?

এই সমস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য ও তর্কবিতর্ক কি বাইবেলে যিষ্রিয়েল অথবা শলোমনের বিষয়ে যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে সেই সম্বন্ধে কোন সন্দেহ জাগায়? আসলে, বাইবেলের বর্ণনার সঙ্গে প্রত্নতাত্ত্বিক বিতর্কের খুব একটা সম্পর্ক নেই। প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা বাইবেলে যে বর্ণনা আছে তা ছাড়াও আরও অন্যান্য ইতিহাস নিয়ে পরীক্ষা করে থাকে। কিন্তু বাইবেলের উদ্দেশ্য আলাদা আর প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার উদ্দেশ্য আলাদা। বাইবেল ছাত্র ও প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌কে এমন পথিকদের সঙ্গে তুলনা করা যায়, যারা দুজনেই একই পথ দিয়ে যাচ্ছেন। একজন পথিক রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন আর অন্যজন পাশের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য ও চিন্তাভাবনা আলাদা আলাদা। তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণত পরস্পরবিরোধী না হয়ে একইরকম হয়। দুজন পথিকের অনুভূতি তুলনা করলে আকর্ষণীয় বিষয় জানা যায়।

বাইবেলে প্রাচীন কালের বিভিন্ন ঘটনা ও লোকেদের বিষয়ে লেখা আছে; প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা মাটিতে যে সমস্ত চিহ্ন আছে সেগুলো পরীক্ষা করে এই সমস্ত ঘটনা ও লোকেদের বিষয়ে তথ্য দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু রয়ে যাওয়া এই চিহ্নগুলো সাধারণত অসম্পূর্ণ আর এর ফলে এই বিষয়ে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে পারেন। এই বিষয়ে, আ্যমিহাই মাজার তার বাইবেলে বর্ণিত জায়গাগুলোর প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা—১০,০০০—সা.কা.পূ. ৫৮৬ (ইংরেজি) বইয়ে মন্তব্য করেন: “খনন কাজ . . . আসলে একটা সৃজনশীল কাজ কিন্তু এতে প্রশিক্ষণ ও নিপুণতার প্রয়োজন। এতে সফলতা পেতে গেলে সবসময় একই নিয়ম মেনে চলে তা পাওয়া যায় না বরং নতুন নতুন ও আলাদা আলাদা উপায় খুঁজে বের করার দরকার হয় আর যার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের তৈরিও থাকা দরকার। যে কোন প্রত্নতাত্ত্বিকের প্রশিক্ষণ ও অন্য সাহায্যের দরকার আছে আর সঙ্গে সঙ্গে সৎ হওয়া, দক্ষ হওয়া ও বুঝেশুনে কাজ করার দরকার আছে।”

প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা থেকে এটা নিশ্চিত যে যিষ্রিয়েলে একটা বড় রাজপ্রাসাদ ও সেনানিবাস ছিল, যা ইতিহাসে খুব অল্প সময়ের জন্য ছিল আর বাইবেলে আহাবের রাজত্বের বিষয়ে যা বলা হয়েছে তার সঙ্গে এটা মিলে যায়। আরও অনেক আগ্রহজনক প্রশ্ন হয়তো উঠেছে যেগুলো নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌রা গবেষণা করে চলেছেন। তবুও, ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল আমাদের কাছে সমস্ত কিছু স্পষ্টভাবে বলে, এমনভাবে পুরো কাহিনী বলে যা প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌রা কখনোই আমাদের শোনাতে পারবে না।

[পাদটীকাগুলো]

^ বাংলা বি.এস.আই. বাইবেলে বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৭:৩ পদে গিল্‌বোয় পাহাড়কে গিলিয়দ পাহাড় বলা হয়েছে।

^ ১৯৮৮ সালের ১৫ই আগস্ট সংখ্যার প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) এর “দ্বারগুলোর রহস্য” প্রবন্ধটা দেখুন।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিষ্রিয়েল যেখানে খনন কাজ করা হয়েছে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিষ্রিয়েলে পাওয়া কনানী মূর্তি