সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ২

আপনি কি সত্যিই ‘ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হইতে’ পারেন?

আপনি কি সত্যিই ‘ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হইতে’ পারেন?

১, ২. (ক) অনেকের কাছে কোন বিষয়টা অসম্ভব বলে মনে হতে পারে কিন্তু বাইবেল আমাদের কী আশ্বাস দেয়? (খ) অব্রাহামকে কোন নিকট সম্পর্ক উপভোগ করতে দেওয়া হয়েছিল এবং কেন?

স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা যদি আপনার সম্বন্ধে বলতেন, “এই আমার বন্ধু,” তা হলে আপনার কেমন লাগত? অনেকের কাছে, এটাকে অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। কারণ, নগণ্য এক মানুষ কীভাবে যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে? কিন্তু, বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয় যে, আমরা সত্যিই ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারি।

প্রাচীনকালের অব্রাহাম ছিলেন এমনই একজন, যিনি এইরকম নিকট সম্পর্ক উপভোগ করেছিলেন। যিহোবা সেই কুলপতিকে “আমার বন্ধু” বলেছিলেন। (যিশাইয় ৪১:৮) হ্যাঁ, যিহোবা অব্রাহামকে তাঁর বন্ধু হিসেবে গণ্য করেছিলেন। অব্রাহামকে সেই নিকট সম্পর্ক উপভোগ করতে দেওয়া হয়েছিল কারণ তিনি “ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন।” (যাকোব ২:২৩) আজকেও, যিহোবা তাদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ হওয়ার’ সুযোগগুলো খোঁজেন, যারা তাঁকে ভালবেসে সেবা করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৫, NW) তাঁর বাক্য পরামর্শ দেয়: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) এই বাক্যগুলোতে আমরা এক আমন্ত্রণ ও এক প্রতিজ্ঞা দুটোই পাই।

৩. যিহোবা আমাদের কোন আমন্ত্রণ জানান এবং এর সঙ্গে কোন প্রতিজ্ঞা সম্পর্কযুক্ত?

যিহোবা আমাদের তাঁর নিকটবর্তী হতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি আমাদের তাঁর বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে তৈরি ও ইচ্ছুক। একই সময়ে, তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে আমরা যদি তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিই, তা হলে তিনিও একই কাজ করবেন। তিনি আমাদের নিকটবর্তী হবেন। এভাবে আমরা প্রকৃতই মূল্যবান কিছুতে প্রবেশ করতে পারি আর সেটা হল, “যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা।” * (গীতসংহিতা ২৫:১৪, NW) “অন্তরঙ্গতা” এক বিশিষ্ট বন্ধুর সঙ্গে গোপন কথা বলার ধারণা দেয়।

৪. একজন অন্তরঙ্গ বন্ধুর বিষয়ে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন এবং কোন উপায়ে যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তির প্রতি এইরকম একজন বন্ধু প্রমাণিত হন, যারা তাঁর নিকটবর্তী হয়?

আপনার কি এমন একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু আছে, যার ওপর আপনি আস্থা রাখতে পারেন? এইরকম একজন বন্ধু হলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন। আপনি তার ওপর নির্ভর করেন কারণ তিনি অনুগত প্রমাণিত হয়েছেন। আপনার আনন্দ আরও গভীর হয়, যখন আপনি সেগুলো তার সঙ্গে ভাগ করে নেন। তিনি সহানুভূতির সঙ্গে আপনার কথা শোনেন, যা আপনার দুঃখের বোঝাকে হালকা করে। এমনকি যখন মনে হয় যে কেউই আপনাকে বোঝে না, তখন তিনি বোঝেন। একইভাবে, আপনি যখন ঈশ্বরের নিকটবর্তী হন, তখন তিনি আপনার এমন এক বিশিষ্ট বন্ধু হন যিনি সত্যিই আপনাকে মূল্য দেন, আপনার জন্য খুব চিন্তা করেন আর আপনাকে পুরোপুরি বোঝেন। (গীতসংহিতা ১০৩:১৪; ১ পিতর ৫:৭) আপনি মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর ওপর নির্ভর করেন কারণ আপনি জানেন যে তিনি সেই সমস্ত ব্যক্তির প্রতি অনুগত, যারা তাঁর প্রতি অনুগত। (গীতসংহিতা ১৮:২৫, NW) কিন্তু, ঈশ্বরের সঙ্গে এই বিশেষ অন্তরঙ্গতা আমাদের নাগালের মধ্যে থাকার একমাত্র কারণ হল যে, তিনি তা সম্ভবপর করেছেন।

যিহোবা পথ খুলে দিয়েছেন

৫. যিহোবা তাঁর নিকটবর্তী হওয়া সম্ভবপর করতে আমাদের জন্য কী করেছিলেন?

