সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা কোনোক্রমে আপনাকে ছাড়বেন না

যিহোবা কোনোক্রমে আপনাকে ছাড়বেন না

যিহোবা কোনোক্রমে আপনাকে ছাড়বেন না

 যিহূদিয়ার খ্রিস্টানরা প্রচণ্ড বিরোধিতা ভোগ করছিল এবং তাদেরকে চারপাশের লোকেদের বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। প্রেরিত পৌল তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য, ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার সময়ে তাদের উদ্দেশে বলা যিহোবার কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন। পৌল লিখেছিলেন: “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।” (ইব্রীয় ১৩:৫; দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:৬) নিঃসন্দেহে, এই প্রতিজ্ঞা প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রিস্টানদের শক্তিশালী করেছিল।

সেই একই প্রতিজ্ঞার দ্বারা আমাদের, ‘শেষ কালে বিষম সময়ে’ বাস করতে গিয়ে যে-উদ্বিগ্নতাগুলো আসে, সেগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে শক্তিশালী হওয়া উচিত। (২ তীমথিয় ৩:১) আমরা যদি যিহোবার ওপর নির্ভর করি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করি, তা হলে তিনি আমাদেরকে এমনকি সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মধ্যেও শক্তি জোগাবেন। এই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী যিহোবা কীভাবে কাজ করতে পারেন, তা দেখার জন্য আসুন আমরা একজন ব্যক্তির হঠাৎ জীবিকানির্বাহের উপায় হারানোর উদাহরণটা বিবেচনা করি।

অপ্রত্যাশিত বিষয়ের মুখোমুখি হওয়া

বিশ্বব্যাপী বেকারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। একটা পোলিশ পত্রিকা অনুসারে, বেকারত্বকে “চরম আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে একটা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। উদাহরণস্বরূপ, এমনকি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সদস্য দেশগুলোর মধ্যেও ২০০৪ সালের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা “বেড়ে ৩ কোটি ২০ লক্ষ হয়েছে, যা ১৯৩০ এর দশকের ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দার চেয়েও উচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে।” পোল্যান্ডে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৩০ লক্ষ বেকার ব্যক্তির তালিকা করেছিল, যাদের মধ্যে “১৮ শতাংশ ব্যক্তিরই কাজ করার বয়স রয়েছে।” একটা উৎস বলে যে, আফ্রিকার অধিবাসীদের মধ্যে ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ লোকেদের বেকারত্বের হার ৪৭.৮ শতাংশে পৌঁছেছে!

হঠাৎ চাকরি হারানো এবং অপ্রত্যাশিত ছাঁটাই যিহোবার দাসসহ অনেকের জন্য প্রকৃত হুমকি নিয়ে আসে। যেকোনো ব্যক্তির প্রতি “কাল ও দৈব” ঘটতে পারে। (উপদেশক ৯:১১) আমরাও হয়তো গীতরচক দায়ূদের মতো এই কথাগুলো বলতে পারি: “আমার অন্তঃকরণের যন্ত্রণা বাড়িয়াছে।” (গীতসংহিতা ২৫:১৭) আপনি কি এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন? সেগুলো আপনার আবেগগত, আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত মঙ্গলকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি আপনি চাকরি হারান, তা হলে আপনি কি আবারও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন?

আবেগগত চাপের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করা

মনোবিজ্ঞানী ইয়ানুশ ভিইটঝিনস্কি ব্যাখ্যা করেন, “চাকরি হারানো পুরুষদের বেশি কষ্ট দেয়,” কারণ তাদেরকে ঐতিহ্যগতভাবে পরিবারের প্রধান জোগানদাতা হিসেবে মনে করা হয়। তিনি বলেছিলেন যে, এটা একজন পুরুষের মধ্যে “বিভিন্ন চরম মানসিক অবস্থার” সৃষ্টি করতে পারে, যা ক্রোধ থেকে শুরু করে আবেগের কাছে আত্মসমর্পণ করা পর্যন্ত হতে পারে। চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে এমন একজন বাবা হয়তো আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং “তার পরিবারের সঙ্গে কলহ” শুরু করতে পারেন।

