সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমি জানি, . . . সে উঠিবে”

“আমি জানি, . . . সে উঠিবে”

“আমাদের বন্ধু . . . নিদ্রা গিয়াছে, কিন্তু আমি নিদ্রা হইতে তাহাকে জাগাইতে যাইতেছি।”—যোহন ১১:১১.

গান সংখ্যা: ৫৪, ৫১

১. লাসারের প্রতি কী ঘটবে বলে মার্থা নিশ্চিত ছিলেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)

মার্থা নামে যিশুর একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ও শিষ্যা শোক করছিলেন। তার ভাই লাসার মারা গিয়েছিলেন। এমন কোনো বিষয় কি ছিল, যেটা তাকে সান্ত্বনা প্রদান করতে পারত? হ্যাঁ, ছিল। যিশু তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তোমার ভাই আবার উঠিবে।” অবশ্য, সেই কথাগুলো তার সমস্ত দুঃখ দূর করতে পারত না। তা সত্ত্বেও, মার্থা যিশুর প্রতিজ্ঞার উপর আস্থা রেখেছিলেন এবং বলেছিলেন: “আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানে সে উঠিবে।” (যোহন ১১:২০-২৪) মার্থা এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, ভবিষ্যতে পুনরুত্থান হবে। কিন্তু এরপর, যিশু একটা অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি সেই দিনেই লাসারকে পুনরুত্থিত করেছিলেন।

২. কেন আপনি মার্থার মতোই দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে চাইবেন?

আমাদের এমনটা আশা করার কোনো কারণ নেই যে, যিশু অথবা তাঁর পিতা এখনই আমাদের মৃত প্রিয়জনদের পুনরুত্থিত করবেন। কিন্তু, আপনি কি এই বিষয়ে মার্থার মতোই নিশ্চিত যে, আপনার প্রিয়জনদের জন্য ভবিষ্যতে পুনরুত্থান অপেক্ষা করে আছে? হতে পারে, আপনি আপনার স্বামী অথবা স্ত্রী, আপনার বাবা অথবা মা, আপনার প্রিয় ঠাকুরদাদা অথবা ঠাকুরমা, আপনার প্রিয় দাদু অথবা দিদিমা কিংবা এমনকী আপনার প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছেন। আপনি তাকে জড়িয়ে ধরার, তার সঙ্গে কথা বলার এবং তার সঙ্গে আনন্দপূর্ণ মুহূর্ত কাটানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন। আনন্দের বিষয় হল, মার্থার মতো আপনারও এমনটা বলার উত্তম কারণ রয়েছে, ‘আমি জানি, আমার প্রিয়জন পুনরুত্থানে উঠবে।’ তারপরও, প্রতিটা খ্রিস্টানের এই দৃঢ়প্রত্যয়ের পিছনে থাকা কারণগুলো নিয়ে চিন্তা করা উত্তম হবে।

৩, ৪. লাসারের মৃত্যুর কিছুসময় আগে যিশু কোন অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন এবং কীভাবে সেগুলো মার্থার আস্থাকে আরও দৃঢ় করেছিল?

মার্থা যিরূশালেমের কাছে বাস করতেন। তাই, যিশু যখন গালীলের নায়িন্‌ নগরের কাছে একজন বিধবার ছেলেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, তখন মার্থা হয়তো নিজের চোখে সেটা দেখেননি। তবে, তিনি সম্ভবত সেই বিষয়ে শুনেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি সম্ভবত এই বিষয়টাও শুনেছিলেন যে, যিশু যায়ীরের মেয়েকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। মেয়েটির বাড়ির সকলেই “জানিত, সে মরিয়া গিয়াছে।” তারপরও, যিশু তার হাত ধরে বলেছিলেন: “বালিকে, উঠ।” আর মেয়েটি সঙ্গেসঙ্গে জীবিত হয়ে উঠেছিল। (লূক ৭:১১-১৭; ৮:৪১, ৪২, ৪৯-৫৫) মার্থা ও তার বোন মরিয়ম দু-জনেই জানতেন, যিশু অসুস্থদের সুস্থ করতে পারেন। তাই তাদের এই বিশ্বাস ছিল, যিশু যদি সেখানে উপস্থিত থাকতেন, তা হলে লাসার মারা যেতেন না। কিন্তু, লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন মার্থা কী আশা করেছিলেন? লক্ষ করুন তিনি বলেছিলেন, লাসার ভবিষ্যতে, “শেষ দিনে” জীবন ফিরে পাবে। কেন তিনি এই বিষয়ে এতটা নিশ্চিত ছিলেন? আর কেন আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন যে, ভবিষ্যতে পুনরুত্থান হবে, যেখানে আপনার প্রিয়জনরা হয়তো ফিরে আসবে?

