সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেনিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজা

কেনিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজা

কেনিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজা

 কেনিয়া হল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক দেশ। গহীন জঙ্গল, বিশাল প্রান্তর, তপ্ত মরুভূমি ও বরফে ঢাকা পাহাড় এই দেশের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এখানে দশ লক্ষেরও বেশি নু-হরিণ বাস করে এবং গণ্ডারও রয়েছে, যার অস্তিত্ব দিনের পর দিন বিপন্ন হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এখানকার ঘাসের জঙ্গলের মধ্যে জিরাফের বড় বড় পালকেও পার হয়ে যেতে দেখা যায়।

এখানে প্রচুর পাখিও আছে। বড় বড় ঈগল থেকে শুরু করে রংবেরঙের অজস্র গায়ক-পাখি, যারা তাদের সুমধুর গানে হাওয়ায় এক মিষ্টি সুরের ঝংকার তোলে। আর এখানকার হাতি ও সিংহগুলোকে কে-ই বা উপেক্ষা করতে পারে? কেনিয়ার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও শোরগোল ভোলা যায় না।

এই সুন্দর দেশের আকাশে বাতাসে আরেকটা ধ্বনি শোনা যায়। আর তা হল হাজার হাজার মানুষের ধ্বনি যারা এক আশার খবর জানাচ্ছেন। (যিশাইয় ৫২:৭) এই ধ্বনি ৪০টারও বেশি উপজাতি ও ভাষার লোকেদের কানে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। এই দিক দিয়ে কেনিয়াকে আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যের এক দেশও বলা যায়।

কেনিয়ার বেশির ভাগ লোকই ধর্মভীরু ও আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেখা গেছে যে, কথা বলার জন্য লোকেদের পাওয়া খুবই কঠিন কারণ অন্যান্য দেশের মতো কেনিয়ার জীবনধারাও বদলে যাচ্ছে।

সেখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে অনেক লোকেরাই নিজেদের জীবনযাত্রার ধরনকে রদবদল করতে বাধ্য হয়েছেন। কেনিয়ার সমাজব্যবস্থায় মহিলারা সাধারণত ঘরের কাজই করত কিন্তু আজকে তারা অফিসে কাজ করছে বা রাস্তাঘাটে ফল, শাকসবজি, মাছ ও ঝুড়ি বানিয়ে বিক্রি করছে। পুরুষরা নিজেদের পরিবারকে চালানোর জন্য দিনরাত খেটে চলে। এমনকি ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের ছোট্ট হাতে ভাজা বাদামের প্যাকেট ও সিদ্ধ ডিম নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করার জন্য ঘুরে বেড়ায়। তাই দিনের বেলা খুব কম লোকেরাই ঘরে থাকে। এই অবস্থায় রাজ্যের সুসমাচার প্রচারকরা তাদের প্রচার কাজে কিছু রদবদল করতে বাধ্য হয়েছেন।

যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন সেই লোকেদের দিকে বেশি মনোযোগ দেন, যারা তাদের জীবিকার জন্য ঘরের বাইরে থাকে। এছাড়াও তাদেরকে তাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, ব্যবসায়ী ও সহকর্মীদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। আর ভাইয়েরা সেই মতো কাজ করেন, যেখানেই লোকেদের পাওয়া যায় তাদের কাছে প্রচার করছেন। (মথি ১০:১১) এই রকম ব্যাপকভাবে প্রচার করার যে প্রচেষ্টা তার কি কিছু ফল হয়েছে? হ্যাঁ, হয়েছে! এর কিছু উদাহরণ দেখুন।

আত্মীয়স্বজনরা আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে প্রায় ত্রিশ লক্ষ লোক বাস করে। এই শহরের পূর্বদিকে একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর থাকতেন, যিনি যিহোবার সাক্ষিদের দুচোখে দেখতে পারতেন না। যে বিষয়টা তাকে আরও হতাশ করেছিল তা হল যে তার নিজের ছেলেই একজন সাক্ষি ছিলেন। একবার ফেব্রুয়ারি মাসে ওই অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রিফ্ট উপত্যকার নাকুরু শহরে তার ছেলের বাড়িতে আসেন। সেখানে থাকার সময় তার ছেলে তাকে একটা বই উপহার দেয় যার নাম জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে। * তিনি সেটা নেন ও নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।

