সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রচ্ছদ বিষয় | আপনি কোথায় সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারেন?

দুর্দশার সময়ে সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া

দুর্দশার সময়ে সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া

মানুষের জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্দশা আসে। যদিও এখানে সমস্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয় কিন্তু আসুন আমরা চারটে উদাহরণ পরীক্ষা করে দেখি, যেগুলো ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। লক্ষ করুন, সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে এমন ব্যক্তিরা কীভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রকৃত সান্ত্বনা লাভ করেছে।

চাকরি হারানো

“আমি যেকোনো ধরনের কাজ গ্রহণ করার মনোভাব গড়ে তুলি এবং পরিবারগতভাবে অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো বাদ দিই।”—জোনাথন

সেথ * বলেন, “আমি ও আমার স্ত্রী একইসময়ে চাকরি হারাই। পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য আমাদেরকে প্রায় দু-বছর আত্মীয়স্বজনের সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হয় এবং ছোটোখাটো কাজ করতে হয়। এর ফলে আমার স্ত্রী প্রিসিল্লা হতাশ হয়ে পড়ে এবং আমিও নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতে শুরু করি।

“কীভাবে আমরা এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করি? প্রিসিল্লা সবসময় মথি ৬:৩৪ পদে বলা যিশুর কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করত। যিশু বলেছিলেন, যেন আমরা কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত না হই, কারণ দিনের কষ্ট দিনের জন্য যথেষ্ট। প্রিসিল্লার আন্তরিক প্রার্থনা তাকে টিকে থাকতে সাহায্য করে। আর আমি গীতসংহিতা ৫৫:২২ পদের কথাগুলো থেকে সান্ত্বনা লাভ করি। গীতরচকের মতো আমিও যিহোবার উপর আমার ভার অর্পণ করি আর তিনি আমাকে সাহায্য করেন। এখন যদিও আমি একটা চাকরি খুঁজে পেয়েছি কিন্তু আমরা মথি ৬:২০-২২ পদে বলা যিশুর উপদেশ অনুযায়ী আমাদের জীবনকে সাদাসিধে রাখার চেষ্টা করছি। সর্বোপরি, আমরা ঈশ্বরের ও সেইসঙ্গে একে অপরের আরও নিকটবর্তী হতে পেরেছি।”

জোনাথন বলেন, “আমাদের ছোটোখাটো এক পারিবারিক ব্যাবসা ছিল। কিন্তু, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমরা যখন ঋণের দায়ে জড়িয়ে পড়ি, তখন ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আমার ২০ বছরের কঠোর পরিশ্রম বিফল হয়ে যায়। আমার স্ত্রী ও আমার মধ্যে টাকাপয়সা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এমনকী আমরা এই ভয়ে ক্রেডিট কার্ডও ব্যবহার করা বন্ধ করে দিই যে, ব্যাঙ্ক হয়তো আমাদের ঋণ মঞ্জুর করবে না।

“কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য ও তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হই। আমি যেকোনো ধরনের কাজ গ্রহণ করার মনোভাব গড়ে তুলি এবং পরিবারগতভাবে অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো বাদ দিই। যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা সহবিশ্বাসীদের কাছ থেকেও সাহায্য লাভ করি। তারা আমাদের আত্মসম্মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে এবং কঠিন সময়গুলোতে আমাদের পাশে থেকে পূর্ণরূপে সহযোগিতা করে।’

বিয়ে ভেঙে যাওয়া

রাকেল বলেন, “আমার স্বামী যখন হঠাৎ আমাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন আমি প্রচণ্ড আঘাত পাই এবং পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু, সেই সময়টাতে আমি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হই আর তিনি আমাকে সান্ত্বনা প্রদান করেন। আমি প্রতিদিন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি এবং তিনি আমাকে মনের শান্তি লাভ করতে ও সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন।

“এ ছাড়া, তাঁর বাক্য বাইবেলের সাহায্যে আমি আমার নেতিবাচক অনুভূতিগুলো দূর করতে সক্ষম হই। আমি রোমীয় ১২:২১ পদে উল্লেখিত প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলো কাজে লাগাই: ‘তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।’

