সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি রূপান্তরিত হয়েছেন?

আপনি কি রূপান্তরিত হয়েছেন?

আপনি কি রূপান্তরিত হয়েছেন?

“মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও।” —রোমীয় ১২:২.

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

কেন সমস্ত খ্রিস্টানের রূপান্তরিত হওয়ার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে?

প্রত্যেক খ্রিস্টানকে কোন রূপান্তর করতে হবে?

কীভাবে আমরা প্রয়োজনীয় রূপান্তর করার ক্ষেত্রে সফল হতে পারি?

১, ২. আমরা যেভাবে বড়ো হয়েছি, তা এবং আমাদের পরিবেশ কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে?

 আমরা সকলেই যেভাবে বড়ো হয়েছি, সেটার দ্বারা এবং আমাদের পরিবেশ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হই। আমরা একটা নির্দিষ্ট উপায়ে পোশাক পরি; আমরা নির্দিষ্ট খাবার পছন্দ করি; আমরা এক নির্দিষ্ট উপায়ে আচরণ করি। কেন? কিছুটা হলেও এর কারণ হল, আমাদের চারপাশের লোকেদের প্রভাব এবং আমাদের জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতি।

কিন্তু, এমন বিষয়ও রয়েছে, যেগুলো আমাদের খাবার এবং পোশাক-আশাক বাছাইয়ের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা কিছু বিষয়কে সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখার, আবার কিছু বিষয়কে ভুল এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রত্যাখ্যান করার জন্য শিক্ষা লাভ করেছি। এইরকম অনেক বিষয় একান্ত ব্যক্তিগত এবং ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকে। আমাদের বাছাইগুলোর ওপর হয়তো এমনকী আমাদের বিবেকও প্রভাব ফেলে থাকে। বাইবেল স্বীকার করে যে, প্রায়ই ‘পরজাতিরা কোনো ব্যবস্থা না পাইলেও স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে।’ (রোমীয় ২:১৪) কিন্তু, এর অর্থ কি এই যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত কোনো আইন না থাকলে আমরা কেবল সেই পথ এবং মানগুলো অনুসরণ করতে পারি, যেগুলো আমরা ছোটোবেলা থেকে করে আসছি এবং যেগুলো আমাদের এলাকায় সাধারণ?

৩. কোন দুটো কারণে খ্রিস্টানরা সেই পথ এবং মানগুলো অনুসরণ করে না, যেগুলো সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য?

কেন তা করা খ্রিস্টানদের জন্য প্রযোজ্য নয়, সেটার অন্তত দুটো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাইবেল আমাদের মনে করিয়ে দেয়: “একটী পথ আছে, যাহা মানুষের দৃষ্টিতে সরল, কিন্তু তাহার পরিণাম মৃত্যুর পথ।” (হিতো. ১৬:২৫) যেহেতু আমরা অসিদ্ধ, তাই মানুষ হিসেবে আমাদের পাদবিক্ষেপ নিখুঁতভাবে স্থির করার জন্য কোন বিষয়টা আসলেই উপকারী, তা নির্ণয় করার পূর্ণ ক্ষমতা আমাদের নেই। (হিতো. ২৮:২৬; যির. ১০:২৩) দ্বিতীয়ত, বাইবেল দেখায় যে, জগতের প্রবণতা এবং মানগুলো অন্য আর কেউ নয় বরং “এই যুগের দেব” শয়তানের দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত। (২ করি. ৪:৪; ১ যোহন ৫:১৯) তাই, আমরা যদি যিহোবার আশীর্বাদ এবং অনুমোদন লাভ করতে চাই, তাহলে আমাদের রোমীয় ১২:২ পদে প্রাপ্ত উপদেশে মনোযোগ দিতে হবে।পড়ুন। 

৪. এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

রোমীয় ১২:২ পদে লিপিবদ্ধ বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের গভীর মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য। (১) কেন আমাদের “স্বরূপান্তরিত” হতে হবে? (২) রূপান্তরের সঙ্গে কী জড়িত? এবং (৩) কীভাবে আমরা রূপান্তরিত হতে পারি? আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করি।

কেন রূপান্তরিত হতে হবে?