পুনরুত্থানে বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য আমাদের কাছে উত্তম কারণ রয়েছে। আমরা এখন সেগুলোর কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করব। সত্যি বলতে কী, আপনি হয়তো আলোচনার সময় ঈশ্বরের বাক্য থেকে এমন বিষয়গুলো খুঁজে পেতে পারেন, যেগুলো নিয়ে আপনি খুব-একটা চিন্তা করেন না। কিন্তু, সেই বিষয়গুলো আপনার এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করতে পারে যে, আপনি আবারও আপনার মৃত প্রিয়জনদের দেখতে পাবেন।

যে-ঘটনাগুলো আমাদের আশা প্রদান করে!

৫. কেন মার্থা নিশ্চিত ছিলেন যে, লাসারকে পুনরুত্থিত করা হবে?

লক্ষ করুন মার্থা বলেননি, ‘আমি আশা করি, আমার ভাই উঠিবে।’ এর পরিবর্তে, তিনি বলেছিলেন: “আমি জানি, . . . সে উঠিবে।” কেন মার্থা এতটা নিশ্চিত ছিলেন? কারণ তিনি সেই পুনরুত্থানগুলোর বিষয়ে জানতেন, যেগুলো অতীতে ঘটেছিল। তিনি সম্ভবত ছোটোবেলায় তার বাড়িতে ও সমাজগৃহে সেগুলোর বিষয়ে শিখেছিলেন। এখন আমরা শাস্ত্রে উল্লেখিত সেই পুনরুত্থানগুলোর মধ্যে তিনটে ঘটনা পরীক্ষা করে দেখব।

৬. মার্থা নিশ্চিতভাবেই কোন অলৌকিক ঘটনা সম্বন্ধে শিখেছিলেন?

প্রথম পুনরুত্থান সেইসময় ঘটেছিল, যখন ঈশ্বর ভাববাদী এলিয়কে অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলের উত্তর দিকে অবস্থিত সারিফৎ নামে একটা ফৈনীকিয় নগরে একজন দরিদ্র বিধবা বাস করতেন। তিনি সেই ভাববাদীর প্রতি আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন। এরপর, যিহোবা একটা অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন যেন সেই বিধবার বাড়িতে ময়দা ও তেল শেষ হয়ে না যায়, যাতে তিনি ও তার ছেলে জীবিত থাকতে পারেন। (১ রাজা. ১৭:৮-১৬) পরে একসময়, তার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ও মারা গিয়েছিল। কিন্তু, এলিয় সেই বিধবাকে সাহায্য করেছিলেন। এলিয় সেই ছেলেটিকে স্পর্শ করার সময় যিহোবার কাছে এই প্রার্থনা করেছিলেন: “ঈশ্বর, বিনয় করি, এই বালকের মধ্যে প্রাণ ফিরিয়া আসুক।” আর সত্যি সত্যিই তা হয়েছিল! ঈশ্বর এলিয়ের প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং সেই ছেলেটি জীবন ফিরে পেয়েছিল। এটাই হল বাইবেলে লিপিবদ্ধ প্রথম পুনরুত্থানের বিবরণ। (পড়ুন, ১ রাজাবলি ১৭:১৭-২৪.) নিশ্চিতভাবেই, মার্থা সেই চমৎকার ঘটনা সম্বন্ধে জানতেন।

৭, ৮. (ক) কীভাবে ইলীশায় একজন শোকার্ত মাকে সান্ত্বনা প্রদান করেছিলেন? (খ) ইলীশায়ের করা অলৌকিক কাজ যিহোবা সম্বন্ধে কী প্রমাণ করে?