আ্যডাম নামে একজন খ্রিস্টান বাবা যার দুটো ছেলেমেয়ে রয়েছে, তিনি যখন চাকরি হারিয়েছিলেন তখন তিনি কেমন বোধ করেছিলেন তা ব্যাখ্যা করেন: “আমি সহজেই উত্তেজিত হয়ে যেতাম; সবকিছুতেই বিরক্ত হতাম। এমনকি রাতের বেলা আমি যে-স্বপ্নগুলো দেখতাম সেগুলোর সবই ছিল আমার কাজ এবং কীভাবে আমি আমার ছেলেমেয়ে ও আমার স্ত্রীর ভরণপোষণ জোগাবো, যাকে অপ্রত্যাশিতভাবে তার কাজ থেকে ছাঁটাই করা হয়েছিল তাকে ঘিরে।” রিশার্ড ও ম্যারিওলা নামে এক বিবাহিত দম্পতি যাদের একটা বাচ্চা রয়েছে তারা যখন তাদের আয়ের উৎস হারিয়েছিল, তখন ব্যাঙ্কে তাদের অনেক ঋণ ছিল। সেই স্ত্রী বর্ণনা করেন: “আমি অনবরত দুশ্চিন্তা করতাম, আমার বিবেক সবসময় আমাকে বলত যে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া ঠিক হয়নি। আমি সবসময় মনে করতাম যে, সব দোষ আমার।” এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আমরা হয়তো সহজেই রেগে যেতে, উদ্বিগ্ন হতে বা তিক্ত হয়ে উঠতে পারি এবং আবেগ আমাদেরকে জর্জরিত করে ফেলতে পারে। তা হলে, কীভাবে আমরা আমাদের মনে জেগে ওঠা নেতিবাচক আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?

কীভাবে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা যায়, সেই বিষয়ে বাইবেল কার্যকারী পরামর্শ দেয়। “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না,” প্রেরিত পৌল উপদেশ দিয়েছিলেন, “কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।” (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) প্রার্থনায় যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া আমাদেরকে “ঈশ্বরের শান্তি” প্রদান করবে, যা হল তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করা মনের এক শান্ত অবস্থা। আ্যডামের স্ত্রী ইরেনা বলেন: “আমরা প্রার্থনায় যিহোবাকে আমাদের পরিস্থিতি এবং কীভাবে আমরা আমাদের জীবনকে আরও সাধাসিধে করতে পারি সেই সম্বন্ধে বলেছিলাম। আমার স্বামী যিনি সাধারণত একটুতেই বেশি দুশ্চিন্তা করতেন, তিনি এইরকম অনুভব করতে শুরু করেছিলেন যে সমাধান হবেই।”

আপনি যদি অপ্রত্যাশিতভাবে চাকরি হারানোর মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি যিশুর পর্বতেদত্ত এই উপদেশ কাজে লাগানোর জন্য উত্তম অবস্থানে রয়েছেন: “‘কি ভোজন করিব, কি পান করিব’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিম্বা ‘কি পরিব’ বলিয়া শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না; . . . কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:২৫, ৩৩) রিশার্ড ও ম্যারিওলা তাদের আবেগের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য এই পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিল। “আমার স্বামী সবসময় আমাকে সান্ত্বনা দিতেন এবং এই বিষয়ের ওপর জোর দিতেন যে, যিহোবা আমাদেরকে পরিত্যাগ করবেন না,” ম্যারিওলা স্মরণ করেন। তার স্বামী আরও বলেন: “একসঙ্গে অবিরত প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের এবং একে অপরের আরও নিকটবর্তী হয়েছি আর সেটাই আমাদেরকে প্রয়োজনীয় সান্ত্বনা জুগিয়েছে।”

এ ছাড়া, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাও আমাদেরকে পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে ইন্দ্রিয়দমন গুণটি উৎপন্ন করতে পারে, যা আমাদের নিজেদেরকে এবং আমাদের অনুভূতিকে শান্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) এটা হয়তো সহজ নয় কিন্তু তা সম্ভব কারণ যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, “স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।”—লূক ১১:১৩; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫.

আপনার আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোকে উপেক্ষা করবেন না

চাকরি থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে বরখাস্ত হওয়া হয়তো অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ একজন খ্রিস্টানকেও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করতে পারে কিন্তু আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোকে আমাদের উপেক্ষা করা উচিত নয়। উদাহরণ হিসেবে ৪০ বছর বয়সি মোশির কথা বিবেচনা করুন, যার সম্পূর্ণ জীবনধারা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল যখন তিনি তার অভিজাত পদমর্যাদা হারিয়েছিলেন এবং একজন মেষপালক হয়েছিলেন, যে-কাজকে মিশরীয়রা ঘৃণার চোখে দেখত। (আদিপুস্তক ৪৬:৩৪) মোশিকে তার নতুন পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল। পরবর্তী ৪০ বছর ধরে, তিনি তার নতুন নতুন কার্যভারের জন্য তাকে গঠন ও প্রস্তুত করতে যিহোবাকে সুযোগ দিয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২:১১-২২; প্রেরিত ৭:২৯, ৩০; ইব্রীয় ১১:২৪-২৬) বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, মোশি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিলেন, যিহোবার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। আমরা কখনো যেন বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিকে আমাদের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোর গুরুত্বকে ম্লান করার সুযোগ না দিই!