৫. রোমীয় ১২:২ পদে প্রাপ্ত পৌলের কথাগুলো কাদের জন্য বিশেষ অর্থপূর্ণ ছিল?

রোমীয়দের প্রতি চিঠিতে লিপিবদ্ধ প্রেরিত পৌলের কথাগুলো, অবিশ্বাসী অথবা সাধারণ লোকেদের উদ্দেশে নয় বরং তার সহঅভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা হয়েছে। (রোমীয় ১:৭) তিনি তাদেরকে রূপান্তরিত হওয়ার এবং ‘এই যুগের অনুরূপ না হইবার’ জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সময়ে অর্থাৎ প্রায় ৫৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে বসবাসরত খ্রিস্টানদের জন্য সেই ‘যুগের’ অন্তর্ভুক্ত ছিল রোমীয় জগতের দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত মান, প্রথা, আচার-আচরণ এবং রীতিনীতি। পৌল যে ‘হইও না’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন, তা ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তখনও সেই যুগের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছিল। এটা আমাদের সেই সময়ের ভাই ও বোনদের ওপর কোন ধরনের প্রভাব ফেলেছিল?

৬, ৭. পৌলের দিনে, কীভাবে রোমের সামাজিক এবং ধর্মীয় অবস্থা খ্রিস্টানদের জন্য এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরূপ ছিল?

বর্তমানে, রোমের পর্যটকরা সাধারণত মন্দির, সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, মল্লভূমি, রঙ্গমঞ্চ এবং অন্যান্য বিষয়ের ধ্বংসাবশেষ দেখে থাকে। এগুলোর কিছু কিছু প্রথম শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়েছিল। অতীতের এই নিদর্শনগুলো প্রাচীন রোমের সামাজিক এবং ধর্মীয় জীবন সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। এ ছাড়া, ইতিহাসের বইগুলো পড়লে আমরা সেখানে প্রাচীন রোমের মল্লক্রীড়া, ঘোড়ার গাড়ির প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন নাটক ও সংগীত সম্বন্ধে অনেক কিছু দেখতে পাই, যেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আবার নিম্নমানের। তা ছাড়া, যেহেতু রোম এক সমৃদ্ধশালী বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল, তাই বস্তুগত বিষয় লাভ করার প্রচুর সুযোগ সেখানে ছিল।—রোমীয় ৬:২১; ১ পিতর ৪:৩, ৪.

যদিও রোমে বিভিন্ন দেবতার অনেক মন্দির ছিল কিন্তু রোমীয়দের এইরকম কোনো সুনাম ছিল না যে, তারা যে-দেবতাদের উপাসনা করত, তাদের সঙ্গে তাদের এক প্রকৃত ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তাদের কাছে ধর্ম ছিল এমন একটা বিষয়, যেটার সঙ্গে মূলত সেইসমস্ত আচার-অনুষ্ঠান—জন্ম, বিয়ে এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলো—জড়িত, যেগুলো তাদের সমাজের অংশ ছিল। আপনি হয়তো কল্পনা করতে পারেন যে, এই সমস্তকিছু রোমের খ্রিস্টানদের জন্য কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরূপ ছিল। তাদের মধ্যে অনেকে সেই পটভূমি থেকে এসেছিল, তাই সত্য খ্রিস্টান হয়ে ওঠার জন্য স্পষ্টতই তাদের রূপান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল আর এই রূপান্তর তাদের বাপ্তিস্মের দিনেই শেষ হয়ে যেত না।

৮. কীভাবে এই জগৎ বর্তমানে খ্রিস্টানদের জন্য এক হুমকি স্বরূপ?

রোমীয় জগতের মতো, আজকের জগৎও উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানদের জন্য এক হুমকি স্বরূপ। কেন তা বলা যায়? কারণ জগতের আত্মা বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ পায়। (পড়ুন, ইফিষীয় ২:২, ৩; ১ যোহন ২:১৬.) আমাদের চারপাশে জগতের অভিলাষ, চিন্তাভাবনা, মূল্যবোধ এবং নীতিবোধ ছেয়ে থাকায় আমরা ক্রমাগত জগতের দ্বারা ভেসে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে রয়েছি। এই কারণে, আমাদের ‘এই যুগের অনুরূপ না হইবার’ ও সেইসঙ্গে ‘স্বরূপান্তরিত হইবার’ অনুপ্রাণিত উপদেশে মনোযোগ দেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমাদের কী করতে হবে?