“প্রত্যেকের জীবনে ‘হারাইবার কাল’ বা সময় রয়েছে। . . . এখন আমি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রেখে এগিয়ে যেতে পারছি।”—রাকেল

“একজন ভাইয়ের বিজ্ঞ পরামর্শ আমাকে বুঝতে সাহায্য করেছে যে, এই পরিস্থিতি নিয়ে আমার হতাশ হয়ে বসে থাকা উচিত নয়। তিনি আমাকে উপদেশক ৩:৫ পদ দেখান এবং সদয়ভাবে বলেন, প্রত্যেকের জীবনে ‘হারাইবার কাল’ বা সময় রয়েছে আর এটা আমাকে মেনে নিতে হবে। যদিও এই পরামর্শ মেনে নেওয়া সহজ ছিল না কিন্তু এটা আমার জন্য কার্যকরী ছিল। এখন আমি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রেখে এগিয়ে যেতে পারছি।”

এলিজাবেথ বলেন, “যখন কারো বিয়ে ভেঙে যায়, তখন সত্যিই তার সাহায্যের প্রয়োজন হয়। আমার এক প্রিয় বন্ধু আমাকে ক্রমাগত সেই সাহায্যই প্রদান করেন। আমি যখন কাঁদতাম, তখন তিনিও আমার সঙ্গে কাঁদতেন এবং আমাকে সান্ত্বনা দিতেন। আর তিনি আমাকে মন থেকে অযোগ্যতার অনুভূতি দূর করতে সাহায্য করেন। আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, আমার আবেগগত ক্ষত সারানোর জন্য যিহোবা আমার এই বন্ধুকে ব্যবহার করেছেন।”

অসুস্থতা অথবা বার্ধক্য

“ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার পর আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, তিনি তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাকে শক্তি জোগাচ্ছেন।”—লুইস

শুরুর প্রবন্ধে উল্লেখিত লুইসের হার্টের গুরুতর সমস্যা রয়েছে এবং দু-বার তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। এখন তাকে দিনে ১৬ ঘণ্টা অক্সিজেনের উপর নির্ভর করতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার পর আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, তিনি তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাকে শক্তি জোগাচ্ছেন। প্রার্থনা আমাকে ধৈর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে কারণ আমার এই বিশ্বাস রয়েছে ও সেইসঙ্গে আমি জানি যে, তিনি আমার জন্য চিন্তা করেন।’

পেত্রা, যার বয়স ৮০-র কোঠায়, বলেন, “আমি অনেক কিছু করতে চাই কিন্তু কিছুই করতে পারি না। একটু একটু করে আমার শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে আর এটা দেখা আমার জন্য খুবই কঠিন। আমি একটুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং আমাকে ওষুধের উপর নির্ভর করতে হয়। মাঝে মাঝে আমার অনুভূতিও যিশুর মতো হয়, যিনি একবার তাঁর পিতার কাছে অনুরোধ করেছিলেন যে, যদি সম্ভব হয়, তা হলে তিনি যেন তাঁর কষ্ট দূর করে দেন। কিন্তু, সেই সময় ওই কষ্ট দূর না করে যিহোবা যেমন যিশুকে শক্তি প্রদান করেছিলেন, তেমনই আমাকেও শক্তি প্রদান করেন। যে-বিষয়টার মাধ্যমে আমি সবচেয়ে বেশি শক্তি লাভ করি, তা হল প্রতিদিন প্রার্থনা করা। ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার পর আমি অনেকটা স্বস্তি অনুভব করি।”—মথি ২৬:৩৯.

হুলিয়াও একই অনুভূতি প্রকাশ করেন, যিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসে (কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের রোগ) ভুগছেন। তিনি বলেন, “আগে আমার একটা ভালো চাকরি এবং কেরিয়ার ছিল কিন্তু এখন অসুস্থতার কারণে এই সুযোগগুলো আর নেই। তবে, তারপরও আমার জীবন সার্থক কারণ আমি অন্যদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারছি। আমরা যখন অন্যদের সাহায্য করার কাজে ব্যস্ত থাকি, তখন কষ্ট সহ্য করা আমাদের জন্য আরও সহজ হয়ে ওঠে এবং যিহোবাও তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী প্রয়োজনের সময় আমাদের শক্তি প্রদান করেন। প্রেরিত পৌলের মতো আমিও বলতে পারি: ‘যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।’”—ফিলিপীয় ৪:১৩.