বাইবেলে লিপিবদ্ধ দ্বিতীয় পুনরুত্থানটা ভাববাদী ইলীশায় করেছিলেন। শূনেম নামে একটা নগরে একজন ইস্রায়েলীয় মহিলা বাস করতেন, যার কোনো সন্তান ছিল না। যেহেতু সেই মহিলা ইলীশায়ের প্রতি প্রচুর আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন, তাই যিহোবা তাকে ও তার বৃদ্ধ স্বামীকে একটা পুত্রসন্তান দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। কিন্তু, এর কয়েক বছর পর সেই ছেলেটি মারা গিয়েছিল। একটু কল্পনা করুন, সেই মা কতটা দুঃখিত হয়ে পড়েছিলেন। তার শোক এতটাই তীব্র ছিল যে, তিনি ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে কর্মিল পর্বতে ইলীশায়ের কাছে গিয়েছিলেন। ইলীশায় তার পরিচারক গেহসিকে পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি তাদের আগেই শূনেমে গিয়ে সেই ছেলেটিকে পুনরুত্থিত করেন। কিন্তু, গেহসি তাকে পুনরুত্থিত করতে পারেননি। এরপর, সেই শোকার্ত মা ইলীশায়কে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এসেছিলেন।—২ রাজা. ৪:৮-৩১.

ইলীশায় সেই বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন, যেখানে ছেলেটির মৃতদেহ রাখা ছিল। এরপর, তিনি প্রার্থনা করেছিলেন। যিহোবা ইলীশায়ের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং অলৌকিকভাবে সেই ছেলেটির জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। যখন ছেলেটির মা তাকে জীবিত অবস্থায় দেখেছিলেন, তখন তিনি অনেক আনন্দিত হয়েছিলেন! (পড়ুন, ২ রাজাবলি ৪:৩২-৩৭.) হতে পারে, তিনি হান্নার প্রার্থনার কথাগুলো স্মরণ করেছিলেন। হান্না সন্তানধারণে অক্ষম ছিলেন কিন্তু যিহোবা তাকে একটা পুত্রসন্তান দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন, যার নাম রাখা হয়েছিল শমূয়েল। সন্তান লাভ করার পর হান্না যিহোবার প্রশংসা করেছিলেন কারণ ঈশ্বর “পাতালে” বা মানবজাতির সাধারণ কবরে “নামান ও ঊর্দ্ধ্বে তুলেন।” (১ শমূ. ২:৬) শূনেমে সেই ছেলেটিকে আক্ষরিকভাবে বাঁচিয়ে তোলার মাধ্যমে ঈশ্বর প্রমাণ করেছিলেন যে, মৃতদের পুনরুত্থিত করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।

৯. বাইবেলে লিপিবদ্ধ তৃতীয় পুনরুত্থানের বিবরণের বর্ণনা দিন।

ইলীশায়ের মৃত্যুর পর আরেকটা অসাধারণ ঘটনা ঘটেছিল। বাইবেল জানায়, তিনি ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন ভাববাদী হিসেবে সেবা করেছিলেন। এরপর, তিনি ‘পীড়িত হইলেন, সেই পীড়াতেই তাঁহার মৃত্যু হইয়াছিল।’ সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইলীশায়ের দেহের অবশিষ্টাংশ হিসেবে কেবল তার হাড়গুলোই কবরে রয়ে গিয়েছিল। একদিন, কয়েক জন ইস্রায়েলীয় একজন মৃত ব্যক্তিকে কবর দিচ্ছিল। হঠাৎই, তারা কয়েক জন শত্রুকে তাদের দিকে আসতে দেখেছিল। সেই ইস্রায়েলীয়রা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য মৃতদেহটাকে ইলীশায়ের কবরে ফেলে দিয়েছিল। বাইবেল বলে: “সেই ব্যক্তি প্রবিষ্ট হইয়া ইলীশায়ের অস্থি স্পর্শ করিবামাত্র জীবিত হইয়া পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইল।” (২ রাজা. ১৩:১৪, ২০, ২১) এই বিবরণগুলো মার্থাকে এই প্রমাণ জুগিয়েছিল যে, মৃত্যুর উপর ঈশ্বরের ক্ষমতা রয়েছে। এই বিবরণগুলোর কারণে আপনারও এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া উচিত যে, ঈশ্বরের ক্ষমতা হল অপরিমেয় ও অসীম।

যে-ঘটনাগুলো প্রেরিতদের সময় ঘটেছিল

১০. টাবিথা নামে একজন খ্রিস্টান বোনের কী হয়েছিল এবং এরপর পিতর কী করেছিলেন?