বাড়িতে ফিরে এই অবসারপ্রাপ্ত অফিসার তার স্ত্রীকে বইটা দেন। তার স্ত্রী বইটা পড়তে শুরু করেন কিন্তু তার জানা ছিল না যে এই বইটা যিহোবার সাক্ষিরা প্রকাশ করেছেন। ধীরে ধীরে বাইবেলের সত্য তার হৃদয়কে স্পর্শ করতে শুরু করে ও তিনি যা শিখছিলেন, তা তার স্বামীকে বলেন। কৌতূহলী হয়ে তার স্বামীও সেই বইটা পড়তে শুরু করেন। কারা এই বইয়ের প্রকাশক, তা জানার পর তারা বুঝতে পারেন যে তাদেরকে যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে। তারা সেই এলাকার সাক্ষিদের সঙ্গে দেখা করেন ও তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। তারা নিজেরা এই বইটা পড়ে জেনেছিলেন যে খ্রীষ্টানদের সিগারেট খাওয়া বা বিক্রি করা উচিত নয়। (মথি ২২:৩৯; ২ করিন্থীয় ৭:১) কোন দ্বিধা না করে তারা তাদের দোকানে যত সিগারেট ছিল, তা নষ্ট করে ফেলেন। আর কয়েক মাস পরে তারা অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হন ও খুব শীঘ্রিই এক জেলা সম্মেলনে বাপ্তিস্ম নেন।

জঞ্জাল থেকে এক মূল্যবান ধন

কেনিয়ার রাজধানী জেলার কিছু অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কয়েকটা গ্রাম আছে, যেখানে হাজার হাজার লোকেরা থাকে। এখানে একজন সারি সারি ঘর দেখতে পাবেন যা মাটি, কাঠ, ফেলে দেওয়া পুরনো ধাতু বা ঢেউটিন দিয়ে তৈরি। শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলোতে যখন কাজ থাকে না তখন লোকেরা অন্য ধরনের কাজ খুঁজে নেয়। জুয়া কালি (সোয়াহিলি ভাষায় “প্রচণ্ড উত্তপ্ত সূর্য”) শ্রমিকরা কড়া রোদে খাটে ও পুরনো গাড়ির টায়ার দিয়ে জুতো তৈরি করে বা ফেলে দেওয়া টিন দিয়ে হ্যারিকেন তৈরি করে। আর কেউ কেউ ময়লার গাদা ও জঞ্জাল থেকে কাগজ, টিনের পাত্র ও বোতল খুঁজে বেড়ায় যাতে সেগুলো আবার ব্যবহার করতে পারে।

জঞ্জাল থেকে কি মূল্যবান ধন পাওয়া যায়? হ্যাঁ! একজন ভাই বলেন: “আমাদের অধিবেশন হলের চত্বরে একদিন গাট্টাগোট্টা, অপরিচ্ছন্ন ও রুক্ষ চেহারার একজন লোক পুরনো ফেলে দেওয়া খবরের কাগজ ও বইপত্রে ভরা একটা বড়সড়ো প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে এসে দাঁড়ায়। তার নাম উইলিয়াম জানানোর পর তিনি জিজ্ঞেস করেন: ‘আপনার কাছে প্রহরীদুর্গ এর নতুন সংখ্যাগুলো কি আছে?’ আমি একটু হকচকিয়ে যাই ও তার মতলব কী হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করি। আমি তাকে পত্রিকার পাঁচটা কপি দেখাই এবং তিনি সেগুলোকে একটার পর একটা দেখতে থাকেন ও বলেন: ‘আমি সবকটাই নেব।’ খুব অবাক হয়ে আমি নিজের রুমে যাই ও আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন বইটা নিয়ে ফিরে আসি। * আমি তাকে পরমদেশের ছবিটা দেখাই ও বলি যে আমরা লোকেদের সঙ্গে বিনামূল্যে বাইবেল অধ্যয়ন করি। তারপর আমি তাকে বলি: ‘উইলিয়াম, কাল যদি আপনি আসেন, তাহলে আমরা অধ্যয়ন শুরু করব?’ তিনি তাই-ই করেন!

