সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অন্য ধর্মগুলো কি আপনার পরীক্ষা করে দেখা উচিত?

অন্য ধর্মগুলো কি আপনার পরীক্ষা করে দেখা উচিত?

অন্য ধর্মগুলো কি আপনার পরীক্ষা করে দেখা উচিত?

“আমি প্রায় এক বছর মিটিংয়ে গিয়েছি এবং অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করেছি।” এই কথাগুলো দক্ষিণ আমেরিকার মিগেল নামে একজন ব্যক্তি বলেন, যিনি এখন একজন যিহোবার সাক্ষি। তিনি আরও বলেন, “তারপর আমি রেডিওতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো শুনতে এবং টিভিতে ধর্মীয় প্রচারকদের অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করি। আমি ভেবেছিলাম যে এই অনুষ্ঠানগুলো অন্য ধর্মের লোকেদেরকে ভাল করে বুঝতে আমাকে সাহায্য করবে। শীঘ্রিই আমি বুঝতে পারি যে বাইবেলের শিক্ষার সঙ্গে তাদের শিক্ষার কোন মিল ছিল না কিন্তু তবুও আমি সেই অনুষ্ঠানগুলো ছেড়ে উঠতে পারতাম না।”

দক্ষিণ আমেরিকার আরেকজন ব্যক্তি, জর্জও উৎসাহ নিয়ে অন্যদের কাছে সত্য ধর্মের কথা প্রচার করতেন। কিন্তু, এক সময় তিনিও রেডিও ও টিভিতে অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানগুলো শুনতে ও দেখতে শুরু করেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, “অন্যেরা কী ভাবে, তা আপনার জানা দরকার।” এই মিথ্যা শিক্ষাগুলো জানলে কী বিপদ হতে পারে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এভাবে উত্তর দিতেন: “যারা বাইবেলের সত্য জানেন, কোন কিছুই তাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করতে পারবে না।” এই দুটো ঘটনা থেকে একটা জরুরি প্রশ্ন ওঠে আর তা হল, অন্যরা যা বিশ্বাস করে তা শোনা কি বুদ্ধিমানের কাজ?

সত্য খ্রীষ্টধর্মকে চেনা

প্রেরিতরা মারা যাবার পর দ্রুত বেড়ে ওঠা নকল খ্রীষ্টধর্ম, সত্য ধর্মকে কলুষিত করেছিল। এইরকম হবে তা আগেই বুঝতে পেরে সত্য খ্রীষ্টধর্মকে এই নকল ধর্মগুলো থেকে আলাদা করার জন্য যীশু একটা উপায় বলেছিলেন। প্রথমে, তিনি সাবধান করে দিয়েছিলেন: “ভাক্ত ভাববাদিগণ হইতে সাবধান; তাহারা মেষের বেশে তোমাদের নিকটে আইসে, কিন্তু অন্তরে গ্রাসকারী কেন্দুয়া।” এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে।” (মথি ৭:১৫-২৩) যীশুর প্রকৃত শিষ্যরা, তাঁর শিক্ষা হুবহু মেনে চলেন আর তাদের ভাল ফল দেখে তাদেরকে সহজেই চেনা যায়। যীশুর মতো তারাও বাইবেল থেকে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় শেখানোর জন্য লোকেদের কাছে যান, তারাও জগতের রাজনীতি ও সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে নিজেদেরকে জড়ান না। তারা বাইবেলকে ঈশ্বরের বাক্য বলে মেনে নেন এবং এর কথাগুলোকে সত্য বলে স্বীকার করেন। তারা সকলকে ঈশ্বরের নাম জানান। আর তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে শেখা প্রেম দেখাতে চেষ্টা করেন বলে কোন যুদ্ধে অংশ নেন না। এর বদলে, তারা একে অন্যকে ভাইয়ের মতো দেখেন।—লূক ৪:৪৩; ১০:১-৯; যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; ১৭:১৬, ১৭, ২৬.

বাইবেল বলে যে “ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ” দেখা যায়। (মালাখি ৩:১৮) প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো আজকে সত্য উপাসকেরাও তাদের চিন্তায় ও কাজে এক। (ইফিষীয় ৪:৪-৬) আপনি যদি এই সত্য খ্রীষ্টানদের চিনেই ফেলেন, তাহলে অন্যরা কী বিশ্বাস করে তার প্রতি কেন আপনি আগ্রহ দেখাবেন বা সেগুলো পরীক্ষা করতে চাইবেন?