১০ খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্র-এও ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের মাধ্যমে করা বিভিন্ন পুনরুত্থানের বিবরণ রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই যিশুর করা সেই পুনরুত্থানগুলোর বিষয়ে উল্লেখ করেছি, যেগুলো নায়িন্‌ নগরের কাছে ও যায়ীরের বাড়িতে করা হয়েছিল। এর কিছুসময় পর, প্রেরিত পিতর দর্কাকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, যিনি টাবিথা নামেও পরিচিত ছিলেন। পিতর সেই ঘরে গিয়েছিলেন, যেখানে দর্কার মৃতদেহ রাখা ছিল। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন আর তারপর বলেছিলেন: “টাবিথা, উঠ।” টাবিথা সঙ্গেসঙ্গে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন এবং পিতর সেখানে উপস্থিত অন্যান্য খ্রিস্টানদের সামনে ‘তাঁহাকে জীবিত দেখাইয়াছিলেন।’ এই ঘটনাটা এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল যে, সেই নগরের অনেক লোক ‘প্রভুর উপরে বিশ্বাস করিয়াছিল।’ এই নতুন শিষ্যরা অন্যদের কাছে যিশুর বিষয়ে সুসমাচার জানাতে পেরেছিল আর সেইসঙ্গে সকলের কাছে মৃতদের পুনরুত্থিত করার বিষয়ে যিহোবার ক্ষমতা সম্বন্ধে বলতে পেরেছিল।—প্রেরিত ৯:৩৬-৪২.

১১. একজন যুবকের বিষয়ে ডাক্তার লূক কী জানিয়েছিলেন এবং সেই ঘটনা অন্যদের কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

১১ আরেকটা পুনরুত্থানের সময়ও প্রত্যক্ষদর্শীরা উপস্থিত ছিল। একবার, প্রেরিত পৌল ত্রোয়াতে—বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম তুরস্ক—একটা বাড়ির উপরের ঘরে সভা পরিচালনা করছিলেন। পৌল মাঝরাত পর্যন্ত বক্তৃতা দিয়েছিলেন। উতুখ নামে এক যুবক জানালায় বসে তার বক্তৃতা শুনছিলেন। কিন্তু, একসময় তিনি ঘুমে ঢুলে পড়েছিলেন এবং তিন তলার সেই জানালা থেকে নীচে পড়ে গিয়েছিলেন। সম্ভবত, লূকই প্রথমে উতুখের কাছে এসে পৌঁছেছিলেন। একজন ডাক্তার হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সেই যুবক কেবল আহত ও অচেতন অবস্থায় ছিলেন না কিন্তু তিনি মারা গিয়েছিলেন! পৌলও তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এসেছিলেন। তিনি উতুখকে জড়িয়ে ধরেছিলেন এবং এরপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলেছিলেন: “ইহার মধ্যে প্রাণ আছে।” এই অলৌকিক ঘটনা সমস্ত প্রত্যক্ষদর্শীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। তারা জানত, সেই যুবক মারা গিয়েছিলেন। তাই, তারা যখন তাকে পুনরুত্থিত হতে দেখেছিল, তখন তারা ‘অসামান্য আশ্বাস প্রাপ্ত হইয়াছিল।’—প্রেরিত ২০:৭-১২.

এক নির্ভরযোগ্য আশা

১২, ১৩. আমরা যে-পুনরুত্থানগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে আমরা হয়তো কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

১২ আমরা যে-পুনরুত্থানের বিবরণগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলো বিবেচনা করার মাধ্যমে আপনারও মার্থার মতো একইরকম আস্থা গড়ে তোলা উচিত। আমরা এই বিষয়ে পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি যে, আমাদের ঈশ্বর, যিনি আমাদের জীবন দিয়েছেন, তিনি একজন মৃত ব্যক্তির জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন। একটা আগ্রহজনক বিষয় হল এগুলোর মধ্যে প্রতিটা পুনরুত্থানের সময় এলিয়, যিশু অথবা পিতরের মতো ঈশ্বরের কোনো-না-কোনো বিশ্বস্ত দাস উপস্থিত ছিলেন। আর সেগুলো এমন এক সময় ঘটেছিল, যখন যিহোবা অলৌকিক কাজ সম্পাদন করছিলেন। তা হলে, সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা অন্যান্য সময় মারা গিয়েছিল, যখন অলৌকিক কাজ সম্পাদন করা হচ্ছিল না? বিশ্বস্ত নারী-পুরুষরা কি এমনটা আশা করতে পারে, ঈশ্বর ভবিষ্যতে মৃতদের পুনরুত্থিত করবেন? তারা কি মার্থার মতো একইরকম আস্থা রাখতে পারে, যিনি তার ভাইয়ের বিষয়ে বলেছিলেন: “আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানে সে উঠিবে”? কেন তিনি এমনটা বিশ্বাস করতে পেরেছিলেন যে, ভবিষ্যতে পুনরুত্থান হবে এবং কেন আপনিও একইরকম বিশ্বাস রাখতে পারেন?

