সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় চোদ্দো

আপনার পারিবারিক জীবনকে যেভাবে সুখী করা যায়

আপনার পারিবারিক জীবনকে যেভাবে সুখী করা যায়
  • একজন উত্তম স্বামী হওয়ার জন্য কী দরকার?

  • একজন নারী কীভাবে একজন স্ত্রী হিসেবে সফল হতে পারেন?

  • একজন উত্তম বাবা অথবা মা হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত?

  • কীভাবে ছেলে-মেয়েরা পারিবারিক জীবনকে সুখী করায় সাহায্য করতে পারে?

১. এক সুখী পারিবারিক জীবনের চাবিকাঠি কী?

যিহোবা ঈশ্বর চান যেন আপনার পারিবারিক জীবন সুখী হয়। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যে-ভূমিকা পালন করুক বলে ঈশ্বর চান, সেই বিষয়ে বর্ণনা করে তাঁর বাক্য বাইবেল প্রত্যেকের জন্য নির্দেশাবলি জোগায়। পরিবারের সদস্যরা যখন ঈশ্বরের পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে তাদের ভূমিকাগুলো পালন করে, তখন ফল খুবই পরিতৃপ্তিদায়ক হয়। যিশু বলেছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” জুবিলী বাইবেল] তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে।”—লূক ১১:২৮.

২. পরিবারের সুখ আমাদের কোন বিষয়টা উপলব্ধি করার উপর নির্ভর করে?

পারিবারিক সুখ নির্ভর করে মূলত আমাদের এই বিষয়টা উপলব্ধি করার উপর যে, পরিবারের উদ্যোক্তা হচ্ছেন যিহোবা, যাঁকে যিশু ‘আমাদের পিতঃ’ বলেছিলেন। (মথি ৬:৯) আমাদের স্বর্গীয় পিতার কারণে পৃথিবীর প্রত্যেক পরিবারের অস্তিত্ব রয়েছে আর তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, কী পরিবারগুলোকে সুখী করে। (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) তাহলে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ভূমিকা সম্বন্ধে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়?

পরিবারের ঐশিক উৎস

৩. বাইবেল মানবপরিবারের আরম্ভ সম্বন্ধে কীভাবে বর্ণনা করে এবং কেন আমরা জানি যে, এটি যা বলে তা সত্য?

যিহোবা প্রথম মানব-মানবী আদম ও হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তাদেরকে স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে একত্রিত করেছিলেন। তিনি তাদেরকে এক সুন্দর পার্থিব পরমদেশ গৃহে—এদন উদ্যানে—রেখেছিলেন এবং তাদেরকে সন্তান জন্ম দিতে বলেছিলেন। যিহোবা বলেছিলেন, “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ . . . কর।” (আদিপুস্তক ১:২৬-২৮; ২:১৮, ২১-২৪) এটা শুধুই একটা গল্প বা পৌরাণিক কাহিনি নয় কারণ যিশু দেখিয়েছিলেন যে, আদিপুস্তকের বিবরণ পারিবারিক জীবনের আরম্ভ সম্বন্ধে যা বলে, তা সত্য। (মথি ১৯:৪, ৫) যদিও আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হই এবং বর্তমানে জীবন ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুযায়ী নয়, তারপরও আসুন আমরা দেখি যে, কেন পরিবারের মধ্যে সুখী হওয়া সম্ভব।

৪. (ক) কীভাবে পরিবারের প্রত্যেক সদস্য এর সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন? (খ) কেন যিশুর জীবন সম্বন্ধে অধ্যয়ন করা পারিবারিক সুখের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ?