আমাদের ওপর ছেড়ে দিলে, পাপী হিসেবে আমরা নিজেরা কখনোই ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারতাম না। (গীতসংহিতা ৫:৪) “কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (রোমীয় ৫:৮) হ্যাঁ, যিহোবা ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে যিশু “অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে” দেন। (মথি ২০:২৮) সেই মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে আমাদের বিশ্বাসই আমাদের জন্য ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া সম্ভবপর করেছে। যেহেতু ঈশ্বর “প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন,” তাই তিনি তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে আমাদের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।—১ যোহন ৪:১৯.

৬, ৭. (ক) আমরা কীভাবে জানি যে যিহোবা একজন গুপ্ত, বোধের অগম্য ঈশ্বর নন? (খ) কোন কোন উপায়ে যিহোবা নিজেকে প্রকাশ করেছেন?

যিহোবা আরেকটা পদক্ষেপ নিয়েছেন: তিনি আমাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। যেকোনো বন্ধুত্বে, অন্তরঙ্গতা একজন ব্যক্তিকে ভালভাবে জানা এবং তার গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যগুলোকে মূল্য দেওয়ার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তাই যিহোবা যদি একজন গুপ্ত, বোধের অগম্য ঈশ্বর হতেন, তা হলে আমরা কখনোই তাঁর নিকটবর্তী হতে পারতাম না। কিন্তু, নিজেকে অব্যক্ত রাখার পরিবর্তে তিনি চান যেন আমরা তাঁকে জানি। (যিশাইয় ৪৫:১৯) এ ছাড়া, তিনি নিজের সম্বন্ধে যা প্রকাশ করেন তা সকলে জানতে পারে, এমনকি আমাদের মধ্যে সেই সমস্ত ব্যক্তিরাও জানতে পারে, যাদেরকে জগতের মান অনুযায়ী নিচু পদমর্যাদার বলে মনে করা হয়।—মথি ১১:২৫.

যিহোবা তাঁর সৃজনশীল কাজগুলো ও তাঁর লিখিত বাক্যের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করেছেন

যিহোবা কীভাবে নিজেকে আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন? তাঁর সৃজনশীল কাজগুলো তাঁর ব্যক্তিত্বের কিছু দিক যেমন, তাঁর শক্তির বিশালতা, প্রজ্ঞার গভীরতা, প্রেমের প্রাচুর্য সম্বন্ধে জানায়। (রোমীয় ১:২০) কিন্তু, যিহোবার নিজেকে প্রকাশ করা শুধু তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি হলেন সবচেয়ে মহান জ্ঞানদাতা আর তাই তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলে নিজের সম্বন্ধে লিখিতভাবে প্রকাশ করেছেন।

“সদাপ্রভুর প্রসন্নভাব” দেখা

৮. কেন এটা বলা যেতে পারে যে, স্বয়ং বাইবেল আমাদের জন্য যিহোবার প্রেমের প্রমাণ?

স্বয়ং বাইবেল আমাদের জন্য যিহোবার প্রেমের প্রমাণ। তাঁর বাক্যে, তিনি এমন পরিভাষায় নিজেকে প্রকাশ করেন, যা আমরা বুঝতে পারি—যা শুধু প্রমাণ করে না যে, তিনি আমাদের ভালবাসেন সেইসঙ্গে এও প্রমাণ করে যে, তিনি চান যেন আমরা তাঁকে জানি ও ভালবাসি। এই মহামূল্যবান বইয়ে আমরা যা পড়ি, তা আমাদের “সদাপ্রভুর প্রসন্নভাব” দেখতে সমর্থ করে এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে চাওয়ার জন্য পরিচালিত করে। (গীতসংহিতা ৯০:১৭) আসুন আমরা কিছু হৃদয়গ্রাহী উপায় সম্বন্ধে আলোচনা করি, যে-উপায়গুলোতে যিহোবা তাঁর বাক্যে নিজেকে প্রকাশ করেন।

৯. বাইবেলের কিছু স্পষ্ট উক্তি কী, যা ঈশ্বরের গুণগুলোকে তুলে ধরে?