১৩ ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া একাধিক বিবরণ দেখায় যে, তাঁর অনুগত দাসেরা জানতেন, ভবিষ্যতে পুনরুত্থান হবে। আসুন, আমরা সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা বিবেচনা করি।

১৪. আমরা অব্রাহামের বিবরণ থেকে পুনরুত্থান সম্বন্ধে কী শিখতে পারি?

১৪ একটু চিন্তা করুন, যিহোবা অব্রাহামকে ইস্‌হাকের প্রতি কী করতে বলেছিলেন, যে-সন্তান লাভ করার জন্য তিনি দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করেছিলেন। যিহোবা বলেছিলেন: “তুমি আপন পুত্ত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্ত্রকে, যাহাকে তুমি ভাল বাস, সেই ইস্‌হাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও, এবং . . . তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর।” (আদি. ২২:২) কী মনে হয়, অব্রাহাম যখন এই আদেশ শুনেছিলেন, তখন তার কেমন লেগেছিল? যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, অব্রাহামের বংশের মাধ্যমেই সমস্ত জাতি আশীর্বাদ লাভ করবে। (আদি. ১৩:১৪-১৬; ১৮:১৮; রোমীয় ৪:১৭, ১৮) এ ছাড়া যিহোবা বলেছিলেন, সেই আশীর্বাদ “ইস্‌হাকেই” বা ইস্‌হাকের মাধ্যমেই আসবে। (আদি. ২১:১২) কিন্তু, অব্রাহাম যদি তার ছেলেকে বলিরূপে উৎসর্গ করতেন, তা হলে কীভাবে সেই ভবিষ্যদ্‌বাণী পরিপূর্ণ হতো? পৌল ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন, অব্রাহাম এই বিষয়টা বিশ্বাস করতেন যে, ইস্‌হাককে পুনরুত্থিত করার ক্ষমতা ঈশ্বরের রয়েছে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১৭-১৯.) কিন্তু বাইবেল এমনটা বলে না যে, অব্রাহাম মনে করেছিলেন, ইস্‌হাক সঙ্গেসঙ্গে, হতে পারে কয়েক ঘণ্টা, এক দিন অথবা এক সপ্তাহের মধ্যে জীবন ফিরে পাবেন। অব্রাহামের কাছে এই বিষয়টা জানার কোনো উপায় ছিল না, তার ছেলে কখন পুনরুত্থিত হবেন। কিন্তু, তিনি এই বিষয়ে আস্থা রেখেছিলেন, যিহোবা ইস্‌হাককে জীবন ফিরিয়ে দেবেন।

১৫. বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োবের কোন আশা ছিল?

১৫ বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োবও জানতেন যে, ভবিষ্যতে পুনরুত্থান হবে। তিনি জানতেন, একটা গাছকে যদি কেটে ফেলা হয়, তা হলে সেটা আবার বেড়ে উঠতে এবং একটা নতুন গাছের মতো হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু, মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে না। (ইয়োব ১৪:৭-১২; ১৯:২৫-২৭) একজন ব্যক্তি যদি মারা যান, তা হলে তিনি নিজেকে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন না। (২ শমূ. ১২:২৩; গীত. ৮৯:৪৮) অবশ্য, এর অর্থ এই নয় যে, ঈশ্বর একজন ব্যক্তিকে পুনরুত্থিত করতে পারেন না। সত্যি বলতে কী, ইয়োব বিশ্বাস করতেন যে, ঈশ্বর তাকে স্মরণ করবেন। (পড়ুন, ইয়োব ১৪:১৩-১৫.) ইয়োবের কাছে এই বিষয়টা জানার কোনো উপায় ছিল না, ভবিষ্যতে কখন তা ঘটবে। তা সত্ত্বেও, ইয়োবের এই আস্থা ছিল যে, মানবজীবনের সৃষ্টিকর্তা তাকে স্মরণ করতে ও পুনরুত্থিত করতে পারেন এবং তিনি তা করবেন।

১৬. একজন স্বর্গদূত দানিয়েলকে কোন উৎসাহ প্রদান করেছিলেন?