পরিবারের প্রত্যেক সদস্য ভালোবাসা দেখানোর ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে অনুকরণ করার দ্বারা পারিবারিক জীবনকে সুখী করায় সাহায্য করতে পারেন। (ইফিষীয় ৫:১, ২) কিন্তু, কীভাবে আমরা ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে পারি যাঁকে আমরা এমনকী দেখতেও পারি না? আমরা শিখতে পারি যে, কীভাবে যিহোবা কাজ করেন কারণ তিনি তাঁর প্রথমজাত পুত্রকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। (যোহন ১:১৪, ১৮) পৃথিবীতে থাকাকালীন এই পুত্র যিশু খ্রিস্ট তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে এত ভালোভাবে অনুকরণ করেছিলেন যে, যিশুকে দেখা ও তাঁর কথা শোনা ঠিক যেন যিহোবার সঙ্গে থাকা ও তাঁর কথা শোনার মতো ছিল। (যোহন ১৪:৯) তাই, যিশু যে-ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে শিখে ও তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করে আমরা প্রত্যেকে পারিবারিক জীবনকে আরও সুখী করতে পারি।

স্বামীদের জন্য এক আদর্শ

৫, ৬. (ক) যিশু মণ্ডলীর সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, তা কীভাবে স্বামীদের জন্য উদাহরণস্থাপন করে? (খ) পাপের ক্ষমা পাওয়ার জন্য কী করতে হবে?

বাইবেল বলে যে, স্বামীদের ঠিক সেভাবে তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে আচরণ করা উচিত যেমনটা যিশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে করেছিলেন। বাইবেলের এই নির্দেশনা বিবেচনা করুন: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন . . . এইরূপে স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন।”ইফিষীয় ৫:২৩, ২৫-২৯.

শিষ্যদের নিয়ে গঠিত তাঁর মণ্ডলীর প্রতি যিশুর ভালোবাসা স্বামীদের জন্য নিখুঁতভাবে উদাহরণস্থাপন করে। যদিও তারা সিদ্ধ ছিল না, তবুও যিশু “তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন” এবং তাদের জন্য এমনকী তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। (যোহন ১৩:১; ১৫:১৩) একইভাবে, স্বামীদের জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর, তাহাদের প্রতি কটুব্যবহার করিও না।” (কলসীয় ৩:১৯) কী একজন স্বামীকে এই পরামর্শ কাজে লাগাতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে যদি তার স্ত্রী মাঝে মাঝে বিচক্ষণতার সঙ্গে আচরণ করতে ব্যর্থ হন? স্বামীর তার নিজের ভুলত্রুটি এবং ঈশ্বরের ক্ষমা লাভ করার জন্য অবশ্যই তাকে যা করতে হবে, সেই বিষয়টা মনে রাখা উচিত। সেটা কী? তার বিরুদ্ধে যারা পাপ করে, তাদেরকে তার ক্ষমা করতে হবে আর এর অন্তর্ভুক্ত তার স্ত্রীও। অবশ্য, স্ত্রীরও একই বিষয় করা উচিত। (পড়ুন, মথি ৬:১২, ১৪, ১৫.) আপনি কি এখন বুঝতে পারছেন, কেন কিছু ব্যক্তি বলেছে যে এক সফল বিবাহ হচ্ছে দু-জন উত্তম ক্ষমাশীল ব্যক্তির মিলন?

৭. যিশু কোন বিষয়টা বিবেচনা করেছিলেন আর তিনি স্বামীদের জন্য কোন উদাহরণস্থাপন করেছেন?

স্বামীদের এও লক্ষ করা উচিত যে, যিশু সবসময় তাঁর শিষ্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাতেন। তিনি তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো ও দৈহিক প্রয়োজনগুলোর বিষয় বিবেচনা করতেন। উদাহরণ স্বরূপ, তারা যখন ক্লান্ত ছিল তখন তিনি বলেছিলেন: “তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর।” (মার্ক ৬:৩০-৩২) স্ত্রীরাও মনোযোগপূর্ণ বিবেচনা পাওয়ার যোগ্য। বাইবেল তাদেরকে “দুর্ব্বল পাত্র” হিসেবে বর্ণনা করে, যাদেরকে “সমাদর” করার জন্য স্বামীদের আদেশ দেওয়া হয়েছে। কেন? কারণ স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই “জীবনের অনুগ্রহের” সমান অংশীদার। (১ পিতর ৩:৭) স্বামীদের মনে রাখা উচিত যে, বিশ্বস্ততাই একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের কাছে বহুমূল্য করে তোলে, তা তিনি পুরুষ বা নারী যা-ই হোন না কেন।—গীতসংহিতা ১০১:৬.