শাস্ত্রে অনেক স্পষ্ট উক্তি রয়েছে, যা ঈশ্বরের গুণগুলো তুলে ধরে। কয়েকটা উদাহরণ লক্ষ করুন। “সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৮) ঈশ্বর “পরাক্রমে মহান।” (ইয়োব ৩৭:২৩) “আমি দয়াবান [“অনুগত,” NW], ইহা সদাপ্রভু কহেন।” (যিরমিয় ৩:১২) “তিনি চিত্তে জ্ঞানবান [“বিজ্ঞ,” NW]।” (ইয়োব ৯:৪) তিনি “করুণাময় ও সদয় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং প্রেমপূর্ণ-দয়া ও সত্যে মহান।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, NW) “হে প্রভু, তুমি মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্‌।” (গীতসংহিতা ৮৬:৫) আর আগের অধ্যায়ে যেমন বলা হয়েছে যে, একটা গুণ হল মুখ্য: “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) আপনি যখন এই মনোরম গুণগুলো নিয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনি কি এই অতুলনীয় ঈশ্বরের নিকটবর্তী হন না?

বাইবেল আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে

১০, ১১. (ক) তাঁর ব্যক্তিত্বকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করার জন্য যিহোবা তাঁর বাক্যে আর কী অন্তর্ভুক্ত করেছেন? (খ) বাইবেলের কোন উদাহরণ আমাদের মনের চোখ দিয়ে ঈশ্বরের শক্তিকে কার্যরত দেখতে সাহায্য করে?

১০ যিহোবার কী কী গুণ রয়েছে, তা আমাদেরকে বলা ছাড়াও তিনি এই গুণগুলো কাজে প্রয়োগ করার বিষয়ে নির্দিষ্ট উদাহরণগুলো প্রেমের সঙ্গে তাঁর বাক্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এইরকম বিবরণগুলো মনের মধ্যে এমন প্রাণবন্ত চিত্র অঙ্কন করে, যা আমাদের তাঁর ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে। এর ফলে এটা আমাদের তাঁর নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে। একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন।

১১ ঈশ্বরের “শক্তির প্রাবল্য” আছে, তা পড়া এক কথা। (যিশাইয় ৪০:২৬) আর তিনি যেভাবে ইস্রায়েলকে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে উদ্ধার করেছিলেন ও তারপর সেই জাতিকে ৪০ বছর প্রান্তরে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, সেই সম্বন্ধে পড়া সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। আপনি মনের চোখ দিয়ে দেখতে পারেন যে, তরঙ্গায়িত জল ভাগ হয়ে যাচ্ছে। আপনি কল্পনা করতে পারেন যে, সেই জাতি—সব মিলিয়ে সম্ভবত ৩০,০০,০০০—শুকনো সমুদ্রতল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, ঘনীভূত হয়ে যাওয়া জল দুদিকে বিশাল দেওয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। (যাত্রাপুস্তক ১৪:২১; ১৫:৮) আপনি প্রান্তরে ঈশ্বরের প্রতিরক্ষামূলক যত্নের প্রমাণ দেখতে পারেন। পাথরের মধ্য থেকে জলের ধারা বয়ে গিয়েছিল। সাদা বীজের মতো খাবার ভূমিতে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৬:৩১; গণনাপুস্তক ২০:১১) যিহোবা এখানে শুধু প্রকাশ করেননি যে তাঁর শক্তি আছে কিন্তু সেইসঙ্গে দেখিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর লোকদের জন্য তা ব্যবহার করেন। এটা জানা কি আবারও আশ্বাস দেয় না যে আমাদের প্রার্থনা একজন শক্তিশালী ঈশ্বরের কাছে যায়, যিনি “আমাদের পক্ষে আশ্রয় ও বল। . . . সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায়”?—গীতসংহিতা ৪৬:১.

১২. যিহোবা কীভাবে এমন পরিভাষায় তাঁকে “বুঝতে” আমাদের সাহায্য করেন, যা আমরা বুঝি?