১৬ আরেকজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি দানিয়েলের কথা চিন্তা করুন। তিনি সারাজীবন ধরে অনুগতভাবে যিহোবার সেবা করেছিলেন এবং যিহোবা তাকে সমর্থন করেছিলেন। একবার, একজন স্বর্গদূত তাকে “মহাপ্রীতি-পাত্র” বলে সম্বোধিত করেছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন, “তোমার শান্তি হউক” ও “[তুমি] সবল হও।”—দানি. ৯:২২, ২৩; ১০:১১, ১৮, ১৯.

১৭, ১৮. যিহোবা দানিয়েলের কাছে কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?

১৭ দানিয়েলের বয়স যখন প্রায় ১০০ বছর হয়েছিল এবং তিনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি হয়তো এই বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন যে, তার প্রতি কী ঘটবে। দানিয়েল কি এমনটা আশা করেছিলেন যে, তিনি আবারও জীবিত হবেন? অবশ্যই! দানিয়েল বইয়ের শেষে আমরা পড়ি যে, ঈশ্বর তার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তুমি শেষের অপেক্ষাতে গমন কর, তাহাতে বিশ্রাম পাইবে।” (দানি. ১২:১৩) দানিয়েল জানতেন, মৃতেরা বিশ্রাম নিচ্ছে আর তিনি যেখানে যেতে চলেছিলেন, সেই “পাতালে” বা মানবজাতির সাধারণ কবরে “কোন . . . সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা” নেই। (উপ. ৯:১০) তবে, দানিয়েলের জন্য এটাই শেষ নয়। যিহোবা তার কাছে ভবিষ্যতের বিষয়ে এক চমৎকার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।

১৮ যিহোবার দূত তাকে বলেছিলেন: “তুমি . . . দিন-সমূহের শেষে আপন অধিকারে দণ্ডায়মান হইবে।” দানিয়েল একেবারে সঠিকভাবে জানতেন না যে, কখন তা ঘটবে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি মারা যাবেন এবং তারপর বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু, দানিয়েল যখন এই প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে শুনেছিলেন, “তুমি . . . আপন অধিকারে দণ্ডায়মান হইবে,” তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাকে ভবিষ্যতে পুনরুত্থিত করা হবে। এটা তার মৃত্যুর অনেক সময় পর, “দিন-সমূহের শেষে” ঘটবে। অথবা বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন যেমন বলে: “শেষকালে তুমি তোমার পুরস্কার পাবার জন্য বেঁচে উঠবে।”

মার্থার মতো আপনিও এই বিষয়ে পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেন যে, পুনরুত্থান হবে (১৯, ২০ অনুচ্ছেদ দেখুন)

১৯, ২০. (ক) আমরা যে-ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলো যিশুর প্রতি বলা মার্থার কথার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?

১৯ স্পষ্টতই, মার্থার এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার উত্তম কারণ ছিল যে, তার বিশ্বস্ত ভাই লাসার “শেষ দিনে পুনরুত্থানে . . . উঠিবে।” দানিয়েলের কাছে করা যিহোবার প্রতিজ্ঞা ও সেইসঙ্গে ভবিষ্যতের পুনরুত্থানের উপর মার্থার দৃঢ়বিশ্বাস সম্বন্ধে বিবেচনা করার মাধ্যমে বর্তমানে আমাদের আস্থা গড়ে তোলা উচিত। পুনরুত্থান অবশ্যই হবে।

২০ আমরা সেই বাস্তব পুনরুত্থানগুলোর বিষয়ে শিখেছি, যেগুলো অতীতে করা হয়েছিল। এগুলো প্রমাণ করে যে, মৃত ব্যক্তিরা আবার জীবিত হতে পারে। এ ছাড়া আমরা এও দেখেছি যে, বিভিন্ন নারী-পুরুষ, যারা বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করেছিল, তারা ভবিষ্যতের পুনরুত্থানের বিষয়ে আশা রেখেছিল। কিন্তু, একটা পুনরুত্থানের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করার দীর্ঘসময় পর সেটা যে পরিপূর্ণ হতে পারে, এই বিষয়ে কি কোনো প্রমাণ রয়েছে? যদি থাকে, তা হলে সেটা আমাদের ভবিষ্যতের পুনরুত্থানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করার বিষয়ে আরও বেশি কারণ জোগাবে। কিন্তু, ভবিষ্যতে কখন পুনরুত্থান হবে? আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।