সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গভীর ও স্থায়ী বেদনা

গভীর ও স্থায়ী বেদনা

গভীর ও স্থায়ী বেদনা

 সম্প্রতি, একজন গবেষক এই বিষয়ের ওপর গবেষণা করেছিলেন যে, যারা মৃত্যুতে তাদের প্রিয়জনদের হারানোর ফলে শোকার্ত, তাদের অনুভূতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে প্রভাবিত হয়। তিনি সেইসব বাবামার কাছে সমীক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নাবলী পাঠিয়েছিলেন, যাদের সন্তানরা বেশ কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছে। সব বাবামা এতে সাড়া দেয়নি। ভ্লাদিমির নামে একজন বাবা, যিনি পাঁচ বছর আগে তার ছেলেকে হারিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে তার ছেলের সম্বন্ধে কথা বলতে গেলে এখনও তার কষ্ট হয়। *

শোকার্ত বাবামাদের মধ্যে এইরকম দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ অস্বাভাবিক কিছু নয়। দশ বছর আগে উইলিয়ামের ১৮ বছর বয়সি ছেলে জলে ডুবে মারা গিয়েছিল। উইলিয়াম লেখেন, “আমি এখনও ছেলেকে হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছি আর যতদিন বেঁচে থাকব ততদিনই সেই দুঃখ থাকবে।” লুসি, এক অপ্রত্যাশিত রোগে তার ছেলেকে হারানোর পাঁচ বছর পর লিখেছিলেন: “প্রথম কয়েক দিন, আমার মনে হয়েছিল ‘এটা সত্যি হতে পারে না।’ আমার মনে হয়েছিল, আমি যেন একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি আর শীঘ্রই আমার ঘুম ভেঙে যাবে। কিছুসময় পর আমি বুঝতে শুরু করি যে, সে সত্যি সত্যিই মারা গিয়েছে এবং সে আর কখনোই বাড়ি ফিরে আসবে না। আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে কিন্তু এখনও মাঝে মাঝে একা থাকলে আমি তার জন্য কাঁদি।”

ভ্লাদিমির, উইলিয়াম ও লুসির মতো শোকার্ত বাবামারা কেন এতটা গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বেদনা অনুভব করে? আসুন কয়েকটা কারণ বিবেচনা করি।

কেন এত দুঃখ হয়?

কোনো পরিবারে যখন একটা শিশুর জন্ম হয়, তখন বাবামার যে-অনুভূতি হয়, তা অন্য আর কোনো মানব সম্পর্কের মধ্যে লাভ করা যায় না। শুধুমাত্র তাদের ছোট্ট শিশুটিকে কোলে নেওয়া, তাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা বা তার গালভরা হাসি দেখা তাদের জন্য গভীর আনন্দ ও পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে। প্রেমময় বাবামারা তাদের বাচ্চাদের সযত্নে লালনপালন করে। তারা তাদের বাচ্চাদেরকে সঠিক আচরণ করতে ও ভদ্র হতে শিক্ষা দেয়। (১ থিষলনীকীয় ২:৭, ১১) এই প্রচেষ্টায় সাড়া দিয়ে বাচ্চারা যখন বড় হতে থাকে, তখন বাবামারা তাদের জন্য গর্ববোধ করে এবং তাদের নিয়ে অনেক কিছু আশা করতে শুরু করে।

যত্নশীল বাবামারা তাদের সন্তানদের প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। ভবিষ্যতে তাদের সন্তানরা যাতে তাদের নিজস্ব পরিবার গড়ে তুলতে পারে, সেইজন্য বাবামা নিয়মিতভাবে অর্থ বা বস্তুগত সম্পদ সঞ্চয় করে থাকে। (২ করিন্থীয় ১২:১৪) এতে যে-আবেগ জড়িত থাকে ও যে বিপুল পরিমাণ সময়, প্রচেষ্টা ও অর্থ তারা ব্যয় করে তা একটা বিষয়কে স্পষ্ট করে দেয়—বাবামা তাদের সন্তানদেরকে মৃত্যুর জন্য নয় কিন্তু বেঁচে থাকার জন্যই বড় করে তোলে। তাই একটা বাচ্চা যখন মারা যায়, তখন তাকে বড় করে তোলার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায় আর এর ফলে তার বাবামার আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। বাচ্চার প্রতি বাবামার দেখানো উষ্ণ ভালবাসা এবং স্নেহ, মৃত্যুপ্রাচীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। একসময় তাদের ছেলেমেয়েরা তাদের হৃদয়ে যে-স্থান দখল করে ছিল, তা এখন শূন্য হয়ে গিয়েছে। বাবামারা এক গভীর দুঃখ অনুভব করে, যা সহজে দূর করা যায় না।

বাইবেল নিশ্চিতভাবেই বলে যে, শোকার্ত বাবামারা তীব্র ও স্থায়ী বেদনা ভোগ করে। কুলপতি যাকোব যখন শুনেছিলেন যে তার পুত্র যোষেফ মারা গিয়েছে, তখন কী ঘটেছিল তা বর্ণনা করে বাইবেল বলে: “যাকোব আপন বস্ত্র চিরিয়া কটিদেশে চট পরিধান করিয়া পুত্ত্রের জন্য অনেক দিন পর্য্যন্ত শোক করিলেন। আর তাঁহার সমস্ত পুত্ত্রকন্যা উঠিয়া তাঁহাকে সান্ত্বনা করিতে যত্ন করিলেও তিনি প্রবোধ না মানিয়া কহিলেন, আমি শোক করিতে করিতে পুত্ত্রের নিকটে পাতালে [অথবা, কবরে] নামিব।” বেশ কয়েক বছর পরে, যাকোব তখনও তার সেই পুত্রের জন্য শোক করেছিলেন, যে-পুত্র মারা গিয়েছে বলে তিনি ভেবেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩৭:৩৪, ৩৫; ৪২:৩৬-৩৮) বাইবেলের আরেকটা উদাহরণ নয়মী নামে একজন বিশ্বস্ত মহিলা সম্বন্ধে বলে, যিনি তার দুই পুত্রের মৃত্যু দেখেছিলেন। গভীর শোকে জর্জরিত হয়ে তিনি তার নাম নয়মী অর্থাৎ “মনোরমা” পালটে, মারা অর্থাৎ “তিক্তা” রাখতে চেয়েছিলেন।—রূতের বিবরণ ১:৩-৫, ২০, ২১.

কিন্তু, বাইবেল বাবামাদের শোকার্ত অবস্থাকে স্বীকার করার চাইতেও আরও বেশি কিছু করে। এটি ইঙ্গিত করে যে, কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তিদের শক্তি জুগিয়ে থাকেন, যারা শোকার্ত। পরবর্তী প্রবন্ধে, আমরা এমন কিছু উপায় বিবেচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা শোকার্ত ব্যক্তিদেরকে সান্ত্বনা প্রদান করে থাকেন।

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।