সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি এক সফল ভবিষ্যৎ বেছে নিতে পারেন কীভাবে?

আপনি এক সফল ভবিষ্যৎ বেছে নিতে পারেন কীভাবে?

আপনি এক সফল ভবিষ্যৎ বেছে নিতে পারেন কীভাবে?

কীভাবে আপনি এমন এক জীবন অর্জন করতে পারেন, যা সত্যিই সফল? একটা উপায় হল যে, এখনই আপনি যে-সিদ্ধান্তগুলো নেন, সেগুলোর সম্ভাব্য দীর্ঘস্থায়ী পরিণতির বিষয় বিবেচনা করার যে-অসাধারণ ক্ষমতা আপনার রয়েছে, সেটাকে ব্যবহার করা।

এটা ঠিক যে, আপনার পক্ষে হয়তো, আপনার জন্য চিরস্থায়ী মঙ্গল নিয়ে আসে এমন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া কঠিন বলে মনে হতে পারে। কেন? কারণ আজকে অনেকেই তাদের তাৎক্ষণিক বাসনাকে চরিতার্থ করতে চায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো উপলব্ধি করেন যে, বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানো, আপনাকে দৃঢ় পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। (ইফিষীয় ৫:২২–৬:৪) কিন্তু তা করতে হলে, আপনাকে কাজে, বিনোদনে অথবা আমোদপ্রমোদে অতিরিক্ত ডুবে থাকার চাপকে প্রতিরোধ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার পরিবারের জন্য নিয়মিতভাবে সময় ব্যয় করতে হবে। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে, আপনাকে ক্ষণস্থায়ী আনন্দ ও দীর্ঘস্থায়ী সফলতার মধ্যে কোনো একটাকে বেছে নিতে হবে। কীভাবে আপনি বিজ্ঞতার পথ বেছে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পেতে পারেন? নীচে দেওয়া পদক্ষেপ চারটে নিন।

১ আপনার সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্বন্ধে আগে থেকে চিন্তা করুন

কোনো সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হওয়ার সময়, যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মতভাবে পরিণতির বিষয়ে আগে থেকে চিন্তা করুন। বাইবেল পরামর্শ দেয়: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।” (হিতোপদেশ ২২:৩) আপনি যদি অকপটভাবে পরিণতিগুলোকে বিবেচনা করেন, তাহলে আপনি হয়তো সম্ভাব্য ক্ষতিকর কোনো পথ এড়িয়ে চলতে পরিচালিত হবেন। অন্যদিকে, আপনি যখন কোনো বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দীর্ঘস্থায়ী উপকার সম্বন্ধে চিন্তা করেন, তখন আপনি আপনার সেই বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সংকল্পকে দৃঢ় করতে পারেন।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘এখন থেকে এক বছর অথবা এমনকী ১০ বছর কিংবা ২০ বছর পরে আমার সিদ্ধান্তের পরিণতি কী হবে? আমার আবেগগত এবং দৈহিক স্বাস্থ্যের ওপর এটা কোন প্রভাব ফেলবে? আমি যা বেছে নিই, সেটা কীভাবে আমার পরিবার ও অন্যদের, যাদের সম্বন্ধে আমি চিন্তা করি, তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে?’ এটা জিজ্ঞেস করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: ‘আমার সিদ্ধান্ত কি ঈশ্বরকে খুশি করবে? এটা কীভাবে তাঁর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বকে প্রভাবিত করবে?’ যেহেতু বাইবেল হল ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত, তাই এটি আপনাকে যে-বিষয়টা তাঁকে খুশি করে, সেটা বুঝতে সাহায্য করতে পারে আর যে-বিপদগুলোকে আপনি হয়তো উপেক্ষা করতে পারেন, সেগুলোর বিষয়ে আপনাকে সাবধান করতে পারে।—হিতোপদেশ ১৪:১২; ২ তীমথিয় ৩:১৬.

২ আপনার বাছাই করার বিষয়গুলোকে পরীক্ষা করুন

অনেকে, নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং তাদের চারপাশে থাকা লোকদেরকেই অনুকরণ করে। শুধুমাত্র জনপ্রিয় বলেই যে এক নির্দিষ্ট জীবনধারা সফলতার দিকে নিয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। আপনার বাছাই করার বিষয়গুলোকে পরীক্ষা করুন। উদাহরণস্বরূপ, নেটেলির কথা বিবেচনা করুন। * তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমি এক ভালো বৈবাহিক জীবন চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমি যেভাবে জীবনযাপন করছিলাম, তাতে আমি তা লাভ করব না। কলেজে আমার সব বন্ধুবান্ধবই অল্পবয়সি ও খুব বুদ্ধিমান ছিল। তা সত্ত্বেও, তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে সবসময়েই খারাপ সিদ্ধান্ত নিত। তারা সবসময়েই বয়ফ্রেন্ড অথবা গার্লফ্রেন্ড পালটাতো। তাদের মতো, আমারও বেশ কয়েকজন বয়ফ্রেন্ড ছিল। এই ধরনের জীবন আমার জন্য অনেক মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিল।”

নেটেলি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে আমি সুখী অল্পবয়সিদের ও দৃঢ় বিবাহবন্ধনগুলোকে লক্ষ করেছিলাম। যদিও আমার জন্য এটা সহজ ছিল না, কিন্তু আমি ধীরে ধীরে আমার মূল্যবোধগুলো এবং জীবনধারাকে পরিবর্তন করেছিলাম।’ এর ফল কী হয়েছিল? “সবসময়েই আমি এমন কাউকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, যাকে আমি গভীরভাবে সম্মান করি,” নেটেলি বলেন। “পরে আমি এমন একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলাম, যার আমার মতোই একই ধর্মীয় বিশ্বাস রয়েছে। আমি মনে করি যে, ঈশ্বর আমাকে এমন এক উত্তম পারিবারিক জীবন দিয়েছেন, যেটার বিষয়ে আমি কখনো কল্পনাও করতে পারতাম না।”

