সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

উদ্ভিদের আকর্ষণীয় বিন্যাস

উদ্ভিদের আকর্ষণীয় বিন্যাস

উদ্ভিদের আকর্ষণীয় বিন্যাস

আপনি কি কখনো লক্ষ করেছেন যে, অনেক উদ্ভিদ সর্পিলাকারে বা পাক খেয়ে বড় হয়ে ওঠে? উদাহরণস্বরূপ, আনারসে হয়তো একদিক দিয়ে ৮টা সর্পিলাকার আঁশ ঘিরে রয়েছে এবং অন্যদিক দিয়ে ৫ বা ১৩টা ঘিরে রয়েছে। (১নং. চিত্র দেখুন।) আপনি যদি সূর্যমুখীর ভিতরে বীজগুলোকে দেখেন, তা হলে আপনি হয়তো দেখতে পাবেন যে, ৫৫ থেকে ৮৯টা বা এর চেয়েও বেশি পাক একটা অন্যটার ওপরে রয়েছে। এমনকি আপনি হয়তো একটা ফুলকপিতেও পাক দেখতে পাবেন। একবার যদি পাকগুলোকে লক্ষ করতে শুরু করেন, তা হলে ফল ও সবজির বাজারে যাওয়া আপনার জন্য আরও বেশি আগ্রহজনক হয়ে উঠবে। কেন উদ্ভিদগুলো এভাবে বেড়ে ওঠে? পাকগুলোর সংখ্যা কি কোনো তাৎপর্য রাখে?

উদ্ভিদগুলো কীভাবে বেড়ে ওঠে?

অধিকাংশ উদ্ভিদ ভাজক কলা নামে পরিচিত অতি ক্ষুদ্র বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কেন্দ্র থেকে কাণ্ড, পাতা এবং ফুলের মতো নতুন নতুন অঙ্গ গঠন করে। প্রতিটা নতুন অঙ্গ যেটা আদিপর্যায় (প্রাইমরডিয়াম) নামে পরিচিত, সেটা কেন্দ্র থেকে নতুন দিকে সম্প্রসারিত হয় ও বেড়ে ওঠে এবং তা পূর্বের আদিপর্যায়ের তুলনায় একটা কোণ গঠন করে। * (২নং. চিত্র দেখুন।) অধিকাংশ উদ্ভিদে নতুন অঙ্গগুলো এক অদ্বিতীয় কোণ থেকে বেড়ে ওঠে, যার ফলে পাক তৈরি হয়। এটা কী ধরনের কোণ?

এই সমস্যাটা বিবেচনা করুন: একটা উদ্ভিদ তৈরি করার কথা কল্পনা করুন, যেটার নতুন অঙ্গগুলো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কেন্দ্রের চারপাশে কোনো খালি জায়গা না রেখে একেবারে ঠেসে ঠেসে বেড়ে ওঠে। ধরুন আপনি প্রত্যেকটা নতুন অঙ্গকে পূর্বের অঙ্গের তুলনায় আবর্তনের দুই পঞ্চমাংশ কোণ থেকে বেড়ে ওঠার মতো করে তৈরি করা বেছে নিলেন। তা হলে আপনি লক্ষ করবেন যে, একই জায়গা থেকে এবং একই দিকে বেড়ে ওঠা প্রতি পঞ্চম অঙ্গের মধ্যে সমস্যা রয়েছে। এগুলো সর্পিলাকার ধারণ না করে মাঝখানে খালি জায়গা রেখে সারি সারিভাবে বেড়ে উঠবে। (৩নং. চিত্র দেখুন।) সত্য বিষয়টা হল, এক আবর্তনের যেকোনো সামান্য অংশ সম্পূর্ণ খালি জায়গাটাকে ব্যবহার করার বদলে সারি সারিভাবে বিন্যস্ত হয়। প্রায় ১৩৭.৫ ডিগ্রির যে-“আদর্শ কোণ” রয়েছে, একমাত্র সেটাই অঙ্গগুলোকে ঠেসে ঠেসে এক আদর্শ বিন্যাস গঠন করে। (৫নং. চিত্র দেখুন।) কী এই কোণকে এত বিশেষ করে তোলে?

এটাকে এক আবর্তনের সামান্য অংশ হিসেবে প্রকাশ করা যায় না বলেই এটা আদর্শ কোণ। এক পূর্ণ আবর্তনের ৫/৮ অংশ আদর্শ কোণের নিকটবর্তী, ৮/১৩ আরও নিকটবর্তী এবং ১৩/২১ এর চেয়েও নিকটবর্তী কিন্তু কোনো অংশই একটা আবর্তনের আদর্শ অনুপাতকে সঠিকভাবে প্রকাশ করে না। তাই, ভাজক কলার মধ্যে এই নির্দিষ্ট কোণে যখন পূর্বের অঙ্গের তুলনায় কোনো নতুন অঙ্গ গড়ে ওঠে, তখন দুটো অঙ্গ কখনোই একই দিকে সম্প্রসারিত হয় না। (৪নং চিত্র দেখুন।) ফলস্বরূপ, রশ্মির মতো নমুনা গঠন করার পরিবর্তে প্রাইমরডিয়া সর্পিলাকার নমুনা গঠন করে।

