সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর কি ছেলেমেয়েদের জন্য আসলেই চিন্তা করেন?

ঈশ্বর কি ছেলেমেয়েদের জন্য আসলেই চিন্তা করেন?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

ঈশ্বর কি ছেলেমেয়েদের জন্য আসলেই চিন্তা করেন?

প্রতি বছর কোটি কোটি ছেলেমেয়ে শোষণ, দুর্ব্যবহার এবং হিংস্র আক্রমণের শিকার হচ্ছে। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে প্রায় দাসের মতো কাজ করে। অন্যদের অপহরণ করা এবং সৈনিক অথবা শিশু পতিতা হতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া, অজাচার এবং শিশু দুর্ব্যবহারের অন্যান্য সাংঘাতিক কাজগুলোর মাধ্যমে অনেক ছেলেমেয়ের নির্ভরতাকে ভঙ্গ করা হয়েছে।

তাই এটা বোঝা কঠিন নয় যে, অকপট, যত্নশীল ব্যক্তিরা ছেলেমেয়েদের এই অবস্থা দেখে কষ্ট পায়। যদিও স্বীকার করা হয় যে, এই ধরনের দুর্ব্যবহারের জন্য মানুষের লোভ এবং দুরাচার বহুলাংশে দায়ী তবুও কারও কারও পক্ষে এটা মেনে নেওয়া কষ্টকর হতে পারে যে, একজন প্রেমময় ঈশ্বর এই ধরনের অবিচার ঘটতে দেন। তারা হয়তো মনে করতে পারে যে, ঈশ্বর এই ধরনের ছেলেমেয়েদের পরিত্যাগ করেছেন আর তাই তিনি হয়তো তাদের জন্য আসলেই চিন্তা করেন না। এটা কি সত্য? ছেলেমেয়েরা শোষিত হচ্ছে এবং প্রায়ই দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছে, এই দুঃখজনক সত্যটার অর্থ কি এই যে, ঈশ্বর তাদের জন্য চিন্তা করেন না? বাইবেল কী বলে?

ঈশ্বর দুর্ব্যবহারকারীদের নিন্দা করেন

ছেলেমেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক নিষ্ঠুর ব্যক্তিদের দ্বারা শোষিত হবে, এটা কখনও যিহোবা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল না। ছেলেমেয়েদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা হল, এদন বাগানে মানবজাতির বিদ্রোহের সবচেয়ে দুঃখজনক পরিণতিগুলোর মধ্যে একটা। ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের সেই প্রত্যাখ্যান, সহমানবদের দ্বারা মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে শোষণ করার পথ খুলে দেয়।—আদিপুস্তক ৩:১১-১৩, ১৬; উপদেশক ৮:৯.

ঈশ্বর সেই লোকেদের অত্যন্ত ঘৃণা করেন, যারা দুর্বল এবং অরক্ষিত ব্যক্তিদের শোষণ করে। যিহোবাকে সেবা করত না এমন অনেক প্রাচীন জাতি শিশুদের বলি দিত কিন্তু যিহোবা বলেছিলেন যে, ‘ইহা তিনি আজ্ঞা করেন নাই, তাঁহার মনেও ইহা উদয় হয় নাই।’ (যিরমিয় ৭:৩১) ঈশ্বর তাঁর প্রাচীন লোকেদের সাবধান করে দিয়েছিলেন: ‘[পিতৃহীন কোনো ছেলেকে] কোন মতে দুঃখ দিলে যদি সে আমার নিকটে ক্রন্দন করে, তবে আমি অবশ্য তাহার ক্রন্দন শুনিব; আর আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে।’—যাত্রাপুস্তক ২২:২২-২৪.

যিহোবা ছেলেমেয়েদের ভালবাসেন

ছেলেমেয়েদের প্রতি ঈশ্বরের চিন্তা, মানব পিতামাতাদের তিনি যে-বিজ্ঞ নির্দেশনাগুলো দেন, সেগুলোর দ্বারা স্পষ্ট হয়। নিরাপদ বাড়িতে বড় হয়ে ওঠে এমন ছেলেমেয়েদের পরিপক্ব, সুসমন্বিত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, আমাদের সৃষ্টিকর্তা বিবাহকে, সারাজীবনের এক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যেখানে “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” (আদিপুস্তক ২:২৪) বাইবেলে, কেবল বিবাহের মধ্যে যৌনসম্পর্ক করা অনুমোদিত যাতে এর ফলে যে-ছেলেমেয়েরা জন্মগ্রহণ করে, তাদের এক সুস্থির পরিবেশে যত্ন নেওয়া যেতে পারে।—ইব্রীয় ১৩:৪.