৮. (ক) কীভাবে যে-স্বামী “আপন স্ত্রীকে . . . প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে”? (খ) একজন স্বামী ও তার স্ত্রীর জন্য “একাঙ্গ” হওয়ার অর্থ কী?

বাইবেল বলে, যে-স্বামী “আপন স্ত্রীকে . . . প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে।” কারণটা হল, একজন পুরুষ ও তার স্ত্রী “আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ,” যেমন যিশু উল্লেখ করেছিলেন। (মথি ১৯:৬) তাই, স্বামী ও স্ত্রীর যৌনকামনাকে অবশ্যই শুধুমাত্র তাদের একে অন্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। (হিতোপদেশ ৫:১৫-২১; ইব্রীয় ১৩:৪) আর তারা তা করতে পারে, যদি তারা একে অন্যের চাহিদার প্রতি নিঃস্বার্থ চিন্তা দেখায়। (১ করিন্থীয় ৭:৩-৫) এই অনুস্মারক লক্ষণীয়: “কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে।” স্বামীদের তাদের স্ত্রীদেরকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে হবে, এই বিষয়টা মনে রেখে যে, তাদেরকে তাদের নিজের মস্তক যিশু খ্রিস্টের কাছে নিকাশ দিতে হবে।—ইফিষীয় ৫:২৯; ১ করিন্থীয় ১১:৩.

৯. ফিলিপীয় ১:৮ পদে যিশুর কোন গুণের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে আর কেন স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের প্রতি এই গুণ দেখানো উচিত?

প্রেরিত পৌল ‘খ্রীষ্ট যীশুর স্নেহের [“কোমল স্নেহের,” NW]’ বিষয়ে বলেছিলেন। (ফিলিপীয় ১:৮) যিশুর কোমলতা এক সতেজদায়ক গুণ ছিল, যা সেই নারীদের কাছে আবেদন রেখেছিল, যারা তাঁর শিষ্যা হয়েছিলেন। (যোহন ২০:১, ১১-১৩, ১৬) আর স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের কাছ থেকে আকুলভাবে কোমল স্নেহের আকাঙ্ক্ষা করে থাকে।

স্ত্রীদের জন্য এক উদাহরণ

১০. কীভাবে যিশু স্ত্রীদের জন্য উদাহরণস্থাপন করেন?

১০ একটা পরিবার হচ্ছে এক প্রতিষ্ঠান আর এটা নির্বিঘ্নে পরিচালিত হওয়ার জন্য একজন মস্তকের প্রয়োজন। এমনকী যিশুরও একজন মস্তক রয়েছেন, যাঁর প্রতি তিনি বশীভূত থাকেন। “খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর,” ঠিক যেমন “স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) ঈশ্বরের মস্তকপদের প্রতি যিশুর বশ্যতা হচ্ছে এক চমৎকার উদাহরণ, কারণ আমাদের সকলের একজন মস্তক রয়েছেন, যাঁর প্রতি আমাদের অবশ্যই বশীভূত হতে হবে।

১১. একজন স্ত্রীর তার স্বামীর প্রতি কোন মনোভাব থাকা উচিত আর তার আচরণের প্রভাব কী হতে পারে?

