সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

 মায়ের গর্ভে মারা যাওয়া কোনো শিশুর কি পুনরুত্থানের কোনো আশা আছে?

যারা কখনো কোনো অজাত শিশুকে হারানোর কষ্ট ভোগ করেনি, তাদের পক্ষে সেই ব্যক্তিদের অনুভূতি সম্বন্ধে কল্পনা করা খুবই কঠিন হতে পারে, যারা এভাবে সন্তান হারিয়েছে। কিছু বাবা-মা এভাবে সন্তান হারিয়ে প্রচণ্ড শোকার্ত হয়ে থাকে। একজন মা তার পাঁচ সন্তানকে তাদের জন্মের আগেই হারিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, দুজন স্বাস্থ্যবান ছেলেকে বড়ো করতে পেরে তিনি নিজেকে আশীর্বাদপ্রাপ্ত বলে মনে করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, প্রত্যেক সন্তানকে হারানোর অভিজ্ঞতা তার মন থেকে মুছে যায়নি। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন, সবসময় জানতেন যে, মৃত অবস্থায় জন্ম নেওয়া এবং গর্ভপাতের কারণে মারা যাওয়া তার শিশুরা বেঁচে থাকলে তাদের বয়স কত হতো। এই খ্রিস্টানদের কি তারা যা হারিয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের জন্য পুনরুত্থানে আশা রাখার কোনো ভিত্তি আছে?

এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হল যে, আমরা তা জানি না। যে-শিশুরা মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে বা গর্ভপাতের ফলে মারা যায়, তাদের পুনরুত্থান সম্বন্ধে বাইবেল কখনো সরাসরি কিছু বলে না। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্যে এমন নীতিগুলো রয়েছে, যেগুলো এই প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং কিছুটা সান্ত্বনা প্রদান করে।

আসুন আমরা সম্পর্কযুক্ত দুটো প্রশ্ন বিবেচনা করি। প্রথমত, যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে একটা মানবজীবন কখন শুরু হয়—গর্ভধারণের সময় নাকি জন্মের সময়? দ্বিতীয়ত, এক অজাত শিশুকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন—এক স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে নাকি একজন নারীর গর্ভে নিছক কতগুলো কোষ এবং কলার গুচ্ছ হিসেবে? বাইবেলের নীতিগুলো দুটো প্রশ্নেরই স্পষ্ট উত্তর দেয়।

মোশির ব্যবস্থা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছিল যে, জীবন জন্মের সময় নয় বরং তার অনেক আগেই শুরু হয়। কীভাবে? এটি দেখিয়েছিল যে, একটা ভ্রূণকে হত্যা করা হলে মৃত্যুদণ্ডের দায়ে দায়ী করা যেত। এই আইনটি লক্ষ করুন: “তোমাকে এই পরিশোধ দিতে হইবে; প্রাণের পরিশোধে প্রাণ।” * (যাত্রা. ২১:২২-২৪) তাই, গর্ভের অজাত শিশুটি জীবিত এবং এক সজীব প্রাণ। এই চিরন্তন সত্যকে বুঝতে পারা লক্ষ লক্ষ খ্রিস্টানকে গর্ভপাত করা প্রত্যাখ্যান করতে এবং এটাকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এক গুরুতর পাপ হিসেবে দেখতে সাহায্য করেছে।

হতে পারে, সেই অজাত শিশুটি জীবিত রয়েছে কিন্তু যিহোবা সেই জীবনকে কতটা উচ্চমূল্য দেন? ওপরে উল্লেখিত আইন দাবি করেছিল যে, একটি অজাত শিশুর মৃত্যু ঘটলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। তাই, এটা স্পষ্ট যে, ঈশ্বরের চোখে একটি অজাত শিশুর জীবন মহামূল্যবান। অধিকন্তু, অন্যান্য অনেক শাস্ত্রপদ দেখায় যে, যিহোবা এক অজাত শিশুকে এক স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবেই দেখে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, রাজা দায়ূদ যিহোবার সম্বন্ধে এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “তুমি মাতৃগর্ব্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে। . . . তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল।”—গীত. ১৩৯:১৩-১৬; ইয়োব ৩১:১৪, ১৫.