১২ যিহোবা, যিনি হলেন একজন আত্মা, তিনি তাঁকে জানতে আমাদের সাহায্য করার জন্য আরও বেশি কিছু করেছেন। মানুষ হিসেবে আমরা শুধু দৃশ্যমান বিষয়গুলো দেখতে পাই আর তাই আত্মিক রাজ্য দেখতে পাই না। আমাদের কাছে ঈশ্বর যদি নিজেকে আত্মিক পরিভাষায় বর্ণনা করতেন, তা হলে সেটা হতো জন্মান্ধ কারও কাছে আপনার চেহারার খুঁটিনাটি যেমন, আপনার চোখের রং বা তিল সম্বন্ধে বর্ণনা করতে চেষ্টা করার মতো। এর বিপরীতে, যিহোবা দয়ার সঙ্গে এমন পরিভাষায় তাঁকে “বুঝতে” আমাদের সাহায্য করেন, যা আমরা বুঝি। কখনও কখনও, তিনি রূপক ভাষা ও উপমা ব্যবহার করেন, নিজেকে এমন জিনিসের সঙ্গে তুলনা করেন, যা আমাদের কাছে পরিচিত। তিনি এমনকি নিজের মধ্যে মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে বর্ণনা করেন। *

১৩. যিশাইয় ৪০:১১ পদ কোন কাল্পনিক চিত্র অঙ্কন করে আর এটা কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করে?

১৩ যিশাইয় ৪০:১১ পদে যিহোবার সম্বন্ধে যে-বর্ণনা পাওয়া যায় তা লক্ষ করুন: “তিনি মেষপালকের ন্যায় আপন পাল চরাইবেন, তিনি শাবকদিগকে বাহুতে সংগ্রহ করিবেন, এবং কোলে করিয়া বহন করিবেন।” এখানে যিহোবাকে একজন মেষপালকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যিনি মেষদের তাঁর “বাহুতে” তোলেন। এটা ঈশ্বরের যে তাঁর লোকেদের, এমনকি একেবারে দুর্বলদেরও রক্ষা ও সমর্থন করার ক্ষমতা আছে, সেটাকে বোঝায়। আমরা তাঁর শক্তিশালী বাহুতে নিরাপদ বোধ করতে পারি কারণ আমরা যদি তাঁর প্রতি অনুগত থাকি, তা হলে তিনি কখনোই আমাদের পরিত্যাগ করবেন না। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) সর্বমহান মেষপালক মেষশাবকদের বহন করেন তাঁর “কোলে”—যে-অভিব্যক্তিটা ওপরের জামার আলগা ভাঁজগুলোকে বোঝায়, যেখানে একজন মেষপালক মাঝে মাঝে এক নবজাত মেষশাবককে বহন করেন। এভাবে আমরা আশ্বাস পাই যে, যিহোবা আমাদের সযত্নে পালন করেন ও কোমলভাবে যত্ন নিয়ে থাকেন। তাই, তাঁর নিকটবর্তী হতে চাওয়া স্বাভাবিক।

“পুত্ত্র . . . তাঁহাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন”

১৪. কেন বলা যেতে পারে যে, যিশুর মাধ্যমে যিহোবা নিজেকে সবচেয়ে অন্তরঙ্গভাবে প্রকাশ করেন?

১৪ যিহোবা তাঁর বাক্যে, তাঁর প্রিয় পুত্র, যিশুর মাধ্যমে নিজেকে সবচেয়ে অন্তরঙ্গভাবে প্রকাশ করেন। যিশুর মতো আর কেউই ঈশ্বরের চিন্তাধারা ও অনুভূতিগুলো এতটা নিবিড়ভাবে প্রতিফলিত করতে বা তাঁকে এতটা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারত না। কারণ সেই প্রথমজাত পুত্র, অন্যান্য আত্মিক প্রাণী ও ভৌত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হওয়ার আগে তাঁর পিতার পাশে ছিলেন। (কলসীয় ১:১৫) যিশু যিহোবাকে খুবই অন্তরঙ্গভাবে জেনেছিলেন। সেইজন্য তিনি বলতে পেরেছিলেন: “পুত্ত্র কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পিতা জানেন; আর পিতা কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পুত্ত্র জানেন, আর পুত্ত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন, সে জানে।” (লূক ১০:২২) যিশু যখন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁর পিতাকে দুটো গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে প্রকাশ করেছিলেন।

১৫, ১৬. যিশু কোন দুটো উপায়ে তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন?