১১ অসিদ্ধ পুরুষরা ভুল করে এবং প্রায়ই পরিবারের আদর্শ মস্তক হতে ব্যর্থ হয়। তাই, একজন স্ত্রীর কী করা উচিত? তার স্বামী যা করেন সেটাকে স্ত্রীর হেয় করা উচিত নয় বা তার মস্তকপদ গ্রহণ করার চেষ্টা করা উচিত নয়। একজন স্ত্রীর মনে রাখা উচিত যে, ঈশ্বরের চোখে এক মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা বা মনোভাবের বহুমূল্য রয়েছে। (১ পিতর ৩:৪) এই ধরনের এক মনোভাব প্রদর্শন করার দ্বারা তিনি দেখতে পাবেন যে, এমনকী কঠিন পরিস্থিতিতেও ঈশ্বরীয় বশ্যতা প্রদর্শন করা সহজ। অধিকন্তু, বাইবেল বলে: “স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় [“সম্মান,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩) কিন্তু, কী হবে যদি স্বামী খ্রিস্টকে তার মস্তক হিসেবে গ্রহণ না করেন? বাইবেল স্ত্রীদেরকে জোরালোভাবে পরামর্শ দেয়: “তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় [“গভীর সম্মানযুক্ত,” NW] বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।”—১ পিতর ৩:১, ২.

১২. কেন একজন স্ত্রীর জন্য তার মতামত সম্মানপূর্বক ব্যক্ত করা অন্যায় নয়?

১২ স্বামী একজন সহবিশ্বাসী হোন বা না-ই হোন, স্ত্রী যদি কৌশলে স্বামীর চেয়ে ভিন্ন কোনো মতামত জানান, তা হলে তিনি তাকে অসম্মান দেখাচ্ছেন না। তার দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো সঠিক হতে পারে আর স্ত্রীর কথা যদি স্বামী শোনেন, তা হলে পুরো পরিবার উপকৃত হতে পারে। অব্রাহামের স্ত্রী সারা যখন পরিবারের একটা সমস্যার ব্যাপারে বাস্তবসম্মত পরামর্শের সুপারিশ করেছিলেন, তখন অব্রাহাম যদিও তার সঙ্গে একমত হননি, কিন্তু ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: “তাহার সেই কথা শুন।” (পড়ুন, আদিপুস্তক ২১:৯-১২.) অবশ্যই, একজন স্বামী যখন এমন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন, যা ঈশ্বরের আইনের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে না, তখন তার স্ত্রী সেটা সমর্থন করার দ্বারা বশ্যতা দেখান।—প্রেরিত ৫:২৯; ইফিষীয় ৫:২৪.

স্ত্রীদের জন্য সারা কোন চমৎকার উদাহরণ জুগিয়েছেন?

১৩. (ক) তীত ২:৪, ৫ পদ বিবাহিত নারীদের কী করতে জোরালো পরামর্শ দেয়? (খ) পৃথক থাকা এবং বিবাহবিচ্ছেদ সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

১৩ তার ভূমিকা পালন করতে গিয়ে একজন স্ত্রী পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ বাইবেল দেখায় যে, বিবাহিত নারীদের “পতিপ্রিয়া, সন্তানপ্রিয়া, সংযতা, সতী, গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা, সুশীলা, ও আপন আপন স্বামীর বশীভূতা” হতে হবে। (তীত ২:৪, ৫) একজন স্ত্রী ও মা যখন এভাবে কাজ করেন, তখন তিনি তার পরিবারের স্থায়ী প্রেম ও সম্মান লাভ করবেন। (পড়ুন, হিতোপদেশ ৩১:১০, ২৮.) কিন্তু, যেহেতু বিবাহ হচ্ছে অসিদ্ধ ব্যক্তিদের মিলন, তাই কিছু চরম পরিস্থিতির কারণে হয়তো পৃথক থাকা যেতে পারে কিংবা বিবাহবিচ্ছেদ ঘটতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে বাইবেল পৃথক থাকার অনুমতি দেয়। তা সত্ত্বেও, পৃথক থাকা কখনোই হালকাভাবে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়, কারণ বাইবেল পরামর্শ দেয়: “স্ত্রী স্বামীর নিকট হইতে চলিয়া না যাউক . . . আর স্বামীও স্ত্রীকে পরিত্যাগ না করুক।” (১ করিন্থীয় ৭:১০, ১১) আর বিবাহ সাথিদের মধ্যে যেকোনো একজনের কৃত ব্যভিচার বা যৌন অনৈতিকতা হচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদ করার একমাত্র শাস্ত্রীয় কারণ।—মথি ১৯:৯.