এ ছাড়া যিহোবা এটাও লক্ষ করেন যে, অজাত সন্তানদের মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো এবং ভবিষ্যতের জন্য হয়তো অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ইস্‌হাকের স্ত্রী রিবিকার গর্ভে যখন যমজ সন্তান ছিল, তখন যিহোবা তার গর্ভের সেই দুজন ছেলের “একে অন্যের সংগে ঠেলাঠেলি” করার বিষয়ে একটি ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন, যা ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, তিনি ইতিমধ্যে তাদের সেই বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করেছেন, যেগুলো সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।—আদি. ২৫:২২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন, ২৩; রোমীয় ৯:১০-১৩.

যোহন বাপ্তাইজকের ঘটনাটাও বেশ আগ্রহজনক। সুসমাচারের বিবরণ বলে: “যখন ইলীশাবেৎ মরিয়মের মঙ্গলবাদ শুনিলেন, তখন তাঁহার জঠরে শিশুটী নাচিয়া উঠিল; আর ইলীশাবেৎ পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হইলেন।” (লূক ১:৪১) এই ঘটনাটা বর্ণনা করার সময়, চিকিৎসক লূক এমন একটি গ্রিক শব্দ ব্যবহার করেছিলেন, যেটি হয় একটা ভ্রূণ কিংবা জন্মের পর একটি শিশুকে নির্দেশ করতে পারে। যাবপাত্রে শোয়ানো শিশু যিশুকে নির্দেশ করার জন্যও তিনি একই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন।—লূক ২:১২, ১৬; ১৮:১৫.

সামগ্রিকভাবে বিচার করলে, বাইবেল কি আমাদেরকে গর্ভে থাকা কোনো শিশু এবং প্রথম নিঃশ্বাস গ্রহণ করেছে, এমন শিশুদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য করার কোনো ভিত্তি প্রদান করে? তা মনে হয় না। আর তা আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা জানতে পেরেছে যে, গর্ভের মধ্যে থাকা একটি শিশু বাইরের উদ্দীপক সম্বন্ধে অনুভব করতে ও এর প্রতি সাড়া দিতে সক্ষম। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, একজন গর্ভবতী মা তার গর্ভে বেড়ে ওঠা সন্তানের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ এক বন্ধন গড়ে তোলেন।

গর্ভে ভিন্ন ভিন্ন সময়কাল ধরে বিকাশ লাভ করার পর শিশুরা জন্মগ্রহণ করে থাকে। একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন: একজন মা অকালেই একটি জীবিত শিশুকে প্রসব করেন কিন্তু সেই শিশুটি কিছুদিন পরে মারা যায়। আরেকজন মা পূর্ণসময় পর্যন্ত তার বাচ্চাকে ধারণ করেন কিন্তু জন্মের ঠিক আগেই বাচ্চাটি মারা যায়। শুধুমাত্র এই কারণে কি প্রথম মায়ের এই আশা রয়েছে যে, অকালে জন্মগ্রহণ করেছে বলে তার সন্তান পুনরুত্থিত হবে, কিন্তু দ্বিতীয় মায়ের সেইরকম কোনো আশা নেই?

তাই সংক্ষেপে বলা যায়, বাইবেল স্পষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, গর্ভধারণের সঙ্গেসঙ্গেই জীবনের শুরু হয় এবং যিহোবা সেই অজাত শিশুকে একজন অদ্বিতীয় ও অমূল্য ব্যক্তি হিসেবে দেখেন। এই শাস্ত্রীয় সত্যগুলো বিবেচনা করে কেউ কেউ হয়তো এই বিষয়টা নিয়ে তর্ক করাকে অসংগত বলে মনে করে যে, জন্মের আগেই মারা যায়, এমন একটি শিশুর পুনরুত্থানের কোনো আশাই নেই। বস্তুতপক্ষে, তারা হয়তো মনে করে যে, এই ধরনের তর্ক গর্ভপাতের বিরুদ্ধে আমাদের শাস্ত্রীয় অবস্থানকে দুর্বল করে দেয়, যেটা মূলত এইসমস্ত সত্যের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত।