১৫ প্রথমত, যিশুর শিক্ষাগুলো আমাদের তাঁর পিতাকে জানতে সাহায্য করে। যিশু যিহোবাকে এমন পরিভাষায় বর্ণনা করেছিলেন, যা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, করুণাময় ঈশ্বর যিনি অনুতপ্ত পাপীদের স্বাগত জানান, তাঁকে ব্যাখ্যা করার জন্য যিশু যিহোবাকে একজন ক্ষমাশীল পিতার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যিনি তার অপব্যয়ী পুত্রকে ফিরে আসতে দেখে এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন যে, দৌড়ে গিয়ে তার পুত্রের গলা জড়িয়ে ধরে তাকে স্নেহের সঙ্গে চুম্বন করেছিলেন। (লূক ১৫:১১-২৪) এ ছাড়া, যিহোবাকে যিশু এমন একজন ঈশ্বর হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যিনি সঠিক হৃদয়ের লোকেদের “আকর্ষণ” করেন কারণ তিনি তাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে ভালবাসেন। (যোহন ৬:৪৪) এমনকি একটা ছোট্ট চড়ুই পাখি কখন ভূমিতে পড়ে, তা-ও তিনি জানেন। যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন: “ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।” (মথি ১০:২৯, ৩১) এইরকম একজন যত্নবান ঈশ্বরের নিকটবর্তী না হয়ে আমরা পারি না।

১৬ দ্বিতীয়ত, যিশুর উদাহরণ আমাদের দেখায় যে, যিহোবা কেমন। যিশু এতটা নিখুঁতভাবে তাঁর পিতাকে প্রতিফলিত করেছিলেন যে তিনি বলতে পেরেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৯) তাই, আমরা যখন সুসমাচারে যিশুর সম্বন্ধে পড়ি, তিনি যে-অনুভূতিগুলো প্রদর্শন করেছিলেন ও যেভাবে লোকেদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, তখন আমরা এক অর্থে তাঁর পিতার এক জীবন্ত প্রতিকৃতি দেখতে পাই। যিহোবা আমাদের কাছে এর চেয়ে আরও স্পষ্টভাবে তাঁর গুণগুলো প্রকাশ করতে পারতেন না। কেন?

১৭. তিনি কেমন তা বুঝতে আমাদের সাহায্য করার জন্য যিহোবা যা করেছেন, সেটার উদাহরণ দিন।

১৭ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: কল্পনা করুন যে, আপনি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন দয়া কী। আপনি এটিকে বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে বর্ণনা করতে পারেন। কিন্তু, আসলেই দয়ার কাজ করছেন এমন কাউকে দেখিয়ে আপনি যদি বলতে পারতেন, “এটা হল দয়ার এক উদাহরণ,” তা হলে “দয়া” শব্দটি আরও অর্থ রাখত আর এতে বুঝতে আরও সহজ হতো। যিহোবা কেমন, তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করার জন্য তিনি এইরকম কিছুই করেছেন। নিজেকে ভাষায় প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর পুত্রের জীবন্ত উদাহরণও আমাদের দিয়েছেন। যিশুর মধ্যে, ঈশ্বরের গুণগুলো কার্যরত দেখা যায়। সুসমাচারের বিবরণগুলোর মাধ্যমে, যেগুলো যিশুর বিষয়ে বর্ণনা করে, যিহোবা আসলে বলছেন: “আমি ঠিক এইরকম।” অনুপ্রাণিত নথি কীভাবে পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশুকে বর্ণনা করে?

১৮. কীভাবে যিশু শক্তি, ন্যায়বিচার ও প্রজ্ঞা প্রকাশ করেছিলেন?

১৮ ঈশ্বরের চারটে মুখ্য গুণ যিশুর মধ্যে চমৎকারভাবে প্রকাশ পায়। রোগ, ক্ষুধা এমনকি মৃত্যুর ওপর তাঁর শক্তি ছিল। তবুও, যেসমস্ত স্বার্থপর মানুষ তাদের শক্তির অপব্যবহার করে, তাদের বৈসাদৃশ্যে তিনি অলৌকিক ক্ষমতাকে কখনোই নিজের স্বার্থে বা অন্যদের ক্ষতি করার জন্য ব্যবহার করেননি। (মথি ৪:২-৪) তিনি ন্যায়বিচার ভালবাসতেন। অসাধু বণিকরা লোকেদের ঠকাচ্ছে দেখে তাঁর হৃদয় ন্যায্য ক্রোধে পূর্ণ হয়েছিল। (মথি ২১:১২, ১৩) তিনি দরিদ্র ও উৎপীড়িত লোকেদের সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ করেছিলেন, এইরকম লোকেদের তাদের প্রাণের জন্য ‘বিশ্রাম [“সতেজতা,” NW] পাইতে’ সাহায্য করেছিলেন। (মথি ১১:৪, ৫, ২৮-৩০) যিশুর শিক্ষাগুলোতে অতুলনীয় প্রজ্ঞা ছিল, যিনি “শলোমন হইতে মহান” ছিলেন। (মথি ১২:৪২) কিন্তু যিশু কখনোই তাঁর প্রজ্ঞাকে জাহির করেননি। তাঁর বাক্যগুলো সাধারণ লোকেদের হৃদয়ে পৌঁছেছিল কারণ তাঁর শিক্ষাগুলো স্পষ্ট, সরল ও ব্যবহারিক ছিল।