বাবা-মায়েদের জন্য এক নিখুঁত উদাহরণ

১৪. ছোটো ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে যিশু কীভাবে আচরণ করেছিলেন এবং বাবা-মায়েদের কাছ থেকে ছেলে-মেয়েদের কী প্রয়োজন?

১৪ ছোটো ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে যিশু যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেটার মাধ্যমে তিনি বাবা-মায়েদের জন্য নিখুঁতভাবে উদাহরণস্থাপন করেছেন। অন্যেরা যখন ছোটো ছেলে-মেয়েদের যিশুর কাছে আসতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তখন তিনি বলেছিলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না।” বাইবেল বলে যে, এরপর তিনি “তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।” (মার্ক ১০:১৩-১৬) যেহেতু যিশু ছোটো ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সময় করে নিয়েছিলেন, তাই আপনাদের কি নিজেদের ছেলে-মেয়েদের প্রতি একই বিষয় করা উচিত নয়? আপনাদের কাছ থেকে তাদের অল্প একটু নয়, কিন্তু অনেকখানি সময় প্রয়োজন। তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনাদের সময় করে নিতেই হবে কারণ যিহোবা বাবা-মায়েদের তা-ই করতে নির্দেশনা দেন।—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৯.

১৫. ছেলে-মেয়েদের রক্ষা করার জন্য বাবা-মায়েরা কী করতে পারেন?

১৫ এই জগৎ দিন দিন যেহেতু আরও বেশি মন্দ হয়ে উঠছে, তাই ছেলে-মেয়েদের এমন বাবা-মায়েদের দরকার, যারা তাদেরকে সেই যৌনশিকারীদের মতো লোকেদের হাত থেকে রক্ষা করবে, যে-লোকেরা তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। লক্ষ করুন যে, যিশু তাঁর শিষ্যদের কীভাবে রক্ষা করেছিলেন, যাদেরকে তিনি স্নেহপূর্বক ‘বৎস’ বলেছিলেন। তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ও তিনি যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, শীঘ্রই তাঁকে হত্যা করা হবে, তখনও যিশু তাদেরকে পালিয়ে যাওয়ার এক পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। (যোহন ১৩:৩৩; ১৮:৭-৯) একজন বাবা অথবা মা হিসেবে, আপনার ছোটো ছেলে-মেয়েদেরকে ক্ষতি করার জন্য দিয়াবলের প্রচেষ্টাগুলোর প্রতি আপনার সতর্ক হতে হবে। আপনাকে আগে থেকেই তাদেরকে সাবধান করে দিতে হবে। * (১ পিতর ৫:৮) তাদের শারীরিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক নিরাপত্তা এর আগে আর কখনো এতখানি হুমকির সম্মুখীন হয়নি।

যিশু ছোটো ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে বাবা-মায়েরা কী শিখতে পারেন?

১৬. যিশু তাঁর শিষ্যদের অসিদ্ধতার সঙ্গে যেভাবে মোকাবিলা করেছিলেন, তা থেকে বাবা-মায়েরা কী শিখতে পারেন?

১৬ যিশু মারা যাওয়ার আগের রাতে, তাঁর শিষ্যরা তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এটা নিয়ে তর্ক করেছিল। তাদের উপর রেগে ওঠার পরিবর্তে, যিশু তাঁর কথা ও উদাহরণের মাধ্যমে প্রেমের সঙ্গে তাদের হৃদয় স্পর্শ করে চলেছিলেন। (লূক ২২:২৪-২৭; যোহন ১৩:৩-৮) আপনি যদি একজন বাবা অথবা মা হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন যে, আপনার ছেলে-মেয়েদের সংশোধন করার ক্ষেত্রে আপনি হয়তো কীভাবে যিশুর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারেন? এটা ঠিক যে তাদের শাসনের প্রয়োজন, কিন্তু তা “বিচারানুরূপ” হওয়া উচিত এবং কখনোই রাগের সঙ্গে করা উচিত নয়। “খড়্গাঘাতের মত” অবিবেচনার কথা বলা উচিত নয়। (যিরমিয় ৩০:১১; হিতোপদেশ ১২:১৮) শাসন এমন উপায়ে করা উচিত যেন আপনার সন্তান পরে বুঝতে পারে যে, এটা কতখানি সঠিক ছিল।—ইফিষীয় ৬:৪; ইব্রীয় ১২:৯-১১.