মিথ্যা শিক্ষকদের থেকে সাবধান

বাইবেল বলে যে এমনকি সত্য জানার পরেও একজন মিথ্যা শিক্ষার দ্বারা কলুষিত হয়ে পড়তে পারে। প্রেরিত পৌল সাবধান করে দিয়েছিলেন: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।” (কলসীয় ২:৮) এই পদ থেকে কত স্পষ্ট ছবিই না দেখা যায়! একটা হিংস্র পশু যেমন আপনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আপনাকে খেয়ে ফেলতে চায়, তেমনই মিথ্যা শিক্ষকরাও আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।

এটা ঠিক যে অন্যরা কী বিশ্বাস করে, তা পৌলও জানার চেষ্টা করেছিলেন। একবার তিনি এই কথা বলে তার বক্তৃতা শুরু করেছিলেন: “হে আথীনীয় লোকেরা, দেখিতেছি, তোমরা সর্ব্ববিষয়ে বড়ই দেবতাভক্ত। কেননা বেড়াইবার সময়ে তোমাদের উপাস্য বস্তু সকল দেখিতে দেখিতে একটী বেদি দেখিলাম, যাহার উপরে লিখিত আছে, ‘অপরিচিত দেবের উদ্দেশে।’” (প্রেরিত ১৭:২২, ২৩) কিন্তু, তাই বলে পৌল সবসময় গ্রিক দর্শনবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতেন না।

মিথ্যা ধর্মের উৎপত্তি ও বিশ্বাস সম্বন্ধে জানা এক কথা আর সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা একেবারে ভিন্ন কথা। * যিহোবা তাঁর বাক্য থেকে শেখানোর জন্য “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস”-কে নিয়োগ করেছেন। (মথি ৪:৪; ২৪:৪৫) পৌল নিজেও লিখেছিলেন: “প্রভুর [যিহোবার] মেজ ও ভূতদের মেজ, তোমরা এই উভয় মেজের অংশী হইতে পার না। অথবা আমরা কি প্রভুর অন্তর্জ্বালা জন্মাইতেছি?”—১ করিন্থীয় ১০:২০-২২.

কিছু মিথ্যা শিক্ষকেরা আগে হয়তো সত্য খ্রীষ্টানই ছিল কিন্তু একসময় তারা সত্য ছেড়ে চলে গিয়ে ভুল পথে পা রেখেছে। (যিহূদা ৪, ১১) এটা দেখে আমরা অবাক হব না। কারণ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের নিয়ে গঠিত “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” এর কথা বলার পর যীশু ‘দুষ্ট দাসের’ কথা বলেন। এই দুষ্ট দাস চিত্রিত করে সেই শ্রেণীর লোকেদের, যারা অভিযোগ করে যে “আমার প্রভুর আসিবার বিলম্ব আছে” আর তারা তাদের সঙ্গের দাসদের মারতে শুরু করে। (মথি ২৪:৪৮, ৪৯) এইধরনের ব্যক্তি ও তাদের শিষ্যদের নিজেদের কোন শিক্ষা নেই; তারা শুধু অন্যদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দিতে চায়। তাদের বিষয়ে প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “যদি কেহ সেই শিক্ষা না লইয়া তোমাদের কাছে আইসে, তবে তাহাকে বাটীতে গ্রহণ করিও না, এবং তাহাকে ‘মঙ্গল হউক’ বলিও না।”—২ যোহন ১০; ২ করিন্থীয় ১১:৩, ৪, ১৩-১৫.

সত্য খুঁজছেন এমন লোকেদের বিভিন্ন ধর্মের কথাগুলো শোনার সময় সাবধান হওয়া দরকার। সত্যিই যদি আপনি সত্য খুঁজে থাকেন, তাহলে ঈশ্বর অবশ্যই আপনাকে একসময় সত্য ধর্ম দেখিয়ে দেবেন। বাইবেল ঈশ্বরের জ্ঞানের বিষয়ে বলে: “যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে . . . ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” (হিতোপদেশ ২:৪, ৫) বাইবেল ও খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে ঈশ্বরের জ্ঞান পেয়ে এবং যারা ওই জ্ঞান অনুযায়ী চলেন, তাদেরকে যিহোবা আশীর্বাদ করেন দেখে সত্য খ্রীষ্টানেরা মিথ্যা ধর্মের শিক্ষাগুলো শোনেন না।—২ তীমথিয় ৩:১৪.

[পাদটীকা]

^ ওয়াচটাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটির ঈশ্বরের জন্য মানবজাতির অন্বেষণ (ইংরেজি) বইয়ে জগতের অনেক ধর্মের উৎপত্তি ও এগুলোর মূল বিশ্বাস সম্বন্ধে লেখা আছে।