১৯, ২০. (ক) যিশু কীভাবে প্রেমের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ছিলেন? (খ) যিশুর উদাহরণ সম্বন্ধে পড়ার ও চিন্তা করার সময় আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১৯ যিশু প্রেমের এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ছিলেন। তাঁর সম্পূর্ণ পরিচর্যায় তিনি প্রেমকে এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে প্রদর্শন করেছিলেন, যেগুলোর মধ্যে ছিল সহমর্মিতা ও সমবেদনা। তিনি অন্যদের দুঃখকষ্ট দেখে সবসময় দুঃখিত হতেন। বার বার, সেই সহানুভূতিশীল মনোভাব তাঁকে কাজ করতে পরিচালিত করেছিল। (মথি ১৪:১৪) যদিও তিনি অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন ও ক্ষুধার্তদের খাইয়েছিলেন কিন্তু যিশু আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে সমবেদনা দেখিয়েছিলেন। তিনি অন্যদের ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সত্য জানতে, সেটাকে গ্রহণ করতে ও ভালবাসতে সাহায্য করেছিলেন, যা মানবজাতির জন্য স্থায়ী আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে। (মার্ক ৬:৩৪; লূক ৪:৪৩) সবচেয়ে বড় বিষয় হল, যিশু স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণ অন্যদের জন্য সমর্পণ করে আত্মত্যাগমূলক প্রেম দেখিয়েছিলেন।—যোহন ১৫:১৩.

২০ এতে কি অবাক হওয়ার কিছু আছে যে, সকল বয়সের ও বিভিন্ন পটভূমির লোকেরা এই কোমল ও গভীর অনুভূতিপূর্ণ ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়েছিল? (মার্ক ১০:১৩-১৬) কিন্তু, যিশুর জীবন্ত উদাহরণ সম্বন্ধে পড়ার ও চিন্তা করার সময় আসুন আমরা মনে রাখি যে, এই পুত্রের মধ্যেই আমরা তাঁর পিতার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি।—ইব্রীয় ১:৩.

আমাদের সাহায্য করার জন্য এক অধ্যয়ন সহায়ক

২১, ২২. যিহোবার অন্বেষণ করার সঙ্গে কী জড়িত আর এই উদ্দেশ্যে আমাদের সাহায্য করার জন্য এই অধ্যয়ন সহায়কে কী রয়েছে?

২১ যিহোবা তাঁর বাক্যে নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার মাধ্যমে সন্দেহের কোনো অবকাশ রাখেননি যে তিনি চান আমরা তাঁর নিকটবর্তী হই। একই সময়ে, তিনি তাঁর সঙ্গে এক অনুমোদিত সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আমাদের জোর করেন না। “যাবৎ তাঁহাকে পাওয়া যায়,” সেই পর্যন্ত যিহোবার অন্বেষণ করা আমাদের নিজেদের দায়িত্ব। (যিশাইয় ৫৫:৬) যিহোবার অন্বেষণ করার সঙ্গে বাইবেলে প্রকাশিত তাঁর গুণগুলো ও তিনি যেভাবে কাজ করেন, তা জানা জড়িত। আপনি যে-অধ্যয়ন সহায়কটি এখন পড়ছেন, সেটা এই উদ্দেশ্যে আপনাকে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