ছেলে-মেয়েদের জন্য এক আদর্শ

১৭. কোন কোন উপায়ে যিশু ছেলে-মেয়েদের জন্য নিখুঁতভাবে উদাহরণস্থাপন করেছিলেন?

১৭ ছেলে-মেয়েরা কি যিশুর কাছ থেকে শিখতে পারে? হ্যাঁ, তারা শিখতে পারে! তাঁর নিজের উদাহরণের মাধ্যমে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, ছেলে-মেয়েদের কীভাবে তাদের বাবা-মায়েদের বাধ্য হওয়া উচিত। “পিতা আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়াছেন,” তিনি বলেছিলেন, “তদনুসারে . . . কথা কহি।” তিনি আরও বলেছিলেন: “আমি সর্ব্বদা তাঁহার সন্তোষজনক কার্য্য করি।” (যোহন ৮:২৮, ২৯) যিশু তাঁর স্বর্গীয় পিতার প্রতি সবসময় বাধ্য ছিলেন আর বাইবেল ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের বাবা-মায়েদের বাধ্য থাকতে বলে। (পড়ুন, ইফিষীয় ৬:১-৩.) যদিও যিশু একজন সিদ্ধ সন্তান ছিলেন, কিন্তু তিনি তাঁর মনুষ্য বাবা-মা যোষেফ ও মরিয়মের বাধ্য থেকেছিলেন, যারা অসিদ্ধ ছিলেন। এটা নিশ্চয়ই যিশুর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল!—লূক ২:৪, ৫, ৫১, ৫২.

১৮. কেন যিশু সবসময় তাঁর স্বর্গীয় পিতার বাধ্য ছিলেন আর আজকে যখন ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হয় তখন কে খুশি হন?

১৮ ছেলে-মেয়েরা কি এমন উপায়গুলো খুঁজে পেতে পারে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা আরও বেশি করে যিশুর মতো হতে পারে ও তাদের বাবা-মায়েদের খুশি করতে পারে? এটা ঠিক যে, ছোটোদের পক্ষে মাঝে মাঝে তাদের বাবাদের বাধ্য হওয়া কঠিন হতে পারে, কিন্তু ঈশ্বর চান যে ছেলে-মেয়েরা বাধ্য থাকুক। (হিতোপদেশ ১:৮; ৬:২০) যিশু সবসময় তাঁর স্বর্গীয় পিতার বাধ্য ছিলেন, এমনকী কঠিন পরিস্থিতিগুলোতেও। একবার, ঈশ্বরের যখন ইচ্ছা ছিল যে, যিশু বিশেষভাবে কঠিন কিছু করবেন, তখন যিশু বলেছিলেন: “আমা হইতে এই পানপাত্র [এক নির্দিষ্ট চাহিদা] দূর কর।” তা সত্ত্বেও, যিশু ঠিক তা-ই করেছিলেন, যা ঈশ্বর তাঁকে করতে বলেছিলেন কারণ তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, তাঁর জন্য কোনটা সর্বোত্তম হবে তা তাঁর পিতা জানতেন। (লূক ২২:৪২) বাধ্য হতে শেখার দ্বারা ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবা-মায়েদের ও তাদের স্বর্গীয় পিতাকে অনেক খুশি করবে। *হিতোপদেশ ২৩:২২-২৫.

তরুণ-তরুণীরা যখন প্রলোভিত হয়, তখন তাদের কী চিন্তা করা উচিত?

১৯. (ক) শয়তান কীভাবে ছেলে-মেয়েদেরকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করে? (খ) ছেলে-মেয়েদের খারাপ আচরণ বাবা-মায়েদের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে?

