সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন কিছু প্রার্থনার উত্তর পাওয়া যায় না?

কেন কিছু প্রার্থনার উত্তর পাওয়া যায় না?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য

কেন কিছু প্রার্থনার উত্তর পাওয়া যায় না?

 সহজেই ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া যায়। ঠিক যেমন একজন প্রেমময় পিতা ছেলে-মেয়েদেরকে তার সঙ্গে নির্দ্বিধায় কথা বলতে দেখে আনন্দিত হন, তেমনই যিহোবা ঈশ্বরও চান আমরা যেন তাঁর কাছে প্রার্থনা করি। একইসময়ে, যেকোনো বিজ্ঞ পিতার মতো, ঈশ্বরেরও আমাদের কিছু অনুরোধের উত্তর না দেওয়ার পিছনে উত্তম কারণগুলো রয়েছে। তাঁর সেই কারণগুলো কি রহস্যময় নাকি সেগুলো সম্বন্ধে তিনি বাইবেলে কিছু প্রকাশ করেছেন?

প্রেরিত যোহন ব্যাখ্যা করেন: “তাঁহার উদ্দেশে আমরা এই সাহস প্রাপ্ত হইয়াছি যে, যদি তাঁহার ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে তিনি আমাদের যাচ্ঞা শুনেন।” (১ যোহন ৫:১৪) আমাদের অনুরোধগুলো ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। কেউ কেউ এমন বিষয়গুলোর জন্য প্রার্থনা করে, যেগুলো স্পষ্টতই ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়, যেমন লটারিতে বা কোনো বাজিতে জেতার জন্য প্রার্থনা করা। আবার অন্যেরা অসংগত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রার্থনা করে। শিষ্য যাকোব এই কথা বলে প্রার্থনার এইরকম অপব্যবহার করার বিরুদ্ধে সাবধান করেন: “যাচ্ঞা করিতেছ, তথাপি ফল পাইতেছ না; কারণ মন্দ ভাবে যাচ্ঞা করিতেছ, যেন আপন আপন সুখাভিলাষে ব্যয় করিতে পার।”—যাকোব ৪:৩.

উদাহরণস্বরূপ, কল্পনা করুন যে, ফুটবল খেলায় দু-দলই জয়ী হওয়ার জন্য প্রার্থনা করছে। এই ক্ষেত্রে, এইরকম আশা করা অযৌক্তিক হবে যে, ঈশ্বর এই ধরনের পরস্পরবিরোধী প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেবেন। আধুনিক দিনের যুদ্ধের বেলায়ও একই বিষয় বলা যেতে পারে, যখন দু-পক্ষই জয়ী হওয়ার জন্য প্রার্থনা করে।

যারা ঈশ্বরের আইনকে অবজ্ঞা করে, তারা বৃথাই প্রার্থনা করে। যিহোবা একসময় কপট উপাসকদের এই কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন: “তোমরা . . . যদ্যপি অনেক প্রার্থনা কর, তথাপি শুনিব না; তোমাদের হস্ত রক্তে পরিপূর্ণ।” (যিশাইয় ১:১৫) বাইবেল বলে: “যে ব্যবস্থা শ্রবণ হইতে আপন কর্ণ ফিরাইয়া লয়, তাহার প্রার্থনাও ঘৃণাস্পদ।”—হিতোপদেশ ২৮:৯.

অন্যদিকে, যিহোবা সবসময় সেই উপাসকদের আন্তরিক প্রার্থনাগুলো শুনবেন, যারা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে সেবা করার জন্য তাদের সর্বোত্তমটুকু করছে। কিন্তু, তার মানে কি এই যে, তিনি তাদের প্রতিটা অনুরোধ রাখবেন? না। কয়েকটা শাস্ত্রীয় উদাহরণ বিবেচনা করুন।

ঈশ্বরের সঙ্গে মোশির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল; তবে তাকেও “[ঈশ্বরের] ইচ্ছানুসারে” যাচ্ঞা করতে হয়েছিল। ঈশ্বরের বলা উদ্দেশ্যের বিপরীতে, মোশি এই কথা বলে কনান দেশে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন: “বিনয় করি, আমাকে ওপারে গিয়া যর্দ্দনপারস্থ সেই উত্তম দেশ . . . দেখিতে দেও।” কিন্তু তার পাপের কারণে আগেই মোশিকে বলা হয়েছিল যে, তিনি সেই দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাই, এখন মোশির অনুরোধ রাখার পরিবর্তে, যিহোবা তাকে বলেছিলেন: “তোমার পক্ষে এই যথেষ্ট, এ বিষয়ের কথা আমাকে আর বলিও না।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩:২৫, ২৬; ৩২:৫১.

প্রেরিত পৌল এমন একটা বিষয় থেকে স্বস্তি চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন, যেটাকে তিনি তার ‘মাংসের কন্টক’ বলেছিলেন। (২ করিন্থীয় ১২:৭) এই “কন্টক” হয়তো দীর্ঘদিন ধরে ভোগা কোনো চোখের রোগ বা বিরোধী ও “ভাক্ত ভ্রাতৃগণের” কাছ থেকে ক্রমাগত অপর্যস্ত হওয়াকে বুঝিয়েছিল। (২ করিন্থীয় ১১:২৬, ২৭; গালাতীয় ৪:১৪, ১৫) পৌল লিখেছিলেন: “আমি প্রভুর কাছে তিন বার নিবেদন করিয়াছিলাম, যেন উহা আমাকে ছাড়িয়া যায়।” কিন্তু, ঈশ্বর জানতেন যে, যদি পৌল “মাংসের” এই যন্ত্রণাদায়ক “কন্টক” থাকা সত্ত্বেও প্রচার করে চলেন, তাহলে তা স্পষ্টতই ঈশ্বরের শক্তি ও তাঁর ওপর পৌলের পূর্ণ নির্ভরতাকে প্রকাশ করবে। তাই, পৌলের অনুরোধ রাখার পরিবর্তে, ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: “আমার শক্তি দুর্ব্বলতায় সিদ্ধি পায়।”—২ করিন্থীয় ১২:৮, ৯.

হ্যাঁ, ঈশ্বর আমাদের চেয়েও আরও ভালোভাবে জানেন যে, তাঁর পক্ষে নির্দিষ্ট কিছু অনুরোধ রাখা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে কি না। যিহোবা সবসময় বাইবেলে লিপিবদ্ধ তাঁর প্রেমময় উদ্দেশ্যগুলোর সঙ্গে মিল রেখে আমাদের মঙ্গলের জন্য সাড়া দেন। (w০৯ ১/১)