“এক রবিবারে তিনি প্রথমবারের মতো সভাতে আসেন। সেই দিন আমি জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলাম। উইলিয়াম হলে ঢোকেন, শ্রোতাদের দিকে এক ঝলক তাকান ও আমাকে প্ল্যাটফর্মে দেখে সঙ্গে সঙ্গে হল থেকে বেরিয়ে যান। পরে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি যে তিনি কেন ওভাবে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি লাজুকভাবে উত্তর দিয়েছিলেন: ‘লোকেরা সবাই খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল। তা দেখে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।’

“বাইবেল অধ্যয়নে উইলিয়াম যতই উন্নতি করে যাচ্ছিলেন, বাইবেলের সত্য ততই তার জীবনকে পালটে দিচ্ছিল। তিনি নিয়মিত স্নান করতে শুরু করেন, চুল কাটেন, পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরেন এবং শীঘ্রিই নিয়মিত সভাগুলোতে আসতে শুরু করেন। যখন জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটা প্রকাশ হয়, আমরা সেই বইটা থেকে অধ্যয়ন শুরু করি। ইতিমধ্যে তিনি ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে দুটো বক্তৃতা দিয়েছেন ও একজন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হয়েছেন। বিশেষ অধিবেশন দিনে যখন তিনি বাপ্তিস্ম নেন আমি তাকে আমার আত্মিক ভাই হিসেবে স্বাগত জানিয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম।”

উইলিয়াম মূল্যবান প্রহরীদুর্গ পত্রিকাগুলো প্রথমবার কোথায় খুঁজে পান? “আমি জঞ্জালে ফেলে দেওয়া কাগজের মধ্যে এর কিছু সংখ্যা খুঁজে পাই।” হ্যাঁ, তিনি এক মূল্যবান ধন অসাধারণভাবে খুঁজে পান!

কাজের জায়গায় প্রচার করা

আমরা নিজেদের কাজের জায়গায় যখনই সুযোগ পাই তখনই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কি তৎপর থাকি? নাইরোবি মণ্ডলীর একজন প্রাচীন জেমস এভাবেই বাইবেলের সত্য পেয়েছিলেন। আর এই কারণে অন্যদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করতে পটু হয়ে গিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে, একবার জেমস তার এক সহকর্মীকে অফিসে একটা ব্যাজ পরে আসতে দেখেন যার মধ্যে লেখা ছিল “যীশু রক্ষা করেন।” প্রচারক ফিলিপের মতো, জেমস সেই সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করেন: “আপনি কি এই কথাগুলোর মানে জানেন?” (প্রেরিত ৮:৩০) সেই প্রশ্ন আলোচনা করার এক ভাল সুযোগ খুলে দেয়। বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হয় ও পরে সেই ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নেন। অন্যদের কাছেও এভাবে সাক্ষ্য দিয়ে কি জেমস ভাল ফল পেয়েছিলেন? আসুন তার মুখ থেকেই শুনি:

“টম ও আমি একই কোম্পানিতে চাকরি করতাম। আমরা প্রায়ই স্টাফ বাসে করে একসঙ্গে অফিসে যেতাম। একদিন সকালে আমরা বাসে পাশাপাশি বসেছিলাম। আমি আমাদেরই একটা বই পড়ছিলাম ও সেটা এমনভাবে ধরেছিলাম যাতে টমও দেখতে পারেন। আমি যেমনটা চেয়েছিলাম ঠিক তাই-ই হয়েছিল, তার বইটার দিকে চোখ যায় ও তার কাছে তা খুবই ভাল লাগে আর তাই আমি তাকে খুশি মনে বইটা ধার দিই। বইটা পড়ে তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ও বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য রাজি হয়েছিলেন। তিনি ও তার স্ত্রী এখন যিহোবার বাপ্তাইজিত দাস।”