৩ এক সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন

স্বল্পমেয়াদি চিন্তাভাবনা প্রতিরোধ করার জন্য আপনাকে, যে-ভবিষ্যৎ আপনি চান, সেটার এক স্পষ্ট ধারণা থাকা এবং কীভাবে আপনি তা অর্জন করবেন, সেটার পরিকল্পনা করাও প্রয়োজন। (হিতোপদেশ ২১:৫) আপনার চিন্তাভাবনাকে মানুষের গড় আয়ু ৭০ অথবা ৮০-র মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। এর পরিবর্তে, আপনি নিজেকে বাইবেলে বর্ণিত অনন্তকালীন ভবিষ্যৎ উপভোগ করছেন বলে মনশ্চক্ষে কল্পনা করুন।

বাইবেল বর্ণনা করে যে, খ্রিস্ট যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে ঈশ্বর মানবজাতির জন্য অনন্তজীবন লাভ করার ব্যবস্থা করেছেন। (মথি ২০:২৮; রোমীয় ৬:২৩) ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, মানবজাতি ও পৃথিবীর জন্য তাঁর আদি উদ্দেশ্য শীঘ্র পরিপূর্ণ হবে। যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে, তাদের সুন্দরভাবে পুনর্স্থাপিত এক পৃথিবীতে অনন্তকাল ধরে জীবন উপভোগ করার সুযোগ থাকবে। (গীতসংহিতা ৩৭:১১; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫) আপনি যদি এক সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন, তাহলে আপনিও সেই ভবিষ্যৎ উপভোগ করতে পারবেন।

৪ আপনার লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য কাজ করুন

কীভাবে আপনি সেই প্রতিজ্ঞাত ভবিষ্যৎ লাভ করতে পারেন? ঈশ্বর সম্বন্ধে জানুন বা জ্ঞান নিন। (যোহন ১৭:৩) বাইবেলের সঠিক জ্ঞান আপনার মধ্যে এই আস্থা গড়ে তুলবে যে, ভবিষ্যতের জন্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো এক বাস্তব বিষয় হবে। এই ধরনের বিশ্বাস আপনাকে ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো পরিবর্তন করতে শক্তি প্রদান করতে পারে।

মাইকেলের অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করুন। তিনি বর্ণনা করেন: “১২ বছর বয়সে আমি মদ ও নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার করা শুরু করেছিলাম। আমি একটা দুর্বৃত্ত দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আর ভেবেছিলাম যে, ৩০ বছর হওয়ার আগেই আমি মারা যাব। আমার রাগ ও হতাশার কারণে, আমি অনেকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি আশা করেছিলাম যে, জীবনে আরও কিছু রয়েছে কিন্তু আমি কিছুতেই তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।” মাইকেল হাইস্কুলে পড়ার সময়, যে-দলের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন, সেই দলের একজন সদস্য যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিল। মাইকেলও তা করতে রাজি হয়েছিলেন।

বাইবেল থেকে মাইকেল যা শিখেছিলেন, তা ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তার চিন্তাধারাকে পালটে দিয়েছিল। “আমি শিখেছিলাম যে, ভবিষ্যতে পৃথিবী এক পরমদেশে রূপান্তরিত হবে এবং লোকেরা শান্তিতে, উদ্‌বেগ ছাড়াই বাস করবে। এটাকেই আমি আমার ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখতে শুরু করেছিলাম। যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম বন্ধুত্ব গড়ে তোলা আমার লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, আমি সবসময়েই যে যিহোবাকে খুশি করতে পারতাম, তা নয়। এমনকী বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার পরও, আমি কয়েকবার মাতাল হয়েছিলাম। আর আমি একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম।”

মাইকেল কীভাবে সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন এবং সফলভাবে তার জীবনধারাকে পরিবর্তন করেছিলেন? তিনি বলেন: “আমার বাইবেল শিক্ষক আমাকে প্রতিদিন বাইবেল পড়তে এবং যারা ঈশ্বরকে খুশি করতে চায়, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে উৎসাহিত করেছিলেন। আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, আমার দলের সঙ্গীদের প্রভাব তখনও আমার ওপর ছিল। যদিও আমার কাছে তারা পরিবারের মতোই ছিল, কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।”

মাইকেল স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য ও অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে স্থাপন করেছিলেন, যেগুলো তাকে ঈশ্বরের মানগুলোর সঙ্গে তার জীবনকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার আরও বড়ো লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল। আপনিও তা করতে পারেন। আপনার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ও সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আপনাকে সাহায্য করবে এমন মধ্যবর্তী পদক্ষেপগুলো, দুটোকেই লিখে রাখুন। আপনাকে যারা সাহায্য করবে তাদের কাছে আপনার লক্ষ্যগুলোর কথা বলুন এবং আপনার উন্নতি পর্যালোচনা করে দেখতে আপনাকে সাহায্য করার জন্য তাদেরকে আমন্ত্রণ জানান।

ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখার এবং আপনার জীবনে তাঁর নির্দেশনা কাজে লাগানোর বিষয়ে দেরি করবেন না। ঈশ্বরের প্রতি এবং তাঁর বাক্য বাইবেলের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে এখনই পদক্ষেপ নিন। বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগায় এমন একজন ব্যক্তির বিষয়ে বর্ণনা করে ঈশ্বরের বাক্য বলে: “সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”—গীতসংহিতা ১:১-৩. (w১২-E ০৫/০১)

[পাদটীকা]

^ এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।