অতীতে এই পত্রিকা এমন কিছু ব্যবহারিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, যেগুলো সেই সন্তানদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে বলে মনে হয়, যারা জন্মের আগেই মারা গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর কি পরমদেশে এমনকী আংশিকভাবে বিকশিত একটা ভ্রূণকে একজন নারীর গর্ভে স্থাপন করবেন? কিন্তু, এই বিষয় নিয়ে আরও বেশি অধ্যয়ন এবং প্রার্থনাপূর্বক ধ্যান করা পরিচালকগোষ্ঠীকে এই উপসংহারে আসতে পরিচালিত করেছে যে, এইরকম ধারণাগুলোর সঙ্গে আসলে পুনরুত্থানের আশার কোনো সম্পর্ক নেই। যিশু বলেছিলেন: “ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।” (মার্ক ১০:২৭) যিশুর নিজের উদাহরণ এই উক্তির সত্যতা দেখিয়েছিল; তাঁর জীবন স্বর্গ থেকে একজন কুমারী যুবতীর গর্ভে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যা নিশ্চিতভাবেই মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারে অসম্ভব।

তাহলে এই সমস্তকিছুর অর্থ কি এই যে, বাইবেল সেই শিশুদের পুনরুত্থানের বিষয়ে শিক্ষা দেয়, যারা জন্মের আগেই মারা গিয়েছে? আমাদের অবশ্যই এই বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে যে, বাইবেল যেহেতু এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয় না, তাই এই বিষয়ে মানুষের বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করার কোনো ভিত্তি নেই। এই বিষয়টা হয়তো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রায় অগণিত প্রশ্নের উত্থাপন করতে পারে। তারপরেও, এই বিষয় নিয়ে অনুমান না করাই সর্বোত্তম বলে মনে হয়। আমরা যা জানি তা হল: বিষয়টা যিহোবা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে, যিনি স্নেহশীল বা করুণাময় ও দয়াতে মহান। (গীত. ৮৬:১৫) নিঃসন্দেহে, পুনরুত্থানের মাধ্যমে মৃত্যুকে দূর করে দেওয়াই হচ্ছে তাঁর “আকুল আকাঙ্ক্ষা।” (ইয়োব ১৪:১৪, ১৫, NW) আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, তিনি সবসময় যা সঠিক, তা-ই করেন। এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থায় জীবনের দ্বারা আমাদের ওপর যেসমস্ত ক্ষত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি সেগুলোর আরোগ্যসাধন করবেন, যখন তিনি প্রেমের সঙ্গে তাঁর পুত্রকে ‘দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করিতে’ নির্দেশনা দেবেন।—১ যোহন ৩:৮.

[পাদটীকা]

^ এই শাস্ত্রপদকে কখনো কখনো এমনভাবে অনুবাদ করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, একমাত্র মায়ের মৃত্যু হলেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত। কিন্তু, মূল ইব্রীয় পাঠ্যাংশ দেখায় যে, এই আইন মা অথবা তার অজাত সন্তানের কোনো মারাত্মক ক্ষতি সম্বন্ধে বলে। তাই, নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩ পদকে এভাবে অনুবাদ করে: “পুরুষরা যদি একে অন্যের সঙ্গে বিবাদ করে ও তারা একজন গর্ভবতী মহিলাকে প্রকৃতই আঘাত করে এবং তার সন্তান অকালে ভূমিষ্ঠ হয় কিন্তু কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা না ঘটে, তাহলে সেই ব্যক্তির ওপর মহিলার কর্তা যা ধার্য করেন, সেই অনুসারে ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; আর সে বিচারকদের বিচারমতে তা দেবে। কিন্তু যদি কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে তোমাকে অবশ্যই প্রাণের পরিশোধে প্রাণ দিতে হবে।”

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা সমস্ত বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাগুলোর আরোগ্যসাধন করবেন