জেমস আরও বলেন: “আমাদের কোম্পানিতে দুপুরের খাবারের বিরতির সময় প্রায়ই নানাধরনের আগ্রহজনক আলোচনা হয়। সেই সময়ই একবার আমার ইফ্রেয়েম ও ওয়ালটারের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা দুজনেই জানত যে আমি একজন সাক্ষি। ইফ্রেয়েম জানতে চেয়েছিলেন যে কেন লোকেরা যিহোবার সাক্ষিদের এত বিরোধিতা করে। সাক্ষিদের ও অন্যান্য ধর্মের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে ওয়ালটারের মনে প্রশ্ন ছিল। শাস্ত্র থেকে আমি তাদের উত্তর দিয়েছিলাম আর সেই উত্তরে তারা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন ও অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিলেন। ইফ্রেয়েম খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করেছিলেন। পরে তিনি ও তার স্ত্রী যিহোবার কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি এখন একজন প্রাচীন ও তার স্ত্রী একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে কাজ করছেন। ওয়ালটারের ওপর এত বিরোধিতা আসে যে তিনি অধ্যয়নের বই পর্যন্ত ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি হাল ছেড়ে না দিয়ে ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলাম আর এর ফলে তিনি আবার অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন। তিনিও এখন একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন।” সব মিলিয়ে ১১ জন সত্য খ্রীষ্টান হয়েছেন তার কারণ জেমস কাজের জায়গায় যখনই সুযোগ পেয়েছিলেন তখনই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

এক বিস্ময়কর ফল

ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীরে এক ছোট্ট গ্রামে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনরা এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। ওই শোককারীদের মধ্যে একজন বয়স্ক সাক্ষি ছিলেন। তিনি ডলি নামের এক স্কুল শিক্ষিকার কাছে যান এবং তাকে মৃত ব্যক্তিদের অবস্থা ও মৃত্যুকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্য বুঝিয়ে বলেন। তার আগ্রহ দেখে তিনি তাকে আশ্বাস দেন: “আপনি যখন নিজের শহরে ফিরে যাবেন তখন আপনার সঙ্গে আমাদের একজন মিশনারি দেখা করবেন ও আপনাকে বাইবেল শেখাবেন।”

যে শহরে ডলির বাড়ি ছিল, তা কেনিয়ার তৃতীয়তম বড় শহর ছিল। সেই সময়ে মাত্র চারজন মিশনারি সেখানে কাজ করছিলেন। সেই বয়স্ক ভাই এই মিশনারিদের কাউকেই ডলির কাছে যাওয়ার জন্য জানাননি। তার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে মিশনারিরা ডলির সঙ্গে দেখা করবেন। আর তাই-ই হয়েছিল! অল্প কিছু সময় পরেই একজন মিশনারি বোন ডলির কাছে যান ও অধ্যয়ন শুরু করেন। ডলি এখন বাপ্তিস্ম নিয়েছেন। তার অল্পবয়সী মেয়ে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে নাম দিয়েছে ও তার দুই ছেলেও বাপ্তিস্ম নিয়েছে। অগ্রগামীদের পরিচর্যা স্কুলে যোগ দিয়েও তিনি আনন্দ পেয়েছেন।

বৃদ্ধির প্রতি যত্ন নেওয়া

রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যের ওপর জোর দেওয়ার কারণে কেনিয়াতে হাজার হাজার ব্যক্তিদের সুসমাচার শোনার সুযোগ হয়েছে। ১৫,০০০রেরও বেশি প্রকাশক এখন এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য ব্যস্ত আছেন এবং গত বছর ৪১,০০০রেরও বেশি লোক খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভায় যোগ দিয়েছিলেন। কেনিয়ার সব জায়গায় সভাতে উপস্থিতির সংখ্যা রাজ্য প্রকাশকের সংখ্যার থেকে দ্বিগুণ। আর এর ফলে আরও বেশি কিংডম হল তৈরি করার দরকার পড়েছে।

বড় বড় শহরে ও দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে কিংডম হল বানানো হচ্ছে। আর এর মধ্যে একটা হচ্ছে নাইরোবি থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে অবস্থিত শামবুরু শহর। ১৯৩৪ সালে শহরের নাম রাখা হয় “মারালাল” যার মানে শামবুরু ভাষায় “উজ্জ্বল” কারণ এখানে প্রথম যে ঢেউটিনের ছাদ ব্যবহার করা হয়, তা সূর্যের আলোয় চকচক করেছিল। বাষট্টি বছর পর মারালালে ঢেউটিনের ছাদ দেওয়া আরেকটা বাড়ি বানানো হয়। এটাও “চকচক” করে ও “ঝিলিক দেয়” কারণ সেটা সেই এলাকার জন্য সত্য উপাসনা করার স্থান ছিল।