রূপান্তরিত হওয়ার জন্য কীসের প্রয়োজন?

৯. বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়ে ওঠার আগে, অনেকে কোন পরিবর্তন করেছে?

একজন ব্যক্তি যখন বাইবেলের সত্যগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করেন এবং সেগুলো কাজে লাগান, তখন তিনি আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করতে শুরু করেন। এইরকম অগ্রগতি দেখিয়ে, তিনি যা শিখেছেন, সেই অনুযায়ী তার জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন করেন। তিনি ধর্মীয় মিথ্যা অভ্যাস এবং তার পূর্বের জীবনধারার অনুপযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পরিত্যাগ করেন এবং খ্রিস্টতুল্য মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। (ইফি. ৪:২২-২৪) প্রতি বছর হাজার হাজার ব্যক্তিকে এইরকম উন্নতি করতে এবং যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে বাপ্তাইজিত হওয়ার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে দেখে আমরা আনন্দিত। আর এটা নিশ্চিতভাবে যিহোবার হৃদয়কেও আনন্দিত করে। (হিতো. ২৭:১১) কিন্তু, আমাদের এটা বিবেচনা করা উচিত: এই পরিবর্তনগুলো করাই কি যথেষ্ট?

১০. কীভাবে রূপান্তরিত হওয়ার বিষয়টা উন্নতি করা থেকে আলাদা?

১০ আসলে, রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে অগ্রগতি বা উন্নতি করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। কোনো পণ্যের গায়ে “আরও উন্নত” নামক লেবেল দেওয়া অথবা বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে কিন্তু আসলে সেটা একই পণ্য থাকে। সেখানে কেবল একটা নতুন উপাদান থাকতে পারে অথবা মোড়কটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলে ধরা হতে পারে। ভাইনস্‌ এক্সপোজিটরি ডিকশনারি-তে “স্বরূপান্তিরত হও” অভিব্যক্তিটি সম্বন্ধে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে: “রোমীয় ১২:২ পদে এই যুগের [বিধিব্যস্থার] সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বিষয়টা, পবিত্র আত্মার শক্তির মাধ্যমে চিন্তাভাবনাকে পুনর্নবীকরণ করে স্বরূপান্তরিত হওয়ার বিপরীত।” তাই, একজন খ্রিস্টানকে যে-রূপান্তর করতে হবে, তা কেবল ক্ষতিকর অভ্যাস, মন্দ কথাবার্তা এবং অনৈতিক আচরণ ত্যাগ করাকে বোঝায় না। বাইবেল সম্বন্ধে জ্ঞান নেই এমন কিছু ব্যক্তিও তাদের জীবনকে এই ধরনের বিষয় থেকে অনেকটা বা কিছুটা মুক্ত রাখার জন্য প্রচেষ্টা করে। তাহলে, একজন খ্রিস্টানকে যে-রূপান্তর করতে হবে, সেটার সঙ্গে কী জড়িত?

১১. কোন উপায়ে রূপান্তরিত হতে হবে, সেই সম্বন্ধে পৌল কী দেখিয়েছিলেন?

১১ “মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও,” পৌল লিখেছিলেন। “মনের” সঙ্গে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু, বাইবেলে যেমন ব্যবহার করা হয়েছে, এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে আমাদের মানসিক প্রবণতা, মনোভাব এবং যুক্তি করার ক্ষমতা। রোমীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠির শুরুতে পৌল সেই লোকেদের সম্বন্ধে বর্ণনা করেন, যারা ‘ভ্রষ্ট মতি’ বা মনোভাব দেখিয়েছিল। এই ধরনের ব্যক্তিদের “অধার্ম্মিকতা, দুষ্টতা, লোভ ও হিংসাতে পরিপূরিত, মাৎসর্য্য, বধ, বিবাদ, ছল” এবং অন্যান্য ক্ষতিকর বিষয়ে সমর্পণ করা হয়েছে। (রোমীয় ১:২৮-৩১) এখন আমরা বুঝতে পারছি যে, যারা এইরকম এক পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছিল এবং ঈশ্বরের দাস হয়েছিল, তাদেরকে কেন পৌল ‘স্বরূপান্তরিত হইবার’ এবং ‘মনের নূতনীকরণ করিবার’ জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন।

১২. বর্তমানে লোকেদের মধ্যে আপনি কোন সাধারণ চিন্তাভাবনা দেখতে পান আর কীভাবে এই ধরনের মনোভাব খ্রিস্টানদের জন্য এক হুমকি স্বরূপ?

