সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

একটা সম্ভাষণ অন্যদের উপর যে-প্রভাব ফেলতে পারে

একটা সম্ভাষণ অন্যদের উপর যে-প্রভাব ফেলতে পারে

“নমস্কার! কেমন আছেন?”

কোনো সন্দেহ নেই, আপনি প্রায়ই কাউকে-না-কাউকে এই ধরনের সম্ভাষণ জানিয়ে থাকেন। আপনি হয়তো একইসময়ে সেই ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলান অথবা তাকে জড়িয়ে ধরেন। জায়গা অনুযায়ী সম্ভাষণ জানানোর প্রথা ও শব্দগুলো আলাদা হতে পারে, তবে সব জায়গায়ই সম্ভাষণ জানানোর মৌলিক বিষয়গুলো কিন্তু একইরকম। সত্যি বলতে কী, কোনো ব্যক্তি যদি সম্ভাষণ না জানান কিংবা সেটার প্রতি সাড়া না দেন, তা হলে সেটাকে এক নির্দয় কাজ অথবা খারাপ অভ্যাস হিসেবে দেখা হতে পারে।

তবে, সকলেই যে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে সম্ভাষণ জানানোর জন্য অনুপ্রাণিত হয়, এমন নয়। কেউ কেউ লাজুক স্বভাবের কারণে কিংবা অযোগ্যতার অনুভূতির কারণে অন্যদের সম্ভাষণ জানানোর বিষয়ে ইতস্তত করে থাকে। আবার কেউ কেউ ভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি অথবা সামাজিক পদমর্যাদার ব্যক্তিদের সম্ভাষণ জানানোকে কঠিন বলে মনে করে। কিন্তু, এমনকী সংক্ষিপ্তভাবে জানানো একটা সম্ভাষণও অন্যদের উপর খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘একটা সম্ভাষণ অন্যদের কতটা প্রভাবিত করতে পারে? আর সম্ভাষণ জানানোর বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য আমাকে কী শেখাতে পারে?’

“সকলকে” সম্ভাষণ জানান

প্রেরিত পিতর যখন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রথম পরজাতীয় ব্যক্তি কর্ণীলিয়কে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন: “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” ইজি-টু-রিড ভারশন] করেন না।” (প্রেরিত ১০:৩৪) পরে পিতর লিখেছিলেন, প্রভু যিহোবার ‘বাসনা এই, সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়।’ (২ পিতর ৩:৯) নিশ্চিতভাবেই, আমাদের এই শিক্ষাগুলো তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা উচিত, যারা এখন সত্য শিখছে। কিন্তু পিতর খ্রিস্টানদের এই জোরালো পরামর্শও দিয়েছিলেন: “সকলকে সমাদর কর, ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম কর।” (১ পিতর ২:১৭) তাই, অন্যদের জাতি, সংস্কৃতি অথবা পটভূমি যা-ই হোক না কেন, তাদের সম্ভাষণ জানানো কি আমাদের জন্য ভালো হবে না? এমনটা করা হল তাদের প্রতি সমাদর ও প্রেম দেখানোর একটা উপায়।

প্রেরিত পৌল ভাই-বোনদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যেমন খ্রীষ্ট তোমাদিগকে গ্রহণ করিলেন” বা স্বাগত জানালেন, “তেমনি . . . তোমরা এক জন অন্যকে গ্রহণ কর” বা স্বাগত জানাও। (রোমীয় ১৫:৭) পৌল বিশেষভাবে সেই ভাইদের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যারা তাকে ‘সান্ত্বনা [“অনেক উৎসাহ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]’ দিয়েছিল। পৌলের দিনের তুলনায় বর্তমানে, ঈশ্বরের লোকেদের আরও বেশি উৎসাহের প্রয়োজন রয়েছে কারণ শয়তান এই শেষ সময়ে খুবই রেগে আছে।—কল. ৪:১১; প্রকা. ১২:১২, ১৭.

শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো দেখায় যে, সম্ভাষণ জানানো কেবল লোকেদের স্বাগত জানানোর চেয়ে আরও বেশি কিছু সম্পাদন করতে পারে।