মৃত্যুতে প্রিয়জনকে হারানো

অ্যান্তোনিও বলেন, “আমার বাবা এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। প্রথমে আমি বিষয়টা মেনে নিতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল, এটা কেমন অবিচার—একজন নিরীহ পথচারী এভাবে মারা গেল! কিন্তু, এটা মেনে নেওয়া ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না। পাঁচ দিন কোমায় থাকার পর বাবা মারা যায়। যদিও মায়ের সামনে আমি কোনোরকমে কান্না আটকে রাখতাম কিন্তু একা থাকলে কান্নায় ভেঙে পড়তাম। আমি বার বার নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম, ‘কেন?’ ‘কেন এমনটা ঘটল?’

“সেই কষ্টকর দিনগুলোতে আমি ক্রমাগত যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছি, যেন তিনি আমাকে আমার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেন এবং আমাকে মনের শান্তি দেন। আর ধীরে ধীরে আমি সেই শান্তি লাভ করি। সেই সময় আমি বাইবেলের এই কথাগুলো স্মরণ করতাম যে, আমাদের যেকারো প্রতি ‘কাল ও দৈব’ বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতে পারে। যেহেতু ঈশ্বর মিথ্যাকথনে অসমর্থ, তাই আমার এই দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে যে, পুনরুত্থানে আমি আবার আমার বাবাকে দেখতে পাব।”—উপদেশক ৯:১১; যোহন ১১:২৫; তীত ১:২.

“যদিও বিমান দুর্ঘটনায় আমরা আমাদের ছেলেকে হারিয়েছি কিন্তু আমরা একসঙ্গে যে-সময় কাটিয়েছি, সেটার মধুর স্মৃতি আমাদের রয়েছে।”—রবার্ট

শুরুর প্রবন্ধে উল্লেখিত রবার্টের অনুভূতিও একইরকম। তিনি বলেন: “যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমি ও আমার স্ত্রী ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদে বলা মনের শান্তি অনুভব করি। এই মনের শান্তিই আমাদেরকে সাংবাদিকদের কাছে আমাদের পুনরুত্থানের আশা সম্বন্ধে বলার শক্তি জুগিয়েছে। যদিও বিমান দুর্ঘটনায় আমরা আমাদের ছেলেকে হারিয়েছি কিন্তু আমরা একসঙ্গে যে-সময় কাটিয়েছি, সেটার মধুর স্মৃতি আমাদের রয়েছে। সেগুলো ধরে রাখার মাধ্যমে আমরা আনন্দ বজায় রাখার চেষ্টা করি।

“সহবিশ্বাসীরা যখন জানতে চায় যে, কীভাবে আমরা শান্তভাব বজায় রেখে টেলিভিশনে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলতে পেরেছি, তখন আমরা তাদের বলি, ভাই-বোনদের অসংখ্য প্রার্থনার জোরেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, তাদের অসংখ্য সান্ত্বনামূলক মেসেজের মাধ্যমে আসলে যিহোবাই আমাদেরকে সাহায্য করছিলেন।”

উল্লেখিত এই উদাহরণগুলো দেখায়, মানুষ যে-সমস্যার কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতারই মুখোমুখি হোক না কেন, ঈশ্বর সান্ত্বনা প্রদান করতে সমর্থ। আপনার বিষয়ে কী বলা যায়? আপনি যে-দুর্দশাই ভোগ করুন না কেন, কঠিন সময়ে টিকে থাকার জন্য আপনি সান্ত্বনা লাভ করতে পারবেন। * তাই, সাহায্যের জন্য যিহোবার উপর নির্ভর করুন না কেন? তিনিই হলেন, “সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর।”—২ করিন্থীয় ১:৩. ▪ (wp16-E No. 5)

^ অনু. 5 এই প্রবন্ধে কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ অনু. 23 আপনি যদি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার এবং তাঁর কাছ থেকে সান্ত্বনা লাভ করার বিষয়ে সাহায্য পেতে চান, তা হলে দয়া করে আপনার এলাকার যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন অথবা কাছাকাছি কোনো শাখা অফিসে চিঠি লিখুন।