১২ দুঃখের বিষয় হল, পৌলের দ্বারা বর্ণিত লোকেরা আমাদের চারপাশের জগতেও রয়েছে। তারা হয়তো এইরকমটা চিন্তা করে থাকে যে, বিভিন্ন মান এবং নীতি পালন করে চলা সেকেলে অথবা সেগুলো দুর্বহ। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বাবা-মা এক প্রশ্রয়ী মনোভাব এবং এক “স্বাধীনচেতা” মনোভাব গড়ে তোলে। তাদের কাছে সমস্ত কিছুই আপেক্ষিক, কোনো কিছুই অপরিবর্তনশীল নয়। এমনকী নিজেদেরকে ধর্মপ্রাণ বলে দাবি করে এমন অনেক ব্যক্তি মনে করে থাকে যে, তারা যেটাকে সঠিক বলে মনে করে, সেটা করার স্বাধীনতা তাদের রয়েছে আর এর জন্য ঈশ্বর বা তাঁর আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। (গীত. ১৪:১) এইরকম মনোভাব সত্য খ্রিস্টানদের জন্য হুমকি স্বরূপ। অসতর্ক ব্যক্তিরা ঈশতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোর প্রতি একই দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে পারে। তারা হয়তো সংগঠনের কার্যপ্রণালীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ব্যাপারে অনিচ্ছুক মনোভাব দেখায় এবং এমনকী কোনো কিছু তাদের পছন্দ অনুযায়ী না হলে, সেটা নিয়েও অভিযোগ করে। কিংবা তারা হয়তো আমোদপ্রমোদ, ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং উচ্চশিক্ষার পিছনে ছোটার বিষয়ে বাইবেলভিত্তিক যে-পরামর্শ রয়েছে, সেটার সঙ্গে একমত হয় না।

১৩. কেন আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে এক অকপট মূল্যায়ন করা উচিত?

১৩ একইভাবে, আমরা যদি আর জগতের অনুরূপ হতে বা এর দ্বারা গঠিত হতে না চাই, তাহলে আমাদের গভীরতম মনোভাব ও অনুভূতি, আমাদের লক্ষ্য এবং আমাদের মূল্যবোধ সম্বন্ধে এক অকপট মূল্যায়ন করতে হবে। এই বিষয়গুলো হয়তো লোকেরা দেখতে পায় না। অন্যেরা হয়তো আমাদের বলতে পারে যে, আমরা ভালো করছি। কিন্তু, কেবল আমরাই জানি যে, বাইবেল থেকে আমরা যা-কিছু শিখেছি, সেগুলোকে আসলেই আমরা এই জটিল ক্ষেত্রগুলোতে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য এবং সেই রূপান্তর অব্যাহত রাখার জন্য কাজে লাগাই কি না।—পড়ুন, যাকোব ১:২৩-২৫.

যেভাবে রূপান্তরিত হওয়া যায়

১৪. কী আমাদেরকে প্রয়োজনীয় রদবদল করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৪ রূপান্তরের সঙ্গে আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব জড়িত, তাই তা করার জন্য আমাদের এমন কিছুর প্রয়োজন, যা বাইরের দিক ভেদ করে একেবারে আমাদের গভীরে যেতে পারে। এক্ষেত্রে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? বাইবেলে উল্লেখিত তাঁর উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে আমরা যখন জানতে পারি যে, যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী চান, তখন আমরা যা পাঠ করি, সেটার প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে যে, আমাদের হৃদয়ে কী আছে এবং ‘ঈশ্বরের সিদ্ধ ইচ্ছার’ সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার জন্য আমাদের কোন রদবদল করতে হবে।—রোমীয় ১২:২; ইব্রীয় ৪:১২.

