সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশু কি নরকাগ্নিকে বুঝিয়েছিলেন?

যিশু কি নরকাগ্নিকে বুঝিয়েছিলেন?

যিশু কি নরকাগ্নিকে বুঝিয়েছিলেন?

 নরকাগ্নির শিক্ষাকে বিশ্বাস করে এমন কেউ কেউ মার্ক ৯:৪৮ পদে (অথবা ৪৪ পদে) লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো উল্লেখ করে থাকে। তিনি সেই কীটগুলো সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলো মরে না এবং সেই আগুন সম্বন্ধে বলেছিলেন, যা নির্বাণ হয় না। কেউ যদি এই কথাগুলো সম্বন্ধে আপনাকে প্রশ্ন করে, তাহলে আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

যে-বাইবেল সংস্করণ ব্যবহার করা হচ্ছে সেটির ওপর ভিত্তি করে একজন ব্যক্তি হয়তো ৪৪, ৪৬ বা ৪৮ পদ পড়তে পারেন, কারণ কিছু সংস্করণে এই পদগুলোতে একইরকম শব্দ রয়েছে। * নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) বাইবেল এভাবে বলে: “তোমার চোখ যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে সেটা উপড়ে ফেলো; দুচোখ নিয়ে গিহেন্নায়, যেখানে কীট মরে না এবং আগুন নির্বাণ হয় না, সেখানে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে বরং এক চোখ নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা তোমার পক্ষে আরও ভাল।”—মার্ক ৯:৪৭, ৪৮.

যা-ই হোক, কেউ কেউ দাবি করে যে, যিশুর বিবৃতি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে যে, মৃত্যুর পর দুষ্ট লোকেদের আত্মা চিরকাল যাতনা ভোগ করে। উদাহরণস্বরূপ, নাভার ইউনিভারসিটির স্প্যানিশ সাগরাদা বিবলিয়া-র একটা মন্তব্য এভাবে বলে: “আমাদের প্রভু নরক যন্ত্রণাকে ইঙ্গিত করার জন্য [এই শব্দগুলো] ব্যবহার করেছিলেন। প্রায়ই, ‘সেই কীট যেগুলো মরে না’ এই অভিব্যক্তিকে চিরকালীন অনুশোচনা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা নরকদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা অনুভব করে থাকে; আর ‘সেই আগুন যা নির্বাণ হয় না’ তাদের শারীরিক যন্ত্রণা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।”

কিন্তু, যিশুর কথাগুলোকে যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর সর্বশেষ পদের সঙ্গে তুলনা করুন। * এটা কি স্পষ্ট নয় যে, যিশু যিশাইয় ৬৬ অধ্যায়ের সেই পদকেই পরোক্ষভাবে উল্লেখ করছিলেন? সেখানে ভাববাদী স্পষ্টতই “যিরূশালেম” থেকে বেরিয়ে “কাছের হিন্নোম উপত্যকায় (গিহেন্নায়)” যাওয়ার কথা বলেন, “যেখানে একসময় নরবলি উৎসর্গ করা হতো (যির ৭:৩১) আর যেটা শেষপর্যন্ত শহরের আবর্জনা ফেলার স্থানে পরিণত হয়েছিল।” (দ্যা যেরোম বিবলিক্যাল কমেনটারি) যিশাইয় ৬৬:২৪ পদের রূপক অর্থ স্পষ্টতই এই নয় যে, লোকেদের যাতনা দেওয়া হচ্ছে; এটি শব সম্বন্ধে বলে। এটি যেটাকে মরে না বলে উল্লেখ করে, তা হল কীট—জীবন্ত মানুষ কিংবা অমর আত্মা নয়। তাহলে, যিশুর কথাগুলোর অর্থ কী?

মার্ক ৯:৪৮ পদ সম্বন্ধে ক্যাথলিক প্রকাশনা এল ইভানহেলিও দে মারকোস. অ্যানালিসিস লিঙ্গুয়িসতিকো ই কোমেনতারিও ইক্সেহেতিকো, খণ্ড ২ যা মন্তব্য করেছে, তা লক্ষ করুন: “[এই] বাক্যাংশ যিশাইয় (৬৬, ২৪) থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ভাববাদী দেখিয়েছেন যে, সাধারণত দুটো পদ্ধতিতে মৃতদেহ নষ্ট করা হতো: পচানো এবং পুড়িয়ে ফেলা . . . কীট ও অগ্নি শব্দগুলোর পাশাপাশি অবস্থান ধ্বংসের ধারণাকে জোরালো করে। . . . দুটো ধ্বংসাত্মক শক্তিকেই স্থায়ী (‘নির্ব্বাণ হয় না, মরে না’) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে: সেগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো পথই নেই। এই বর্ণনায়, একমাত্র রক্ষাপ্রাপ্ত বিষয়গুলো হল কীট এবং অগ্নি—মানুষ নয়—আর দুটোই এদের নাগালের মধ্যে আসা যেকোনোকিছুকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। তাই, এটা কোনো অনন্ত যন্ত্রণা নয় বরং সম্পূর্ণ ধ্বংসের এক বর্ণনা, কারণ এটা পুনরুত্থিত হওয়াকে রোধ করে এবং তা চিরমৃত্যুর শামিল। অতএব, [অগ্নি] হল চিরধ্বংসের এক প্রতীক।”

এমন যেকোনো ব্যক্তি যিনি জানেন যে, সত্য ঈশ্বর হলেন প্রেমময় এবং ন্যায়পরায়ণ, তার এই বিষয়টা বুঝতে সমর্থ হওয়া উচিত যে, যিশুর কথাগুলোকে এভাবে চিন্তা করা কতটা যুক্তিসংগত। তিনি বলছিলেন না যে, দুষ্ট লোকেরা অনন্ত যন্ত্রণা ভোগ করবে। এর পরিবর্তে, তারা চিরধ্বংসের হুমকির মুখে রয়েছে, যা পুনরুত্থিত হওয়াকে রোধ করে।

[পাদটীকাগুলো]

^ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাইবেল পাণ্ডুলিপিগুলোতে ৪৪ এবং ৪৬ পদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পণ্ডিত ব্যক্তিরা স্বীকার করে যে, এই পদ দুটো সম্ভবত পরে যোগ করা হয়েছে। অধ্যাপক আর্কিবল্ড টি. রবার্টসন লেখেন: “সবচেয়ে পুরোনো এবং সর্বোত্তম পাণ্ডুলিপিগুলোতে এই দুটো পদ নেই। এগুলো পাশ্চাত্য এবং সিরিয় (বিজানটাইন) শ্রেণী থেকে এসেছে। সেগুলো ৪৮ পদেরই পুনরাবৃত্তিমাত্র। তাই, আমাদের পদগুলো থেকে আমরা ৪৪ এবং ৪৬ সংখ্যাগুলো [বাদ] দিয়েছি, যেগুলো প্রামাণিক নয়।”

^ “তাহারা বাহিরে গিয়া, যে লোকেরা আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্ম করিয়াছে, তাহাদের শব দেখিবে; কারণ তাহাদের কীট মরিবে না, ও তাহাদের অগ্নি নির্ব্বাণ হইবে না, এবং তাহারা সমস্ত মর্ত্ত্যের ঘৃণাস্পদ হইবে।”—যিশা. ৬৬:২৪.