যদিও হঠাৎ চাকরি হারানো অত্যন্ত দুঃখজনক হতে পারে কিন্তু তা যিহোবা ও তাঁর লোকেদের সঙ্গে আমাদের বন্ধনকে শক্তিশালী করার এক উত্তম সময়। আগে উল্লেখিত আ্যডাম সেইরকমই মনে করেছিলেন। তিনি বলেন: “আমি এবং আমার স্ত্রী উভয়েই যখন চাকরি হারিয়েছিলাম, তখন খ্রিস্টীয় সভাগুলো থেকে দূরে থাকা অথবা সুসমাচার প্রচার কাজকে কমিয়ে দেওয়ার চিন্তা কখনো আমাদের মনে আসেনি। সেই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরকে কাল কী হবে, সেই বিষয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়া থেকে সুরক্ষা করেছিল।” রিশার্ডও একই অনুভূতি প্রকাশ করেন: “সভা ও পরিচর্যা না থাকলে আমরা কখনোই এই পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারতাম না; নিশ্চিতভাবে আমরা উদ্বিগ্নতার কারণে শেষ হয়ে যেতাম। অন্যদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলা গঠনমূলক কারণ সেগুলো আমাদের মনোযোগকে নিজেদের প্রয়োজনগুলো থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের চাহিদাগুলোর দিকে পরিচালিত করে।”—ফিলিপীয় ২:৪.

হ্যাঁ, চাকরির সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন হওয়ার পরিবর্তে, সেই অতিরিক্ত সময়কে বিভিন্ন আধ্যাত্মিক কাজ করতে, ব্যক্তিগত অধ্যয়নে রত থাকতে, মণ্ডলীর বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে অথবা আপনার পরিচর্যাকে বাড়াতে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। তা হলে, বেকার জীবনযাপন করার পরিবর্তে, আপনার ‘প্রভুর কার্য্যে উপচিয়া’ পড়ার সুযোগ থাকবে—যা আপনার এবং যাদের কাছে আপনি প্রচার করেন, তাদের মধ্যে যেকোনো আন্তরিক ব্যক্তি সাড়া দেয়, উভয়ের জন্য আনন্দ নিয়ে আসবে।—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

আপনার পরিবারের বস্তুগত বিষয়গুলো জোগানো

কিন্তু, আধ্যাত্মিক পুষ্টি পেটের ক্ষুধাকে মেটাবে না। আমাদের পরবর্তী নীতিটি মনে রাখা উচিত: “কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৫:৮) “যদিও মণ্ডলীর ভাইয়েরা আমাদের শারীরিক চাহিদাগুলোর প্রতি সাড়া দিতে তৎপর থাকে,” আ্যডাম স্বীকার করেন, “কিন্তু খ্রিস্টান হিসেবে, আমাদের চাকরি খোঁজার জন্য প্রচেষ্টা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।” যিহোবা এবং তাঁর লোকেদের সমর্থনের ওপর আমরা নির্ভর করতে পারি কিন্তু আমাদের কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, একটা চাকরি খোঁজার জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

কোন পদক্ষেপ? “ঈশ্বর অলৌকিক কাজের মাধ্যমে সাহায্য করবেন, এই আশায় হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না,” আ্যডাম ব্যাখ্যা করেন। “চাকরি খোঁজার সময়ে নিজেকে একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে শনাক্ত করতে ইতস্তত করবেন না। নিয়োগকর্তারা সাধারণত সেটাকে মূল্য দিয়ে থাকে।” রিশার্ড এই পরামর্শ দেন: “আপনার পরিচিত যেকোনো ব্যক্তিকে কোনো কর্মখালি আছে কি না জিজ্ঞেস করুন, কর্মনিয়োগ সংস্থায় নিয়মিত খোঁজ নিন, এইরকম বিজ্ঞাপনগুলো পড়ুন, যেমন: ‘একজন অক্ষম ব্যক্তির যত্ন নেওয়ার জন্য একজন মহিলা আবশ্যক’; অথবা ‘সাময়িক চাকরি: স্ট্রবেরি সংগ্রহ করা।’ খুঁজে চলুন! যদি আপনাকে ছোটখাটো বা এমন কোনো কাজ করতে হয় যা আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো পূর্ণ করে না, তবুও অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে হবেন না।”