২২ আপনি লক্ষ করবেন যে, এই বইটিকে যিহোবার চারটে মৌলিক গুণ অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে, যেগুলো হল: শক্তি, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও প্রেম। প্রতিটা বিভাগ নির্দিষ্ট গুণের ওপর এক সারাংশ দিয়ে শুরু হয়। পরের কয়েকটা অধ্যায় আলোচনা করে যে, যিহোবা কীভাবে সেই গুণ এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া, প্রতিটা বিভাগে একটা করে অধ্যায় রয়েছে, যা দেখায় যে যিশু কীভাবে সেই গুণ প্রদর্শন করেছিলেন ও সেইসঙ্গে আরেকটা অধ্যায় রয়েছে, যা বিশদভাবে তুলে ধরে যে আমরা কীভাবে আমাদের জীবনে তা প্রতিফলিত করতে পারি।

২৩, ২৪. (ক) “ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো” নামের বিশেষ বৈশিষ্ট্যটা ব্যাখ্যা করুন। (খ) ধ্যান কীভাবে ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হতে আমাদের সাহায্য করে?

২৩ এই অধ্যায় থেকে শুরু করে, “ধ্যানের জন্য প্রশ্নগুলো” নামে একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, ২৪ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন। শাস্ত্রপদ ও প্রশ্নগুলো অধ্যায়টা পুনরালোচনা করার জন্য তৈরি করা হয়নি। বরং এগুলোর উদ্দেশ্য হল, এই বিষয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করতে আপনাকে সাহায্য করা। আপনি কীভাবে এই বৈশিষ্ট্যকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারেন? উল্লেখিত প্রতিটা শাস্ত্রপদ দেখুন এবং মনোযোগ দিয়ে পদগুলো পড়ুন। এরপর উল্লেখিত প্রতিটা পদের সঙ্গে দেওয়া প্রশ্ন বিবেচনা করুন। উত্তরগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। আপনি হয়তো কিছুটা গবেষণা করতে পারেন। নিজেকে কিছু অতিরিক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন: ‘এই তথ্য যিহোবা সম্বন্ধে আমাকে কী বলে? এটা কীভাবে আমার জীবনকে প্রভাবিত করে? অন্যদের সাহায্য করার জন্য কীভাবে আমি এটা ব্যবহার করতে পারি?’

২৪ এইরকম ধ্যান আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করতে পারে। কেন? কারণ বাইবেল ধ্যানকে হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত করে। (গীতসংহিতা ১৯:১৪) ঈশ্বর সম্বন্ধে আমরা যা শিখি, তা যখন উপলব্ধি সহকারে চিন্তা করি, তখন সেই তথ্য আমাদের রূপক হৃদয়ে প্রবেশ করে, যেখানে এটা আমাদের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে, অনুভূতিগুলো জাগিয়ে তোলে এবং পরিশেষে কাজ করতে প্রেরণা দেয়। ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম আরও গভীর হয় আর এর ফলে সেই প্রেম আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হিসেবে তাঁকে খুশি করতে চাইতে পরিচালিত করে। (১ যোহন ৫:৩) এইরকম এক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই যিহোবার গুণগুলো ও তিনি যেভাবে আচরণ করেন, তা জানতে হবে। কিন্তু, প্রথমে আসুন আমরা ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের একটা দিক নিয়ে আলোচনা করি, যেটা তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য এক জোরালো কারণ জোগায় আর সেটা হল তাঁর পবিত্রতা।

^ অনু. 3 আগ্রহের বিষয় হল, যে-ইব্রীয় শব্দকে “অন্তরঙ্গতা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা আমোষ ৩:৭ পদে ব্যবহৃত হয়েছে, যেটা বলে যে সার্বভৌম প্রভু যিহোবা তাঁর দাসদের কাছে “গূঢ় মন্ত্রণা” প্রকাশ করেন, তিনি যা করবেন বলে উদ্দেশ্য করেন তা আগে থেকে তাদের জানান।

^ অনু. 12 উদাহরণ হিসেবে, বাইবেল ঈশ্বরের মুখমণ্ডল, চোখ, কান, নাক, মুখ, বাহু ও পা সম্বন্ধে বলে। (গীতসংহিতা ১৮:১৫; ২৭:৮; ৪৪:৩; যিশাইয় ৬০:১৩; মথি ৪:৪; ১ পিতর ৩:১২) এইরকম রূপক অভিব্যক্তিগুলো আক্ষরিক অর্থে নেওয়া উচিত নয়, ঠিক যেমন যিহোবাকে “শৈল” বা “ঢাল” বলে উল্লেখ করাকে আমরা আক্ষরিক অর্থে নেব না।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪; গীতসংহিতা ৮৪:১১.