১৯ দিয়াবল যিশুকে পরীক্ষা বা প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল আর তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যা অন্যায় তা করার জন্য সে ছোটোদেরও প্রলোভিত করার চেষ্টা করবে। (মথি ৪:১-১০) শয়তান দিয়াবল সঙ্গীসাথিদের চাপকে ব্যবহার করে, যা প্রতিরোধ করা কঠিন হতে পারে। তা হলে, এটা কতই-না গুরুত্বপূর্ণ যে, ছেলে-মেয়েরা যেন অন্যায়কারীদের সঙ্গে মেলামেশা না করে! (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) যাকোবের মেয়ে দীণা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করে চলেছিলেন, যারা যিহোবার উপাসনা করত না আর তাই, এটা অনেক সমস্যা নিয়ে এসেছিল। (আদিপুস্তক ৩৪:১, ২) চিন্তা করে দেখুন যে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যদি একজন যৌন অনৈতিকতায় জড়িত হয়ে পড়ে, তা হলে কীভাবে সেটা পরিবারকে আঘাত করতে পারে!—হিতোপদেশ ১৭:২১, ২৫.

পারিবারিক সুখের চাবিকাঠি

২০. সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করার জন্য পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অবশ্যই কী করতে হবে?

২০ পারিবারিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করা তখনই সহজ হয়ে ওঠে, যখন বাইবেলের পরামর্শ প্রয়োগ করা হয়। বস্তুতপক্ষে, এই ধরনের পরামর্শ কাজে লাগানোই হচ্ছে পারিবারিক সুখের চাবিকাঠি। তাই, স্বামীরা আপনাদের স্ত্রীকে ভালোবাসুন আর তার সঙ্গে সেভাবে আচরণ করুন, যেভাবে যিশু তাঁর মণ্ডলীর সঙ্গে করে থাকেন। স্ত্রীরা, আপনাদের স্বামীর মস্তকপদের বশীভূত হোন এবং হিতোপদেশ ৩১:১০-৩১ পদে বর্ণিত গুণবতী স্ত্রীর উদাহরণ অনুসরণ করুন। বাবা-মায়েরা, আপনাদের ছেলে-মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিন। (হিতোপদেশ ২২:৬) বাবারা, ‘আপন ঘরের শাসন উত্তমরূপে করুন।’ (১ তীমথিয় ৩:৪, ৫; ৫:৮) আর ছেলে-মেয়েরা তোমাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হও। (কলসীয় ৩:২০) পরিবারের কেউই সিদ্ধ নয় কারণ সকলেই ভুল করে। তাই নম্র হোন, একে অন্যের কাছে ক্ষমা চান।

২১. সামনে চমৎকার কোন প্রত্যাশাগুলো রয়েছে আর কীভাবে আমরা এখনই সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করতে পারি?

২১ সত্যিই, বাইবেলে পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে প্রচুর মূল্যবান পরামর্শ ও নির্দেশনা রয়েছে। অধিকন্তু, এটি আমাদেরকে ঈশ্বরের নতুন জগৎ এবং এক পার্থিব পরমদেশ সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়, যা যিহোবাকে উপাসনা করে এমন সুখী লোকেদের দ্বারা পূর্ণ। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) সামনে কী চমৎকার প্রত্যাশাগুলোই না রয়েছে! এমনকী এখনই ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশনাগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা সুখী পারিবারিক জীবন উপভোগ করতে পারি।

^ অনু. 15 ছেলে-মেয়েদের রক্ষা করার বিষয়ে সাহায্য, যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত মহান শিক্ষকের কাছ থেকে শেখো (ইংরেজি) বইয়ের ৩২ অধ্যায়ে পাওয়া যায়।

^ অনু. 18 বাবা অথবা মা যদি কোনো সন্তানকে ঈশ্বরের আইনভঙ্গ করতে বলেন, একমাত্র তখনই সেই সন্তানের জন্য অবাধ্য হওয়া সঠিক হবে।—প্রেরিত ৫:২৯.