হ্যাঁ, “প্রভু [“যিহোবা,” NW] [আপনার] সহায়।” তিনি ‘কোন ক্রমে আপনাকে ছাড়িবেন না, ও কোন ক্রমে আপনাকে ত্যাগ করিবেন না।’ (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) আপনার অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। গীতরচক দায়ূদ লিখেছিলেন: “তোমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাঁহাতে নির্ভর কর, তিনিই কার্য্য সাধন করিবেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:৫) ‘সদাপ্রভুতে আমাদের গতি অর্পণ করিবার’ অর্থ হল, পরিস্থিতিগুলো আমাদের কাছে অনুকূল মনে না হলেও আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করি এবং তাঁর ইচ্ছানুযায়ী বিষয়গুলো সম্পাদন করি।

আ্যডাম এবং ইরেনা জানালা ও সিঁড়ি পরিষ্কার করার কাজ করে এবং বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করার সময় মিতব্যয়ী হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের ভরণপোষণ করতে পেরেছিল। এ ছাড়া, তারা নিয়মিতভাবে কর্মনিয়োগ সংস্থায় খোঁজ নিত। “সাহায্য সবসময় সঠিক সময়ে, একেবারে যখন আমাদের প্রয়োজন তখনই এসেছিল,” ইরেনা বলেছিলেন। তার স্বামী আরও বলেন: “সময় দেখিয়েছে যে, আমরা প্রার্থনায় যে-বিষয়গুলো বলেছিলাম সেগুলো আসলে ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে ছিল না। এটা আমাদেরকে তাঁর প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করতে এবং আমাদের নিজস্ব বোধগম্যতা অনুযায়ী কাজ না করতে শিক্ষা দিয়েছে। ঈশ্বর যে-সমাধান জোগাবেন, সেটার জন্য শান্তভাবে অপেক্ষা করাই আরও ভাল হবে।”—যাকোব ১:৪.

রিশার্ড এবং ম্যারিওলা বিভিন্ন অস্থায়ী চাকরি করেছিল কিন্তু একই সময়ে তারা যে-এলাকাগুলোতে বেশি প্রয়োজন সেখানে গিয়ে প্রচার করেছিল। “আমরা ঠিক সেই সময়ে প্রয়োজনীয় কাজ পেয়েছিলাম, যখন আমাদের কাছে আর কোনো খাবার ছিল না,” রিশার্ড বলেন। “আমরা ভাল বেতনের এমন চাকরিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিলাম, যেগুলো আমাদের ঈশতান্ত্রিক দায়িত্বগুলোতে বাধা দেবে। আমরা যিহোবার জন্য অপেক্ষা করা বেছে নিয়েছিলাম।” তারা বিশ্বাস করে যে যিহোবা সুকৌশলে বিষয়গুলো পরিচালনা করেছিলেন, সেকারণেই তারা সস্তায় একটা বাড়ি ভাড়া করতে সমর্থ হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত রিশার্ড একটা চাকরি খুঁজে পেয়েছিলেন।

একজন ব্যক্তির জীবিকানির্বাহের উপায় হারানো অত্যন্ত বেদনাদায়ক হতে পারে কিন্তু এটাকে যিহোবা যে আপনাকে কখনো ত্যাগ করবেন না, তা ব্যক্তিগতভাবে অভিজ্ঞতা লাভের এক সুযোগ হিসেবে মনে করুন না কেন? যিহোবা আপনার যত্ন নেন। (১ পিতর ৫:৬, ৭) তিনি ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞা করেছেন: “ব্যাকুল হইও না, কারণ আমি তোমার ঈশ্বর; আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব।” (যিশাইয় ৪১:১০) কখনো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে আপনাকে অক্ষম করার সুযোগ দেবেন না, যার অন্তর্ভুক্ত চাকরি হারানো। আপনার যথাসাধ্য করুন এবং বাকিটা যিহোবার হাতে ছেড়ে দিন। “নীরবে” যিহোবার অপেক্ষা করুন। (বিলাপ ৩:২৬) তা হলে আপনি প্রচুর আশীর্বাদ পাবেন।—যিরমিয় ১৭:৭.

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

আধ্যাত্মিক কাজগুলো করার জন্য সময় ব্যয় করুন

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মিতব্যয়ী হতে শিখুন এবং চাকরি খোঁজার সময়ে অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে হবেন না