সম্ভাষণ জানানোর উপকারিতা

ঈশ্বরের পুত্রের জীবনকে যখন মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তরিত করার সময় এসেছিল, তখন মরিয়মের সঙ্গে কথা বলার জন্য যিহোবা একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়েছিলেন। সেই দূত এভাবে তার কথা শুরু করেছিলেন, “অয়ি মহানুগৃহীতে, মঙ্গল হউক; [ঈশ্বর] তোমার সহবর্ত্তী।” এই কথা শুনে মরিয়ম “অতিশয় উদ্বিগ্ন” হয়েছিলেন কারণ তিনি বুঝতে পারেননি যে, কেন একজন দূত তার সঙ্গে কথা বলছিলেন। মরিয়মের প্রতিক্রিয়া দেখে সেই দূত বলেছিলেন: “মরিয়ম, ভয় করিও না, কেননা তুমি ঈশ্বরের নিকটে অনুগ্রহ পাইয়াছ।” তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, এটা ঈশ্বরেরই ইচ্ছা যেন মরিয়ম মশীহের জন্ম দেন। ফল স্বরূপ, মরিয়ম আর উদ্‌বিগ্ন না হয়ে বরং বাধ্যতা দেখিয়ে বলেছিলেন: “দেখুন, আমি [ঈশ্বরের] দাসী; আপনার বাক্যানুসারে আমার প্রতি ঘটুক।”—লূক ১:২৬-৩৮.

সেই দূতের জন্য যিহোবার বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করা সত্যিই এক বিশেষ সুযোগ ছিল। তবে, তিনি একজন অসিদ্ধ মানুষের সঙ্গে কথা বলাকে নীচু কাজ হিসেবে দেখেননি। তিনি তার কথার শুরুতেই সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন। আমরা কি এখান থেকে কিছু শিখতে পারি? অন্যদের সম্ভাষণ জানানোর ও তাদের উৎসাহিত করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিত। মাত্র কয়েকটা শব্দ ব্যবহার করেই আমরা অন্যদের সাহায্য করতে এবং তাদের এই আস্থা জোগাতে পারি যে, যিহোবার লোকেদের মধ্যে তাদের অনেক মূল্য রয়েছে।

পৌল এশিয়া মাইনর ও ইউরোপের বিভিন্ন মণ্ডলীর অনেকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। তার চিঠিগুলোতে আমরা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সম্ভাষণ জানানোর বিষয়ে অনেক উল্লেখ পাই। আমরা এই বিষয়টা রোমীয় ১৬ অধ্যায়ে দেখতে পাই। পৌল বিভিন্ন সহখ্রিস্টানকে সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন। তিনি ফৈবী নামে একজন বোনকে “আমাদের ভগিনী” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন এবং ভাইদের এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, “তাঁহাকে প্রভুতে, পবিত্রগণের যথাযোগ্য ভাবে, গ্রহণ কর,” বা স্বাগত জানাও “এবং যে কোন বিষয়ে তোমাদের হইতে উপকারের তাঁহার প্রয়োজন হইতে পারে, তাহা কর।” পৌল প্রিষ্কা ও আক্বিলাকে মঙ্গলবাদ বা সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন “কেবল আমিই যে তাঁহাদের ধন্যবাদ করি, এমন নয়, কিন্তু পরজাতীয়দের সমুদয় মণ্ডলীও করে।” তিনি এমন কয়েক জন ব্যক্তিকেও সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন, যাদের বিষয়ে আমরা বর্তমানে বলতে গেলে কিছুই জানি না—“আমার প্রিয় ইপেনিত” ও সেইসঙ্গে “ত্রুফেণা ও ত্রুফোষা, যাঁহারা প্রভুতে পরিশ্রম করেন।” হ্যাঁ, পৌল ইচ্ছুক মনে তার ভাই-বোনদের সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন।—রোমীয় ১৬:১-১৬.

কল্পনা করুন, সেই ভাই-বোনেরা যখন জানতে পেরেছিলেন যে, পৌল স্নেহের সঙ্গে তাদের স্মরণ করেছেন, তখন তারা কতটা আনন্দিত হয়েছিলেন। নিশ্চিতভাবেই, পৌলের প্রতি ও সেইসঙ্গে একে অন্যের প্রতি তাদের ভালোবাসা কতই-না দৃঢ় হয়ে উঠেছিল! আর সেই প্রেমময় সম্ভাষণগুলো সম্বন্ধে শোনা নিশ্চিতভাবেই অন্যান্য খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিল আর তাদের বিশ্বাসে অটল থাকতে সাহায্য করেছিল। হ্যাঁ, যখন আমরা আন্তরিকভাবে ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখিয়ে ও প্রশংসা করে অন্যদের সম্ভাষণ জানাই, তখন সেটা ঈশ্বরের অনুগত দাসদের মধ্যে থাকা বন্ধুত্ব ও একতাকে আরও শক্তিশালী করে।