এ ছাড়া, শাস্ত্র বাবামার প্রশিক্ষণ দেওয়ার গুরুত্বের বিষয়েও জোর দেয়। “সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার,” বাইবেল বলে, “গর্ব্ভের ফল তাঁহার দত্ত পুরস্কার। যেমন বীরের হস্তে বাণ সকল, তেমনি যৌবনের সন্তানগণ।” (গীতসংহিতা ১২৭:৩, ৪) ছেলেমেয়েরা ঈশ্বরের কাছ থেকে এক মূল্যবান উপহার আর তিনি চান যাতে তারা সফল হয়। একজন তীরন্দাজ যেমন তার তীর নিক্ষেপ করার আগে সতর্কতার সঙ্গে তীরকে তাক করেন, তেমনই ঈশ্বর বাবামাদের পরামর্শ দেন যাতে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের জীবনে উত্তম নির্দেশনা প্রদান করে। “পিতারা,” ঈশ্বরের বাক্য নির্দেশ দেয়, “তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।”—ইফিষীয় ৬:৪.

আরেকটা যে-উপায়ে যিহোবা ছেলেমেয়েদের প্রতি তাঁর প্রেম প্রদর্শন করেছেন, সেটা হল বাবামাদের এই শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে যে, তারা যেন তাদের ছেলেমেয়েদের যৌন শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করে। প্রাচীন ইস্রায়েলে এমনকি ‘বালক-বালিকাকেও’ ব্যবস্থা শোনার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল সঠিক ও বেঠিক যৌন আচরণ শনাক্ত করা। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১২; লেবীয় পুস্তক ১৮:৬-২৪) ঈশ্বর চান যাতে বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের এমন যেকোনো ব্যক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে, যারা তাদের শোষণ করতে অথবা তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার করতে পারে।

ছেলেমেয়েদের জন্য আশা

ছেলেমেয়েদের প্রতি যিহোবার চির প্রেম যিশু খ্রিস্টের দ্বারা অপূর্বভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল, যিনি তাঁর পিতার ব্যক্তিত্বকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেন। (যোহন ৫:১৯) যিশুকে সাহায্য করার জন্য ভুল প্রচেষ্টা করে তাঁর প্রেরিতরা যখন বাবামাদেরকে তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের তাঁর কাছে আনতে বাধা দিয়েছিল, তখন যিশু অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের সংশোধন করেছিলেন। “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও,” তিনি বলেছিলেন। আর এরপর “তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।” (মার্ক ১০:১৩-১৬) ছেলেমেয়েরা যিহোবা ঈশ্বর বা তাঁর পুত্র কারও চোখেই নগণ্য নয়।

বস্তুত, তাঁর মনোনীত রাজা যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে ঈশ্বর সেই সমস্ত ছেলেমেয়েকে রক্ষা করার জন্য শীঘ্রই পদক্ষেপ নেবেন, যারা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছে। এই জগতের লোভী শোষকদের এবং নিষ্ঠুর দুর্ব্যবহারকারীদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেওয়া হবে। (গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১) যিহোবার অন্বেষণ করে, এমন নম্র ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

ইতিমধ্যে, ঈশ্বর সেই সমস্ত ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিক ও মানসিক সাহায্য প্রদান করার মাধ্যমে এখনই তাঁর প্রেম প্রদর্শন করেন, যারা শোষিত এবং দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছে। “আমি হারাণ মেষের অন্বেষণ করিব,” তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, “দূরীকৃতকে ফিরাইয়া আনিব, ভগ্নাঙ্গের ক্ষত বাঁধিব, ও পীড়িতকে সবল করিব।” (যিহিষ্কেল ৩৪:১৬) তাঁর বাক্য, তাঁর পবিত্র আত্মা এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মাধ্যমে যিহোবা সেই সমস্ত ছেলেমেয়েকে সান্ত্বনা দেন, যারা উৎপীড়িত এবং নিঃস্ব। এটা জানা কতই না আনন্দের যে, এখন “করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর; . . . আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন” এবং ভবিষ্যতেও তিনি ঠিক তা-ই করবেন।—২ করিন্থীয় ১:৩, ৪. (g০৪ ৮/৮)

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

© Mikkel Ostergaard /Panos Pictures