এটা উল্লেখযোগ্য যে, কমপিউটারে নকল করা এক প্রাইমরডিয়া যেটা কেন্দ্র থেকে বেড়ে উঠেছে সেটা একমাত্র তখনই দৃশ্যমান পাক সৃষ্টি করে, যখন নতুন অঙ্গগুলোর মধ্যকার কোণ আদর্শ কোণের অবস্থানে থাকে। আদর্শ কোণ থেকে এমনকি সেই কোণের এক ডিগ্রির দশ ভাগের এক ভাগ থেকেও বিচ্যুত হওয়া ভাল ছবি দেবে না।—৫নং. চিত্র দেখুন।

একটা ফুলে কতগুলো পাপড়ি রয়েছে?

আগ্রহের বিষয়টা হচ্ছে, আদর্শ কোণের ওপর ভিত্তি করে বেড়ে ওঠা পাকগুলোর সংখ্যা সাধারণত এমন একটা ধারাবাহিক ক্রম থেকে নেওয়া এক সংখ্যা, যেটাকে ফিবোনাতচি সিকোয়েন্স বলা হয়। প্রথম এই ধারাবাহিক ক্রমের বর্ণনা দিয়েছিলেন ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইতালীয় গণিতবিদ লিওনার্দো ফিবোনাতচি। এই ধারাবাহিক ক্রিয়ায় ১ সংখ্যার পর প্রত্যেকটা সংখ্যা পূর্ববর্তী দুটো সংখ্যার যোগফলের সমান—১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫ এবং ইত্যাদি।

অনেক উদ্ভিদের ফুল যা সর্পিলাকার নমুনাকে প্রদর্শন করে, সেগুলোতে প্রায়ই ফিবোনাতচি সংখ্যাযুক্ত পাপড়ি রয়েছে। কিছু পর্যবেক্ষকের কথা অনুসারে, বাটারকাপ ফুলের ৫টা, ব্লাডরুট ফুলের ৮টা, ফায়ারউইডের ১৩টা, আ্যস্টার্সের ২১টা, কমন ফিল্ড ডেইজির ৩৪টা এবং মিকালমাস ডেইজির ৫৫টা বা ৮৯টা পাপড়ি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। (৬নং. চিত্র দেখুন।) ফল ও শাকসবজি প্রায়ই ফিবোনাতচি সংখ্যার মতোই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদর্শন করে। উদাহরণস্বরূপ, কলাকে আড়াআড়িভাবে কাটলে বোঝা যায় যে, এটা পাঁচ তলবিশিষ্ট।

“তিনি সকলই . . . মনোহর করিয়াছেন”

শিল্পীরা অনেক আগেই আদর্শ অনুপাতটা শনাক্ত করেছে, যা আমাদের কাছে খুবই সুন্দর লাগে। কীসের ফলে উদ্ভিদের নতুন নতুন অঙ্গগুলো নির্দিষ্টভাবে এই আগ্রহজনক কোণেই গঠিত হয়? অনেক লোক মনে করে যে, এটা সজীব বস্তুর মধ্যে বুদ্ধিবিশিষ্ট নকশার এক প্রমাণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

সজীব বস্তুগুলোর নকশা এবং সেগুলোতে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে আমাদের ক্ষমতা সম্বন্ধে চিন্তা করে অনেকে একজন সৃষ্টিকর্তার কাজগুলো উপলব্ধি করে থাকে, যিনি চান যেন আমরা জীবন উপভোগ করি। আমাদের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তিনি সকলই যথাকালে মনোহর করিয়াছেন।”—উপদেশক ৩:১১. (g ৯/০৬)

[পাদটীকা]

^ আগ্রহের বিষয়টা হচ্ছে, সূর্যমুখী এই অর্থে অসাধারণ যে, যে-পুষ্পিকাগুলো বীজ হয়ে ওঠে, সেগুলো সর্পিলাকার ধারণ করে ফুলের কেন্দ্র থেকে নয় বরং ফুলের ডগার মুখ ঘিরে।

[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার ডায়াগ্রামস্‌]

Figure ১

(প্রকাশনা দেখুন)

Figure ২

(প্রকাশনা দেখুন)

Figure ৩

(প্রকাশনা দেখুন)

Figure ৪

(প্রকাশনা দেখুন)

Figure ৫

(প্রকাশনা দেখুন)

Figure ৬

(প্রকাশনা দেখুন)

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

কাছ থেকে দেখানো ভাজক কলা

[সৌজন্যে]

R. Rutishauser, University of Zurich, Switzerland

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

সাদা ফুল: Thomas G. Barnes @ USDA-NRCS PLANTS Database