পৌল যখন পূতিয়লী নামে এক বন্দরে এসেছিলেন এবং সেখান থেকে রোমের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন, তখন স্থানীয় খ্রিস্টানরা তার সঙ্গে দেখা করার জন্য দক্ষিণ দিকে এসেছিলেন। পৌল দূর থেকে তাদের দেখতে পেয়ে ‘ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া সাহস প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।’ (প্রেরিত ২৮:১৩-১৫) কখনো কখনো, কাউকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য আমরা হয়তো কেবল দূর থেকে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টিভাবে হাসি অথবা হাত নাড়াই। কিন্তু, সেই সামান্য বিষয়টাও কোনো ব্যক্তিকে, যেমন হতে পারে কোনো হতাশাগ্রস্ত অথবা দুঃখিত ব্যক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে।

শুরুটা ভালোভাবে করুন

একবার, শিষ্য যাকোবকে মণ্ডলীর সদস্যদের উদ্দেশে দৃঢ় পরামর্শ দিতে হয়েছিল। কেন? কারণ কোনো কোনো খ্রিস্টান জগতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকভাবে ব্যভিচারী হয়ে যাচ্ছিল। (যাকোব ৪:৪) কিন্তু লক্ষ করুন যে, যাকোব কীভাবে তার চিঠিটা শুরু করেছিলেন:

“ঈশ্বরের ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দাস যাকোব—নানা দেশে ছিন্নভিন্ন দ্বাদশ বংশের সমীপে। মঙ্গল হউক।” (যাকোব ১:১) এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, এই চিঠির পাঠকরা যখন তার সম্ভাষণ থেকে জানতে পেরেছিল যে, ঈশ্বরের সামনে তাদের একই অবস্থান রয়েছে, তখন তাদের পক্ষে তার পরামর্শ মেনে নেওয়া সহজ হয়েছিল। হ্যাঁ, নম্রভাবে জানানো একটা সম্ভাষণ এমনকী গুরুতর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য পথ খুলে দিতে পারে।

আন্তরিকভাবে ও প্রকৃত প্রেম দেখিয়ে যখন কোনো সম্ভাষণ জানানো হয়, তখন সেটা সত্যিই কার্যকরী হয়, তা সেটা যত সংক্ষিপ্তই হোক না কেন। এটা এমনকী সেই সময়ের প্রতিও প্রযোজ্য, যখন আমাদের মনে হতে পারে, যার প্রতি সম্ভাষণ জানানো হয়েছে, তিনি হয়তো বিষয়টা লক্ষই করেননি। (মথি ২২:৩৯) একবার, আয়ার্ল্যান্ডে একজন বোন ঠিক সভা শুরু হওয়ার একটু আগেই কিংডম হলে এসেছিলেন। তিনি যখন তাড়াহুড়ো করে ভিতরে ঢুকছিলেন, তখন একজন ভাই ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টিভাবে হেসেছিলেন এবং বলেছিলেন: “কেমন আছেন? আপনাকে দেখে বেশ ভালো লাগছে।” বোন কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ নিজের জায়গায় বসে গিয়েছিলেন।

কয়েক সপ্তাহ পর, সেই বোন ওই ভাইকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি বাড়ির একটা সমস্যার কারণে কিছু সময়ের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সে-দিন বিকেলে আমার মনমেজাজ এত খারাপ ছিল যে, আমি প্রায় সভায় না আসারই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। সে-দিন সভায় কী হয়েছিল, তা আমার খুব-একটা মনে নেই কিন্তু আপনি যে আমাকে সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন, সেটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। সেটা শুনে আমি অনুভব করেছিলাম যে, আমাকে সত্যিই স্বাগত জানানো হয়েছে। ধন্যবাদ ভাই।’

সেই ভাই প্রথমে বুঝতেই পারেননি যে, তিনি বোনকে সংক্ষিপ্তভাবে যে-সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন, সেটা বোনের উপর কতটা প্রভাব ফেলেছিল। তিনি বলেন, ‘সেই বোন যখন আমাকে জানিয়েছিলেন, সেই সংক্ষিপ্ত সম্ভাষণ তার উপর কতটা প্রভাব ফেলেছে, তখন আমি এইজন্য খুব খুশি হয়েছিলাম যে, আমি তাকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য প্রচেষ্টা করেছিলাম। এতে আমারও খুব ভালো লেগেছিল।’

শলোমন লিখেছিলেন: “তুমি জলের উপরে আপন ভক্ষ্য ছড়াইয়া দেও, কেননা অনেক দিনের পরে তাহা পাইবে।” (উপ. ১১:১) অন্যদের, বিশেষভাবে সহখ্রিস্টানদের, সম্ভাষণ জানানোর গুরুত্ব সম্বন্ধে সচেতন থাকার মাধ্যমে আমরা অন্যদের ও সেইসঙ্গে নিজেদের শক্তিশালী করি। তাই আসুন, আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই যে, একটা সম্ভাষণ অন্যদের উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।