কেনিয়ার এই দূরবর্তী অঞ্চলে ১৫ জন প্রকাশক প্রথম কিংডম হল বানানোর জন্য অনেক খেটেছিলেন। টাকাপয়সা কম ছিল আর তাই ভাইদের সেই এলাকার নির্মাণসামগ্রী দিয়েই তা বানাতে হয়েছিল। তারা লাল মাটিতে জল মিশিয়ে খাড়া খুঁটির মাঝামাঝি দেওয়াল তৈরি করেছিলেন। গোবর ও ছাই মিশিয়ে দেওয়ালগুলোকে প্লাস্টার করে মসৃণ করা হয় আর এতে দেওয়ালগুলো মজবুত হয়েছিল ও বছরের পর বছর টিকে ছিল।

বাড়ির খুঁটির জন্য ভাইয়েরা গাছ কাটার অনুমতি নিয়েছিলেন। কিন্তু কাছের যে জঙ্গল তা প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে ছিল। ভাইবোনদেরকে সেই জঙ্গলে হেঁটে গিয়ে, গাছ কেটে, সেগুলোকে ছেঁটে ও তারপর সেই খুঁটিগুলোকে পিঠে করে বাড়ি তৈরি করার জায়গায় আনতে হয়েছিল। একবার জঙ্গল থেকে আসার সময় পুলিশ ভাইদের পথ আটকান ও বলেন যে তারা যে অনুমতি পেয়েছে তার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। পুলিশ একজন বিশেষ অগ্রগামীকে বলেন যে গাছ কাটার দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ওই এলাকার একজন বোন সেই এলাকায় খুব পরিচিত ছিলেন ও পুলিশও তাকে চিনতেন, তিনি বলেন: “আপনি যদি আমাদের ভাইকে গ্রেপ্তার করেন, তাহলে আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে কারণ আমরা সবাই গাছ কেটেছি!” এই কথা শুনে অফিসার তাদের যেতে দেন।

সেই জঙ্গলে বন্য পশু ছিল তাই সেখান দিয়ে হাঁটা মানে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটা। একদিন এক বোন একটা গাছ কাটেন। যেই গাছটা মাটিতে পড়ে তিনি দেখেন যে একটা জন্তু লাফিয়ে পালিয়েছে। তিনি এক ঝলক দেখেন জন্তুটা তামাটে রঙের তাই তিনি ভাবেন হয়তো কৃষ্ণসার হরিণ কিন্তু পরে তিনি পায়ের ছাপ দেখে বুঝতে পারেন যে ওটা আসলে সিংহ ছিল! এইধরনের বিপদের মুখেও ভাইয়েরা কিংডম হল বানানোর কাজ শেষ করেন ও সেটা যিহোবার প্রশংসার এক “উজ্জ্বল” উৎস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

১৯৬৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি কেনিয়ার ঈশতান্ত্রিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। ওই দিন প্রথম শাখা অফিস খোলা হয়, যা মাত্র ৭.৪ বর্গ মিটারের ছিল। ১৯৯৭ সালের ২৫শে অক্টোবর কেনিয়ার ঈশতান্ত্রিক ইতিহাসে আরেকটা বিশেষ দিন—৭,৮০০ বর্গ মিটারের এক নতুন বেথেল কমপ্ল্যাক্স উৎসর্গের দিন! এটা ছিল তিন বছরে কঠোর পরিশ্রমের এক অপূর্ব ফল। ২৫টা দেশ থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবকরা কাদা মাটি ও আগাছা ভরা ৭.৮ একর জমিকে এক সুন্দর বাগানে পরিণত করেন যেখানে বেথেল পরিবারের ৮০ জন সদস্যদের থাকার জন্য এক নতুন শাখা তৈরি করা হয়।

যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য যা কিছু করেছেন তাতে আনন্দ করার সঠিক কারণ আমাদের রয়েছে। আমরা যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই যিনি তাঁর সেবকদের হৃদয়কে আরও প্রশস্ত করতে ও কেনিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিদেরকে খুঁজে বের করার জন্য প্রাণপণ করতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন ও এই দেশকে এক আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যের দেশ করে তুলছেন।

[পাদটীকা]

^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত।

^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত।