সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সব ধর্মই কি ঈশ্বরের কাছে আসার বিভিন্ন পথ মাত্র?

সব ধর্মই কি ঈশ্বরের কাছে আসার বিভিন্ন পথ মাত্র?

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

সব ধর্মই কি ঈশ্বরের কাছে আসার বিভিন্ন পথ মাত্র?

লেখক মারকাস বোর্গ বলেছিলেন, “আমি কোন মতেই বিশ্বাস করি না যে সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ঈশ্বর একটা ধর্মীয় বিশ্বাসের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া বেছে নিয়েছেন।” নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ডেসমন্ড টুটু বলেছিলেন: “কোন ধর্ম দাবি করতে পারবে না যে তারা” বিশ্বাসের “সব রহস্য জানে।” হিন্দু ধর্মের এক জনপ্রিয় মতবাদ হচ্ছে, “যত মত তত পথ।” এটাকে যদি আক্ষরিকভাবে অনুবাদ করা না হয়, তাহলে এর মানে হল, সব ধর্ম একই লক্ষ্যে পৌঁছানোর বিভিন্ন পথ মাত্র। বৌদ্ধরাও এই মতবাদে বিশ্বাস করে। আসলে, লক্ষ লক্ষ লোক বিশ্বাস করে যে, সব ধর্ম ঈশ্বরের কাছে আসার বিভিন্ন পথ।

ইতিহাসবেত্তা জেফরি প্যারিণ্ডার বলেছিলেন: “কখনও কখনও বলা হয় যে সব ধর্মের লক্ষ্য এক কিংবা সত্য জানার সব পথই এক অথবা সব ধর্ম একই মতবাদগুলো শেখায়।” ধর্মগুলোর শিক্ষা, রীতিনীতি এবং দেবদেবীরা আসলে একই। বেশির ভাগ ধর্মগুলোই ভালবাসতে বলে এবং শিক্ষা দেয় যে খুন, চুরি করা বা মিথ্যে কথা বলা অন্যায়। বেশির ভাগ ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে কিছু লোক আন্তরিকতার সঙ্গে অন্যদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। অতএব, একজন ব্যক্তি যদি তার বিশ্বাসে আন্তরিক থাকেন এবং সৎভাবে জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন, তাহলে তিনি কোন্‌ ধর্মের সঙ্গে জড়িত তাতে কি কোন কিছু এসে যায়? অথবা সব ধর্মই কি ঈশ্বরের কাছে আসার বিভিন্ন পথ মাত্র?

কেবল আন্তরিক হওয়াই কি যথেষ্ট?

প্রথম শতাব্দীর শৌল নামে এক যিহুদি ব্যক্তির ঘটনাটা দেখুন, যিনি পরে পৌল নামে খ্রীষ্টীয় প্রেরিত হয়েছিলেন। তিনি যিহুদি ধর্মের এক উদ্যোগী অনুগামী ছিলেন আর এইজন্য তিনি খ্রীষ্টের অনুগামীদের উপাসনাকে একেবারে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে তাদের উপাসনা সঠিক নয়। (প্রেরিত ৮:১-৩; ৯:১, ২) কিন্তু, ঈশ্বরের দয়াতে শৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে তার মতো ধর্মভীরু ব্যক্তিদের হয়তো ঈশ্বরের বিষয়ে উদ্যোগ থাকতে পারে কিন্তু সব তথ্য না থাকার কারণে তারা ভুল করতে পারেন। (রোমীয় ১০:২) শৌল যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা ও তাঁর কাজগুলো সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখেছিলেন, তখন তিনি নিজেকে পরিবর্তন করেছিলেন এবং তাদের সঙ্গেই উপাসনা করা শুরু করেছিলেন, যাদের তিনি তাড়না করেছিলেন অর্থাৎ যারা ছিলেন যীশু খ্রীষ্টের অনুগামী।—১ তীমথিয় ১:১২-১৬.