১৫. যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া কোন ধরনের রূপান্তর করতে পারে?

১৫ যিশাইয় ৬৪:৮ পদ পড়ুন। ভাববাদী যিশাইয় যে-শব্দচিত্র ব্যবহার করেছেন, তা আমাদের এক ব্যবহারিক বিষয় বিবেচনা করার সুযোগ দেয়। কুম্ভকার হিসেবে যিহোবা কীভাবে আমাদের অর্থাৎ মাটিকে গঠন করেন? নিশ্চিতভাবেই, যিহোবা আমাদেরকে হয়তো আরও আকর্ষণীয় চেহারা অথবা আবেদনময় গঠন দিয়ে দৈহিকভাবে পরিবর্তন করেন না। যিহোবা দৈহিক নয় বরং আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। আমরা যদি তাঁকে আমাদের গঠন করার সুযোগ দিই, তাহলে যে-রূপান্তর ঘটবে, তা আভ্যন্তরীণ অথবা আধ্যাত্মিক—জগতের প্রভাবগুলোর সঙ্গে লড়াই করার জন্য ঠিক যে-বিষয়টা প্রয়োজন। কীভাবে গঠন প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়?

১৬, ১৭. (ক) একজন কুম্ভকার উন্নতমানের পাত্র তৈরি করার জন্য যে-মাটি ব্যবহার করেন, সেটাকে তিনি কী করেন, তা বর্ণনা করুন। (খ) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য আমাদেরকে যিহোবার কাছে মূল্যবান বস্তুতে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করে?

১৬ উন্নতমানের পাত্র তৈরি করার জন্য একজন কুম্ভকার উচ্চমানের মাটি ব্যবহার করেন। কিন্তু, তাকে দুটো বিষয় করতে হয়। প্রথমত, কোনো অপ্রয়োজনীয় অথবা অজৈব পদার্থ বের করার জন্য মাটি পরিষ্কার করে নিতে হয়। এরপর, মাটির সঙ্গে সঠিক পরিমাণ জল মেশাতে হয় এবং তা এমন হতে হয়, যেটাতে চাপ দিয়ে কোনো কিছু তৈরি করলে সেটার আকার ঠিক থাকে।

১৭ লক্ষ করুন যে, মাটি পরিষ্কার করতে হয় ও সেইসঙ্গে সেটা দিয়ে একটা পাত্র, এমনকী একটা দুর্বল পাত্র তৈরি করার লক্ষ্যে মাটিকে সঠিক ঘনত্ব দেওয়ার এবং নমনীয়তা প্রদান করার জন্য জল ব্যবহার করতে হয়। ঈশ্বরের বাক্য যে আমাদের জীবনে একই ভূমিকা পালন করে, তা কি আমরা দেখতে পারছি? এটি আমাদেরকে আমরা যখন ঈশ্বরকে জানতাম না, তখন যেভাবে চিন্তা করতাম, সেটা থেকে মুক্ত হওয়ার এবং তাঁর দৃষ্টিতে মূল্যবান বস্তু হিসেবে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য সাহায্য করে। (ইফি. ৫:২৬) চিন্তা করে দেখুন যে, আমাদেরকে কত বার এই জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেন আমরা প্রতিদিন বাইবেল পড়ি এবং নিয়মিত খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিই, যেখানে ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে বিবেচনা করা হয়। কেন আমাদের এই বিষয়গুলো করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে? কারণ তা করার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে যিহোবার দ্বারা গঠিত হওয়ার সুযোগ দিই।—গীত. ১:২; প্রেরিত ১৭:১১; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.

১৮. (ক) আমরা যদি চাই যে, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের ওপর প্রভাব ফেলুক এবং আমাদেরকে রূপান্তরিত করুক, তাহলে কেন ধ্যান অপরিহার্য? (খ) কোন প্রশ্নগুলো সাহায্যকারী হতে পারে?

