সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

যিহোবার সাক্ষিরা কেন জন্মদিন পালন করে না?

যিহোবার সাক্ষিরা কেন জন্মদিন পালন করে না?

 আমরা, যিহোবার সাক্ষিরা, জন্মদিন পালন করি না, কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে, জন্মদিন পালন করা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে। যদিও বাইবেলে সরাসরি কোথাও লেখা নেই যে, জন্মদিন পালন করা নিষেধ, তবে বাইবেল পড়ে আমরা জানতে পারি, এই ধরনের অনুষ্ঠান সম্বন্ধে ঈশ্বর কী মনে করেন। আসুন এই ব্যাপারে বাইবেল থেকে চারটে বিষয় আলোচনা করি।

  1.  ১. জন্মদিন পালন করা প্রতিমার উপাসনা থেকে এসেছে। ফাংক এন্ড ওয়্যাগনাল্স স্ট্যান্ডার্ড ডিকশনারি অভ্‌ ফোকলোর, মিথলজি, এন্ড লিজেন্ড বই অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির জন্মদিনের দিন “মন্দ আত্মাদের...[তার] ক্ষতি করার সুযোগ থাকে” আর তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে “বন্ধুদের উপস্থিতি এবং তাদের করা আশীর্বাদ, তাকে সুরক্ষিত থাকতে সাহায্য করে।” জন্মদিন বিষয়ক লোককাহিনি (ইংরেজি) বই জানায়, প্রাচীনকালে জন্মদিনের তারিখ মনে রাখা বা তার নথি রাখা সেই ব্যক্তির “রাশিফল জানার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল” আর সেটা ‘রহস্যময় জ্যোতির্বিজ্ঞানের’ উপর ভিত্তি করে ছিল। এই বইটা আরও বলে, “লোকেরা বিশ্বাস করে যে, জন্মদিনের মোমবাতিগুলোতে মনের ইচ্ছা পূরণ করার জাদুকরি শক্তি থাকে।”

     তবে বাইবেল আমাদের জাদুবিদ্যা চর্চা করা, প্রেতচর্চা করা, জ্যোতিষীদের কথা শোনা বা ‘এই ধরনের কোনো কাজ করাকে’ নিষেধ করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৪; গালাতীয় ৫:১৯-২১) এ ছাড়া, বাইবেল আমাদের এও জানায় যে, প্রাচীন নগর ব্যাবিলনের লোকেরা জ্যোতিষীদের উপর নির্ভর করত, আর এ কারণে যিহোবা তাদের তিরস্কার করেছিলেন এবং শাস্তি দিয়েছিলেন। (যিশাইয় ৪৭:১১-১৫) যিহোবার সাক্ষিরা যে প্রতিটা প্রথার উৎস বিবেচনা করে সেগুলো এড়িয়ে চলে এমন নয়। তবে, বাইবেল যখন উপরে দেওয়া শাস্ত্রপদগুলোর মতো স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়, তখন আমরা সেগুলো উপেক্ষা করি না।

  2.  ২. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা জন্মদিন পালন করেনি। দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে, প্রাথমিক খ্রিস্টানরা “কারো জন্মদিন উদ্‌যাপন করাকে এক পৌত্তলিক প্রথা হিসেবে বিবেচনা করত।” আর বাইবেল আমাদের বলে, আমরা যেন তাদের উদাহরণ অনুকরণ করি; আর তা করা উপযুক্ত কারণ সেই সময়ে প্রেরিতেরা এবং অন্যান্য অনেক খ্রিস্টান সরাসরি যিশুর কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছিলেন।—২ থিষলনীকীয় ৩:৬.

  3.  ৩. খ্রিস্টানদের শুধুমাত্র একটা বার্ষিকী পালন করার কথাই বলা হয়েছে, আর তা হল যিশুর মৃত্যুদিন, জন্মদিন নয়। (লূক ২২:১৭-২০) আর এটা বাইবেলের এই কথার সঙ্গে মিলে যায়: “জন্মদিন অপেক্ষা মরণদিন ভাল।” (উপদেশক ৭:১) যিশু ঈশ্বরের প্রতি মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকার মাধ্যমে তাঁর চোখে সুনাম অর্জন করেছিলেন। আর এভাবে তাঁর মৃত্যুদিন, তাঁর জন্মদিনের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

  4.  ৪. ঈশ্বরের কোনো লোক যে জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছে, এই ব্যাপারে বাইবেলে কোথাও কোনো উল্লেখ নেই। বাইবেলের লেখকরা যে এই ব্যাপারে লিখতে ভুলে গিয়েছেন তা নয়, কারণ দু-জনের জন্মদিন পালনের কথা বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে। তবে, তারা যিহোবার উপাসক নয়। আর এই দুটো উদ্‌যাপনেই খারাপ কিছু ঘটেছিল।—আদিপুস্তক ৪০:২০-২২; মার্ক ৬:২১-২৯.

জন্মদিন পালন করা হয় না বলে যিহোবার সাক্ষি বাবা-মায়েদের সন্তানেরা কি মন খারাপ করে?

 সব বাবা-মায়ের মতোই যিহোবার সাক্ষি বাবা-মায়েরাও তাদের সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা দেখায়। তারা কোনো নির্দিষ্ট দিনে নয় বরং বছরের যেকোনো সময়ে তাদের সন্তানদের ছোটোখাটো উপহার দেয় আর বন্ধুদের সাথে আনন্দপূর্ণ সময় কাটানোর জন্য পার্টির ব্যবস্থাও করে। এভাবে, তারা তাদের ঈশ্বরকে অনুকরণ করে, যিনি তাঁর সন্তানদের জন্য সবসময়ই ভালো ভালো বিষয়গুলো দিয়ে থাকেন। (মথি ৭:১১) সাক্ষি বাবা-মায়েদের সন্তানেরা জন্মদিন পালন করতে পারে না বলে মন খারাপ করে না, আর তা নীচের মন্তব্যগুলো থেকে বোঝা যায়:

  •   “আশা করা হয় না এমন সময়ে কোনো উপহার পেলে আরও বেশি আনন্দ লাগে।”—ট্যামি, বয়স ১২ বছর।

  •   “আমার জন্মদিনে যদিও আমি কোনো উপহার পাই না, কিন্তু আমার বাবা-মা অন্যান্য সময়ে আমাকে উপহার দেন। এটা আমার বেশি ভালো লাগে কারণ আমি অনেক সারপ্রাইজড হই।”—গ্রেগরী, বয়স ১১ বছর।

  •   “দশ মিনিটের মধ্যে কিছু কেক এবং গান দিয়েই কি একটা পার্টি হয়? আমার বাড়িতে এসে আপনার দেখা উচিত যে, সত্যিকারের পার্টি আসলে কাকে বলে!”—এরিক, বয়স ৬ বছর।