বাইবেল কি বলে যে শত শত বিশ্বাস রয়েছে যেগুলোর মধ্যে থেকে একটা আমাদের বেছে নিতে হবে এবং যেটাই আমরা বেছে নিই, সেটাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে? প্রেরিত পৌল পুনরুত্থিত যীশু খ্রীষ্টের কাছ থেকে যে নির্দেশনাগুলো পেয়েছিলেন, সেই কথাগুলো এর একেবারে বিপরীত। যীশু তাকে পরজাতীয় লোকেদের কাছে পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি ‘তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দেন, যেন তাহারা অন্ধকার হইতে জ্যোতির প্রতি, এবং শয়তানের কর্ত্তৃত্ব হইতে ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসে।’ (প্রেরিত ২৬:১৭, ১৮) এখান থেকে এটা স্পষ্ট, যে ধর্মই আমরা বেছে নিই না কেন, তা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেসব লোকেদের কাছে পৌলকে পাঠানো হয়েছিল তারা ইতিমধ্যেই একটা ধর্ম পালন করছিলেন। কিন্তু তারা ‘অন্ধকারের’ মধ্যে ছিলেন। সত্যি বলতে কী, সব ধর্মই যদি অনন্ত জীবন ও ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাওয়ার বিভিন্ন পথ হতো, তাহলে যীশু তাঁর অনুগামীদেরকে শিষ্য তৈরির করার যে আদেশ দিয়েছিলেন তার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।—মথি ২৮:১৯, ২০.

যীশু তাঁর বিখ্যাত পার্বত্য উপদেশে বলেছিলেন: “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর, কেননা সর্ব্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়।” (মথি ৭:১৩, ১৪) বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে “বিশ্বাস এক।” (ইফিষীয় ৪:৫) এটা স্পষ্ট যে, অনেকে যারা “প্রশস্ত” পথে চলছেন তাদের একটা ধর্ম আছে। কিন্তু তাদের “বিশ্বাস এক” নয়। যেহেতু সত্য উপাসনা কেবল একটাই, তাই যারা এই সত্য ধর্মকে পেতে চান তাদের সেটা খুঁজতে হবে।

সত্য ঈশ্বরকে খোঁজা

মানুষের ইতিহাসের একেবারে শুরুতেই ঈশ্বর তাদেরকে বলে দিয়েছিলেন যে, তাদের কাছ থেকে তিনি কী চান। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:১৫-১৭; ৪:৩-৫) আজকে তাঁর চাহিদাগুলো সম্বন্ধে পরিষ্কারভাবে বাইবেলে বলা আছে। এগুলো আমাদেরকে কোন্‌ উপাসনা ঈশ্বর গ্রহণ করেন এবং কোন্‌টা করেন না, সেটা আলাদা করতে সাহায্য করে। (মথি ১৫:৩-৯) কিছু লোকেরা জন্মসূত্রে যে ধর্ম পেয়েছেন সেটা পালন করেন আর অন্যেরা সমাজের বেশির ভাগ লোক যে ধর্ম পালন করেন সেটাই করেন। তাই অনেকে তারা কখন এবং কোথায় জন্মেছেন তার ওপর ভিত্তি করে ধর্ম পালন করেন। তাহলে, আপনার ধর্ম হঠাৎ করে বাছাই হয়ে যাবে অথবা আপনার জন্য এই সিদ্ধান্ত অন্যেরা করে দেবে, এই ভেবে কি আপনি বিষয়টা হালকাভাবে নেবেন?

শাস্ত্র ভালভাবে পরীক্ষা করে সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আপনার ধর্ম বাছাই করা উচিত। প্রথম শতাব্দীতে কিছু শিক্ষিত লোক প্রেরিত পৌলের কথাগুলো শোনার সঙ্গে সঙ্গে মেনে নেননি। তারা “এ সকল বাস্তবিকই এইরূপ কি না, তাহা জানিবার জন্য প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা” করেছিলেন। (প্রেরিত ১৭:১১; ১ যোহন ৪:১) আপনিও তাই করুন না কেন?

বাইবেল বলে যে নিখিল বিশ্বের ঈশ্বর এমন লোকেদেরকে খুঁজছেন, যারা তাঁকে সত্যে উপাসনা করবে। যেমন যোহন ৪:২৩, ২৪ পদে যীশু ব্যাখ্যা করেছিলেন: “কিন্তু এমন সময় আসিতেছে, বরং এখনই উপস্থিত, যখন প্রকৃত ভজনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা করিবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন। ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাঁহার ভজনা করে, তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে।” একমাত্র ‘পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম্মই’ তাঁর গ্রহণযোগ্য। (যাকোব ১:২৭) ঈশ্বর লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিদেরকে জীবনের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংকীর্ণ পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন। যারা আগ্রহী নয় এমন লোকেদেরকে তিনি অনন্ত জীবন দেবেন না কিন্তু যারা সেই সংকীর্ণ পথে, যার ব্যবস্থা তিনিই করেছেন, সেটা খোঁজার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং সেই পথে চলেন, তাদেরকে তিনি তা দেবেন।—মালাখি ৩:১৮. (g০১ ৬/৮)