১৮ আমরা যদি চাই যে, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় রূপান্তর করুক, তাহলে আমাদের কেবল নিয়মিতভাবে বাইবেল পাঠ করা এবং তা থেকে জানার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে। অনেক লোক মাঝে মাঝে বাইবেল পড়ে থাকে আর এই কারণে বাইবেলের বিষয়বস্তুর সঙ্গে বেশ পরিচিত আছে। ক্ষেত্রের পরিচর্যায় এইরকম ব্যক্তিদের সঙ্গে হয়তো আপনার পরিচয় হয়েছে। কেউ কেউ এমনকী বাইবেলের বিভিন্ন বাক্যাংশ মুখস্থ বলতে পারে। * কিন্তু, এটা হয়তো তাদের চিন্তাভাবনা ও জীবনধারার ওপর খুব কমই প্রভাব ফেলে থাকে। কেন? একজন ব্যক্তি যদি চান যে, ঈশ্বরের বাক্য তার ওপর প্রভাব ফেলুক এবং তাকে রূপান্তরিত করুক, তাহলে তাকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যকে হৃদয়ের গভীরে ঢুকতে দিতে হবে। তাই, আমরা যা শিখছি, তা নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমাদের সময় করে নিতে হবে। নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উত্তম: ‘আমি কি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যে, এটা কেবল এক ধর্মীয় শিক্ষার চেয়ে আরও বেশি কিছু? এটাই যে সত্য, সেই বিষয়ে আমি কি প্রমাণ পাইনি? অধিকন্তু, আমি যা-কিছু শিখছি, তা নিজের জীবনে কাজে লাগানোর বিভিন্ন উপায় কি আমি খুঁজে বের করতে পারি এবং সেগুলোকে কি শুধু অন্যদেরকে শিক্ষা দেওয়ার মতো কোনো বিষয় হিসেবে না দেখার চেষ্টা করি? আমি কি এইরকমটা অনুভব করি যে, যিহোবা ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে কথা বলছেন?’ এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা এবং ধ্যান করা, যিহোবার প্রতি আমাদের যে-অনুভূতি রয়েছে, তা গভীর করার জন্য সাহায্য করতে পারে। তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম বৃদ্ধি পাবে। এভাবে আমাদের হৃদয় যদি অনুপ্রাণিত হয়, তাহলে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারব।—হিতো. ৪:২৩; লূক ৬:৪৫.

১৯, ২০. বাইবেলের কোন পরামর্শ কাজে লাগানো আমাদের জন্য প্রকৃত উপকার নিয়ে আসবে?

১৯ নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ এবং তা নিয়ে ধ্যান করা আমাদেরকে সেই বিষয় করে যেতে অনুপ্রাণিত করবে, যা হয়তো ইতিমধ্যেই আমরা কিছুটা করেছি: ‘তোমরা পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করিয়াছ, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিয়াছ, যে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত হইতেছে।’ (কল. ৩:৯, ১০) হ্যাঁ, আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্যের প্রকৃত অর্থ এবং প্রভাব উপলব্ধি করতে পারি, তাহলে আমরা ক্রমাগত সফল হব। আর এর ফলে যে-নতুন খ্রিস্টীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠবে, তা আমাদেরকে শয়তানের ধূর্ত চাতুরীর বিরুদ্ধে সুরক্ষা লাভ করতে সাহায্য করবে।

২০ “আজ্ঞাবহতার সন্তান বলিয়া তোমরা তোমাদের পূর্ব্বকার . . . অভিলাষের অনুরূপ হইও না,” প্রেরিত পিতর আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন, কিন্তু “সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও।” (১ পিতর ১:১৪, ১৫) আগে আমাদের যে-চিন্তাভাবনা ও মনোভাব ছিল, সেগুলো পরিত্যাগ করা এবং নিজেদের রূপান্তরিত হতে দেওয়া বিভিন্ন আশীর্বাদ নিয়ে আসবে, যা আমরা পরের প্রবন্ধে দেখতে পাব।

[পাদটীকা]

^ ১৯৯৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৯ পৃষ্ঠার ৭ অনুচ্ছেদ দেখুন।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

অনেক লোককে শয়তানের জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে এবং রূপান্তরিত হতে হবে (৯ অনুচ্ছেদ দেখুন)

[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

‘সর্ব্বপ্রকার রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক।’ —ইফি. ৪:৩১

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

রূপান্তরিত হওয়া আপনাকে আগের চেয়ে আরও উত্তম উপায়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সাহায্য করবে (১৮ অনুচ্ছেদ দেখুন)